মহামুনি বিহার ও পরিত্যক্ত চাকমা রাজবাড়ী
জিললুর রহমান
শৈশব থেকে বহুবার শুনেছি মহামুনি বৌদ্ধ বিহারের নাম। শুনেছি তার শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশের কথা। কিন্তু মনে হতো যেন এই বিহার অনেক অনেক দূরে; দুর্গম কোন অঞ্চলে তার ঠিকানা। তাই কখনও যাওয়া হয়নি। গত ১০ ডিসেম্বর ২০২১ শুক্রবার যেদিকে দু’চোখ যায় প্রভাতযাত্রায় আমরা যেতে যেতে নোয়াপাড়া, রাঙ্গুনিয়া পার হয়ে চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত চলে যাই। ফেরার পথে একটি রাস্তার তোরণে মহামুনি বিহারের নাম নজরে এলো। মনে মনে সিদ্ধান্তে এলাম যথাশিঘ্র এখানে আসতেই হবে। পরদিন শনিবার ১১-১২-২১, আমি ছুটিতে ছিলাম। সকালে সবাই মিলে সবুজ হোটেলে নাস্তা সারলাম। তারপর খানিক বিশ্রাম। দশটার দিকে রুমিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি কাপ্তাই রাস্তা ধরে। নোয়াপাড়া হয়ে বেতাগীর গলিতে ঢুকে পড়ি। কিছুদূর গিয়ে একটা চিকন গলির মধ্যে গলে যাই। দুই পাশে টিলার মতো পাহাড়ের বুকে বৃক্ষরাজি ঘেরা জঙ্গল। পুরো পথ ছায়াচ্ছন্ন। যেন দিবসের মধ্যযামে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। একসময় দৃশ্যমান হয় বিশাল তোরণের সামনে পরিচ্ছন্ন চত্বর। তোরণের পাশেই একটি ফলকে মহামুনি মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা আছে। মহামুনি শব্দের অর্থ মহামানব। এখানে গৌতম বুদ্ধকেই বুঝানো হয়েছে। জনশ্রুতি আছে, গৌতম বুদ্ধ আরাকান পর্যন্ত এসেছিলেন এবং সেখানকার শিল্পীরা স্মৃতি থেকে বুদ্ধমূর্তি তৈরি করেন যা বুদ্ধের মূল চেহারার সাথে সামন্জস্যপূর্ণ। ইতিহাস মতে, কদলপুরের সন্তান চাইঙ্গাঠাকুর ১৭৮০ সালে বার্মায় জ্ঞান অর্জনার্থে গিয়েছিলেন। বলা হয়, শিক্ষা লাভ করে ফিরে আসার সময় তিনি আরাকানে প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধমূর্তির নকল বানিয়ে কিংবা ছবি আঁকিয়ে নিয়ে আসেন। এবং ১৮০৫, মতান্তরে ১৮১৩ সালে সে মূর্তির আদলে বৃহত্তর মূর্তি বানিয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পাহাড়বেষ্টিত গ্রামটির নাম লেই থেকে মহামুনি পাহাড়তলী নামে পরিচিত।
গাড়ি থেকে নেমে শান্ত সমাহিত এক ধ্যানী পরিবেশের ভেতর ঢুকে পড়ি। জুতো খুলে এগিয়ে যাই বিশাল অশ্বথ গাছের কাছে। গাছটির চারপাশ ঘিরে তৈরি হয়েছে পাকা দেওয়াল। দেওয়ালে অনেকগুলো খোপে ছোট ছোট ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি সারি সারি সজ্জিত — সোভিত বুদ্ধ, রেবত বুদ্ধ — এরকম নানা নামের বুদ্ধমূর্তি। সুউচ্চ ডাল থেকে ঝুলছে সিলিন্ডারের মতো শাদা কাপড়ের বেলুনসদৃশ ধ্বজা। এই ধ্বজা প্রবারণা পূর্ণিমা থেকে কঠিন চীবর দানোৎসবের মধ্যে ওড়ানো হয়। ধ্বজা উড়িয়ে সার্বিক মঙ্গল কামনা করাই ভক্তের আরাধ্য। আমার মনে পড়ে রবিঠাকুরের গান—— “উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে, ওই যে তিনি ওই যে বাহির পথে”।
অশ্বত্থ গাছের পাশেই দেখতে পাই একটি আবক্ষ মূর্তি — ড. বেণীমাধব বড়ুয়ার। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ভারত তত্ত্ববিদ দার্শনিক। ১৮৮৮ সালে জন্মেছিলেন এই মহামুনি পাহাড়তলী গ্রামে। তার সংক্ষিপ্ত কর্মপরিচয়ের বিবরণও লেখা আছে সামনের নামফলকে। মূল মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দুয়েকজন পূজারী। রুমি এগিয়ে গেল দূরে ক্রীড়ামত্ত অনেকগুলো বানরের দিকে। বানরগুলো পাশের জঙল থেকে এসে এখানে রোদ পোহানোর অবসরে এটা ওটা খাচ্ছে। বানরের সাথে ছবি তুলল রুমি। আমি দেখলাম বানরদের পাশেই একটি বেশ উঁচু অশোকস্তম্ভ দাঁড়িয়ে রয়েছে, জানি না কবে এই স্তম্ভ এখানে পোঁতা হয়েছিল। আমরা ঘুরে ঘুরে আশেপাশে দেখতে দেখতে একসময় মূল মন্দিরে প্রবেশ করলাম। মন্দিরের ভেতরে থাই এলুমিনিয়ামের গরাদের ভেতরে একটি বিশাল স্বর্ণবর্ণ বুদ্ধ মূর্তি ধ্যানস্থ। সামনে পূজারীদের রেখে যাওয়া ফলমূল এবং অন্নব্যঞ্জন খোলা পড়ে আছে। না ভগবান না পূজারী কারোই নজর নেই এসব প্রসাদের দিকে। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না, আমার ক্ষুধার উদ্রেক হচ্ছিল। তাই সরে এলাম। আরেকটি বড় মন্দির প্রকোষ্ঠ রয়েছে বুদ্ধের বিশাল শায়িত মূর্তি এবং রাজগুরু বিজয়ানন্দ মহাথেরোর ফসিল, যিনি ২০০৩-এ দেহত্যাগ করেছিলেন। মনে হচ্ছে যেন জ্যান্ত বসে আছেন।
ওদিকে, অশ্বত্থ গাছের পেছনে দেখি সুন্দর একটা বাগান। ঢুকার পথে একটা সাইনবোর্ডে লেখা অষ্টবিংশতি বুদ্ধ। আজকাল সহজ বাংলা পাঠের অভ্যাসে রুমিও প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা কি। আমি বললাম, এখানে আটাশটি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। তথ্যসূত্র মতে, ২০১২ সালে এই অষ্টবিংশতি বুদ্ধ স্থাপন হয়। পুরো এলাকার সুন্দর বাগানের চারপাশে সারি সারি সজ্জিত প্রকোষ্ঠে একটি করে বুদ্ধমূর্তি সেই শ্বাশ্বত ভঙ্গিতে বসে আছেন। একেকটি একেক জনের সম্মানে একেক ব্যক্তির দানে তৈরি হয়েছে। তাঁদের নামও খোদিত আছে। এমন সময় আমার এক শ্যালিকা ফোন করলে রুমি তাকে বুঝালো, আমরা অষ্টবিংশতি বুদ্ধ দেখছি। সেই প্রবল উচ্ছ্বাসে জানতে চাইল “বুদ্ধদেব গুহা”?! তার হয়তো লেখক বুদ্ধদেব গুহের কথা মনে পড়েছিল, তার সাথে কি করে কি মিলিয়ে কল্পনা করেছে জানি না, তবে আমরা বেশ মজা পেয়ে হাসলাম। সেও ভুল বুঝে হাসতে লাগল। আনমনে ভাবতে লাগলাম, যে মহামতি সিদ্ধার্থ মুক্তির সন্ধানে সাধনা করে গৌতম বুদ্ধ হয়েছিলেন, আজ তাঁর মুরতি সর্বত্র গারদের অভ্যন্তরে। হয়তো খোলা রাখলে ভগবানও চোরের খপ্পরে পড়তে পারেন। এই স্নিগ্ধ চত্বরে অনেকটা সময় আমরা কাটালাম। একটি শিষ্য-বেষ্টিত বুদ্ধের সুন্দর স্থাপনাও রয়েছে। বেরিয়ে আসার সময় বড় হল ঘরটির দ্বার বন্ধ থাকায় তার সামনে দাঁড়িয়ে দুটো ছবি তুলে ধীরে বেরিয়ে এলাম বিহারের সুন্দর পরিবেশ থেকে সামনের ছায়াচ্ছন্ন গ্রামপথে। চায়ের তেষ্টা পেয়েছে বড়। আমরা গলিপথ থেকে বের হয়ে একটি ঝুপড়ি দোকানের সামনে থামলাম। চায়ের বায়না দিয়ে রাস্তার অপর পাড়ে খড়ের গাদার সামনে দাঁড়ালাম ছবি তোলার জন্যে। এমন সময় দেখি একটা বেবিট্যাক্সি থেকে এক মৌলভিতুল্য ভদ্রলোক নেমে এগিয়ে আসছেন সরাসরি আমাদের দিকে। রুমি একটু অস্বস্তি বোধ করছিল। ভদ্রলোক এসেই অভিযোগ করলেন, ঘরের দুয়ারে এসে এভাবে চলে যাওয়া তো উচিত হচ্ছে না। একটু লক্ষ্য করে দেখলাম, এ তো আমার ফুফাতো বোনের বর। দাড়ি রাখার পরে আর দেখা হয়নি, সে বেতাগী পীরের বড় ছেলে। কুশল বিনিময়ের পরে ওকে বিদায় জানিয়ে আমরা চায়ের তৃষ্ণা নিবারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। গ্রামের সুস্বাদু মুড়ি আর চা আমার হৃদয় জুড়িয়ে দিল। আমরা পরের মোকামের দিকে এগিয়ে গেলাম।
(দুপুর ১:২৪; ১৫-১২-২১; ঊর্ধ্বলোক, নভোএয়ার, চট্টগ্রামের পথে।)
২.
মহামুনি বৌদ্ধ বিহার থেকে বেরিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম রাঙ্গুনিয়ার পথে। রাঙ্গুনিয়া আমাদের আত্মীয় বাড়ি রয়েছে, প্রায়শ যাওয়াও হয়। আমরা পেরিয়ে গেলাম চুয়েট ও ইমাম গাজ্জালী কলেজ। তারপর একসময় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ঘাটচেক এবং ইছাখালী অতিক্রম করি। ইছাখালি ইছামতী নদীর উপকুলীয় এলাকা, একটি পুরাতন ব্রিজ পেরিয়ে ঘন জনবসতি ও রমরমা বাজারের শোরগোলের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। মরিয়ম নগর পৌঁছে বামে মোড় নিলাম এবং সরু পিচঢালা পথে অনায়াসে এগিয়ে যেতে যেতে দেখতে থাকি দুপাশের ধানক্ষেত এবং নানা গাছগাছালির সবুজ। মাঝে মাঝে দোকান ও বিদ্যালয়ের স্থাপনাও রয়েছে। পাকা ঘরবাড়ির দেখাও পাচ্ছি বেশ কিছুক্ষণ পর পর। একসময় এই পথ রাজার হাটে গিয়ে পৌঁছাল। আমি ফোন করলাম হাবিব সাহেবকে। দেখি, তিনি আমাদের জন্যে রাজারহাট বাজারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষা করছেন। হাবিব সাহেব আমাদের খালাত ভাই আসাদের বাল্যবন্ধু। রাজারহাট বাজারেই তাঁর ওষুধের দোকান। শাদা পাঞ্জাবি পরা লম্বাদাড়ি ও শাদা টুপি পরা হাবিব খুব আন্তরিক ও অমায়িক মানুষ। আমি ভেবেছিলাম আমাদের বাজার থেকে আরও কিছুদূর গাড়ি নিয়ে যেতে হবে। হাবিবকে গাড়িতে উঠে বসার আহবান জানাই। কিন্তু হাবিব বললেন, না, আমরা একদম জায়গা মত এসে পড়েছি। বাজারের মধ্যেই একপাশে আমাদের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন সহসা। নিশ্চয়তা দিলেন যে এখানে গাড়ি শতভাগ সুরক্ষিত।
এবার পায়ে হেঁটেছেন এগিয়ে যাই বাজারের ভেতর দিয়ে। সামান্য এগুতেই বাজারের মলিনতা, ধুলা-ধুসর চেহারা পাল্টে গিয়ে গাঢ় সবুজের ভেতরে ঢুকে পড়ি। বাজারের একদম শেষ যে বিশাল বাড়িটি এখন ব্যবহার হচ্ছে কাঠ চেরাইয়ের কাজে, তা অনেক প্রাচীন পাকা দেওয়ালের দো’চালা বাড়ি——কমপক্ষে আড়াই-তিনশত বছরের পুরনো। একসময় এই ঘর কাচারি ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আমরা তাকে পাশ কাটি ঘাসে ছাওয়া দীর্ঘ পথ হাঁটার সময় ডানে দূরে দেখতে পাই মন্দিরের চূড়া। হাবিবের সাথে তাঁর আরও এক বন্ধু আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যে জানলাম, এখানে বেশ ক’বছর আগেও মেলা বসতো। এটাও বৌদ্ধ মন্দির। পরে আমার মামীর কাছে জেনেছি, তাঁরা শৈশবে এই মেলায় নিয়মিত আসতেন। বামে কাছারী ঘর, ডানে বিশাল শান্ত স্নিগ্ধ দিঘী—— মাঝখানে সবুজ পায়ে হাঁটা পথ ধরে এগিয়ে চলি সামনে একটি বেড়ার দরজার দিকে। একটি টিনের ছাউনি পাকা দেয়ালের ঘর দূরে গাছপালার ফাঁকে দৃশ্যমান। বেড়ার কাছে পৌঁছাতেই হাবীব ভাই সারমেয় বিষয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করলেন। দরজায় পোড়োবাড়ির ভগ্নদশায় বিপজ্জনক হওয়ার সতর্কবার্তাও লেখা আছে। বাতাসে আমাদের গায়ের গন্ধ ও কথাবার্তার আওয়াজের প্রতিক্রিয়ায় বেশ দ্রুতই তেড়ে এলো বেশ ক’টি তাগড়া কুকুর। হাবীব ভাইয়ের হাঁকডাকে গেরস্থ বেরিয়ে এসে আমাদের রক্ষা করেন। বামে তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারি না। একটি পরিত্যাক্ত প্রত্ন-দালান। মোটা ইটের দেয়ালে তিনশত বছরের প্রাচীন দ্বিতল বাড়িটি এখনও দণ্ডায়মান। যদিও তার বেশ অনেক জায়গায় ধ্বস নেমেছে। শ্যাওলায় আকীর্ণ এই প্রাচীন চাকমা রাজপ্রাসাদ একসময় কত হুল্লোড়, কত নাচগানে মুখরিত ছিল! এখন কেবল এক পোড়োবাড়ি, সংস্কারের কোন আয়োজনও নেই। প্রাসাদের ওপারে বিস্তীর্ণ মাঠ এখন অনেকটা জংলা জায়গার মতো। তারপরেই বহমান ইছামতী নদী। সেকালে নৌপথেই যাতায়াত যোগাযোগ সহজ এবং জনপ্রিয় ছিল বলে ইছামতী নদীর পাড়ে চাকমা রাজা তাঁর প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন। এক কোণে একটি পারিজাত কুসুমের গাছ দণ্ডায়মান।
রাজবাড়ির পাশেই তাই হাটের নাম রাজারহাট। পরিচয় হলো রুমেল দেওয়ানের সাথে, যিনি আমাদের কুকুরের আক্রমণ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। তিনিই এই সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক, রাজবংশের উত্তরপুরুষ। তিনি বললেন, চাকমা রাজা এবং রাজপরিবার এখানে থেকেই তাঁদের রাজত্ব পরিচালনা করতেন। ইতিহাসের তথ্যে জানা যায়, রাজা সের মস্ত খাঁ’র সময়ে (১৭৩৭–৫৮) মোঘল সরকারের কাছ থেকে রাঙ্গুনিয়া ও কোদালা জমিদারী লাভ করার পরে চাকমারা ধীরে ধীরে রাঙ্গুনিয়া এবং কর্ণফুলী নদীর উপত্যকায় বসতি শুরু করে। কিন্তু যখন ব্রিটিশরা বোমাং সার্কেল ভাগ করে দিলেন তখন চাকমা রাজা সপরিবারে ও সপারিষদ রাঙ্গামাটি হিজরত করেন। তারপর চাকমা নাগরিকরাও ধীরে ধীরে চলে যায় রাঙ্গামাটি পাহাড় অঞ্চলে। এদিকে পরিত্যক্ত রাজপ্রাসাদ কালের করাল গ্রাসে পলেস্তারা-সুড়কি-ইট-ছাদ খসে পড়তে থাকে। অবারিত দ্বার তবু রাজপ্রাসাদে কেউ যায় না। নদীপথের পরিবর্তে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি সহজ হওয়ায় পুরো এলাকাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যবসিত হয়। কেবল রাজ বংশের যে পরিবারটি এই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে এখানে রয়ে গেল, রুমেল দেওয়াল তাদের উত্তরপুরুষ। রুমেল জানালো, বর্তমানে রাজা দেবাশীষ রায় এই প্রাসাদের মালিক। সরকারের অর্থায়নে এই প্রাসাদের সংস্কার হলে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধীনে সরকার প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। কিন্তু রাজা চান, সরকার সংস্কারের দায়িত্ব নেবে, প্রাসাদের স্বত্ব রাজার কাছেই থাকবে। এই সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না বলে প্রতিদিন প্রাসাদটি একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে। গত সপ্তাহের ভয়ঙ্কর ভূকম্পনের ফলে প্রসাদের একটি কোণের দেয়াল, সিঁড়ি ও ছাদ একেবারে ধ্বসে পড়েছে। আমরা একটা কক্ষের ভেতর পা রাখার কোন সুযোগই পেলাম না। রুমেল দেওয়ানের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এখন আমাদের সঙ্গী দুই কলেজ পড়ুয়া তরুণ। রাজার হাটে পৌঁছাতে তারা জানালো রাস্তার ওপারে বিশাল রাণীর দীঘি রয়েছে। আমরা রাস্তা অতিক্রম করে ইশকুল ভবনের গেইট দিয়ে ঢুকে ভেতরের বিশাল মাঠ পেরিয়ে দীঘির দেখা পেলাম। পরিষ্কার টলটলে জল ও চারপাশ গাছগাছালিতে ছাওয়া শান্ত সমাহিত পরিবেশে মনটা জুড়িয়ে গেল। আমরা হাবীব সাহেবের ওষুধের দোকানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। হাবীব সাহেব নামাজ সেরে ফিরে এলে বিদায় নিয়ে এগুলাম আসাদদের বাড়িতে। সেখানে আসাদ ওর মায়ের স্মরণে মেজ্জানের আয়োজন করেছে। আসাদ আমাদের ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর চাচাত ভাই। আমরা ফয়সলের বাড়িতে বসলাম। আমাদের জন্যে অধীর অপেক্ষায় ছিলেন আমার বড় মামী, আসাদের খালা। দেখা হলো কুসুম আপা সহ অনেকের সাথে। বেশ আড্ডা জমিয়ে মেজ্জানের মাংস উপভোগ করে এবং বিকেলে এককাপ অসাধারণ চা পান করে ফেরার পথ ধরি।
১৮-১২-২১, রাত ১০-৩২, বাংলামটর, ঢাকা (১১-১২-২১ ভ্রমণ)
****************************************************
জিললুর রহমান
কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক
**************************************************