রফিকুল নাজিমের কবিতা
আহা রে জীবন
বোটাখসা হলদে পাতার অব্যক্ত কান্নার মত
কিংবা ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের ব্যথাতুর ভগ্নাংশ মুখ
শিশিরের সাথে চুইয়ে পড়া বিরহী রাতের আয়ু
কচুপাতায় বর্ষার কয়েক ফোটা টলমল জল
অথবা তুমুল ভাঙনে ব্যস্ত সোমেশ্বরী নদীর তীর
পলাশ শিমুলের দিনও একদিন ফুরায়- ফের আসে খরতাপ
সব শেষ হয়। একদিন সবই মিলিয়ে যায়। থাকে শুধু ক্ষত।
শিমুল তুলার মত শোকের মিছিল হাওয়ায় উড়ে উড়ে যায়
পড়ে থাকে শুধু স্মৃতির কংকাল, দীর্ঘশ্বাসের শৈল্পিক মমি
অথচ আমার জীবনের চেয়ে তোমার অবহেলার ওজনই বেশি।
আহা রে জীবন!
বিরামচিহ্ন
আমার দুঃখের কোনো দাঁড়ি নেই, কমা নেই
এমন কি কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্নও নেই
আমার বুকের আড়ালে দগদগে ব্যথার পাশে
বিস্ময় সূচক চিহ্নটিও বসেনি কখনো!
বিরামচিহ্নহীন বেদনার রশি আমি ক্রমাগত টানছি
রাবারের মত কষ্টগুলো শুধু দু’দিকে প্রসারিত হচ্ছে
অথচ তোমার হাতেই কলম। চাইলেই দিতে পারো
আমার যন্ত্রণার শেষে একটা যুতসই বিরামচিহ্ন।
কাজল
নারীর চোখ স্বভাবতই আততায়ীর মত; সশস্ত্র ও বিধ্বংসী,
চোখের পাতায় কাজল টেনে নারী আরো দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে।
পুরুষ, কাপুরষ- সবাই সেই চোখ দেখে লুট হয়- গুম হয়
সতত আমিও তোমার কাজল চোখের অতলে ডুবে মরি।
তোমার জন্য আমার পকেটে কাজলের কৌটা তুলে রাখি
কৌটা খুলে দিলে তুমিও চোখে আঁকো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল
আমি সেই চোখের দিকে একবার তাকালেই খুন হই
আমি দ্বিতীয়বার তোমার চোখ দেখলে পুনর্জন্ম পাই!
এখনো আমি তোমার জন্য কৌটায় কাজল তুলে রাখি
যদি তুমি সেই কাজলে আঁকো আমার মরণ কিংবা পুনর্জন্ম,
আচ্ছা-এখন কার কৌটার কাজল দিয়ে তোমার চোখে দাও?
কাজল দেখে তোমার নতুন মানুষটাও কি খুন হয় রোজ,
অথবা পুনর্জন্ম পেয়ে সেও কি আবার উচ্ছ্বাসে বাঁচে?
ধূর!
সেই কাজলের কৌটা তো কেবল আমার কাছে আছে;
তোমার অই প্রেমিক সেই কাজলের কৌটা পাবে কই?
শহর ছেড়ে
শহর ছেড়ে এক বিকেলে আসি যদি ফিরে,
তুই কি আমায় নিয়ে যাবি জলেশ্বরীর তীরে?
রঙের আলো রূপের নগর ছেড়ে আসি যদি
তুই কি আমার বুকের ভেতর হবি উতল নদী?
পরাণ পাখি হবি আমার- উড়বি সুনীল আকাশ
তুই কি আমার বুকের ভেতর হবি শীতল বাতাস?
একটা হিজল গাছের ছায়ায় ঐযে হলুদ পাখি
তুই কি তবে আসবি ঘরে মুছতে সজল আঁখি?
কা কা ডাকা কাকের শহর যদিই আমি ছাড়ি
তুই কি আমার অপেক্ষাতে গুনবি ফেরার গাড়ি?
মায়াবিনী চোখের পাতায় আঁকিস যদি কাজল
ফিরবো আমি হঠাৎ দিনে- চোখে নিয়ে বাদল।
লাস্ট ট্রেনটা চেপে যদি ফিরে আসি বাড়ি
তুই কি তবে আসবি কাছে- ভেঙে পাষাণ আড়ি?
তুই কি তবে আসবি কাছে- ভেঙে পাষাণ আড়ি?
বিদায় সংবিধান
একদিন সময় অস্বীকার করবে আমার অস্তিত্ব
হয়তো আমি উদ্বায়ী হয়ে যাবো নিরবে;
তোমাদের হৃদয়ের গভীরতম পাতা থেকে।
শীত যেমন অস্বীকার করে
বয়সী হলুদ পাতাকে,
দক্ষিণা যেমন উড়িয়ে নিয়ে যায় সুদূরে
সময়ের অতলে; কলহাস্যের উচ্ছ্বাসে ।
আবার ফাগুনে কঁচি পাতায়
বর্ণিল সজীবতায় সাজে গাছ।
দক্ষিণা দোলায় বুনোউদ্দাম
পাতায় পাতায় করে গান।
শুধু বয়সী পাতার বিদায় চিরন্তন,
এই তো জীবনের সংবিধান।
===============