You are currently viewing মৃণাল সেনের চ‍্যাপলিন অনুবাদ―অনুবাদক চিন্ময় গুহ # নিবিড়পাঠ || পারমিতা ভৌমিক

মৃণাল সেনের চ‍্যাপলিন অনুবাদ―অনুবাদক চিন্ময় গুহ # নিবিড়পাঠ || পারমিতা ভৌমিক

মৃণাল সেনের চ‍্যাপলিন অনুবাদ―অনুবাদক চিন্ময় গুহ

নিবিড়পাঠ#পারমিতা ভৌমিক

যিনি সত্যকে তাড়া করেছেন  সবচেয়ে বেশি সেই চলচ্চিত্রকার চ্যাপলিনকে নিয়ে মৃণাল সেন লিখেছেন সে বইখানি তার অনুবাদ পড়ার সৌভাগ্য আমার মতো পাঠকের অতিরিক্ত প্রাপ্তি হয়েছে। মূল বইটির খোঁজ তো পাইনি আর তা হয়তো পাওয়া কখনও সম্ভব হতোই না আমার পক্ষে ।  কিন্তু তাবলে আর কোন দুঃখ নেই আমার কেননা অনুবাদক চিন্ময় গুহর লেখাটিতেই যে মন ভ’রে যায় এ কথা স্বীকার করতেই হয়। এটি স্বীকার করেই লেখা শুরু করছি যে যা জানতে পারছি সেটুকু জেনেছি চিন্ময় গুহ কৃত অনুবাদ ‘আমার চ্যাপলিন’ থেকেই জেনেছি।
অনুবাদ থেকেই জানছি 
মৃণাল সেন চ্যাপলিন সম্পর্কে ঠিক কি ভেবেছিলেন। 
বইটি লেখার সময় চ্যাপলিনের বয়স চৌষট্টি আর মৃণাল তখন তরুণ। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। 
চিন্ময় গুহ জানাচ্ছেন ―
”  খুব সাধারণ গড়পড়তা একটি লোক। 
‘এ ব্লোক কলড চ্যাপম্যান,’ ক্যাপলিন আর সামথিং।” 
অনুবাদক চিন্ময় গুহর জাদুকলমে তখন ফুটে উঠছে মৃণালের চোখে চ‍্যাপলিন। আমরা পড়ছি―
“আমরা যখন মৃত্যু-অববাহিকার দিকে ভেসে যাচ্ছি, তখন সেই ব্লোক-এর মুখোমুখি মৃণাল সেন। 
পরস্পরের মধ্যে একাকার হয়ে যাচ্ছেন দুই পার্শ্বরেখায়িত মানুষের পাঁচালিকার। 
এক আবহমান খুদে ট্রান্স ঢুকে পড়ছেন মৃণাল সেনের ছবির পর্দায়। নির্জন এক সাঁকোর ওপর এক প্রতিবাদী চিত্রকরের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এক জীবনশিল্পীর।”―কি অসাধারণ উপস্থাপনা !!! প্রমুখণ।
অধ্যাপক, বিশিষ্ট সাহিত্য ব্যক্তিত্ব, ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যবিদ, চিন্ময় গুহর এই অনুবাদ থেকে আমরা জেনেছি মৃণাল সেনের দৃষ্টি প্রাখর্যকে এবং জেনেছি চ্যাপলিনকে নিয়ে মৃনাল সেনের এই শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটির অন্যতম সম্পদ তাঁর আত্মকথা ও আত্ম- সমীক্ষা। সেখানে আছে আকবর নামে ফরিদপুরের ভবঘুরে এক বালকের কাহিনী। আর ‘Rhythme ‘ নামে চ্যাপলিনের বিস্ফোরক একটি যুদ্ধবিরোধী চিত্রনাট্য।       আমরা যতদূর জানি এটি স্বয়ং মৃণাল সেন চিন্ময় গুহকে বাংলা অনুবাদের
দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
বইটির শুরুতেই রয়েছে 
দ্য গ্রেট ডিক্টেটর এর কথা―
” ঘৃণা মুছে যাবে, স্বৈরাচারীরা মরবে এবং যে-ক্ষমতা তারা মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল তা মানুষের কাছে ফিরে আসবে।… আপনারা যন্ত্র নন, আপনারা মানুষ! আপনাদের বুকে মানুষের প্রতি ভালবাসা। সৈন্যগণ! দাসত্বের জন্য লড়াই করবেন না, স্বাধীনতার জন্য লড়ুন! আপনারা জনতা, আপনাদের হাতেই ক্ষমতা। মেশিন তৈরির ক্ষমতা, সুখ সৃষ্টির ক্ষমতা। জনগণ, আপনাদের হাতে জীবনকে স্বাধীন ও সুন্দর করার ক্ষমতা, জীবনকে এক বিস্ময়কর অভিযানে
পরিণত করার ক্ষমতা ।…”
বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে অদ্ভুত শিরোনাম । এ দিয়েই অনুবাদক চিন্ময় গুহ টেনে রেখেছেন পাঠকদের। না,  পুরোপুরি না শুনে নড়া যাচ্ছে না যেন !! 
ভালো অনুবাদক আসলে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্নঃ রিলে স্টেশন। মূলভাষার আদ্যোপান্ত জেনে আমাদের কাছে তাকে এনে দেন আমাদের মতো করে। ক্যাপসানটা দেখে নেব।
“চ্যাপম্যান, ক্যাপলিন বা ওরকম একটা কিছু ….”
” যদি আমায় প্রশ্ন কর, কোথায় গিয়েছিলাম, আমি বলব, ‘ঘটনা ঘটেই চলে।” 
(পাবলো নেরুদা, পৃথিবীতে বসতবাড়ি) 
এবার পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে মূল মৃণাল সেনের চ্যাপলিন বিষয়ক লেখাটি ও তার মূলানুগ ট্রান্সক্রিয়েশন চিন্ময় গুহর “আমার চ্যাপলিন”….থেকে।
             দুটি ঘটনার উল্লেখে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু। একটি – ১৯৩১ সালে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অন্যটি তার তিন সপ্তাহ পর। 
             প্রসঙ্গতঃ এল ভারতের নৈতিক এবং রাজনৈতিক নেতা মহাত্মা গান্ধীর কথা। সাধারণ যাপনে অভ্যস্ত ঐ মানুষটি পিতৃপ্রতিম । লোকে ডাকত ‘বাপু’ বলে। ১৯৩১ শে র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের (১৮৬৬-১৯৩৭) নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে গান্ধী লণ্ডনে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডটেবিল কনফারেন্সে অংশ গ্রহণ করতে। নিতান্ত সাধারণ “কিংসলে হল”-এ তিনি উঠেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে বিশ্বযাত্রায় বেরিয়ে চার্লি পৌঁছেছেন লণ্ডনে।
             হলিউডের নির্বাক ছবির তারকা চ‍্যাপলিন। তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন ‘সিটি লাইটস্ ছবির ব্রিটিশ প্রিমিয়ারে। 
সেটি ডমিনিয়ন থিয়েটারে দেখানোর কথা। 
চ্যাপলিনের মাথায় তখন হাজার আইডিয়া ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে সেসব ভাগ করে নেবার ইচ্ছার প্রাবল্য।
ইউরোপীয় অর্থনীতিতে তখন মন্দার প্রভাবে চিন্তিত সবাই। চিন্তিত স্বয়ং চ্যাপলিন, বার্নাড শ, এইচ জি ওয়েলস, উনস্টন চার্চিল, লয়েড জর্জ, আইনস্টাইন, পিকাসো, টমাস মান । এদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী চ্যাপলিন।
এইবার তিনি গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। 
গাঁধীর সমস্ত ব্যাপারটা দেখতেন কিংসলে হলের পরিচালক মুরিয়েল লেস্টার ও তার বোন। 
মুরিয়েল লেস্টারের মনছবিতে ফুটে উঠল গান্ধীর ছবি ――
মহাত্মা একটি টেলিগ্রাম হাতে বসে আছেন। মুখে বিভ্রান্তির ছাপ। 
এদিকে, মুরিয়েল ঘরে
ঢুকতে ঢুকতে যেন শুনলেন কারো কথা― “কিন্তু লোকটি তো একজন ভাঁড়, ওর সঙ্গে দেখা করে কি হবে?”
তারপর, টেলিগ্রামটি প্রত্যাখ্যানের জন্য  ফেরত দেয়া হয়েছিল। 
মুরিয়েল অবাক হয়েছিলেন – বাপু চ্যাপলিনের নাম শোনেনি জেনে। এই চ্যাপলিনকে তো আজ সারা পৃথিবী ভালোবাসে। 
সবচেয়ে বড় কথা চ্যাপলিনের শিল্পে রয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন!! তাদের উনি সর্বাংশে বুঝতেন এবং সবসময় সম্মান জানিয়েছেন। 
প্রসঙ্গত বলতেই হয় মৃণাল সেনের observation এবং তার শিল্পিত প্রকাশটি যেমন সাবলীল ও সুন্দর চিন্ময় গুহর অনুবাদটিও তো ঠিক তেমনটাই। 
কোথাও কোন অস্পষ্টতা, আড়ষ্টতা বা অতিরেক নেই। যেন একই ছন্দে মূল ও
অনুবাদ তাল মিলিয়ে চলেছে। 
ঠিক এই কারণেই বইটি পাঠকদের প্রিয় হয়েছে এবং ফলতঃ সার্থক হয়ে উঠেছে। 
প্রসঙ্গে ফিরতে হচ্ছে। এরপরে ১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁদের দুজনের , গান্ধী ও চ‍্যাপলিন, এই দুজনের দেখা হল। 
গাঁধী কিংসলে হলের কাছে ড. কাটিয়াল নামে একজন ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন । 
তখন এক বিরাট জনতা তাঁদের দেখতে সেখানে উপস্থিত। 
খুব ছোট একটি সাক্ষাৎকার। 
পরের দিনই সেই খবর  কাগজের প্রথম পৃষ্ঠা জুড়ে প্রকাশিত হল। একটি দৈনিকে কিছু কার্টুনও ছাপা হল যার শিরোনাম ছিল “when two great prophets meet “
গাঁধীর সময় কম। অতয়ব, চ্যাপলিন তাঁর বক্তব্য প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন। 
চ্যাপলিনের কয়েকটি প্রশ্নের মাত্র উত্তর দিলেন গাঁধী।
 অতিমাত্রায় ছোট উত্তর ছিল সেসব।
কিছু বিষয়ে চ্যাপলিনের সঙ্গে গাঁধীর মতপার্থক্যও হল । মৃণাল সেনের তীক্ষ্ণ অবলোকনে সেসব ধরা আছে আর আমরা চিন্ময় গুহর সার্থক অনুবাদে তা সহজেই পেয়ে যাচ্ছি । সমস্ত কিছুর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ, এই দুই ব‍্যক্তিত্বের কাছে―― ১) মৃণাল সেন।
                  ২) চিন্ময় গুহ।
 এরপরে জানলাম মৃণাল সেনের অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে গান্ধীর সম্পর্কে আরও কিছু কথা।
 চিন্ময় গুহর অনুবাদের কলমেই জানলাম, গাঁধীর মতে, প্রাচ্যের জীবনপ্রণালী এবং অর্থনৈতিক অবস্থা যন্ত্রসভ্যতার বিপরীত। পোশাক আশাকের ক্ষেত্রে
যন্ত্র নয় চরকা বা হ্যাণ্ডলুমই তাঁর পছন্দ।
এরপরে প্রার্থনার সময় চ্যাপলিন মন্তব্য করলেন ― “গাঁধী ও তাঁর সহযোগিরা এতটুকু বিব্রত বোধ করেন নি আমার সামনে মাটিতে বসতে……” কীইইই  অসাধারণ চেনাচিনি।
তাঁর ভাষায় গাঁধী ছিলেন―― ” a realistic, virile-minded visionary with a will of iron….A Tremendous personality. ”  …
                    মৃণাল সেন ও চিন্ময় গুহর কাছে আমরা সাধারণ পাঠক ঋণী। 
এসব হয়তো আমার আর আমার মতো কিছু কিছু পাঠকের এভাবে জানাই হত না তাঁদের দুজনকে (মৃণাল সেন ও চিন্ময় গুহ) না পেলে। 
 আর একটি ঘটনা উঠে এল ।
 হাউস অফ কমন্সের
প্রথম মহিলা সদস্য, বান্ধবী, লেডি ন্যান্সি অ্যাস্টরকে
(১৮৭৯ – ১৯৬৪) এক চিঠিতে বার্নার্ড শ’ (১৮৫৬- ১৯৫০) লিখেছিলেন― “Mahatma Gandhi is a saint under the convenant of grace.” —কীইইই অসামান্য assessment…..!
একবার ,একজন সাংবাদিক শ’ কে  জিজ্ঞাসা করলেন― (সিটি লাইটস, ছবির প্রিমিয়ারে, যখন বার্নার্ড শ’ এবং লেডি ন্যান্সি চ্যাপলিনের দু’পাশে বসে) চ্যাপলিন হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করলে কেমন হত? 
বার্ণার্ড শ’ উত্তর দিলেন ― “কেন নয়? বিখ্যাত হওয়ার ঢের আগে মি. চ্যাপলিন যখন শুধু ঢিল পাটকেল মারতেন কিম্বা খেতেন, আমি ওঁর গভীরভাবে নাড়া দেওয়া, বিষণ্ণ অভিব্যক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।”
মৃনাল সেনের কথায় ও চিন্ময় গুহর অনুবাদে জানতে পারলাম ঠিক কেমনভাবে তৈরী হচ্ছিলেন, চ্যাপলিন – চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন। 
আরও উঠে এল অকথিত অজানা কিছু কথা। চ্যাপলিনের ছেলেবেলার ছবি――
” তাঁর ছেলেবেলা ছিল অন্ধকার। ভয়ানকভাবে অন্ধকার। তা নিয়ে অনেক আজগুবি গল্প রটানো হয়েছে, বানানো হয়েছে। সেগুলি তৈরি করেছে লেখকের দল।”
( ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অধীনে একটি দপ্তর থেকে আক্রমণ তুঙ্গে উঠেছিল।)
        এর পরে চালির ব‍্যক্তিগত জীবন প্রসঙ্গ উঠে এলো মৃণাল সেনের লেখায় এবং চিন্ময় গুহর অনুবাদে তা আমরা পেলাম। 
        বস্তুতঃ এইসব মূল‍্যবান তথ্য আমরা পেতামই না, এই দুই ব্যক্তিত্ব  না থাকলে। পরের অংশটুকু বলছি এবার। ――
” চাপলিনের বাবা ছিলেন জনপ্রিয় মিউজিক হল কমেডিয়ান। 
চ্যাপলিনের মাও কমেডিয়ানের অভিনয় করতেন। 
এই পরিবারিক সূত্রেই চ্যাপলিন এমন গুণ পেয়েছিলেন বলে মনে হয়।
―এই শৈল্পিক উত্তরাধিকার বিস্মিত করে।
মৃণাল সেন জানিয়েছেন— 
সিডনি ও চার্লি , এরা দুই ভাই ‌। এরা কিন্তু প্রথাগত কোনো শিক্ষাই পাননি। 
চার্লির পছন্দ ছিল পথে ঘাটে পার্কে নাচগান করে বেড়িয়ে দুচার পয়সা কুড়িয়ে পেতে। 
মোটের ওপর ঐ অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবারটি চলত অসম্ভব টানাটানির মধ্যে দিয়ে।
আবার  মড়ার ওপর ছিল খাঁড়ার ঘা-য়ের  মতো বাবার মদ‍্যপান ও পয়সা ওড়ানো। 
মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে বাবা মারা গেলে মা, ভাই সিডনি, আর চার্লির জীবন সংগ্রাম চলল লাগাতার ভাবে। 
এরপরে, ভাই সিডনি জাহাজে কাজ নিয়ে চলে গেলে মা আর চার্লির পথচলার ইতিবৃত্ত রচনা হতে থাকল ।
এ এক অন‍্য পথবৃত্ত। মা ও ছেলের প্রত‍্যকবৃত্তীয় দ‍র্শন।
―― মা ছেলে জানলায় বসে দেখতেন মানুষের হস্তদন্ত পথচলা, 
বিক্ষুব্ধ কর্মব্যাস্ততা। 
মা সেসব অনুকরণ করে দেখাতেন। 
হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরত চার্লির। 
এভাবে একটা পরোক্ষ শিক্ষা পর্বের ইঙ্গিত এখানে লিপিত রয়েছে, যা চার্লিকে  আস্তে আস্তে গড়ে দিচ্ছিল ভেতরে ভেতরে।
বস্তুত চার্লির এই উত্তরাধিকারের কথা আমরা অনেকানেক  সাধারণ পাঠক তো জানতামই না যদি না মৃনলে সেন-এর কলমে তা ধরা থাকত এবং চিন্ময় গুহ তাকে অনুবাদ করে আমাদের সামনে উপস্থাপিত করতেন আমাদের জন্য। আমরা কৃতজ্ঞ।
চার্লি  প্রতিমুহুর্তে মা-এর কাছ থেকে শিখতেন মূকাভিনয় আর হাসতেন।
সে এক অনন্ত হাসির অনির্বাপিত ফোয়ারা ছিল।        
মা যদি কোন লম্বা লোকের পা টিপে ঢিপে হাঁটা নকল করে দেখাতেন 
বা কোনও শিশু মায়ের কোল থেকে পড়ে গিয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছে দেখাতেন, চার্লি রুদ্ধশ্বাসে তা দেখতেন।
দুজনেই কখনও ক্লান্ত হতেন না। 
ছেলে মায়ের কাছে শিখতেন আর হাসতেন। 
আশ্চর্য হয়ে দেখতেন মায়ের ক্যারিকেচার করার ক্ষমতা।
 এঁরা স্বেচ্ছায় দুজন তৈরী করে নিয়েছিলেন নিজস্ব এক চমৎকার পৃথিবী।
এই চার্লিই একদিন বড় হয়ে, হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মিমিক।
 বিনয় না করে আত্মজীবনীতে চার্লি লিখেছেন― “মূকাভিনয় শিল্পে আমি সেরা।”—-এভাবে কে পারতেন বলতে???
একবার, অর্থনৈতিক মন্দা ও আলোচনা সম্পর্কে তর্কবিতর্কের পরে আইনস্টাইন নাকি তাঁকে বলেছিলেন অর্থনীতিবিদ! বলেছিলেন―” কমেডিয়ান কোথায়? আপনি তো অর্থনীতিবিদ্ !”
বয়স যখন ষাটের কোঠায়, মা হানা চ্যাপলিন মারা যান ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রেণ্ডেল হসপিটালে।
 নার্সরা জানিয়েছিল, মৃত্যুর আগের দিনও তারা, মা ও ছেলের প্রাণখোলা হাসি
শুনেছে।
এরপরের কথাটুকু বলব, যেমন মৃনাল সেন বলেছেন, আমরা পড়েছি, জেনেছি। অবশ্যই জেনেছি চিন্ময় গুহর অনুবাদ ‘আমার চ্যাপলিন থেকে….।
অনভিজ্ঞ অভিনেতা চার্লি। অনভিজ্ঞ অভিনেতা চার্লস, (১৯১০ থেকে ১৯১৩) তিনি ছিলেন ফ্রেড কার্নো নামে এক বিখ্যাত মিউজিক হল মালিকের ট্রুপের সদস্য।
বলাবাহুল্য, ইংরেজদের মিউজিক হল আর আমেরিকানদের  “ভদভিল” ―এর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। 
ফ্রেড কার্নোর দলে একটি সতেরো বছরের ছেলে এতটাই নজর কাড়লো যে কিস্টোন ফিল্ম কোম্পানির ম্যাক সেনেট খবরা-খবর নিয়ে ম্যানেজারকে টেলিগ্রাম করলেন ―― Try to get hold of a bloke called Chapman, Caplin or something, playing second circuit.
ব‍্যস্ ঐ শুরু!!!
এখান থেকেই চার্লস চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রজীবন শুরু। 
তখনও তাঁর আকাশচুম্বী সাফল্যের আরও কয়েক বছর দেবী। সে কথা তুলে  আনা যাবে অন‍্য আর একদিন… হয়তো এই শ্রাবণেই !!!…
========================