You are currently viewing মহান স্বাধীনতা দিবসের একক কবিতা

মহান স্বাধীনতা দিবসের একক কবিতা

 

অন্তর চন্দ্র

মৃত্যুর পাঠশালা

আমাকে হত্যা করে জীবিত আমিই
ক্যানিবালিজম শিখি
আদিম ঠোঁটের
বেচুদা বলায়—
গত তীর্যক
নেমে এসে পড়ে
নিষাদের তিরে
পরাগরেণুর
অ্যালকো চাহনি
দু’পয়সা ধার জখম করেছে
বিটপীলতার সুরভি জগৎ;
কবে তুমি পাখি হবে?
নিটোল আকাশে পায়রা খোঁপায়
নষ্ট মাথার চিবুক গুলিয়ে
গোটা গোটা সাপ
কাল নৃত্যের মঞ্চের ভোগ—
দেখি আগুনের
জীবিত মৃত্যু;
ডাকিনীর লাল রক্ত গ্রাসে
সভ্যতা ছিনিমিনি খেলে যায়
তারে যদি বল তুমি ‘স্বাধীনতা’
অমরাবতীর থেকে

আমি মরে যাই—

অতঃপর চোখ মেলে চেয়ে থাকো…..

=================

অরুণ বর্মন

স্বাধীনতা তোমার জন্য

স্বাধীনতা তোমার জন্য
শিয়াল শকুন মুক্ত হলাম,
তোমার জন্য লাল সবুজের
স্বাধীন একটা স্বদেশ পেলাম।
তোমার জন্য বঙ্গবন্ধুর
মতো একজন বন্ধু পেলাম,
তোমার জন্য আপন ভুমে
বসত করার ছন্দ পেলাম।
তোমার জন্য নিজের সম্পদ
নিজের দেশে রাখতে শিখলাম,
তোমার জন্য বন্ধুর পথটা
একা একা হাঁটতে শিখলাম।
তোমার জন্য নিজের টাকায়
পদ্মা সেতু গড়তে শিখলাম,
তোমার জন্য ক্রিকেট ফুটবল
দেশের হয়ে লড়তে শিখলাম।
তোমার জন্য বিশ্ব মাঝে
যোগ্য দেশে গন্য হলাম,
রক্তে রাঙা স্বাধীনতা
তোমায় পেয়ে ধন্য হলাম।
================

আমিনুল ইসলাম

আমার মালিকিন, তোমার সোনার বাংলা

বিদেশ প্রত্যাবৃত্ত প্রধানমন্ত্রীর মন নিয়ে যখন লাল গালিচার  পথ বেয়ে
তুমি এসে বুঝে নাও ভালোবাসার উলকি আঁকা সিংহাসন,
চারপাশে চোখগুলো এসএসএফ এর সতর্কতায় টানটান
আসমানী চাঁদ হয়ে জ্বলে ওঠে ঝাড়বাতি ,
জোছনায় উদ্ভাসিত হৃদয়ের সাদা জোন, রেড জোন,–

ভেতর দরোজার সামনে ফোয়ারায় ঝলমল করে
পূর্ণচাঁদের লক্ষ রেপ্লিকা,   পূর্ণিমার পৃথিবীর মতো ধন্য হতে থাকি আমি।

যখন চারপাশে ভিড়, শব্দের সন্ত্রাস অথচ আমি একা,
তার মানে–তুমি নেই প্রজ্ঞাপিত প্রাণের প্রাঙ্গণে,
আমার হৃদয় পাহারাহীন আঁধারের এজমালি রাত,
আনারকলিরা এসে রেকি করে, অস্ত্রে শান দেয়
দেবী চৌধুরানীর দল, মোড়ে মোড়ে জেগে থাকে শয়তান ও সিপাহী;
কিন্তু চিৎকার শোনার থাকে না কেউই,  তাই চিৎকার করি না
সবাই এটাকে মৌনতা-মোড়ানো সম্মতি জ্ঞান করে;

আমি লুট হতে থাকি আর সফল পরকিয়ায় হাসে
কিউপিডের সুইস ব্যাংক। কিন্তু কি আশ্চর্য,
কোনো কোনো দিন– লুট হতে ভালো লাগে
যদিও পরক্ষণেই রাডারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ছাইরঙা ধোঁয়া!

ও আমার মালিকিন,
আমি যে মাঝে মাঝে খানিকটা লুট হই,  তুমি কি তা টের পাও ???

=================

ইফতেখার হালিম

অস্তিত্বের পতাকা

মার্চে মাসে একটি ভাষণ
ইতিহাসে আলো জ্বালায়; ফুল ফোঁটায়
ঘুম ভাঙা আলোড়ন
লড়াইয়ে প্রেমের উপমা।
শিশুর মতো বিশ্বাসের বর্ণমালায়
একটি আঙুল ধরে
শূন্যতা ছিঁড়ে আবেগে ঘ্রাণ নেই স্বাধীনতার।
রেস কোর্সের বজ্র ধ্বনি
ভাঙে পরাধীনতার কালো দরজা
আগুন ঝরা বিপ্লবী ডাকে
খোলস ছেড়ে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা
আকুলতায় দৃশ্য বদলায়
আহত বুকে সুখের নৈকট্য অনুভব।
রক্তে ভেজা উর্বর আয়তনে
আকাশের পাহারায়
লাল-সবুজের প্রচ্ছদে পাই
অস্তিত্বের পরিচয়
মায়ের অমৃত হাসি।
============

জাফর ওবায়েদ

মেঘসাম্রাজ্য

মেঘের ভারে আকাশটা কেমন যেন নুয়ে পড়ছে
জানলার পাশে এসে পুরনো মুখ দিচ্ছে পাঠ করার অফার
এ-সময় একঝাঁক চড়ুইয়ের বাড়ি বেড়িয়ে আসার আমন্ত্রণ
আমার বিভাজিত ভাবনারা একবার ধরে আনছে মেঘ একবার চড়ুই
রাস্তার উপর দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নানা জাতের যানবাহন
কোনওটি সাদা কোনওটি কালো কোনওটি হিন্দু কোনওটি মুসলিম
কোনওটি বৌদ্ধ কোনওটি খ্রিস্টান কোনওটি আমির কোনওটি ফকির
কিন্তু সকল গাড়ি ভরতি অমোচনীয় অন্ধকার
অন্ধকারের অদ্ভুত সাম্রাজ্য!
==================

তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী

স্বাধীনতা মানে

স্বাধীনতা মানে উদোম গায়ে নদীর জলে ডুব সাঁতার,
স্বাধীনতা মানে মশাল হাতে নিশি রাতে সাঁকো পার।
স্বাধীনতা মানে তিন লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনের কাব্যগাঁথা,
স্বাধীনতা মানে বীর শহীদের রক্তে আঁকা নক্সী – কাঁথা।
স্বাধীনতা মানে বধ্য-ভূমিতে শুয়ে থাকা আমার স্বজনের লাশ,
স্বাধীনতা মানে হায়েনা হঠানো স্মৃতি অমলিন বিজয়-উল্লাস।
স্বাধীনতা মানে শিখা অর্নিবান উন্নত শির আর পতাকা,
স্বাধীনতা মানে মুর্শিদী- জারি- সারি-ভাটিয়ালী- গল্প- কাব্য- রুপকথা।
স্বাধীনতা মানে আমার রুপসী স্বদেশ প্রিয় বাংলাদেশ ভূমি,
সকল দেশের সেরা আমার এদেশ তোমায় আমি চুমি।
======================

নবী হোসেন নবীন

বৈশাখী বার্তা

স্বপ্নের জাল বুনি বৈশাখী মেঘে।
ঝড় এসে ভেঙ্গে দেয় ঘর ভাঙ্গে হৃদয়
উড়ে যায় ঋণের ফসল।
জালে আটকে থাকে সোনালি ধানের খর
সর্বাঙ্গে থকথকে কাদা।
খর দিয়ে ফের গড়ে নেই ঘর।
এভাবেই বোশেখ আসে বোশেখ যায়
ঘুরে যায় সময়ের চাকা।
কৃষকের অঙ্গে লেগে থাকে কাদা
স্থির দাঁড়িয়ে থাকে খরের গাদা।
বৈশাখী মেঘে এত জল কোথায়?
ধুয়ে নিবে গায়ের কাদা।
ঝড় থেমে গেলে ঘাম দিয়ে জ্বর আসে।
গায়ের কাদা ধুয়ে নেয় ঘামের জল
দুচোখে আবার স্বপ্নেরা করে জ্বলজ্বল।
==============

রানা জামান

মেঘে ঢাকা থাকে পঁচিশে মার্চের দিন

পঁচিশে মার্চের দিনটা মেঘাচ্ছন্ন থাকে
একাত্তরে মিট্ঠা খান জানজুয়া ছিলো বিজলি
বাংলার আকাশে ছেয়েছিলো বিজলির ঘনঘটায়
প্রেসিডেণ্ট ভবনে দুই শেয়ালের চলে কানাঘুষা
সারস পাখিটা রোদের আশায় বারবার তাকান আকাশে
মেঘের চাতাল করতে চান দৃষ্টিবাণে ক্ষতবিক্ষত
ডানার আশ্রয়ে থাকা সকলের মঙ্গল চিন্তায় নেভে না পাইপের আগুন
সন্ধ্যায় গোপনে ঈগলের দেশত্যাগে শঙ্কায় লাগে নয়া মাত্রা
সারস পাখির ষষ্টেন্দ্রীয় আঁচ করে অশনি সংকেত
সবাইকে জীবন বাজির জানান আহ্বান
কাল গড়ানোর সাথে মেঘ আরো হতে থাকে ঘন
নিশ্ছিদ্র আঁধার হয়ে যায় পঁচিশের রাত
হায়েনার দল নেমে আসে রাস্তায় খোঁয়াড় থেকে
বিষাক্ত কামড় বসায় ঢাকার হৃদপিণ্ডে বক্ষে সর্বগায়
অগ্নির গোলায় ভস্মীভূত হতে থাকে ইকবাল হল জগন্নাথ হল মেথর পট্টি
রাজারবাগ পিলখানায় বাঘের গর্জন হলেও টিকে নি বেশিক্ষণ
অবশেষে ছোবল মারে বত্রিশের সারসের ঠিকানায়
সারসের দুই ডানা মেলে রাখা ছিলো বাংলা জুড়ে
এর আগে মুক্তির ঘোষণা পাঠান বিশ্বস্থ স্থানে
‘বিগ বার্ড’কে খাঁচায় পুড়ে নিয়ে যায় ক্যাণ্টনমেণ্টে
দশ মাস বন্দী থেকেও স্বীকার করেন নি নতি
সেই হতে প্রতিবর্ষে মার্চের পঁচিশ ঢাকা থাকে মেঘে।

==================

লতিফুর রহমান প্রামাণিক

কতোদিন চিঠি লেখোনি

কতো দিন গেলো রাত্রিতে আর চিঠি লেখোনি,
রাত হলে কি আর তোমার হৃদয়ে কেউ খবর দেয় না?
বালিশের শরীরে মাথা গুজে না স্মৃতি সব আগের?
দুঃখ গুলো কি বিলি কাটে না তোমার চুলে?
তোমার সিথানে এসে কেউ কি কানে কানে বলেনা,
ফিসফাস?
অথবা তোমার ফর্সা হাতের আংগুলে কি হয় না বিপ্লব,
দাংগা, আর শ্লোগানে মুখর হয় না?
মুষ্টি হাতের উঁচু আংগুল
বিদ্রোহী মতো?
অথবা বুকের ভিতর একটা অজানা তাগিদ?
ঘনো চাপা নিঃশ্বাসে বাতাস হয় না ভারী?
দুঃখ হয় পারদের মতো?
আমি অপেক্ষা করি তোমার চিঠি পাবো,
সাড়া না পেয়ে পেয়ে খোলা চোখ নিভে আসে অতঃপর,
দেখি সমস্ত শহর ঘুমায়,
শুধু ঘুমায় না বুকের ভিতর।
=========

শিলু সুহাসিনী

অস্থিতিশীল সময়মালা

হয়তো আমরা অনেক ক্লান্ত!
আমরা তাপদহনে অনেক ক্লান্ত
আমরা ভুল সময়ের চক্রান্তে ক্লান্ত
আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্লান্ত
আমরা ঈদের ছুটিতে চিঁড়েচ্যাপ্টায় ক্লান্ত
অথচ আমাদের নদীর জলে
পা ডুবিয়ে বসে থাকার কথা ছিল
অথচ আমাদের ঘন জঙ্গলে
বন ফুলপাতা কুড়ানোর কথা ছিল
অথচ আমাদের ঝড়ের তান্ডবে
একসাথে ভয় পাওয়ার কথা ছিল
অথচ আমাদের বর্ষায় বৃষ্টিতে
একসাথে গা ভিজানোর কথা ছিল
আমাদের খুব সামান্য কারণে
একসাথে হেসে ওঠার কথা ছিল
এবং খুব সামান্য আনন্দে
একসাথে কেঁদে ওঠার কথা ছিল
====================