You are currently viewing মার্গারেট অ্যাটউডের-এর কবিতা > অনুবাদ : অনন্ত উজ্জ্বল

মার্গারেট অ্যাটউডের-এর কবিতা > অনুবাদ : অনন্ত উজ্জ্বল

মার্গারেট অ্যাটউডের-এর কবিতা
অনুবাদ : অনন্ত উজ্জ্বল

মার্গারেট অ্যাটউড কবি, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক, ছোটগল্পকার এবং প্রাবন্ধিক। এর বাইরে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত নারীবাদ, পরিবেশবাদ, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং মানুষ হিসেবে মানুষের বেঁচে থাকার যে অধিকার এইসব বিষয়ে আন্দোলনকারী হিসেবে। কানাডার অটোয়া শহরে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণকারী অ্যাটউড টরেন্টো ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে বিএ এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কানাডার জীবিত লেখকদের মধ্যে অন্যতম সেরা লেখক। তাঁর লেখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং তাঁর নিজ দেশের সমালোচকদের কাছে প্রসংশিত হয়েছে। সাহিত্যে সম্মানজনক পুরস্কারের প্রায় সবগুলো পুরস্কারই তিনি পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ, আর্থার সি ক্লার্ক পুরস্কার-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। অ্যাটউডের বই সব সময় বেস্ট সেলারের তালিকায় থাকে এবং তাঁর কাহিনির উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি সিনেমা ও টেলিভিশন সিরিজ তৈরি হয়েছে।
১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই Double Persephone।  জীবন ও শিল্পের মধ্যে যে নাটকীয় বৈসাদৃশ্য আছে তা এই কাব্যগ্রন্থের বিষয়বস্তু। এই বইটি সে সময়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ E.J Pratt Medal জিতে নেয়। এরপর ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় ঞযব ঈরৎপষব এধসব নামের আরো একটি জনপ্রিয় কবিতার বই। এই বইটি গভর্নর জেনারেল পুরস্কার অর্জন করে। তাঁর কবিতার এই বই দুটি তাঁকে কবি হিসেবে সকলের মাঝে পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
অ্যাটউডের রয়েছে প্রবলভাবে একদিকে শিল্পের প্রতি অন্যদিকে জীবনের প্রতি টান। অ্যাটউড সব সময় তাঁর অবস্থানের অন্যদিক সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তিনি কবিতায় দ্বৈততাকে কখনো কখনো বিচ্ছেদ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই বিচ্ছেদ তাঁর চরিত্রগুলোকে একে অপরের থেকে এমনকি প্রাকৃতিক জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। অ্যাটউড এমন কিছু বিষয় কানাডিয়ান সাহিত্যে উপস্থাপন করেছেন যা কিনা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ সাহিত্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি বলেন, ‘একজন লেখককে অবশ্যই তাঁর দেশের সাহিত্য ঐতিহ্যের ভিতর থেকে কাজ করতে হবে’ এবং সেভাবেই তিনি তাঁর লেখালেখি করে আসছেন।
নারীদের অবস্থান, অসহায়তা, সংগ্রাম এই বিষয়গুলো বারবার তাঁর রচনার বিষয় হয়ে এসেছে। তাঁর অনেক রচনায় নারীই প্রধান চরিত্র তারপরও তিনি কখনোই বিশ্বাস করেন না, নারীরা যা করেন তার সবই ঠিক, যা বলেন তা কখনোই ভুল না। এটা পরিস্কার নারীবাদ তাঁর রচনায় ‘বুঝতে চাওয়া এবং বুঝাতে চাওয়া’ এমন এক নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে।
অ্যাটউডের জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে। তাই তাঁর দেখায়, বলায়, বলতে চাওয়ায়, সর্বোপরি লেখায়, যুদ্ধের এমন এক বাতাবরণ তৈরি হয়, সেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি এ যুদ্ধ যতটা না বাইরে তার থেকেও অনেক বেশি ভিতরে- নিজের সঙ্গে!

চক্রখেলা

১.

খোলা স্থানে-
শিশুরা যুক্ত হাতে হাতে
ঘুরছে তারা চতুর্দিকে

তাদের প্রতিটি বাহু মিশে যাচ্ছে
পাশের বাহুর সঙ্গে,
যতক্ষণ না পর্যন্ত
সম্পন্ন বৃত্ত
পরিণত হচ্ছে
এক শরীরে

তারা গান গাইছে, কিন্তু
সবাই গান গাইছে না:
তাদের পা নড়ছে
গান গাওয়ার প্রায় প্রতি মুহূর্তে

তাদের মুখে
দেখতে পাচ্ছি
একাগ্রতার চিহ্ন
তাদের চোখগুলো- স্থির
শূন্যে- চলন্ত স্থানে
ঠিক তাদের চোখের সামনে।

আমরা সম্ভবত ভুল বুঝেছি:
মোহ ছুটে যাচ্ছে আনন্দের জন্য
কিন্তু সেখানে কোনো আনন্দ নেই

আমরা দেখতে পাচ্ছি (বাহুর মধ্যে বাহু)
আমরা যেন দেখছি তারা একাগ্রভাবে
ঘুরছে বৃত্তে এবং বৃত্তাকারে,
নিমগ্ন ছাত্রের মতো (পায়ের নিচে ঘাসেরা উপেক্ষিত,
উপেক্ষিত লনের কাছে বেয়ে উঠা গাছগুলো
উপেক্ষিত ঝিলের পানিও)
এটাই তাদের কেন্দ্রবিন্দু
বৃত্তে এবং বৃত্তাকারে ঘোরার (দ্রুত এবং ধীরে)
ঘুরছে বৃত্তে এবং বৃত্তাকারে।

২.

তোমার সঙ্গে শুরু হয়েছিল
এইখানে, এই ঘরে

আয়নার ভেতর থেকে, হাতছানির মতো
সেই কাচের আয়না গলে গেছে
শিরিস-আঠার দৃঢ় বন্ধন ভেঙ্গে

তুমি আর আমি অস্বীকার করছি
তার প্রকৃত প্রতিফলন, অথচ
আমরা আর কখনোই এই আয়নার মধ্যে হাঁটবো না,
আমরা আলাদা হয়ে যাচ্ছি।

যাই হোক, এটাই সত্য
এখানে তারা
অনেক আয়না রেখে গেছে
(টুকরো টুকরো, বাঁকাভাবে ঝোলানো)
এই ঘরের উপরে ছোট জানালায়
এবং শূন্য আলমিরাতে; এমনকি
পেছনের দরজায়ও
একটি আয়না ঝুলানো আছে।

পাশের ঘরে কয়েকজন মানুষ
তর্ক করছে, ড্রয়ার খুলছে এবং বন্ধ করছে
(মাঝখানের দেয়াল খুবই পাতলা)

তুমি আমার সেই দিনগুলোর দিকে তাকাও,
তার কথা শোনো, সম্ভবত শুনতে পাচ্ছ, অথবা
দেখতে পাচ্ছ- তোমার নিজের প্রতিবিম্ব
কোনো এক স্থানে
আমার মাথার পেছনে,
কাঁধের উপরে

তুমি বদলে গেছো, আর আমাদের সেই ঘর
আমাদের নিচে চাপা পড়ে- দৃষ্টির বাইরে
হারিয়ে গেছে

পাশের ঘরে কেউ একজন আছে
সেখানে সব সময় কেউ একজন থাকে
(অনেক দূরে তোমার মুখ, শুনছো…)

পাশের ঘরে কেউ একজন আছে।

৩.

যাই হোক,
মনে হচ্ছে
তাদের সব খেলার মধ্যে
কিছু কারণ আছে

যাই হোক
অন্তত প্রথম দেখায়
সেই কারণগুলো সব বিমূর্ত

আমরা যখন সন্ধ্যায় বসে
দানবীয় যুদ্ধের
সেইসব কিংবদন্তি পড়ি,
আর পড়ি বনের মধ্যে গোপনে বিশ্বাসঘাতকতা
আর নৃশংস মৃত্যুর গল্প,

তখন তারা খুব কমই শোনে সেই সব কথা;
একজন হাই তুলছিলো
আর একজন উসখুস করছিলো;
অন্য একজন
কাঠের হাতলওয়ালা হাতুর চিবাচ্ছিল;
অপেক্ষাকৃত তরুণ একজন
তার পায়ের কাটা আঙ্গুল পর্যবেক্ষণ করছিলো,

আর বিস্মিত আমরা দেখছিলাম-
তারা কিভাবে
কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়া থাকতে পারে
অথবা এমন কি আগ্রহে-
খোলা তলোয়ার ধীরে ধীরে আঘাত করে
মৃত নায়কের দেহে।

তারপরের রাতে তারাই
হাঁটা-হাঁটি করে সমুদ্র সৈকতে

আমরা তাদের তৈরি
পরিখাগুলো খুঁজে পেয়েছি:
বালির মধ্যে পরিখাগুলো
একপাশ দিয়ে প্রবাহিত
সেগুলো সুরক্ষিত নির্দিষ্ট কাঠির চিহ্ন দিয়ে

আর এমন হ্রদ ঘেরা দ্বীপে
কোনো সাঁকো নেই:
শেষ প্রচেষ্টা
(যাই হোক সেগুলো এক ঘণ্টার মধ্যে জলে ধুয়ে গেলো)
হতে পারে, একজন শরণার্থী মানুষ
যেভাবেই হোক রাতের সৈকতে একা একা হেঁটে
পৌঁছে যাবে নিশ্চিত গন্তব্যে।

৪.

ঘরে ফিরে:
আমি লক্ষ্য করলাম
তোমার সব ধরনের কথা বার্তা-
নাটকীয়, শরীরে হিসেবি অঙ্গ-ভঙ্গি,
বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবহারের স্পর্শ, আর এখন
আমাকে এড়িয়ে থাকছো
এবং রাখার চেষ্টা করছো নির্দিষ্ট দূরত্বে
অথচ তুমি জানো আমি এখনো এখানে

আমি তোমাকে দেখছি
তুমিও আমাকে দেখছো
উদাসীনভাবে
যদিও এখনো তোমার দৃষ্টিতে আছে
সেই একই ধরনের কৌত‚হল
যাকে তুমি হঠাৎ করে আবিষ্কার করতে পারো
তোমার শরীরে:
একটি আঁচিলের মতো,

আর আমার মনে আছে
তুমি বলেছিলে
শৈশবে তুমি মানচিত্রের মতো
চিহ্ন ছিলে
(বানানো না কিন্তু) সেই চিহ্ন দেখে
চলমান একটি কলম অথবা একটি তর্জনী
গিয়েছিলো নদীর তীরে,
পাহাড়ের চ‚ড়া আঁকা হয়েছিলো- ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গে;
সেই তো আমাদের স্মৃতি বহনকারী
(এই পাহাড়ের চ‚ড়াই আমাদের নাম লিখে রাখার সঠিক জায়গা)

সুতরাং তুমি এখন বলতে পারো
আমি এই দেশের সীমানা
অথবা অবাক করা এক নতুন রেখা
তোমার চির চেনা শরীরে
আমার অস্তিত্ব, এই ঘরের নিচে
আটকে পড়া সম্প্রসারিত এক মানচিত্র,
তোমার মনের মহাদেশে (এখানে কিন্তু এখনো
আলনা এবং আয়নার কণ্ঠস্বর দেয়ালের মধ্যে
কিন্তু তোমার শরীর বিছানার বাইরে)

তোমার চোখে দেখা আমার প্রতিবিম্ব
আলপিনের মতো- নীল ঠান্ডা
মরণাপন্ন।

৫.

শিশুরা ধূসর পাথরের ব্লকের মতো
একসময় তারা দুর্গের দেয়ালে ছিলো কিন্তু
এখন তারা মিউজিয়ামে:

বিশেষ করে
তারা বন্দুক পছন্দ করে
এবং বর্ম নিয়ে আসে অন্য কোনো স্থান
অথবা অন্য কোনো দেশ থেকে
যখন তারা বাড়ি ফিরে যায়
তাদের আঁকিবুঁকিতে পূর্ণ থাকে
পরবর্তী কয়েকটা দিন,
সেকেলে তলোয়ারের মাথায়
সূর্যের চিহ্ন অঙ্কিত বারুদ
ভাঙ্গা বর্শা
আর উজ্জ্বল রঙ্গের লাল বিস্ফোরণ।

যখন তারা কামান ব্যবহার করে
(তখন তারা আমাদের সন্তান থাকে না)

আমরা বাইরে একা একা হাঁটছি
বাঁধ, লিখে রাখছে,
তারা কিভাবে ধ্বংস হয়েছিলো
পা আর ফুলের শিকড়ের
অবিরাম আক্রমণে;

এই অস্ত্রগুলো
এক সময় বাইরে ছিলো
যুদ্ধে নিজেদের শাণিত করার জন্য
এখন সেইগুলো ঘরের মধ্যে বন্দি,
দুর্গে আটকানো,
ভাঙ্গা কাচের ফ্রেমে বাঁধানো;

কেন এটা এমন
(আমি চিন্তা করছি, পাথরনির্মিত প্রবেশপথের চতুর্দিকে
যত্নের সঙ্গে ছাঁচ তৈরির কথা)
এটা সেই সময়,
যখন সব কিছু প্রতিরোধ করার মতো
কোনো কিছুই আর নেই।
তখন প্রতিহত করার মূল্য কত?

৬.

আর তুমি সেই নিরাপদ খেলাটিই খেলো
যে খেলার কোনো পিতামাতা নেই।

ছিন্নভিন্ন শীতের খেলা
সে বলে, আমি একা
(ক্ষুধার্ত: আমি এটাও জানি
তুমি আমাকে নিয়ে খেলতে চাও।)

ছিন্নমূল শিশুদের খেলা
দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো প্রতিটি জানালায়,

কাঁপতে কাঁপতে গ্লাসে চাপ না দিয়ে
তারা চিমটি দেয় নাকে, তুষার
জমছে তাদের ঘাড়ের উপর,
সুখী পরিবার দেখছে সেই দৃশ্য!

(এতো প্রতিহিংসার খেলা)

সে যাদের অবজ্ঞা করে: তারাই তো
ভিক্টোরিয়ান ক্রিসমাস কার্ড:
প্রফুল্ল সৌন্দর্যের রঙ
দেখা যায় সস্তা কাগজের নিচ দিয়ে
স্থান এবং কাপড়ে-
ফিতা লাগানো শহরতলীর হাসি
তাদের ব্যক্তিগত খেলার
নিজস্ব নিয়ম কানুন:
আনন্দের খেলা: খেলছে

পিতা-মাতা
মা-বাবা

সে আনন্দিত
ঠান্ডার মধ্যে
নিজের মতো
বেরিয়ে যেতে পেরে

(নিজে নিজেকে আলিঙ্গন করে)।

আমি যখন তাকে এই কথা বলি,
(জরির বরফের মতো নকল হাসি হেসে)
সে বলে:

তুমিও আলিঙ্গন করো।

মিথ্যা বলার এই তো
কয়েকটি উপায়
কিন্তু আমার অনুমান ঠিক
আগের মতো:

যদিও আমার মন পড়ে আছে
অন্য কোনো স্থানে- ভিন্ন আবহে
কোনো এক জানালার বাইরে।

৭.

আবার বসন্তে;
এই ঘরের আয়নার মধ্যে
একটি শিশু ঘুরছে; গাইছে
সেই একই গান;

অনিয়মিত ব্যবহারে এই বিছানা
বেশ এলোমেলো,
যেমন নোংরা থাকে শুকনো ঘাসে ঢাকা মাঠ
তেমনই- বিছানার চাদর
কুঁচকানো, আছে ছোট ছোট ছিদ্র,
সেই লন কি ঘাসে ভরা ছিলো
আর এটাই কি সেই এলোমেলো দেয়াল
যাকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে গাছেদের দল,
তলা ছুঁই ছুঁই পুকুরের জল

(একটি ভিমরুল এসে,
এক টুকরো স্যান্ডউইজে বসে
নিজস্ব যন্ত্রণায় আবার চলে যায় নিকটস্থ সমুদ্র সৈকতে
তুমি কিভাবে এতো যত্নের সঙ্গে
তা বিস্তারিত বলো;
বাচ্চাদের মধ্যে একটি শিশু ফিরে যেতে চাইলো
কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হলো না।)

তোমার খেলার শেষ নিয়ম অনুযায়ী,
তুমি তাদের
বাতাস আর গতিতে রূপ দিয়েছো,
কিন্ত এই খেলায় কোনো আনন্দ নেই

যেমন আমরা মিথ্যা বলি
অস্ত্রসজ্জিত হাতে, ‘পারলে আমার সঙ্গে যোগ দাও
তা না হলে বিদায় হও’
(তোমার পর্যবেক্ষণ আমার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেছে
আমি দেখছি মেরুদন্ডহীন মহিলা
হাড়ের খাঁচায় বন্দি, পরিত্যক্ত দুর্গ
ভিতর থেকে আটকানো),
আমাদের ঠোঁট কথা বলে উঠে
ঠিক তাদের গান শুরুর সময়,

পাশের ঘরে
ড্রয়ার খোলা আর বন্ধ করার
শব্দ শুনছি

(অবশ্যই এই শব্দ বিপদজনক
কিন্ত কোথায় এই শব্দ
তুমি কি তা বুঝতে পার?)

(শিশুরা ঘুরছে
গ্লাসের গোল একটি খাঁচার পাশে
সেখান থেকে উষ্ণ বাতাসে
পাতলা সুতার সঙ্গে
ভেসে আসে পোকার কন্ঠস্বর)

এখানে যেমন করে
আমরা মিথ্যা বলি, ধরো সেভাবেই
একঘেয়ে ঘুরাঘুরি করি
ঘর থেকে ঘরে,
আমাদের প্রতিরক্ষার
স্থান পরিবর্তিত,

আমি তোমার কারাগারের
সেই হাড়গুলো
ভাঙ্গতে চাই,
একই ছন্দে
(শীত-গ্রীষ্মে)
ভাঙ্গতে চাই
সবগুলো  গ্লাসের খাঁচা,

সবগুলো মানচিত্র মুছে,
প্রতিরোধকারী ডিমের খোসা
ভেঙ্গে- গান গেয়ে উঠে
তোমাদের শিশুশিল্পীরা:

আমি এই বৃত্ত
ভাঙ্গতে চাই।


অনন্ত উজ্জ্বল

কবি, অনুবাদক এবং পেশায় উন্নয়ন কর্মি। প্রায় দুই দশক ধরে লেখালেখি করছেন। কবিতা লেখা, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা (ঢোলসমুদ্দুর) দিয়ে লেখক জীবনের সূচনা। এখন পোলিশ সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় অনুবাদ করেন। এর পাশাপাশি ছোটদের জন্য অনুবাদ করেন বিভিন্ন দেশের রূপকথা। তিনি অনুবাদ বিষয়ক ফেলোশিপ, সেমিনার ও উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য পোল্যান্ড, জার্মানী, ফ্রান্স, ইটালি, ভারত ও আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন। অনন্ত উজ্জ্বল বর্তমানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উপপরিচালক হিসাবে কর্মরত আছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা আটটি।