You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ খালেদ হামিদী

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ খালেদ হামিদী

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ খালেদ হামিদী

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে কবি-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। এবারের কথোপকথনে থাকছেন কবি ও প্রাবন্ধিক খালেদ হামিদী

১. মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার কয়টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতি এবং বইটির ব্যাপারে জানতে চাই। 

খালেদ হামিদী: অবশ্যই। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে, আমি কি টাকা তবে । এটি আমার  অষ্টম কাব্যগ্রন্থ। এবারের বইমেলায় তৃতীয় চোখ এটি প্রকাশ করেছে। এর বেশির ভাগ কবিতাই নারীবাদী চেতনা, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির ফল। এতে মূলত একজন শ্রমজীবী নারী, পোশাক শিল্পের নারী, মানুষ হিসেবে তাঁর মর্যাদা লাভের আশা ও দাবিতে কথা বলেছেন। কিছু কবিতায় তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত একজন পুরুষও সরব হয়েছেন যিনি নির্মাণ শ্রমিক। ফলে এতে গল্পের একটি ক্ষীণ রেখা পাওয়া যায়। তবে উভয়েরই অস্তিত্বের দ্বীপে আছড়ে পড়েছে দেশীয় ও বৈশ্বিক চলমান ইতিহাসের নানা স্রোত। তাঁদের সম্পর্কের পরিণতি জানতে হলে বইটি পড়তে হবে। যতোদূর জানা যায়, আমি কি টাকা তবে প্রথম কোনও পুরুষ কবির স্বঘোষিত নারীবাদী কাব্যগ্রন্থ। এতে মোট ৫৫টি কবিতা রয়েছে। বইয়ের প্রতিটি কবিতাই ছন্দে লেখা।

২. মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?

খালেদ হামিদী: পারার তো কথা। পাঁচ বছর আগে খড়িমাটি প্রকাশিত আমার কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধের বই না কবিতা হাঁ কবিতা সংগ্রহ করে মেলা প্রাঙ্গণেই আমাকে চমকে দেন একজন সুহৃদ। তিনি ব্যাংকার হলেও ইংরেজি সাহিত্যের মানুষ।    

৩. মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তা-ই নয়, এইসময়  গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই। 

খালেদ হামিদী: ১০/১২ বছর আগে কালের কণ্ঠ-র শিলালিপিতে অভিমত দিয়েছিলাম যে, বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হোক। এখন তো, অনেক লেখালেখির পর, লিটল ম্যাগাজিন চত্বরও, ওই উদ্যানে স্থানান্তরিত হয়েছে। শুধু ব্যবস্থাপনাটা আরেকটু সুষ্ঠু হোক, এই-ই প্রত্যাশা। এখানে আরেকটা কথা বলতে হয়, সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী, সব সময়ের অভিনয়শিল্পী ও আবৃত্তিকার শ্রদ্ধেয় আসাদুজ্জামান নূর একবার বলেছিলেন, প্রত্যেক জেলায় বইমেলা হওয়া উচিত। বন্দর  নগরী চট্টগ্রামে মুসলিম হল প্রাঙ্গণে, ছোট পরিসরে, বইমেলা হয়েছে অনেক বছর। নব্বইয়ের দশকে রাজনৈতিক কারণে তা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে লালদিঘির মাঠেও অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সাল থেকে তা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে, ঢের বৃহত্তর প্রাঙ্গণ চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখাটাই এর  ব্যবস্থাপকীয় ত্রুটি বলা যায়। অন্যথায় পুরো মেলার পরিবেশ উদার ও প্রাণবন্ত হওয়ায় ঢাকার মেলার সিস্টার কন্সার্ন ধরনের অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিরূপ বলা যায় একে। তবে ঢাকার মেলার আমেজ পাওয়া যায় । রাজধানীর বিখ্যাত কিছু প্রকাশনা  সংস্থারও স্টল থাকে এতে।    

৪. মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনার সাথে জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন। 

খালেদ হামিদী: আসলে এটা বাংলা একাডেমি, সহায়ক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রকাশকদের বিষয়। তবে মেলার সাথে জড়িত মানুষদের পেশাদারিত্ব এবং প্রেষণা ( মোটিভেশন) দুটোই যুগোপযোগী হওয়া উচিত। 

৫. মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর বিশেষ খোঁজ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন। 

খালেদ হামিদী: মেলার সব বই যে পরে হারিয়ে যায় তা নয়। বইয়ের দোকান স্বল্প হলেও অনলাইনে বই কেনা-বেচার ভালো ব্যবস্থা দেশে আছে। তাছাড়া, প্রকাশকদের কারও কারও কাছে জানতে পারি, ‘জনপ্রিয়’ লেখকদের বই ছাড়া বাকি অনেক বই, মেলার পরে, সারা বছর ধরে বিক্রি হয়। কোনও কোনও ভালো বই নাকি সম্পূর্ণ বিক্রি হতে কয়েক বছর লেগে যায়। 

৬. মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

খালেদ হামিদী: করোনা ভাইরাসকে তোয়াক্কা না করে, বিশেষ করে ছুটির দিনে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বইমেলায়, তরুণদের যে প্রচণ্ড ভিড় বা আবালবৃদ্ধবনিতার স্রোত দেখা যায় তা মানুষের জীবনাগ্রহেরই বিজয়-পতাকা ওড়ায়। যদিও, ভ্যাকসিন নেয়া এবং মাস্ক পরা জরুরি, ভাইরাসটির প্রকোপ কমলেও।