You are currently viewing প্রথম দেখা> মেহনাজ মুস্তারিন

প্রথম দেখা> মেহনাজ মুস্তারিন

 

মেহনাজ মুস্তারিন

প্রথম দেখা

 

কাঁটাতারে ঘেরা একখন্ড উঠোন, তারই

পাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা গোলাপগাছ, দু’টো

লাল গোলাপ ফুটে আছে সেখানে, তাদের রঙ ছড়িয়ে

পড়েছে মেঘের আড়াল থেকে উঁকি মারা সূর্যালোকের

মতো করে; আর তার সুগন্ধ কিশোরীর গায়ের নরম গন্ধের

মতো দখল নিয়েছে আমার মগজের। আমি মুগ্ধ! আমি

বিমোহিত! আমি ক্ষেপে ওঠা তরুণীর মতো

ভালোবাসার অর্ঘ নিতে, অথবা জেগে ওঠা ইতিহাসের মতো

সামনে তাকাই——-;

হৃদয়ের আঙিনায় ফুটে আছে নীলপদ্ম, তাকে পাশ কাটিয়ে

আমি গোলাপের দিকে হাত বাড়াই, আমার হাত দীর্ঘ হতে হতে

শেখ মুজিবের তর্জনীর মতো লম্বা হয়ে যায়,

বাঙালির মুক্তিকে ধরে ফেলার মতো

আমার আঙুল তখন গোলাপের স্পর্শ পেতে ব্যগ্র——

সহসা কোথাও জানি কি হয়, আমি রক্ত দেখে চমকে উঠি!

আমি আমার আঙুলগুলোকে দেখি ক্ষত বিক্ষত, তারা

বীরাঙ্গনাদের মতো নির্লিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছে,

কাঁটাতারের বেড়া অথবা গোলাপকাঁটা—-

কার আঘাতে এমন হাল, আমি নিশ্চিত হতে পারি নে,

আমি সেই চেষ্টাও করি না,

নিজেকে আমি আবিষ্কার করি বিস্তৃত এক প্রাঙ্গনে,

একা—-

আমার মগজ তখন গোলাপের স্বপ্নে ব্যাকুল

আমার মন তখন গুলি খাওয়া যুবকের মতো

জয়বাংলার জেদে বিমোহিত,

আমি সমর্পণে রাজি না হয়ে ফিরে আসি।

আমি ফিরে আসি,

সাথে করে নিয়ে আসি বৃষ্টি-জল, কাদামাটি আর

গোলাপের গন্ধ, তারা যুদ্ধস্মৃতি সঙ্গে করে ফিরে

আসা বীরের মতো আমার সাথে বসবাস করে।

তারপর,

দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর থেকে বছর—-

জাতীয় বিস্মৃতির মতো আমিও ভুলে যেতে দেই

আমার ক্ষত, আমার কাঁটার আঘাত,

আমি ক্রমশ: অভ্যস্ত হয়ে পড়ি চারিদিকের নয়া বাস্তবতায়।

সেদিন হঠাৎ করেই চোখ গেল সেই গোলাপ বাগানে,

কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে তারা ঠিক সেই আগের মতো

হাতছানি দিয়ে ডাকছে,

কাঁটাভরা গোলাপ তেমনি আছে,

তেমনই আছে তার সৌন্দর্য, মোনোলোভা!

তা সত্ত্বেও, আমার হাত প্রশস্ত হয় না,

আমার পা সযত্নে ফিরে আসে,

যেভাবে পুনর্জন্মের স্মৃতি ফিরে এলে আমরা

পুরোনো ক্ষতগুলোকে বর্তমানের সাথে মিলিয়ে দেখে

অবাক হওয়ার ভান করি, যেভাবে ইতিহাস ফিরে এলে

শেখ মুজিবকে অস্মীকার করে ভাবি, বেশ তো

আছি, তবে কেন হৃদয় খুঁড়ে রক্তক্ষরণকে টেনে আনা!

অনেকটা ঠিক সেভাবে আমি গোলাপের দিকে তাকাই,

সহসা আমার স্মৃতির ভেতর সযত্নে থেকে যাওয়া

কাঁটার জালা,

পুরোনো পাপড়ি,

আর কিশোরির গায়ের গন্ধের মতো সুগন্ধ

একসাথে হামলে পড়ে,

আমার হৃদয় কাঁপতে শুরু করে,

আমার মনে হয়, এ মৃত্যুঞ্জয়!

আমার মনে হয়, কাঁটার আঘাত কোন স্মৃতি নয়,

এটি বহমান নদীর মতো,

অথবা হাজার বছরের ইতিহাসের মতো,

সদা জাগ্রত, সদা চঞ্চল!

আমার অপেক্ষার পৃথিবী পুণরায় হেসে ওঠে।

জুলাই ১০, ২০২২