মন-মানচিত্রের সকল পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই খ্রীষ্টীয় নববর্ষ ২০২২ সনের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
একটি দুর্গম, শোকাবহ ও মানবিক সংকটাপন্ন বছর পাড়ি দিয়ে আমরা নতুন একটি বছরে পদার্পন করছি। মানুষ অতিমারির বিরুদ্ধে সাহসের সাথে লড়াই করে জীবনের জয়গান গেয়ে এগিয়ে চলেছে সাহসের সাথে। লড়াইয়ের এই সাহসিকতাই মানুষের মৌলিকসত্তা। অতিমারির বিরুদ্ধে মানুষের অর্জন নিতান্তই কম নয়, মানবেতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অর্জন।
গত বছরে মন-মানচিত্রও পাঠকের অনেক ভালোবাসা অর্জন করেছে এবং নিজস্ব পাঠাতন গড়ে তুলতেও সক্ষম হয়েছে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নিজস্ব রেখায়ন পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। আগামী বছরে নিজস্ব কন্ঠস্বর তৈরি করে স্বকীয় পথরচনার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
বর্ষশুরু সংখ্যায় যুক্ত হয়েছেন একঝাঁক নানা বাঁকের কবি- জিললুর রহমান, বদরুজ্জামান আলমগীর, আলী সিদ্দিকী, জুয়েল মাজহার, খালেদ হামিদী, হোসাইন কবির, ইউসুফ মুহম্মদ, ফালগুনী ঘোষ, ঋজু রেজওয়ান, শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, এ্যালেইনা হোসেন, এইচ বি রিতা, সিদ্দিক বকর ও জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না।
যে কোনো প্রকার বিতর্ক এড়ানোর লক্ষ্যে আগামী সংখ্যা থেকে মন-মানচিত্রের সকল বিভাগেই লেখক ধারাক্রম বর্ণানুক্রমিক পদ্ধতিতে লেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সকলকে বর্ষশুরুর কবিতার ধানদুর্বা গ্রহনের জন্য আহবান করছি।
বর্ষশুরু ২০২২ কবিতার ধানদুর্বা
জুয়েল মাজহার
ভ্রমণের ভাষা
সুদূরে ঘুমায় পথ; স্বপ্নে জ্বলে সুপ্তিভেদী চাকা
একা, নীল তক্ষকের গোপন মাংসের মধ্যে
ছলকায় ভ্রমণ-ইশারা
তবু এই পর্যটন মুহূর্তের
অন্ধের একটি চোখে সুর্মাটানা প্রণয়ের ভাষা
লোকভেদে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ !
সসীম হ্রদের পাড়ে
আমরা জমিয়ে রাখি ক্ষণজীবী দাম্পত্য-সাঁতার
ভঙ্গুর কাচের মর্মে আমরা টম্যাটো হই
—রেলোয়ে যেদিকে যায় যাক
সূর্যের টম্যাটো চায় আরো ঊর্ধ্বে যেতে
স্ফীত, কালো মঞ্চে উঠে সে-ও চায় নিদ্রার দ্রবণ
এরই ফাঁকে বেচাকেনা অঘ্রাণের কল্কেভরা আগুনের মধু
সকল কথার পিঠে উলুধ্বনি। প্রয়োজনে উড়ে আসে নুন
কৌতূহলী ব্যাখ্যা চায়
তাকে দেবো ভ্রমণের ভাষা
জিললুর রহমান
হানিম গোবেগি
হানিম গোবেগি এক অনন্য মিষ্টির নাম
স্বাদ যার রমণীর নাভির মধুর মতো
সিলঝুকের সুফীকীর্ণ শহরে সেদিন মিলতো
কোনিয়ার সরগরম বাজারের ব্যস্ততায়
মাওলানা নিজেই মিষ্ট মধুর বচনে বুঁদ
অনন্ত অজানা পথ খুঁজে ফিরি নিরন্তর
ঊর্ধ্বলোকে আলোকের অচেনা পথের ধ্যানে
মাটির গভীরে নিত্য টানে আয়ু অন্ধকারে
সদা চোখ ঊর্ধ্বমুখী আলোর পথেই ঝোঁক
আত্মা বলো, রুহ বলো, কিংবা ওই পরমায়ু
আমাকে একটু দিও সে পরম হানিম গোবেগি
নারী ও প্রকৃতি জুড়ে সুগভীর মায়ার প্রতীতি
মরুবুক পিপাসার্ত কতকাল দেখিনা জলধি
আতরের গন্ধ ভাসে দিগন্তের কবর অবধি
হানিম গোবেগি মানে রমনীর নাভির সৌরভ
অতল গভীরে যার কোনিয়ার বনেদী গরব
বদরুজ্জামান আলমগীর
বিলীয়মান ছবির কাছে
দূরবর্তিতার পাষাণ মহিমা ও বিস্তারকে আমাদের আটপৌরে প্রাত্যহিকতার খসখসে অমিল, ক্ষুদ্রতা, ত্রুটিবিচ্যুতির সহবর্তিতায় মিতালি করতে তেমন একটা দেখি না।
আমাদের আকাঙ্ক্ষা বারবার হারে, অসফল হয়ে কোন এক কুন্ঠিত কোণায় মুখ থুবড়ে ঝিমোয়। সে-সব ব্যর্থতার যোগফলে প্রত্যেকটি নেহায়েত জীবন একেকটি নিজস্ব নৌকাবাইচে জমে ওঠে- কলরব করে, আর স্থলভাগের আশায় জল কেটে কেটে আরো গভীর পানির ফকিরির দিকে ছোটে।
আমার কোন দেবতা নেই। দেবতা বরং আমার অকৃতকার্যতাগুলো। জাগরণগুলো আমার প্রিয়তম কবি। মৃত্যু জীবনের জেব্রাক্রসিঙে, বুকের তলায় সন্ধ্যার মিনাবাজারে জ্বলতে থাকা বিষন্ন উজ্জ্বল বাতিগুলো।
যে-জীবন ঘরে, যে-জীবন প্রাত্যহিক সংগ্রামে অনিঃশেষ, তা-কে হীনজ্ঞান করি কীভাবে? বাসনাগুলোর অবিরাম মৃত্যু আমাদের নিঃশ্বাসের সহজিয়ায় বাঙময়।
দিনরাত্রির বিফলতাগুলো, ওগো হেলানো আকাশের জলছাপ, বিলীয়মান ছবি- তোমাদের আমি নমি।
আলী সিদ্দিকী
মানুষের অধিক বিভ্রম
সময় ও অসময়ের ক্রিজে তোমার
বিদীর্ণ আর পান্ডুর মুখ লটকে আছে
একা শূন্যময়
শব্দহীন ঠোঁটজোড়ায় খানাখোঁদলের ভেংচি
কানের পর্দায় ঝিঁঝিটরাগ চলছে অন্তবিহীন
ভাষাহীনচোখজোড়া হয়ে যায়
ঋত্বিক ঘটক কিংবা তারেক মাসুদের
সেলুলয়েড তরবারি;
নিষ্পলক তুমি দেখে নিচ্ছো দৃশ্যমান ছবি-
জনপদের ধুলোর দানাপানি হচ্ছে মানুষের
স্বপ্ন নিংড়ানো ঘাম, রক্ত
অতিমারির উসুল জমা হচ্ছে বিলিয়ন ব্লকে
লক্ষ কোটি লোটাকম্বলের দখলে মাঠ ঘাট
মানুষ পড়িয়ে চলেছে বেড়ি মানুষের পায়ে
নারীরা ঢুকে যাচ্ছে হেরেমে;
ধাবমান সময়ের পেছনে ছুটছে তোমার চোখ
তোমার ছায়া ধরে আমার আপ্রাণ কসরত, এই
তো আমি এখানে, তোমার অতি কাছে,
শুনছো আমায়, দেখতে পাচ্ছো?
মানুষই দেখছো তুমি, অমৃতের মনোভূমি
আমি যেন শরীরী নই আদৌ-অতি নিছক
ক্ষীণজীবী বুদবুদ, মানুষের অধিক বিভ্রম।
খালেদ হামিদী
পদ্য আর কতো!
তুমি আমি বিষয়ের পদ্য আর কতো,
রিরংসার আয়ুতক নাকি উভয়ের
বিষমতা যতোদিন থাকে কল্লোলিত!
আমাকে দৌড়াও, ধাওয়া দাও খুশি মতো।
অন্য পুরুষেরা তোর যদি তেড়ে আসে
অসুবিধা নেই কোনও। নদীর কিনারে,
কোথাও গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কেবল
তাকাবো পেছন ফিরে চতুষ্পদীরূপে,
একদা পুরুষ এক ঠিক যেখানটায়
নিজেকে পশ্চাতে নারী, সামনে নর বলে
টের পাওয়া মাত্র জানে মানুষের মানে।
অথচ কখনও কেউ লিপস্টিক বদলিয়ে
গণিকার পাশে শুধু বই পড়ে খুব।
যদিও বা অন্য কারও মজা মেলে ছুড়ে
অসংখ্য কমলালেবু নগ্নিকার গায়ে।
২৬ ডিসেম্বর ২০২১, চট্টগ্রাম
হোসাইন কবির
স্বপ্নবীজে বুনন উচ্ছ্বাস
তবু যায়, চলে যায়
চতুর্দিকে নীলে নীলিমায় গোলক ধাঁধায়
যাব! কোন দিকে কার কাছে?
মুখর সময় থেকে বিবর্ণ মৃত্যুতে
একা হয়ে
একা করে– প্রদীপ ছোঁয়ায়
বাড়ি ঘর জলের শরীরে
ছায়া ফেলে আগন্তুক
ব্যারিকেড পাথুরে চিত্রকলার
জানি, কেউ নেই, থাকবে না
অস্তিত্বে শব্দ তরঙ্গে– বাইনারী কোড
ভেসে যায় ভেসে যাবো অযুত সময়ে
তবু ইথারে বাজবে–
দূর অরণ্যপথে মহুয়া বনে মাতাল ঝড়ো হাওয়ায়
পাখপাখালির কোলাহলে কণ্ঠস্বর তাহার
– ‘আমারে সঙ্গে নিতে এতো ভয়!’
ভাবি লোকায়ত আচারে হোক ব্রত
জীবনের সমূহ সরল পাঠ
কাম ক্রোধ ভালোবাসা কাঙ্ক্ষিত চুম্বন–
হোক সবই বিলীন
শূন্যে মহাশূন্যে বিস্তৃত দিগন্তে পরম সংখ্যায়
যাব! কোন দিকে কার কাছে?
মুখর সময় থেকে বিবর্ণ মৃত্যুতে
একা হয়ে
একা করে– প্রদীপ ছোঁয়ায়
তবু মাটি কেটে মাটি পুড়ে অসাধ্য সাধন–
গাঙ্গেয় বদ্বীপে স্বপ্নবীজে বুনন উচ্ছ্বাস
ইউসুফ মুহম্মদ
তিথিকৃত্য
২
যার সাথে চেনা জানা নেই-
কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে
লুম্বিনী নগরে আমি তার কন্যা হয়ে জন্ম নেবো,
তার ছবি এনে কে যেনো ফ্রেমের শেকল পড়ায়।
সে ছবি মুক্তির স্বাদ নিতে এলে… মাটির গুহায় আমি
সঞ্চয়ে রাখিব নিঃসঙ্গ চাঁদের কণা।
বিষের বাটিতে ঠোঁট রেখে হরতন-রুইতন ফেলে
এড়িয়ে সকল তাস-
সদাগ কলাপাতায় অঙ্কন করবো
আমার পুনঃজন্মের পরিপূর্ণ ইতিহাস।
ফালগুনী ঘোষ
দীর্ঘ পর্যটনে
জীবনের পরতে পরতে হানা দ্যায় প্রেমের পরী
কারও কারও রূপ আগুনের উপর হেঁটে যাওয়া দেবী
কেউ কেউ সুন্দর তুষারে সমাহিত, শিশির ভেজা।
কোনো কোনো নারী দিনের আলোয় চঞ্চল
মাছের মতো পুকুরের জলে খেলা করে।
তুমি তো কোনো নারী নও- এক অনন্ত ছায়ামূর্তি
জড়িয়ে থাকো সকাল থেকে রাত, ঘুমের অশেষ
অগ্নিবীনা বাজাও মগজে, স্বপ্নে, অন্তরের চেতনায়।
মনের মৃদঙ্গ বাজতে থাকে তোমার রঙে, সারাদিন,
সম্মোহিত আমি বিশাল কামনার ক্যানভাসে
দুলে উঠি, অনুভব করি তোমার হাত,
নরম লাজুক ঠোঁট-গোলাপের মতো।
চাঁদ নামে আমাদের বাহুবদ্ধ কামনার ঘরে
মায়াচাঁদ, তীব্রে আগুনে পুড়ে যাই দুষ্মন্তের মতো
তুমি তো অনিবার্য শকুন্তলা,
আমার উদাসীন বুকের উপর
শুয়ে থাকো সময়ের দীর্ঘ পর্যটনে।
ঋজু রেজওয়ান
পুরাতন বোতলের মদ
পুরাতন বোতলের মদ ফিরেফিরে আসে
তবুও স্বাগত
ফিনফিনে মসলিন শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে
ছেঁকে নেয় সব
অ্যালকোহলবিহীন চাকার মতন ঘোরে
পানসে জীবন
সমস্ত দুখের খোলে রবিবাসরীয় আড্ডা
কান পেতে রয়
ফানুস উড়ায়ে নিলে ভিতর বাহির থেকে
দুঃখ-জরা-ক্ষয়
মজিদ মাঝির খেয়া ওপারে যেন না রয়
টেনে আনি কাছে
বসন্তের শেষ বেলা অয়মিকন নগরে
আলোর টিলিক
সফেদ সোহাগ আনে তার নতুন বারতা
উজালা জলসা…
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়
বর্ষশেষ
প্রহর শেষের আলোয় রাখি মুখ
অনন্তকে ভাগ করি না আর
রোদ লিখেছে গল্প ঘাসে ঘাসে
উড়িয়ে দিলাম আমার দায়ভার
সময় যখন চায়ের কাপে ধোঁয়া
আঙুল সেঁকি সরিয়ে দস্তানা
চুমুক দেওয়ায় বারণ রাখি ঠোঁটে
প্রতিবিম্বেই ভরসার আলপনা
সব কোলাহল এগিয়ে যাবে যেই
জ্বালবে আলো এই অপেক্ষাঘর
বুঁজেছি চোখ কান পেতেছি বুকে
বইছে সময় ফিসফিসানো স্বর।
এ্যালেইনা হোসেন
কনট্রাস্ট ভাইরোলজি
হাঁসফাঁস হচ্ছে না তো, একদম না
জানোই তো, অনৃতসাধনে ঘোমটা তুলেন নেত্রী, প্রেমিকা নয়
আজো দরকারি মিথ্যায় বিবশ জিভের নখরামি নেই
অসত্য বা নগ্নতা– কোনটা দিয়ে একটা পাগলা গারদকে পার্থিব বানানো যায়?
সর্বসরণী বন্ধ হওয়া বাতাসের শেষ দমকা সাথে সাথেই,
দমটা এইমাত্র বন্ধযোগ্যতা হারানো নষ্ট দরওয়াজা।
এই দমে আছে বার্ণিশ ঋণ, ঋণগ্রস্ত দম নিয়ে কিভাবে মনে রাখা যায় দুর্বাসনার ধাক্কা?
উদার চাবিওয়ালা হতে পারোনি বলেই, এ প্রস্থানে কোনো ঝুনঝুন শিল্প নেই
ভাবতে পারছি না যে তুমি কোনো সিনেমেটিক কাপুরুষ
হাঁসফাঁস হবেই বা কেনো? নতশিরা আমি তো নই আশিরনখর
গণতন্ত্রহীন এ দেশ তবু কেড়ে নিলো সমস্ত অহংবোধ
কিছু তোয়াক্কা করি না তবু গা টাও এলিয়ে দেয়া যাচ্ছে না দুধগোলাপ বাথট্যাবে
প্রেমিকের কাছে মিথ্যাবাদিতা, প্রেমের জন্য হয়তো এক নিরীহ মহামারী
এই ভাইরাসের শহর দ্রোহচোখ তাকিয়ে–
পদচিহ্নহীন অস্তিত্বে তোমার
জীবাণু জানে না আগে খুন করতে হয় হৃদয়
যেহেতু তোমার শরীর কখনো শোকের কারণ হয়ে ওঠেনি।
এইচ বি রিতা
বিদায় ২০২০-২১
ইতিহাসের এক ভয়ানক খন্ডচিত্র তুমি,
দুই হাজার বিশ-একুশ
কাঁদিয়েছো মানুষ-পশু, পৃথিবী এক কাতারে
কেঁদেছে অসহায় নারী-পুরুষ
পাশের ঘরে শেষ সম্বলটুকু বাক্সবন্দী করে
পিতৃবিয়োগে সন্তান, জননীর বুক ফুটো করে
আকাশও কেঁদেছিল লাশের স্তুপ বুকে।
কত কি কাঁদালে তুমি
নির্ভয়ে, নিষ্ঠুরতা নিয়ে ব্ল্যাক ডেথ খুঁজো
উস্কাতে চাও চতুর্দশ শতাব্দীর নির্মমতা
আর কতটুকু ধ্বংস হলে শান্ত হবে তুমি
কিসের বিনিময়ে ক্ষমা দিবে
দুই হাজার বিশ- একুশ?
ঢের হয়েছে সহস্রাব্দের খেলা
এবার বিদায়
ধর্ম-বিজ্ঞান জ্ঞানীদের মতই বিশ্বাস রেখে
এবার তোমাকে বিদায়
স্বাগতমে বাইশ; নতুন প্রত্যয়ে
নব সূচনায় নতুন আকাঙ্ক্ষায়।
সিদ্দিক বকর
ঢাকা–৩
আলোছায়ার চেয়েও ঘনিষ্টরূপে আঁকড়ে থাকে
চিনাজোঁকের চেয়েও গভীর নীরবে রক্ত চুষে
সিংহের গর্জন অ্যানিমেটেড ঘাতক
কাছাকাছি কোথাও
বয়স্ক হরিণদের নৈশ বিদ্যালয়টির এখনো ছুটি হয়নি
ভিতরে লন্ঠন বাতির আদিম আলোর চতুর্দিকে
বৃক্ষের শিকড় পোতা ঋষি মনুর সন্তানেরা
তাদের ঠোঁটে-মুখে ভাষা ফোটানোর অক্ষরফুলে
তর্জ্জনি ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে
লন্ঠনের আলোর চেয়েও অধিক ও স্নিগ্ধ
কাদানরোম আলো ভরা চোখে
যেখানে পরম অনু ভেঙে ভেঙে পড়ার জন্য
দৌড়াদৌড়ি করে শুক্রানোর পরাক্রমশালীতায়
হ্যাং হয়ে থাকে ছুটির ঘন্টা
অ্যানিমেটেড ঘাতকের প্রতিটি ডিজিট টাল
ঢাকার চতুর্দিকের বধ্যভূমিগুলো
কর্পোরেট উর্বর হয়ে ওঠে
জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না
ভালবাসার গল্প
তোমার কি সকাল হলো? আমি অপেক্ষায় আছি –
সূর্যের আলো দেখার আগে তোমাকে দেখবো বলে।
তোমার বাসি মুখে, এলোচুলে মাখামাখি করে আছে
রাতের সকল স্বপ্ন; ওরা যে কাল রাতে
আমাকেও এসে ছুঁয়েছিল পরম ভালবেসে।
তোমার ঠোঁটে লেগে আছে কি এখনও সেই মাধুরী?
আমি শিশিরে পা ভেজার আগে তোমাকে ছুঁয়ে,
আমার অপেক্ষমাণ আঙ্গুলগুলোকে ভেজাতে চাই।
দেখতে চাই, ক’ফোটা ভালবাসার শিশির জমেছে ঠোঁটে।
তুমি চোখ মেললে লাগবে রঙ রক্তজবায়
পূজোর সাজি ভরে; ভালবাসার সঙ্গীতে
বাজবে ঘন্টা সারাটা দিন আমার মন্দির ঘরে।
তোমার ছোঁয়ায়, মদির নেশায় ভাসবো আমি
পাখির পালক পরে; জ্বলবে তুমি, পুড়বো আমি
অলিন্দ স্রোতে সে এক ভীষণ প্রেমের টানে।
বলবে তুমি, ‘ঘুম জাগানিয়া, এসেছো যে এমন ভোরে ?’
কেমনে বলি, তোমার জন্যে সূর্যকে ঢেকেছি যে দ্রোহে।