রনক জামান
তিনটি কবিতা
শৈশব
উড়তে পারছি না আর।
মেরুদন্ড ভুলে গেছে ডানার খবর।
অথচ আমার
এই নশ্বর শরীরের পবিত্র অঙ্গ ছিল মায়ের আঁচল।
সেই ভালো ছিল।
এখন প্রায়শই স্মৃতির ভেতর
শৈশব থেকে আমি দৌড়ে বেরিয়ে পড়ি
ডানাভাঙা ঘুড়ির পিছু
পায়ের তলায় ঘাস—মিছেমিছি ভাঙছে সবুজ আর
চিরায়ত রোদের নিচে—
এই নশ্বর শরীরের পবিত্র অঙ্গ ছিল ঘুড়ির নাটাই।
স্মৃতির ভেতর তাই
দৌড়ে দৌড়ে আমি পৃথিবীর কিনারে পৌঁছে গেছি
কতবার!
আর সেই মায়ের আঁচল
আর সেই ঘুড়ির নাটাই
স ম স্ত স মে ত—
আজ পৃথিবীকে মনে হচ্ছে :
নশ্বর নিজেরই বাকিটা শরীর।
দাবা
এই গাঁয়ে—
অবসরে দাবা খেলে মানুষগুলো।
তাদের খেলার পাশে, অনেক ক্ষতের পাশে কাত হয়ে
মরে থাকে মেধাবী
ঘোড়া
খেলা
শেষে তথাকথিত
সেই গ্রামব্যপী— বেখেয়ালে, ব্যস্ত হালে মানুষেরা
খামোখাই নড়েচড়ে
ফেরে
আর
তারা আয়রনিক্যালি
আটকে যেতে থাকে গুটির শরীরে, নীরবে
তাদের ফসলী মাঠ হয়ে ওঠে দাবার ঘরের মতো, ক্রমশ
দাবার ছকের মতো
সমতল।
সুতরাং
প্রায়শই হঠাৎ—
প্রিয়
কাঁচানীল
আকাশ হতে, ঘন
ও চিরচেনা মেঘের মতো অথচ—
নেমে আসে মনুষ্যগুটি অভিমুখে: এক হাতেই
তালি দিতে দিতে— দানবিক
অচেনা একটা
এক সন্ধ্যায়
সন্ধ্যা নামছে।
চিরসবুজ এক ঝাড়ালো ডেউয়া গাছ—ডুবে যাচ্ছে।
বাড়ির উঠানসহ।
পায়রা উড়ছে সাদা।
‘মরে গেলে কোথায় যাবেন, কিছু ঠিক করেছেন?’
জবাবে-
কী একটা বললেন তিনি।
প্রায়শান্ধকার ঘেঁষে সাঁতার কাটছিল একটা বাদুর ডেউয়াফলের দিকে।
—ডানা তো বাদুর না। মাঝখানে ইঁদুরমতন যেই অল্প প্রাণি, অইটুকু আসল বাদুর।
—একেকদিন কোত্থেকে ন্যাংটো ছেলে এক, ভগবান সেজে নাকি চুপিচুপি খেয়ে যায় পূজার প্রসাদ।
…ইত্যাদি বলছিল ওরা।
নীরব ছিলেন তিনি। অর্থাৎ কিছুই ঘটেনি কোনদিন, এই জগতে।
‘মরে গেলে কোথায় যাবেন, কিছু ঠিক করেছেন?’
—এটা কোনো প্রশ্ন হলো?
দৃশ্যজুড়ে এক রঙচটা গ্রাম।
জোৎস্না ঝরছে টুপটাপ, নারকেল পাতা চু’য়ে চরাচর ভিজে যাচ্ছে।