বন্ধ্যা পুরুষ
রওশন হক
আমার অফিসের দুপুর দেশে তখন মাঝ রাত ।মেসেনজার ইনবক্সে মেসেজ পেলাম দোস্ত একটাকল দিস । মুনা আমার স্কুল বন্ধু সে এত রাতে কি এমন জরুরী কথা বলতে চায়!? যা শুনলামতাই আজ আমার লেখার বিষয। মুনার বিয়ে হয়েছে ছাব্বিশ বছর ।নিঃসন্তান । বিয়ের প্রথমপাঁচ বছর মা হবার জন্য অন্য সবার মত সে ও দেশ বিদেশের ডাক্তার পাড়া ঘুরে চষে বেরিয়েছে।সে সময়ে তার খুবই মন খারাপ করে থাকতো ।কিছু জানতে চাইলে শুধু মুখ লুকিয়ে রাখত ।আমি যখন পড়া শেষ করে ব্যংকে চাকুরী করছি ,তখন তাকে রীতিমত জোর করেই বিএ পরীক্ষাদিতে বলি । বিএ তে তার ভালো রেজাল্ট হয়। তখন মুনার মুখে কিছুটা হাসি দেখা যায়।
মুনার বিয়ের আট বছরেও তার কোন বাচ্চা হয় না।
-কি রে মুনাডাক্তার কি বলে
-ডাক্তার বলেছে আমার কোন সমস্য নেই।
-তাহলে কার সমস্যা
-সাহেদ এর ।তার মাত্র জীবিত শুক্রানু কম।যতটুকু জীবিত থাকে তার বেশির ভাগই দুর্বলশুক্রানু।
-টেষট টিউব বেবি নিয়ে নে ।
-না তা সাহেদ পছন্দ করে না।ওর মনে করে সেটা সন্তান অন্য পুরুষের শুক্রাণু থেকে হয়।
-তুই যদি উনাকে বুঝাতে না পারিস তাহলে হলে বাচ্চাকাচ্চার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।সন্তান ছাড়া ও মানুষ ভালো থাকে।তবুও মুনা থামে না।
-নারে তুই বুঝবি না ।মুনা নিচু স্বরে বলে তার নিজের ও ধারণা তার বরের কোন সমস্যা নেই ।সমস্যা তারই হয়তো ডাক্তার কোথাও ভুল করেছে ।কারন তার বর কোন ঔষধ সেবন ছাড়াইপ্রতি রাতে বিছানায় তার সাথে ঝড় তোলে। ওকে কি করে বুঝাই আজকাল মেশিন দিয়ে ও যেমেয়েরা এখানে একাই এমন ঝড় তুলে।বিছানায় পারফরম্যান্স ভালো হলেই যে তার শক্তিমানবা জীবিত শুক্রাণু জন্ম নিতে পারে না এটা কি করে বুঝানো যাবে?
এই হলো আমাদের সাধারণ বিশ্বাস । অতি স্বামী ভক্তি ।স্বামী ভক্তি না বলে পুরুষ ভক্তি বলাযায়। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রেজাল্ট দেয়ার পর ও আমরা মেয়েরা ধারনা করে নিচ্ছিসন্তান জন্ম দিতে না পারার সমস্যা শুধু মেয়েদেরই ।আমি একটা সময় বিরক্ত হয়ে তার কথাশুনতে চাইতাম না। শুধু চাইতাম ওদের ডাক্তার বাড়ী দৌড়ানো হোক। বুঝাতাম তুই বিএড এভর্তি হ। এসব মাথা থেকে ঝেডে ফেল।
পরে অবশ্য মুনা বিএড শুরু করে।বিএড পাশ করে স্কুলে চাকরি তে ঢুকে গেল।মুনা কিছু টাভুলে যায় মা না হবার কষ্ট । সে এক সময় বুঝতে পারে তার স্বামীর কারনে তার সন্তান হবে না।
তাহলে আজকে এত ফোন করল কেন?
ফোন করেছে এজন্য যে মুনাকে তার বর রাতে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
বিয়ের ছাব্বিশ বছর পর ও মুনার স্বামী ডাক্তারের রিপোর্টে বিশ্বাস করে না। সন্তান না হবার অপরাধে তার গায়ে হাত তোলে । শেষ পর্যন্ত বাসা থেকে বের করে দিয়েছে । লোক লজ্জার ভয়েমুনা কেউকে এসব জানতে দেয় না ।শেষ পর্যন্ত মুনা মায়ের বাড়িতে উটেছে। মা কে সব খুলেবলেছে।
জানালো আর যাবে না বরের ঘরে। আমি জানি মিথ্যা কথা । মাথা ঠাণ্ডা হলেই মুনা সুর সুরকরে বরের ঘরে ফিরে যাবে।
প্ল্যানেট ফিফটি-ফিফটি বাই ২০৩০’ এই বছরের নারী দিবসের থিম হচ্ছে জেনারেশন ইকুইটি ।জনসংখ্যার হিসাবে বর্তমানে নারী পুরুষ উভয়ের সংখ্যার দিক থেকে সমান অনুপাত ।তাইবেতন বৈষম্য দূর করা দরকার। চাকরির ক্ষেত্রে এ ও সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবইঠিকঠাক । অধিকার নিশ্চিত করতে হবে ! কে করবে কেন করবে বা কবে নাগাদ এর সমাধানহবে তা সমাধান করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হবে। তার আগেঅবশ্যই নিজের যোগ্যতা অর্জন করে নিতে হবে ।
সব কিছুতেই সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর সারা দুনিয়া জুড়ে নারী দিবসেরনানা কর্মসূচি পালন করা হয়। আমি আলাদা করে নারী দিবসের ঘোর বিরোধী। নারী দিবসেরনামে অনেকটাই নারীদের আলাদা করবার চেষ্টা বলে আমার বিশ্বাস।এটাও একটাডিসক্রিমিনেশন বলে মনে করি।আজকের লেখা ছেলেদের ফার্টিলিটি নিয়ে ।