You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ হিজল জোবায়ের

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ হিজল জোবায়ের

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ হিজল জোবায়ের

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবি-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ আমরা কথা বলেছি কথা বলেছি কবি হিজল জোবায়ের-এর সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধ্রুব সাদিক।


মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।

হিজল জোবায়ের: ব্যক্তির নাম, যা তার অস্তিত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এটিও বৃহত্তর অর্থে রাজনৈতিক-দর্শনের বাইরে নয়। অস্তিত্ব সবসময়ই বহুরৈখিক রাজনৈতিক সম্পর্কসূত্রের মধ্যে বাস করে। ব্যক্তি মানুষকে ক্রমাগত পারিপার্শ্বিক রাজনীতি মোকাবেলা করে নিজের অস্তিত্বের সংজ্ঞা নিরূপণ করে যেতে হয়। জলপাই পাতার নিশান বইটি মূলত বহুস্তরা এই রাজনৈতিক বাস্তবতার মাঝে পড়া ব্যক্তিকেই নানাভাবে ব্যবচ্ছেদের চেষ্টা।

অভ্যন্তরীণ আর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আজকের দুনিয়ার একেকটা মানুষ তো আসলে বিশাল ট্যারান্টুলার জালে আটকে পড়া বিপন্ন পতঙ্গের মতো। একটু পরেই যে চলে যাবে এগিয়ে আসতে থাকা ওই বিষাক্ত ট্যারান্টুলার পেটে। কেমন তার হাহাকার, কান্না ও গোঙানি? কেমনই বা তার আপাত মূল্যহীন, নগণ্য প্রতিরোধ? এরকম বাস্তবতায় কীভাবে নিরূপিত হয় ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্ব? জলপাই পাতার নিশান বইটি এগুলোকেই নানাভাবে নেড়েঘেঁটে দেখার চেষ্টা। ব্যক্তি মরে যায়, কিন্তু সে যে মরতে চায় না, এই না-চাওয়াটাই অস্তিত্বের অমরতার ঘোষণা। জালে আটকা পোকাগুলো মাকড়সার পেটে চলে গেলেও তারা আসলে বেঁচে ছিল। আর যারা বেঁচেছিল তারা কী আসলে মরেছে কখনো?

মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?

হিজল জোবায়ের: জলপাই পাতার নিশান আমার তৃতীয় কবিতার বই। এর আগে ২০১৫ সালে চৈতন্য প্রকাশনি থেকে বেরিয়েছিল আমার প্রথম কবিতার বই আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল। প্রকাশকের ভাষ্যমতে ওই বইটি বেশ কয়েক বছর হলো আউট অব প্রিন্ট। দ্বিতীয় কবিতার বই ধুলা পবনের দেশ বের করেছিল মেঘ প্রকাশন, ২০১৮ সালে। এই বইটা মেলায় মেঘের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানি।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।

হিজল জোবায়ের: মেলা আগের তুলনায় বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত  হচ্ছে কয়েক বছর ধরে, এটা খুব ভালো। মেলা যথেষ্ট প্রাণবন্তই লাগে। তবে মেলায় গেলে মাইকে যে ক্রমাগত বইয়ের ঘোষণা দিতে থাকে, সেটা খুব কানে বাজে, ভয়াবহ এক শব্দদূষণ এটা। আমার মনে হয় না এটা কারো কোনো কাজে আসে। এর কারণে দর্শনার্থীদের চিৎকার করে কথা বলতে হয়। আমার মনে হয়, এটা বন্ধ করে দেয়া উচিত। আর মেলায় টয়লেটের ব্যবস্থা খুব বাজে। টয়লেটগুলোর অবস্থা দেখলে মনে হয় খোদ মেলার আয়োজনটা নিয়েই কর্তৃপক্ষের অমনযোগ আছে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনায় জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।

 

প্রচ্ছদ- সব্যসাচী হাজরা, প্রকাশক- বাতিঘর, স্টল- ৩২৭-৩২৯

হিজল জোবায়ের: আমাদের দেশে প্রকাশনা ব্যাপারটা কোনো শিল্প আকারে দাঁড়ায়নি। তেমনটা হলে লেখক থেকে শুরু করে প্রকাশনার সাথে জড়িত মানুষরা রুটিরুজির জায়গা থেকে সত্যিকার অর্থেই উপকৃত হতেন। কেবল মেলা নয়, সারা বছর ধরেই বই প্রকাশ পেতো। সংশ্লিষ্টরা তাতে মৌসুমী রোজগারের বদলে বছরব্যাপী রোজগারের মধ্যে থাকতে পারতেন। প্রকাশনা যাতে শিল্প আকারে দাঁড়ায় এ ব্যাপারে প্রথমত সরকারকেই মনযোগ দিতে হবে। এ-খাতে ভর্তুকি দিতে হবে। সরকারি উদ্যোগে আরো বেশি বই কিনতে হবে। লাইব্রেরীগুলোর সংস্কার করাও জরুরি। এটা একটা সামগ্রিক বিষয়।

মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।

হিজল জোবায়ের: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এতটাই অন্তঃসারশূন্য যে আমাদের বৃহত্তর সমাজ বইয়ের গুরুত্বই বুঝতে পারে না। বইয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে শিক্ষা ব্যবস্থাতেই আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি। তা নাই বলেই, মেলার আপাত হুজুগ শেষে বইয়ের খোঁজ থাকে না। আর বই বিপণন বাড়াতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনে যৌথভাবে বিভিন্ন জায়গায় দোকান করা উচিত। শপিংমলগুলোতে বাধ্যতামূলক বইয়ের দোকান রাখার নির্দেশ আসা উচিত। আমি মনে করি, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর দুই পাশের ফুটপাথে বইয়ের দোকান করে দেয়া উচিত। এটি হবে ঢাকার বইসরণী। সারা বছরই এখানে বই বিক্রি হবে।

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

হিজল জোবায়ের: মহামারি স্তিমিত হয়ে আসায় সারা দুনিয়াতেই বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের এখানেও করোনা কমে যাচ্ছে। ফলে এখন স্বতঃস্ফুর্তভাবেই মেলায় অংশ নেয়া যায়। আর সত্যিই যাদের কাছে আত্মিক বিকাশ ও জ্ঞানচর্চায় বইকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তারা হুজুগে অনেক বই না কিনে, খোঁজখবর নিয়ে কম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো সংগ্রহ করুক, এটাই চাই। অদরকারি একশ’ বই পড়ার চেয়ে দরকারি ১টা বই-ই তাৎপর্যময়। যে বই পড়ার পর পাঠকের মনে হবে, সত্যিই তার ভাবে-কল্পনায়-চিন্তায় নতুন কিছু যোগ হলো।