You are currently viewing প্রদীপ আচার্যের কবিতা

প্রদীপ আচার্যের কবিতা

প্রদীপ আচার্যের কবিতা

 

নিঃস্বতার বয়ান

জমিনে কতটুকু বৃষ্টি হলে তুমি আর বলবে না এখনো তৃষ্ণা মেটেনি,
আকাশে কতটুকু মেঘ জমলে তুমি
আরেকবার বলবে, ছায়া, এবার তোমার ছুটি
হৃদয়ে কতটুকু ভাঙা-গড়া হলে তুমি আর কখনো অপেক্ষা করবে না নতুন কোনো পাড়ের,
কান্নার আলিঙ্গনে কতটা সিক্ত হলে তুমি আর হতে চাইবে না নতুন এক পাহাড়,
তোমার সকল অভিলাষ দারুণ নৈঃশব্দ্যে তৈরি করে নতুন এক তরিকা
যার ফ্রেমে কৃত্রিম চাষাবাদ হয় মেঘ, বৃষ্টি, ছায়া কিংবা কান্নার!
তোমার হৃদয়ের বাম অলিন্দ শক্ত সুতোয় বোনা
তোমাকে শুনবে বলে রাজাধিরাজ বসিয়েছেন মেলার আয়োজন
তুমিও মহা খুশি
বারবার হাত দিয়ে দেখছ বাম অলিন্দের বুনোট
আর আমি নিয়ে গেলাম তোমার জমিন, নদী, আকাশ আর পাহাড
আমি চললাম পশ্চিমে
মহামহিম সেখানেও বসিয়েছেন মেলার আয়োজন
আমিও দারুণ খুশি
শোনাবো তোমাকে নিঃস্ব করার বয়ান…

 

ইচ্ছেঘুড়ি

ইদানীং তোমাকে খুব মনে পড়ে
কদিন পরই বয়স ছোঁবে পঞ্চাশ
তোমারও তেমনই, না?
চল্লিশের পর ডাক্তারের হরেক নিষেধ
এটা খাবেন না, ওটা ছোঁবেন না!
আরেকটু সময় গেলে আরো কত নিষেধ-বারণে
ছেয়ে যাবে জীবন
হুট করে কখন টান পড়বে জীবনের সুতোয়…

তোমার সাথে তাই অন্তত একবার দেখা হওয়া দরকার
চলে গেলে আর কি ফিরব কখনো!
কে জানে!

ফিরলে হয়তো একটা হৃৎপিণ্ড পাব
কিন্তু সেখানে তুমি থাকবে কি?
তোমাকে কি অনুভব করব তখনো এমন করে?
কে জানে!

গন্তব্যে ফেরার আগে
তোমার সাথে তাই একবার অন্তত দেখা হওয়া দরকার
না হোক কোনো কথোপকথন আর
শুধু অনুভবে লীন হোক মুহূর্তকাল
এক মুহূর্ত ভাসুক অনন্ত প্রেমে
তোমার শেখানো প্রেমে…

 

নিরন্তর নিজেকে খুঁজি

এ শহর আমার নয়;
এই রাজপথ, অলিগলি, মানুষের অবিশ্রাম ছুটোছুটি, কিছুই আমার নয়
ভ্যানগাড়িতে ভাজা গরম পুরি কিম্বা মালাই চা
দোকানে টাঙানো একেকটা সাইনবোর্ড,
বাতাসে ভাসমান কথোপকথন,
রাস্তার পাশে ফোটা কৃষ্ণচূড়ার রঙ,
সার্কিট হাউস মোড়,
ব্যাটারিচালিত রিক্সা,
বিরিয়ানীর গন্ধ;
চুল্লির কালো ধোঁয়া
কিংবা ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশদ্বার, কিছুই আমার নয়…

আমার তবে কী!
ভাবতে ভাবতে হেঁটে যাই
আবার থামি…

দেখি দক্ষিণে বয়ে চলা অগাধ জলরাশি
আজন্ম চিনি তাকে- ভৈরব!
ভৈরবের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে পা রাখি রূপসার সীমানায়…
ডুব দিতে গিয়ে ফিরে আসি; জলের সীমানা, সেও তো আমার নয়…

আমার তবে কী!
জানি না…

শুধু জানি
আমার আরাধ্য এক সীমান্তহীন ভূমি
আমার ইপ্সিত এক অসীম জলরাশি
আমার উপাস্য এক উন্মুক্ত আকাশ…

কয়েকজন কিশোর আদুল গায়ে ঝাঁপ দেয় রূপসার জলে;
আমিও তলিয়ে যেতে চাই জলের গভীরে;
আমাকে সে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আরো দক্ষিণে যার সীমানার নাম পশুর…

ছলছল চোখে দেখি জলের বুক থেকে সদ্য ওঠা এক কিশোরী ভেজা পায়ে চলে পশ্চিমে
দূরের কোনো এক গ্রামের দিকে
আমি তার ভেজা পদচিহ্ন দেখে পিছু পিছু এগোই;
যত অনুসরণ করি তত সে হারিয়ে যায় দূরে
অধীর কন্ঠে বলি, ‘আমাকে তোমার সাথে নাও’!

সে মুখ ঘুরিয়ে হেসে উত্তর দেয়,
‘পথ সৃষ্টিতে নেমে পথ হারাবার এত ভয়! বোকা!’
ব্যাকুল আমি আবার বলি, ‘আমাকে তোমার সাথে নাও… নাও…’

হারিয়ে যাবার আগে সে বলে, ‘আমিও যে তোমার নই’!
‘আমার তবে কী’? -ব্যগ্র আমি শুধাই অতঃপর…
‘তোমার কেবল জন্ম আর মৃত্যু’!

হাওয়ার এস্রাজে বাজে তার অমোঘ উত্তর…

************************************