You are currently viewing মেহনাজ মুস্তারিনের কবিতা

মেহনাজ মুস্তারিনের কবিতা

মেহনাজ মুস্তারিনের কবিতা

 

অভিলাষ

 

আমি আমার মতো বাঁচতে চেয়েছি!

চেয়েছি দিগন্ত ছুঁয়ে বৃষ্টির মুগ্ধতা মেখে 

আঁকাবাঁকা পথে বহুদূরে হেঁটে যেতে—; 

ওরা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করেছিল পথ!

কর্পূরের গন্ধ ঢুকিয়ে দিয়েছিল মগজে!

মননকে বাধ্য করেছিল মৃত্যুর নেশা জাগাতে! 

 

আমি আমার মত স্বপ্ন দেখতে চেয়েছি!

চেয়েছি ওড়িশি মণিপুরি আর সত্রীয়া নৃত্যে

কঙ্কণধ্বনীর স্বপ্নদোলায় হারিয়ে যেতে—;

ওরা ভেঙে টুকরো টুকরো করেছিল 

কাঁচের চুড়ি, গাঁদা ফুল!

কাঁটাকে বাধ্য করেছিল ছড়িয়ে পড়তে বিস্তির্ণ পথে!

 

আমি আমার মতো ভাবতে চেয়েছি! 

চেয়েছি ভালোবাসার স্পর্শ প্রেমসুধা পান আর

অন্তর্গত রক্তের আহ্বানে ঘুমিয়ে যেতে—; 

ওরা বন্দি করেছিল কন্ঠ!  

আঁটকে দিয়েছিল শ্বাসনালী! 

সখ্যতায় বাধ্য করেছিল ঘৃ্ণ্য সব শব্দের সাথে!

 

আমি আমার মতো খুঁজতে চেয়েছি!

চেয়েছি পৃথিবীর পরে আলো আর নির্মল বাতাসে 

আস্থার শিকড় খুঁজে ক্লান্ত হতে—;

ওরা আলো কেড়ে নিয়েছিল!

অমাবশ্যা চাপিয়ে দিয়েছিল জোৎস্নার উপর!

সূর্যকে বাধ্য করেছিল মুখ লুকাতে!

 

৩০.১.২৩

 

বিমূর্ত নারী

 

আসা যাওয়ার পথে প্রায় দেখি তাকে,

সবজির ঝাঁপি নিয়ে বসে থাকে—

মাঝেমধ্যে দাঁড়াই, জানতে চাই, কী আছে ঝাঁপিতে!

সরিয়ে পলিথিনের ঢাকনা, আরেক হাতে মাছি তাড়াতে তাড়াতে

বলে—আলু, কপি, সীম, বরবটি, আরও আছে কচি সবুজ লাউ! 

কিনি কি না কিনি, পাশ দিয়ে যেতে যেতে হাত নাড়াই!

একদিন দেখি, শূন্যে দৃষ্টি তার! কী এক উথাল-পাতাল ঢেউ

আঁকড়ে ধরেছে বুক! কবেকার এক নীর হারা পাখির মতো 

খুঁজে চলেছে কিছু—বিন্দু থেকে বিন্দু! আমি তাকাই যতো,

সে ততো আমার দিকে তাকিয়ে রয়, 

চকিতে, এক বিমূর্ত নারী হাজির হয়

চোখের সামনে। উপরে গনগনে সূর্য উত্তাপ ছড়ায়,

ঘর্মাক্ত পথে নেমে আসে তার শীর্ণ পায়ের পাতায়; 

ক্ষুদ্ধ চোখে দেখে সে একবার—দৃষ্টিতে শীতলতা নাই, 

নাই উৎকণ্ঠা কোনো, নাই চড়াই-উতরাই 

ডিঙানোর কোনো স্বপ্ন! যেন এক স্বপ্নহীনা নারীর 

যৌবন সামলে সম্বল শুধু পুড়ে যাওয়া ক্ষয়ে যাওয়া শরীর!

চোখজোড়া আনত! চিন্তাগুলো নেতিয়ে পড়া সবজির 

মতো নির্লিপ্ত! সামনে উঁচু দেয়াল, সুসজ্জিত পথ-ঘাট; তবু সুদূরে

এক অপরাজেয় চোখে চেয়ে থাকে সে! দুপুর শেষ হয়, আরও পরে

খালি হয় সবজির ডালা; দিনান্তে ক্লান্ত দেহে ঘরে ফিরে! 

আঁচলে বাঁধা কয়েকটা কাগজের নোট! চারআনা আটআনায়

আরও কিছু!চোখ তুলে দেখে না-দেখা চাহনিতে! দেখতে পায়,

চকিতে, কিছু একটা দেখতে পায় 

সেই চোখে, কিছু একটা, যা সে দেখেনি কোনদিন— 

নিস্তব্ধতার মাঝে সে দেখে দুপুরের সেই ঘাম, 

এতটুকু শুকায় নাই—

বিন্দু বিন্দু স্বপ্ন নিয়ে তারা জেগে আছে!

১.৫.২৩

=================