বইমেলার খোলাচত্বর কথোপকথন/ ফয়জুল ইসলাম
অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবিসাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি সাহিত্যিক ফয়জুল ইসলাম-এর সাথে। সম্প্রতি তাঁর গল্পগ্রন্থ ঘুমতৃষ্ণা প্রকাশিত হয়েছে কথাপ্রকাশ থেকে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কথাপ্রকাশ-এর প্যাভিলয়ন (১২ নম্বর)-এ পাওয়া যাচ্ছে। এটি তাঁর সপ্তম গ্রন্থ। সাক্ষাৎকার: ধ্রুব সাদিক।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।
ফয়জুল ইসলাম:এবারের বইমেলাতে ঘুমতৃষ্ণা নামে আমার গল্পসংগ্রহ বের করেছে কথাপ্রকাশ। এটি আমার প্রকাশিত সপ্তম বই। আমরা জানি, নারী-পুরুষের মাঝের সামাজিক সম্পর্কের নানান রূপ রয়েছে। এখানে তাই আমার মিলন দেখি, বিচ্ছেদ দেখি, একাধিক সম্পর্কেও মানুষকে জড়িয়ে পড়তে দেখি। এসব পরিণতির মাঝে আবার রয়েছে নানান মাত্রা। এই থিমের ওপরে মোট পাঁচটি গল্প সন্নিবেশিত হয়েছে বর্তমান গল্পগ্রন্থে। গল্পগ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়াতে আনন্দিত আমি কেননা এই পাঁচটি গল্পই আমার খুব প্রিয়!
মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?
ফয়জুল ইসলাম: হ্যাঁ! সমগ্র প্রকাশন থেকে আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক-এর দ্বিতীয় সংস্করণ এসেছে। এছাড়া, সমগ্র প্রকাশনে আমার গল্পগ্রন্থ বখতিয়ার খানের সাইকেল-ও মিলে যাবে। যুক্ত-তে নীলক্ষেতে কেন যাই নামে আমার আরেকটি গল্পের বই পাওয়া যাচ্ছে। পার্ল পাবলিকেশনস থেকে প্রকাশিত আমার বাকি দু’টো বইয়ের প্রথম সংস্করণ ফুরিয়ে গেছে।
মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।
ফয়জুল ইসলাম: লেখক-পাঠকের মাঝে সরাসরি সংযোগ তৈরির ব্যাপারে বাংলা একাডেমি সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় তারা পাঠকের উপস্থিতিতে লেখকের সাথে কথা বলছেন। এই জরুরি ব্যাপারটি নিয়ে কোনও বেসরকারি প্রকাশনীর মাথা ব্যাথা দেখি না। লেখক-পাঠকের মাঝে সেতুবন্ধ গড়ে উঠলে একদিকে যেমন মেলায় প্রাণসঞ্চার ঘটবে, অন্যদিকে বইয়ের কাটতি বড়িবে বলেই মনে করি।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনায় জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।
ফয়জুল ইসলাম: আমরা কেবল দেখি যে মেলার স্টল আর প্যাভিলিয়নগুলোতে বিক্রিবাটা চলছে। এই চিত্রটিই সব নয়! একটা বই তৈরির পেছনে অসংখ্য মানুষের অবদান রয়ে যায়, যেমন, ছাপাখানার কর্মীরা এখানে শ্রম দেন, বাইন্ডাররা বই বাঁধাই করেন ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রকাশকেরা এসব সেবা আউটসোর্স-পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে থাকেন। এসব সেবার বাজারটি ভীষণ প্রতিযোগিতামূলক বলে খুব কম পয়সার চুক্তিতেই প্রকাশকেরা সেবা ক্রয় করে ফেলতে পারছেন। আর তাই যাদের ঘামের ফসল একটি বই, বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছেন তারাই! এক্ষেত্রে চুত্তিতে সেবা ক্রয় করবার পদ্ধতির বদলে ন্যূনতম মজুরির বিধান অনুরসণ করা উচিৎ। প্রকাশকেরা যদি তাদের কস্টিংয়ে ন্যূনতম মজুরি না ধরে থাকেন তবে দরিদ্র শ্রমিকেরা তা কোনও মতেই পাবেন না।
মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।
ফয়জুল ইসলাম: বই বিক্রির বেলাতে অনলাইন সোর্স এখানে জরুরি বলে মনে করি। অফলাইন সেলস পয়েন্ট তো রইলই! দ্বিতীয়ত, প্রকাশকেরা তাদের প্রকাশিত বইয়ের রিভিউ করিয়ে তা ছাপাবার উদোগ নিতে পারেন। একজন লেখকের কাছে এসব কাজ প্রত্যাশা করা ঠিক নয় কেননা তার কাজ আসলে লিখে যাওয়া। এক্ষেত্রে প্রকাশক কোনও এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারেন যার মূল কাজ হবে বই প্রমোট করাμ বইয়ের আলোচনা, ইউটিউব ক্লিপ, ওয়েবে প্রচার চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।
ফয়জুল ইসলাম: লক্ষ করা যাচ্ছে যে কোভিডের প্রাকোপটি কমেছে। মানুষজন তো মেলাতে মাস্কও পড়ছেন। এমন স্বাস্থ্যবিধি মানবার ব্যাপারে বাংলা একাডিমি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, জেলাপ্রশাসন মেলাতে মোবাইল কোর্টও করছেন। এমন একটি অবস্থার কারণে মেলাতে প্রচুর লোক সমাগম চোখে পড়ছে। পাঠকেদেরকে ধন্যবাদ না দিলে কি চলবে? তারাই তো মেলার মূল আকর্ষণ!