You are currently viewing বিজয়ের গল্পগুচ্ছ

বিজয়ের গল্পগুচ্ছ

বিজয়ের গল্পগুচ্ছ

 

বাঙালী জাতির বিজয়ের পঞ্চাশ বৎসর হয়ে গেলো। হাজার বছরের ইতিহাসের এই অনন্য অর্জন ত্রিশলক্ষ বাঙালীর প্রাণ আর দুইলক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমির জন্যে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালী জাতি অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানী হানাদার নয় বাঙালী জাতিকে জাতিদ্রোহী কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে হয়েছে লড়াই করতে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ জাতিদ্রোহীদের পুনর্বাসন হয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানকে ( যদিও অসম্পূর্ণ) কাটাছেঁড়া করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ করে তোলে। ধর্মীয় কূপমুন্ডকতাকে বিস্তৃত করে দিয়ে মুক্ত স্বাধীন ও মানবিক মানুষ গড়ে তোলার পথ রুদ্ধ করে বাংলাদেশকে ক্রমশঃ দানবিক শক্তির অভয়ারণ্যে পরিণত করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরাস্ত হয়। লুটেরা ও পেশীশক্তির দাপটে মানবিক চেতনার বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়ে।

আশাহত মানুষ খড়কুটোর মতো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলো। তারা সমবেত হলো মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক সামনে নিয়ে। চাইলো মুক্তিযুদ্ধের পদদলিত গৌরব পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে। জাতিদ্রোহীদের পালের গোদাদের বিচারের ফলশ্রুতিতে তাদের ভরসা বাড়লো এবং হারানো স্বপ্নের ঝিলিকে উজ্জ্বল হলো তাদের অবদমিত প্রাণ। কিন্তু প্রচন্ড ধাক্কায় তারা ছিঁটকে গেলো মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকের ছায়া থেকে, হারিয়ে গেলো স্বপ্ন, ভেঙে গেলো ভরসা। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকের নীচে আশ্রয় নিলো কট্টর মৌলবাদী দঙ্গল, সংবিধানে সামরিক স্বৈরাচারের সংযুক্ত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকলো, দেশের শিক্ষাক্রম হয়ে গেলো সাম্প্রদায়িক, সংখ্যা সম্প্রদায়ের উপর দেশব্যাপী শুরু হলো চরম নির্যাতন, মুক্তচিন্তার মানুষদের উপর নেমে এলো ভয়ঙ্কর অত্যাচার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিবর্তে দেশকে ঠেলে দেলে দেয়া হলো মদীনা সনদের নামে অবিমিশ্র ধর্মীয় কূপমুন্ডকতার নিকষ অন্ধকারে। গণতন্ত্রহীন, স্বাধীনতাহীন সিভিল স্বৈরাচারের যাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ অনুভব করছে তারা প্রতারিত হয়েছে।

 

এই আশাহত, স্বপ্নাহত, বিভ্রান্তিপূর্ণ সময়ে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বৎসর বাঙালী জাতির সামনে চলে এসেছে। যারা ক্ষমতাভোগ করছে তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার উজাড় করে দেশে এবং বিদেশে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে নিজেদের সাফল্যের জয়গান করবে এবং করাবে। আর যারা ক্ষমতার বাইরে আছে তারা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে জনদরদীর খোলস পরে অপেক্ষা করবে আগামীতে ক্ষমতায় যাবার। আর জনগণ, আমজনতা-যারা ক্ষমতা নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে একটি মানবিক দেশ দেখতে চায়- তারা বেদনায় মলিন হবেন। তবে বাঙালী জাতির সুদীর্ঘ মুক্তির লড়াই যতো গল্পের জন্ম দিয়েছে সেসব গল্পগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জারি থাকবে, প্রবহমান থাকবে।

 

 

 

সেই প্রয়াস থেকেই আমাদের আয়োজন ‘বিজয়ের গল্পগুচ্ছ।’ এই আয়োজন পুরো ডিসেম্বর মাসব্যাপী চলবে। প্রত্যেক গল্পকারের গল্প আলাদাভাবে প্রকাশিত হবে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের নয়, মানুষ নিয়ে, মানুষের দুঃখবেদনা সংগ্রাম নিয়ে বাঙালীর মাতৃভাষায় রচিত গল্পও এতে অন্তর্ভূক্ত থাকবে। একজন বাঙালীও যদি থাকে পৃথিবীতে বাংলাভাষায় লেখা গল্পও থাকবে। আমরা সেই গল্প বলে যাবো অনন্তকাল। বিজয়ের গল্প কখনোই ফুরোয় না।

 

***************************************