You are currently viewing রবীন্দ্রনাথ: ‘তাঁর চি‌ঠি ,  তাঁ‌কে চি‌ঠি’  ভূঁইয়া ইকবাল  এর  নান্দ‌নিক সং‌যোজন/ রুহু রু‌হেল

রবীন্দ্রনাথ: ‘তাঁর চি‌ঠি ,  তাঁ‌কে চি‌ঠি’ ভূঁইয়া ইকবাল  এর  নান্দ‌নিক সং‌যোজন/ রুহু রু‌হেল

রুহু রু‌হেল

 

রবীন্দ্রনাথ:তাঁর চি‌ঠি ,  তাঁ‌কে চি‌ঠি

ভূঁইয়া ইকবাল  এর  নান্দ‌নিক সং‌যোজন

——-

মা‌ঝে মা‌ঝে  মননশীল জীব‌নের  সৌম্যপ্রতিভূ  মেধাবী ত‌ন্বিষ্ট মানুষগু‌লো হা‌রি‌য়ে গে‌লে ভীষণ পী‌ড়িত হই ।  ভাবনার রেণু বিন্দু ঝল‌সে ও‌ঠে  মর্মরোদ‌নের নি‌ক্তি‌তে।  এভা‌বে আমার চিত্ত ও মন খুব ব্যথা অনুভব করল শ্রদ্ধেয় গুরু ভূইয়া ইকবাল এর মৃত্যু‌তে। কী কর‌বো ভে‌বে ভে‌বে আকুলতায় বি‌ভোর ছিলাম।  কিছু‌দিন আ‌গে  প্রিয় অগ্রজ ক‌বি ও অধ্যাপক হোসাইন ক‌বির   তাঁর  দ্বিতীয় আবাসভূ‌মি আ‌মে‌রিকা হ‌তে এ‌সে সহসা এক‌দিন ফো‌নে কুশলা‌দির পর জানা‌লেন ভূইয়া  ইকবাল বিষ‌য়ে একটা লেখা  দিন  ওখান থে‌কে বের হ‌বে। আমি আনন্দে‌ রা‌জি হলাম  অবশ্যই  দে‌বো  ।   তারও আ‌গে আ‌মি তাঁর কিছু বই  সংগ্রহও ক‌রে‌ রে‌খে‌ছি ছাত্রাবস্থা  থে‌কে । সংগ্রহ সংখ্যাগু‌লো হ‌তে বাছাই করলাম এ বই‌টি ” রবীন্দ্রনাথ : তাঁর চি‌ঠি , তাঁ‌কে চি‌ঠি”।

বাংলা সা‌হি‌ত্যের  বিভাময় সম্রা‌জ্যে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  যে বিশাল সৃ‌ষ্টিশীলতার তুঙ্গীয় স্প‌র্শে বিশ্ব সা‌হি‌ত্যেও যে বিস্ময় রে‌খে গে‌ছেন তার প‌রি‌ধির ব্যাপকতা এক অন‌তিক্রম্য অধ্যায়ের ম‌তো      অ‌নেকটা।  তাঁর চি‌ঠিপত্রের সংখ্যাও পাঁচ হাজা‌রের অ‌ধিক।

এ চি‌ঠি নি‌য়ে বাংলা সা‌হি‌ত্যের অনন্য  কৃতীধন্য  গ‌বেষক ভূঁইয়া ইকবালদ এই সুন্দর  বইটা আমা‌দের উপহার দি‌য়ে‌ছেন “রবীন্দ্রনাথ , তাঁর চি‌ঠি , তাঁ‌কে  চি‌ঠি ” ।  গ্রন্থ‌টি  ক‌লেব‌রে  ছোট  ত‌বে গুরু‌ত্বের দিক থে‌কে অ‌নেক অ‌নেক বড়।  কারণ,  যে চি‌ঠিগু‌লো নি‌য়ে তাঁর  ত‌ন্বিষ্ট অনুসন্ধান   তা‌তে আমরা  চমৎকৃত না হ‌য়ে পা‌রি না। সে চি‌ঠিগু‌লো তাঁর পূ‌র্বে কেউ গ্রন্থবদ্ধ ক‌রেন নি।

একজন নি‌বিড়‌নিষ্ঠ গ‌বেষক ছি‌লেন ভূঁইয়া ইকবাল।   আমরা  জা‌নি  বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের  শিক্ষক     মা‌নে  জাত শিক্ষক হওয়ার চে‌য়ে জাত গ‌বেষক হওয়াটাই  ভীষণ জরু‌রি।   ভূঁইয়া  ইকবাল          স্যার  প্রকৃতপ‌ক্ষে সেই  জাত  গ‌বেষকই  ছি‌লেন।  গ‌বেষণার জন্য তি‌নি বাংলা একা‌ডে‌মি     পুরস্কা‌রে ভূ‌ষিতও  হ‌য়ে‌ছেন।

তাঁর প্রকা‌শিত উ‌ল্লেখ‌যোগ্য গ্রন্থগু‌লো হল

#রবীন্দ্রনাথ  ও মুসলমান সমাজ (২০১০)

#বাংলাদেশের উপন্যাসে সমাজচিত্র : ১৯৪৭-৭১ (১৯৯১)

#বাংলা‌দে‌শে রবীন্দ্র সংবর্ধনা

#নির্জনতা থে‌কে জনার‌ণ্যে: শামসুর রাহমান ( ২০০৬ )

#আ‌রো লেখা প্রমথ চৌধুরী

#শামসুর রাহমা‌নের পাণ্ডু‌লি‌পি-‌চিত্র  ( ২০২০ )

#আ‌নিসুজ্জামা‌নের অপ্রকা‌শিত পত্রাব‌লি ( ২০২১ )

জীবনী:

#আবুল কালাম শামসুদ্দীন (১৯৮৭);

#আনোয়ার পাশা (১৯৮৮) ;

#শশাঙ্কমোহন সেন (১৯৯০);

#বুদ্ধদেব বসু (১৯৯২);

#স্যার আজীজ উল হক (১৯৯৪)।

সম্পাদনা: 

#মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৭৫);

#রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র (১৯৮৫);

#নির্বাচিত রচনা : আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১৯৯৪);

#Selections From the Mussalman, 1906-08 (১৯৯৪);

#নজরুলের কবিতা:বাজেয়াপ্তির জন্য অনুবাদ (১৯৯৫)।

#আ‌নিসুজ্জামান সংবর্ধনা  স্মারক

#পূর্বব‌ঙ্গে রবীন্দ্র  বক্তৃতা  ( সংকলন -২০১৬ )

আমাদের স্ব‌দে‌শ স্বরূপ সন্ধা‌নের অনন্য  প্রতিভূ জাতির মনীষা ব্যাক্তিত্ব অধ্যাপক                    আ‌নিসুজ্জামান স্যার এর অপ্রকা‌শিত রচনা নি‌য়েও কাজ ক‌রে‌ছি‌লেন ড. ভূঁইয়া ইকবাল  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

 পুরস্কার : 

#হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৬)।

#বাঙলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (প্রবন্ধ)। ( ২০১৪)

দিন‌ দিন প্রকৃতমা‌নের গ‌বেষক আমরা হারা‌তে ব‌সে‌ছি।  আ‌রেকজন ভূঁইয়া ইকবা‌লের জন্ম       হয়‌তো দীর্ঘসময় পর হ‌তে পা‌রে।  গ‌বেষক হয়‌তো পা‌বো ত‌বে  একজন সৌম্য প্রতিভূর             নি‌বিড়নিষ্ঠ গ‌বেষক ভূঁইয়া ইকবা‌লের শূন্যতা  আমা‌দের‌কে  ভোগা‌বে নিশ্চয়।

আ‌লোচনার শুরু‌তে ব‌লে রা‌খি  গ্রন্থে উ‌ল্লে‌খিত  বর্ণনার প্রাস‌ঙ্গিক ফি‌রি‌স্তি  হি‌সে‌বে–

“সারা জীবন অসংখ্য চি‌ঠি লি‌খে‌ছেন রবীন্দ্রনাথ , অসংখ্য চি‌ঠির জবাব দি‌য়ে‌ছেন। এ বই‌য়ে ভূঁইয়া  ইকবাল ক‌বি সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ এর তাঁর কিছু চি‌ঠি ও তাঁ‌কে লেখা কিছু চি‌ঠি সম্পাদকীয় মন্তব্যসহ সঙ্কলন ক‌রে‌ছেন।‌  এ গ্রন্থ‌টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকু‌রের সার্ধশত জন্মবা‌র্ষিকী  ( ২৫ বৈশাখ ১৪১৮ , ৭ মে ২০১১ ) উপল‌ক্ষে প্রকা‌শিত  , “মূর্ধন্য”  হ‌তে । রবীন্দ্র–  স্মারক গ্রন্থমালারই অংশ বই‌টি।

এ চি‌ঠিগু‌লো  ভূ্ঁইয়া ইকবাল এর আ‌গে কোথাও প্রকা‌শিত বা কোন বই‌য়ে সঙ্কলিত হয়‌নি।

এ গ্রন্থে  যে চি‌ঠিগু‌লো নি‌য়ে আ‌লোচনা ক‌রে‌ছেন  তা‌তে দু‌টো ভাগ ক‌রে সা‌জি‌য়ে‌ছেন :

প্রথম ভাগ:     রবীন্দ্র -পত্রা‌লি

দ্বিতীয় ভাগ –  ক‌বি‌কে লেখা অন্যদের চি‌ঠি

রবীন্দ্র-পত্র-প্রাপক‌দের ম‌ধ্যে ছি‌লেন:

রায়বাহাদুর খ‌গেন্দ্রনাথ মিত্র, সতীশচন্দ্র খাস্তগীর, বী‌রেন্দ্রকি‌শোর রায় চৌধুরী, স‌ত্যেন্দ্রনাথ বসু, জনার্দন চক্রবর্তী, সুধারাণী সেন । ক‌বি তাঁর স‌চি‌বের না‌মে যে চি‌ঠি‌টি বুদ্ধ‌দেব বসু‌কে               পা‌ঠি‌য়ে‌ছি‌লেন তার খসড়া ক‌রে‌ছি‌লেন নি‌জে।”  ১৯৩২ থে‌কে মৃত্যুর চার মাস আ‌গে পর্যন্ত  ( ১৯৩২ – ১৯৪১ ) এই চি‌ঠিগু‌লো লি‌খে‌ছেন ক‌বি ।  গ্রন্থের  “পূর্বলেখ” ( পৃ: ১৩ ) কথ‌নে জানা‌লেন  গ্রন্থাকার।

এ গ্রন্থে  যে পত্রগু‌লোর উল্লেখ র‌য়ে‌ছে তা‌তে বেশ ক‌য়েক‌টি প‌ত্রে  অ‌নেক প্রয়োজনীয় দিকে আমাদের  দৃ‌ষ্টি কে‌ড়ে‌ছে।  বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ  বসুকে লেখা দু‌টি চি‌ঠির অনু‌লি‌পি সম্প‌র্কে   জানা‌লেন গ্রন্থাকার ভূঁইয়া ইকবাল ”  ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক বিজ্ঞানী        স‌ত্যেন্দ্রনাথ বসু‌কে লেখা দু‌টি চি‌ঠির অনু‌লি‌পি সংর‌ক্ষিত আ‌ছে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন         মহা‌ফেজখানায় । রবীন্দ্রনা‌থের `‌চি‌ঠিপত্র`-এ ( ১৯ খণ্ড) এই দুাট চি‌ঠি সংক‌লিত হয়‌নি।

চি‌ঠি বিষ‌য়ে যে তথ্যটি আমাকে গভীরভা‌বে নাড়া দি‌য়ে‌ছে  স‌ত্যেনবসু‌কে শা‌ন্তি‌নি‌কেত‌নে  চীন -ভব‌নের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠা‌নে আমন্ত্রণ জানান ক‌বি। – – – এখা‌নে ক‌বি ভাইস-চ্যা‌ন্সেল‌রের বাংলা   প‌রিভাষা লি‌খে‌ছেন `‌বিদ্যা‌ধিনায়ক` এ চি‌ঠি‌তে প‌ণ্ডিত জওহরলাল নে‌হেরু উপ‌স্থিত থাক‌বেন ব‌লে রবীন্দ্রনাথ‌  উ‌ল্লেখ ক‌রেছেন । ত‌বে অসু্স্থতার কার‌ণে নে‌হেরু হা‌জির থাক‌তে না পার‌লেও কন্যা-        শা‌ন্তি‌নি‌কেত‌নের প্রাক্তন  ছাত্রী ই‌ন্দিরা মারফত  তাঁর লি‌খিত ভাষণ পা‌ঠি‌য়ে‌ছেন।

চি‌ঠি‌টির ভাষা ছিলঃ

স‌ত্যেন্দ্রনাথ বসু, ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয়

রমনা , ঢাকা

শা‌ন্তি‌নি‌কেতন

ওঁ

প্রী‌তিনমস্কার

১লা বৈশাখে আশ্রমে চীন-ভব‌নে গৃহপ্রবেশ হ‌বে ।  এই  উপল‌ক্ষে  তোমা‌কে নিমন্ত্রণ কর‌ছি । য‌দি উৎস‌বে যোগ দি‌তে পা‌রো তো খু‌সি হব । তোমা‌দের  বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের  বিদ্যা‌ধিনায়ক‌কে নিমন্ত্রণ  ক‌রে‌ছি । . . .., .

.. . . . .

ই‌তি ৫/৪/৩৭

তোমা‌দের রবীন্দ্রনাথ         ( পৃ: ৩০ )

আ‌রো একটা চি‌ঠির  শব্দপ্রয়ো‌গে  অ‌নেকটুকু আনন্দ পে‌য়ে‌ছি জনার্দন চক্রবর্তীর চি‌ঠি তি‌নি চট্টগ্রাম ক‌লে‌জের বাংলার অধ্যাপক ( প‌রে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয় , প্রেসি‌ডে‌ন্সী ক‌লেজ , বর্ধমান বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের অধ্যাপক ) জনার্দন চক্রবর্তী ( ১৯০১ -) তাঁর এক ছা‌ত্রের ( শুভব্রত ) লেখা নাটক  `‌মৈ‌ত্রেয়ী`  রবীন্দ্রনাথ‌কে পাঠি‌য়ে‌ছি‌লেন  অ‌ভিমত প্রার্থনা ক‌রে ।  নাট‌কের ভূ‌মিকায়  জনার্দন চক্রবর্তী দু‌টি পা‌রিভা‌ষিক শব্দ ব্যবহার ক‌রে‌ছি‌লেন TECHNIQUE এর বদ‌লে `প্রয়োগ-‌বিজ্ঞান` অপর‌টি ROMANCE ও ROMANTIC এর বদ‌লে `রো‌চিষ্ণুতা` ও  `রো‌চিষ্ণু`  ।

রবীন্দ্রনাথ  চি‌ঠি লি‌খে জা‌নি‌য়ে‌ছেন  —

অধ্যাপক জনার্দন চক্রবর্তী , চট্টগ্রাম ক‌লেজ

শা‌ন্তি‌নি‌কেতন

ওঁ

সাদর নমস্কার সম্ভাষণ

শ্রীমান শুভব্রতের র‌চিত মৈ‌ত্রেয়ী বইখানি পে‌য়ে‌ছি  ।  এর রচনা প্রণালী , ভাষা ও বিষয়বস্তু     আধু‌নিক পাঠক‌দের কা‌ছে রো‌চিষ্ণু না হ‌তে পা‌রে কিন্তু তার কল্পনাশ‌ক্তি ও রচনাশ‌ক্তি আ‌ছে একথা স্বীকার ক‌রি। আশীর্বাদ ক‌রি শ্রীমান শুভব্রত সা‌হিত্য সাধনায় সার্থকতা লাভ কর‌বে । সং‌ক্ষে‌পে লিখলুম , আমার শক্তির ক্ষীণতাই তার কারণ ।

ই‌তি ২৯/ ৮ / ৩৮

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

( পৃ:  ৩৩ )

অক্ষয়কুমার ভট্টাচার্য  এর কা‌ছে পাঠা‌নো প‌ত্রেও  একটা বিষয়  জে‌নে‌ছি যা আমা‌দেরও প্রতী‌তি এমন  —

c/o Late K. K Viyaratna

Barisal

শা‌ন্তি‌নি‌কেতন

কল্যাণী‌য়েষু

ক‌বির রচনার মধ্য দি‌য়ে সু‌রেন্দ্রনাথ ক‌বির স্বভা‌বের সন্ধান কর‌ছেন- আমার বিশ্বাস তাঁর চেষ্টা সফল হ‌য়ে‌ছে । কিন্তু কাব্য বিচার সম্ব‌ন্ধে তার একান্ত প্রয়োজন হয়‌তো ছিল না । ক‌বি‌কে বাদ     দি‌য়েই আমরা কাব্য পে‌য়ে থা‌কি এই আমাদের  সৌভাগ্য । একটা দু‌র্জ্ঞেয় মনস্ত‌ত্ত্বের স‌ঙ্গে        মি‌শি‌য়ে  কাব্যরসের  স্বচ্ছতা নষ্ট করবার আশঙ্কা আ‌ছে । দরকার কী । কাব্য  জ্ঞানবৃ‌দ্ধির জ‌ন্যে নয় , আনন্দবর্ধনেরই  জ‌ন্যে । – – – –  চি‌ঠির এ অংশ‌টি প‌ড়ে প্রমথ  চৌধুরীর `সা‌হি‌ত্যে খেলা`   প্রব‌ন্ধের কথা মনে পড়ল  তা‌তে  সা‌হিত্য চর্চা যে আন‌ন্দের বিষয়  সে‌টি  সুস্পষ্ট-

“সা‌হি‌ত্যে মানবাত্মা  খেলা ক‌রে এবং সেই খেলার আনন্দ উপ‌ভোগ ক‌রে ”

“সা‌হি‌ত্য ক‌স্মিনকা‌লেও স্কুল মাস্টা‌রির ভার নেয় নি ”

সা‌হি‌ত্যের  উদ্দেশ্য  সকল‌কে  আনন্দ  দেওয়া,  কারও ম‌নোরঞ্জন  করা  নয় ” তাই  আমা‌দেরও সে অনুভব সা‌হিত্য  শিক্ষার ভার নেয় না আনন্দই তার ধর্ম ।

কথাটা ভীষণ ম‌নে ধ‌রে‌ছে।

এ প‌ত্রটি‌তে   অতীত ও বর্তমা‌নের আ‌রো একটা বিষয়গত ও মান‌সিকতার গভীর সম্পর্ক খুঁ‌জে পে‌য়ে‌ছি — সেকা‌লেও   সম্পাদকগণ  বড় লেখক‌দের তথা অ‌তিসুপ‌রি‌চিত‌দের সুপা‌রিশ‌কে গুরুত্ব দি‌য়ে থাকত এখ‌নো যা জ্বাজল্যরূ‌পে সত্য সে বিষয়‌টি।

রবীন্দ্রনাথ লিখ‌লেন  ” তোমার লেখা‌টি ভা‌লো লাগল এ‌তে চিন্তার বিষয় অ‌নেক আ‌ছে । এ রকম লেখা প‌রিচয় ছাড়া আর কো‌নো প‌ত্রে  প্রকা‌শের সম্ভাবনা  আ‌ছে ব‌লে ম‌নে ক‌রি‌নে ।  তোমার সম্ম‌তি পে‌লে সম্পাদ‌কের কা‌ছে  পাঠা‌তে  পা‌রি । অথবা য‌দি  ইচ্ছা ক‌রো ত‌বে আমার              অ‌ভিমতসহ  বি‌চিত্রায় পাঠা‌লে সম্পাদক ফেরৎ দে‌বেন না ।

ই‌তি ১৩ জানুয়ারী ১৯৩৫

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

( পৃ:  ৩৬ )

উ‌ল্লেখ্য,  ক‌বিগুরুর ওই `বিদ্যা‌ধিনায়ক` শব্দ‌টি   সুধী‌বো‌ধিজন গ্রহণ ক‌রেন‌নি।  ত‌বে আমার ম‌নে হয়  “বিশ্ব‌বিদ্যা‌ধিনায়ক”  শব্দ‌টি বড় হ‌লেও  করা যে‌ত।

এ ছাড়াও — ক‌বি তাঁর স‌চি‌বের না‌মে  যে চি‌ঠি‌টি বুদ্ধ‌দেব বসু‌কে পা‌ঠি‌য়ে‌ছি‌লেন তার খসড়া ক‌রে‌ছি‌লেন নি‌জে।

দ্বিতীয় ভা‌গে অপ্রকা‌শিত / সাম‌য়িকপত্রে মু‌দ্রিত কিন্তু গ্রন্থাকা‌রে অসংক‌লিত  খ্যাত — অখ্যাত রবীন্দ্রভক্ত‌দের  চি‌ঠি গ্রথিত । ১৯০৫ —  ১৯৪১  এর ম‌ধ্যে ক‌বি‌কে প্রেরিত  চি‌ঠির প্রেরক আটাশজন এ সব চি‌ঠি রবীন্দ্রভবন থে‌কে  সংগৃহীত।

ক‌বি‌কে লেখা পত্রকার‌দের তা‌লিকা:

#অশ্বিনীকুমার দত্ত

#রায়বাহাদুর_খ‌গেন্দ্রনাথ মিত্র

#যতীন্দ্রমোহন সেন গুপ্ত

#আলতাফ‌_চৌধুরী

#বী‌রেন্দ্রকি‌শোর রায়‌ চৌধুরী

#প‌বিত্র গ‌ঙ্গোপাধ্যায়

#শা‌ন্তি ক‌বির

#মেঘনাদ  সাহা

#‌মৌমা‌ছি

#কল্পনা দত্ত

#জনার্দন চক্রবর্তী

#স‌ত্যেন্দ্রনাথ বসু

#যা‌মিনীকান্ত সেন

#‌হেমচন্দ্র রায়

ভূঁইয়া ইকবাল  সবার প‌রিচয় উপস্থাপন ক‌রে‌ছেন ত‌বে ক‌য়েকজ‌নের প‌রিচয় সম্প‌র্কে             জা‌নি‌য়ে‌ছেন “এঁদের” পত্রধৃত প‌রি‌চি‌তির বাই‌রে আর কোন তথ্য  আমা‌দের গোচ‌রে আ‌সে নি।”

ইনারা হ‌লেন :

#আবদুল ল‌তিফ খান

#বীণা

এ ছাড়াও চ‌ল্লিশ দশ‌কের অন্যতম ক‌বি আবুল হো‌সেন এর কা‌ছে ক‌বিগুরুর প্রেরিত প‌ত্রের কথাও  জা‌নি‌য়ে‌ছেন।  “আবুল হো‌সেনকে তাঁর ১৩ আগস্ট ১৯৩৮ তা‌রি‌খের প‌ত্রের যে উত্তর     ক‌বি দি‌য়ে‌ছি‌লেন তার খসড়া রবীন্দ্রভব‌নে সংর‌ক্ষিত আ‌ছে। মজার বিষয়  আবুল হো‌সেন চি‌ঠি‌তে ক‌বির উ‌দ্দে‌শ্যে  যে ক‌বিতা‌টি লি‌খে‌ছেন , সে‌টি প‌রের বছর তাঁর প্রথম কাব্য  “নববসন্ত” -এর       ( ১৯৪০ ) উৎসর্গ -ক‌বিতারূ‌পে মু‌দ্রিত হ‌য়ে‌ছে , সামান্য প‌রিমা‌র্জিত হ‌য়ে। আবুল হো‌মেন এর     কা‌ছে চি‌ঠির জবাব দেন ক‌বি ত‌বে সং‌ক্ষিপ্ত আকা‌রে পাঠ‌কের  কা‌ছে  তার নমুনা উপস্থাপন   কর‌ছি যেভা‌বে ভূঁইয়া ইকবাল তাঁর  বই‌তে  ছা‌পি‌য়ে‌ছেন। প‌ত্রের তা‌রিখ  ৩১ শ্রাবন ১৩৪৬ ( ১৬ আগস্ট ১৯৩৯ )

কল্যাণী‌য়েষু ,

তোমার চি‌ঠিখা‌নি  পে‌য়ে আন‌ন্দিত হলুম । অচল শরীর নি‌য়ে তোমা‌দের ওখা‌নে  যাওয়া আমার অসাধ্য । দূর  হ‌তে তোমার অনুষ্ঠা‌নের সফলতা  ও তোমার কল্যাণ কামনা ক‌রি । ই‌তি

শুভার্থী –

রবীন্দ্রনাথ

( পৃ:  ৫৯ )

গ্রন্থের শে‌ষের ক‌য়েক‌টি পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ‌কে লেখা হা‌তের লেখা চি‌ঠির ক‌পিও ছাপা হ‌য়ে‌ছে।

কল্পনা দ‌ত্তের হা‌তের লেখা চি‌ঠি,  জনার্দন চক্রবর্তীর চি‌ঠির শেষ অংশ,  এবং স‌ত্যেন্দ্রনাথ বসু‌র হা‌তের লেখা চি‌ঠির শেষ পৃষ্ঠা  ( রবীন্দ্রভবন )

এ তথ্যটিও সংযুক্ত ক‌রে‌ছেন প্রামাণ্য দ‌লিল হি‌সে‌বে।

দিন‌দিন প্রকৃতমা‌নের গ‌বেষক আমরা হারা‌তে ব‌সে‌ছি।  আ‌রেকজন ভূঁইয়া ইকবা‌লের জন্ম       হয়‌তো দীর্ঘসময় পার কর‌তে হ‌তে পা‌রে।  গ‌বেষক হয়‌তো পা‌বো ত‌বে  একজন সৌম্যপ্রতিভূর  নি‌বিড়‌নিষ্ঠ গ‌বেষক ভূঁইয়া ইকবা‌লের শূন্যতাই আমা‌দের‌কে  ভোগা‌বে নিশ্চয়। আমার মনন বিন্দুর কারাগা‌রে বা‌রেবার ধ্ব‌নিত   তাঁর চি‌ঠি,  তাঁ‌কে চি‌ঠি। তাঁর চি‌ঠি , তাঁ‌কে চি‌ঠি।

****

রুহু রু‌হেল

১৩ সে‌প্টেম্বর ২০২১