বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ পিওনা আফরোজ
অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবি-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি কবি ও লেখক পিওনা আফরোজের সাথে।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার কয়টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতি এবং বইটির ব্যাপারে জানতে চাই।
পিওনা আফরোজ: ২০২২ বইমেলায় আমার নতুন একটি গল্পগ্রন্থ ও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। গল্পগ্রন্থটির নাম, ‘নিহত জ্যোৎস্না’। দুই বছর ধরে লেখা কিছু গল্প একসাথে করে মলাটবদ্ধ করেছি। এটি মূলত একটি জীবনমুখী গল্প সংকলন। গল্পগুলোর কাহিনী আবর্তিত হয়েছে নানা ধরণের সামাজিক ও মনস্তাত্বিক বিষয়কে কেন্দ্র করে। এ গল্পগুলোতে উঠে এসেছে প্রেমের ছদ্মাবরণে প্রতারণা, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে মানুষের করুণ আকুতি, অর্থনৈতিক টানাপোড়নের মাঝেও আস্থা ও ভালোবাসার সম্পর্ক, সমসাময়িক কালের সামাজিক অস্থিরতা এসবকে ছুঁয়ে জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে চেয়েছি।
কবিতার বইটির নাম, ‘অভ্যেসের মতো কিছু ভুল’। প্রেম, বঞ্চনা,অভিমান, অপূর্ণতা নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো রচিত হয়েছে। প্রজাপতি জীবনের অসংখ্য স্মৃতিগাঁথা, দহনকালের বেদনা, বিসর্জনের মায়াভরা কবিতাগুলো আশা করি পাঠকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেবে সহজেই।
এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। যা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যতবারই নতুন বই আসে ততবারই সেই একই চিরচেনা অনুভূতি, একই ভালোলাগা মনের গভীরে বয়ে যায়। আমি তাকে ছুঁতে পারি না কিন্তু অনুভব করতে পারি। কখনো যদি আমার অনেকগুলো বই প্রকাশ হয় সেদিনও হয়তো প্রথমবারের মতোই সেই একই অনুভূ’তি আমাকে জড়িয়ে রাখবে।
দাঁড়িকমা প্রকাশনীর স্টলে গল্পগ্রন্থ ‘নিহত জ্যোৎস্না’, কাব্যগ্রন্থ ‘অভ্যেসের মতো কিছু ভুল’ পাওয়া যাবে। বই দুটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রভুক প্রকাশনী। এছাড়াও রকমারিসহ যেকোনো অনলাইন বুকশপে বইগুলো পাওযা যাবে।
মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?
পিওনা আফরোজ: হ্যাঁ, আমার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। দাঁড়িকমা প্রকাশনীর স্টলে আমার উপন্যাস ‘কাছের মানুষ দূরের মানুষ’ পাওয়া যাবে। এই বইটিও প্রকাশ করেছে, চন্দ্রভুক প্রকাশনী।
মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।
পিওনা আফরোজ: আমার মনে হয় গ্রন্থমেলা যথেষ্ট প্রাণবন্ত। তবে এটাও পরিলক্ষিত হয়, অনেকেই বলছেন, যে পরিমাণ মানুষ ভিড় করে সে পরিমাণ মানুষ বই কিনে না। আসে শুধু ঘুরতে আর যাবার বেলায় চটপটি অথবা ফুচকা খেয়ে বিদায় নেয়। তবে আমার মনে হয়, এদের একাংশ যদি বই না কিনে তবুও মেলা প্রাণবন্ত করতে এদের ভুমিকা অপরিসীম। মেলা একটি উৎসব। আর এই উৎসব সার্বজনীন। মেলায় মানুষ ঘুরতে আসবে, খাবে , চাইলে বইও কিনবে। এটাও আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ। এর মধ্য দিয়েই আগামী প্রজন্ম বইয়ের সমপর্কে জানবে। তার সংস্কৃতি সমপর্কে জানবে। এর ভেতর দিয়েই অন্তত প্রতি দশ জনের মধ্য থেকে একজন পাঠকের সৃষ্টি হলেও হতে পারে। তাই আমি চাই মেলায় মানুষ আসুক, মেলা দেখুক। প্রাণের মেলা আরও জমে ওঠুক।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনার সাথে জড়িত মানুষের রুটি-রুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।
পিওনা আফরোজ: অবশ্যই জড়িত। কোভিডের প্রাদুর্ভাবে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দুই বছর ধরে বইমেলায় প্রকাশকগণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এটি দুঃখজনক। তবে পৃথিবীব্যাপী বই ছাড়াও অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও এই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরকম পরিস্থিতি সত্ত্বেও কোথাও কিছু থেমে নেই। ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে প্রকাশনা সংস্থাগুলো বরাবরের মতো কোভিডকালীন সময়েও মেলা প্রাঙ্গনে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এই কাজটি যে শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে লাভবানের আশায় করে থাকেন তা নয় এর মাঝে লুকিয়ে থাকে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। তবে বর্তমান বাস্তবতায় প্রকাশনা শিল্পকে ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখার জন্য এ বছরের বইমেলা লাভজনক হওয়া জরুরী। তাহলে হয়তো বিগত দিনগুলোর ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। আর এর বাস্তবায়ন সকলের সহযোগীতার সমন্বয়ে সম্ভব। এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে এক পক্ষ অপর পক্ষের উপর নির্ভরশীল। ফলে নীতি নির্ধারক, প্রকাশক, লেখক সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর বিশেষ খোঁজ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।
পিওনা আফরোজ: এটা সত্যি যে, বই মেলার পর অনেক প্রকাশিত বইয়ের আর বিশেষ খোঁজ থাকে না। তবে বর্তমানে এর ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে অনলাইন বুকশপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। করোনাকালীন সময়ে মানুষ অনলাইন থেকে বই কেনায় অভ্যস্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাস্তব বিক্রয়কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা কমে এসেছে। তাই বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা কেন্দ্রিক বই বেচা-কেনার বাইরেও পাঠক এখন সারা বছর ধরে অনলাইন থেকে বই কিনে পড়ছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এমনকি যারা মেলায় যাওয়ার সময় করতে পারছেন না তারাও ঘরে বসে পছন্দের বইটি অর্ডার করে নিতে পারছেন।
মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।
পিওনা আফরোজ: কোভিড পরিস্থিতি এখন অনেকটইা ভালোর দিকে। সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হয়েছে। আমি বলবো ভ্যাকসিন গ্রহণ করে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্মাানিত পাঠকগণ মেলায় আসুন। প্রকাশক, লেখক, পাঠক, দর্শনার্থীদের সমাগমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উৎসবে মুখরিত হোক।