You are currently viewing পিপুফিশু -৮ || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু -৮ || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু

আলী সিদ্দিকী

লিনোরায় ডুব সাতাঁর ৮

ঘুমটা ভেঙে গেছে ফোনের রিংয়ে। শনিবার সকালের এমন আরামের ঘুমটা ভাঙিয়ে দেয়ার জন্যে ফোনের ওপর বিরক্ত হলাম। আবার দেখো, পাঁচটা রিং শেষ হবার পর আনসারিং মেশিন বেজে ওঠার সাথে সাথে লাইন কেটে যাচ্ছে। এভাবে দু’বার রিং হলো আর কেটে গেলো। আরে বাবা ম্যাসেজ তো দেবে, না কি ? অবশ্য জরুরী কল না হলে কেউ ম্যাসেজ রাখে না। তা জরুরী না হলে বার বার কল করার দরকার কি ? তক্ষুণি আবার ফোন বেজে উঠলো। এবারও হাত বাড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো না। ভাবলাম, দেখি ম্যাসেজ রাখে কি না।
হ্যালো ভাইয়া, আমি লিপু বলছি, ঘরে থাকলে ফোন ধরো, হ্যালো ভাইয়া -।
লিপুর গলা শুনে লাফ দিয়ে ফোন ধরলাম।
কেমন আছিস রে, সবাই কেমন ?
আমরা ভালো আছি, অপর প্রান্ত থেকে আবেগ দিয়ে বললো লিপু, তোমার কি হয়েছে ? গত একমাস ধরে তোমার কোন খবর নেই – ।
আছি ,ভালো আছি, তুই এখন রাখ, আমি কল ব্যাক করছি।
মা চলে যাবার পর থেকে নিজেকে কেন জানি শেকড় উপড়ানো গাছ মনে হয়। প্রথম প্রথম খুব কান্না করেছি। ভাইবোন আর শয্যাশায়ী বাবাকে দেখার জন্যে আকুলি বিকুলি করেছি। কনট্রাক্ট ম্যারেজ করে লিগ্যালাইজ হবার চিন্তাও করেছিলাম। কিন্তু মাকেই যখন বউ দেখাতে পারলাম না তখন ভুয়া আর সত্যি যা-ই হোক না কেন, সে-ই বন্ধনে আর জড়াতে মন সায় দিলো না। মনের উথাল পাথাল ভাবটা কিছুদিনের মধ্যে থিতিয়ে এলো। মা থাকতে আগে যেখানে সপ্তাহে দুই তিনবার কল করতাম, এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে মাসে এক দুইবার। স্বাভাবিক ভাবেই লিপুরা চিন্তিত হবে। সবচে’ বেশী কষ্ট পাবে বড়ো আপা। গত দশ বছরের চেষ্টায় মোটামুটি আর্থিক কষ্ট থেকে পুরো পরিবারকে থেকে টেনে তুলতে পেরেছি, মাও তা দেখে গেছে। এরচে’ বড়ো পাওনা আমার আর কি হতে পারে ? লিপুটার বিয়ে দিয়ে দিলে সংসারের হাল ধরতে পারতো পুরোপুরি। কিন্তু বড়োপা’র এক কথা, এ হয় না।
কেন হয় না ? আমি আর্গু করি, দুনিয়াতে এমন শত শত পরিবার আছে যেখানে বড়োর আগে ছোটকে বিয়ে দিতে হয়। আমরা কি দুনিয়ার বাইরের ?
তা হয় না খোকন, বড়োপা’ একরোখা গলায় বলে অপরপ্রান্ত থেকে।
পাগলামি করছো কেন ? আমি বোঝানোর চেষ্টা করি, তুমি নিজের সংসার ফেলে কতো আর ছোটাছুটি করবে ? বাচ্চাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া লিপুর বয়সও তো সাতাশ পেরিয়ে গেলো। অবুঝ হলে কি চলবে ?
তুই চলে আয় খোকন, বড়োপা’ কেঁদে ফেলে, আর বিদেশ করতে হবে না।
সব জেনেশুনে একথা কি করে বলছো ? আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম, বড়ো ভাইকে যারা রাস্তার ওপর কুপিয়ে মেরেছে তারা তো বুক ফুলিয়ে হাঁটছে, আমাকে কি ওরা ছেড়ে দেবে ?
খোকনরে, আমি আর পারি না-বলে বড়োপা’ আকুল হয়ে কাঁদলো সেদিন।
আমারও মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের বর্ধিষ্ণু পরিবারটিকে পঙ্গু করে দেবার চক্রান্ত চলছিলো অনেকদিন ধরে। আব্বার প্রভাবের চেয়েও বড়ো ভাইয়ের দাপটের সামনে দাঁড়ানোর মতো সাহস ছিলো না কারো। কিন্তু এক সময় তারা সফল হয়ে গেলো। এক বর্ষারাতে মাঝবাজারে তারা কুপিয়ে হত্যা করলো বড়ো ভাইকে। হঠাৎ করেই পুরো পরিবারটা যেনো ভেঙে পড়লো। কোর্ট কাছারি অনেক কিছু হলো কিন্তু কিছুই হলো না খুনীদের। বরং তারা আমাকে নিকেষ করে দেবার চেষ্টা করে কয়েকবার। উপায়ান্তর না দেখে সবাই মিলে আমাকে দেশান্তরী করে দেয়। আমি ভাসতে ভাসতে আমেরিকায় চলে আসি। এখনো ভাসছি। জানি না কোনদিকে যাবো। বেঁচে আছি এটাই সবার কাছে সান্ত¦না। কিন্তু ভেতরে মনমরা ভাবটা চেপে রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বেঁচে থাকা যে কি কষ্ট আমার চেয়ে বেশী কে জানে ?
যাহোক, লিপু ফোনের অপেক্ষায় বসে আছে। হয়তো বড়োপা’ও অপেক্ষা করছে। অবশ্য বেশ খিদে অনুভব করছি। আগে হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নেই। তারপর ফোন করা যাবে।
দুম, দুম, দুম।
বাথরুমে ঢুকতে যাবো এ সময় দরোজায় কে যেন নক করলো। আরে বাবা, কলিংবেলটা কি চোখেও পড়ে না ? কে যে এলো এই সকাল বেলা !
দরোজা খুলে হা হয়ে গেলাম। অন্ততঃ এই সকালবেলা আমি ওকে প্রত্যাশা করি নি। ক’দিন আগে উইলিয়ামশন রেস্তোরাঁয় সে বাসার ঠিকানা নিয়েছিলো। কিন্তু একেবারে না জানিয়ে এভাবে চলে আসবে তা কল্পনাই করিনি। অন্ততঃ ফোন করে তো আসতে পারতো। একা বাসায় ওর উপস্থিতিতে অস্বস্তিবোধ করলেও একটা সুখানুভূতি বুঝি আমার ভেতরে ঢেউ খেলে গেলো। একটি বাইশ তেইশ বছরের সুন্দরী যুবতীর মুখদর্শনের মুগ্ধতা বুঝি ছড়িয়ে পড়ে আমার মুখাবয়বে।
লিনোরা, ইউ ?
গুড মর্ণিং, সকালের সোনারোদের হাসি ছড়ায় সে, হাউ আর ইউ ডুয়িং ?
ওয়ান্ডারফুল, আমি দরোজা ছেড়ে দাঁড়াই, কাম অন ইন-
থ্যাঙ্ক ইউ। বলে সে সোফার দিকে এগিয়ে গেলো।
ঘরটা খুব একটা অগোছালো না হলেও ফিটফাট বলা যায় না। সব ব্যাচেলরের বুঝি একই দশা। আমি ঝট করে সোফার ওপর ফেলে রাখা কাপড় চোপড়গুলো সরিয়ে ফেললাম। এমনিতেই লিনোরাকে নাকউঁচু স্বভাবের মনে হয়নি। সে অনেকটা ধীরস্থির আর দিলখোলা ধরণের আমুদে মেয়ে। অল্প ক’দিনেই সে সহজেই ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছে। স্বভাবে চপলতা তেমন না থাকলেও কোন কিছুতে উচ্ছ্বাস প্রকাশে দ্বিধা করে না।
আর ইউ সারপ্রাইজড ? সোফায় বসে আমার দিকে তাকায় সে।
তাতো বুঝতেই পারছো – আমি দাঁড়িয়েই বললাম। আসলে আমার এক্ষুণি বাথরুমে যাওয়া দরকার। কি দিয়ে ওকে একটু ব্যস্ত রাখা যায় ভাবতে ভাবতে বললাম।
আসলে পরশু থেকে তোমাকে খুব ফিল করছি, সে টেবিল থেকে নিউজউইকটা তুলে নিলো, কাল সন্ধেয় আসতে ইচ্ছে হয়েছিলো, কিন্তু একটা কাজে আটকে গেলাম। রাতভর ভাবলাম। আর সকাল হতেই চলে এলাম।
খুব সরল ভঙ্গীতে সে একটু গভীর গলায় কথাগুলো বললো। বলার ভঙ্গীতে যেনো কিছু একটা প্রকাশ করতে চাইছে। বুঝতে পারলাম আমাকে ওর ভালো লেগেছে। গত কিছুদিন ধরে প্রায় দেখা সাক্ষাত হওয়ায় সে ঘনিষ্ট হবার সুযোগ পেয়েছে। আমিও। তাছাড়া তাকে বাঙালী জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ওপর কিছু বই সংগ্রহ করে দিয়েছি। এতে সে যারপরনাই খুশী হয়েছে। বারবার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। এমনকি আবেগে আলিঙ্গনও করে ফেলেছে। তার উপস্থিতিতে প্রথমে যে অস্বস্তিবোধটুকু জেগে উঠেছিলো নিচু স্বরে বলা কথাগুলোয় তা যেনো দ্রুতই অপসারিত হলো।
বেশ ভালো করেছো, আমি টিভিটা অন করে দিলাম রিমোটটা ওর হাতে দিলাম, আমি খুব খুশী হয়েছি। এমনিতে আজ আমার তেমন কোন প্রোগ্রাম নেই। এখন তুমি একটু টিভি দেখো, আমি হাতমুখ ধুয়ে নেই।
দ্যাটস্ ওকে, হাত বাড়িয়ে রিমোট নিলো সে, তবে ডিস্টার্ব ফিল করলে বলো -।
না, না লিনো, আমি ওকে আশ্বস্ত করি, তুমি একটু বসো, আমি ঝট করে সেরে আসছি -।
নো প্রবলেম।
ইটস্ এ গুড গার্ল – বলে আমি ভেতরের রুমে চলে এলাম। ওদিকে লিপু ফোনের অপেক্ষায় বসে আছে। আমি তাড়াতাড়ি ওকে কল করলাম। মনে হলো, এ মুহূর্তে ফোন করতে না হলে ভালো হতো।
হ্যালো লিপু, হ্যাঁ বল কি খবর -। আমি অপ্রাঙ্গিক কথা বাদ দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম।
ভাইয়া, ওরা তো জায়গা রেজিস্ট্রি নিতে বলছে, লিপু জানালো, না হলে নাকি বায়না বাতিল করে দেবে।
তাই নাকি ? আমি বিরক্তিবোধটা চাপা দিলাম, বায়না তো তুই দুই বছরের জন্যে করেছিলি, না কি ?
হ্যাঁ -।
তাহলে ?
ওদের নাকি টাকার ভীষণ প্রয়োজন।
কিন্তু এখন তো আমার কাছে টাকা নেই।
তাহলে এখন কি করবো ?
বায়না ফেরত নে, আমার রাগ হচ্ছে, পরে দেখা যাবে।
কিন্তু ওরা কি টাকা ফেরত দেবে ?
কেন দেবে না ? বায়নার মেয়াদ পুরো হবার আগে যদি ওরা বায়না বাতিল করে তাহলে তো টাকা ফেরত দিতে হবে। আর ওরা যদি বায়নার টাকা ফেরত না দিয়ে জায়গা বেচতে চায় তাহলে ইনজাংশন জারি করে দিবি, দ্যাটস্ অল। এখন রাখি।

বাড়ীর পাশের জায়গাটা কেনার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে আমার আগ্রহ ছিলো, এখনো আছে। তিনলাখ টাকা দিয়ে বায়নাও করেছি। কিন্তু রেজিস্ট্রি নিতে গেলে সব মিলিয়ে দিতে হবে আরো দশলাখ টাকা। এ মুহূর্তে এতো টাকা যোগাড় করা দুঃসাধ্যের ব্যাপার। আমেরিকায় থাকি বলে সবাই মনে করে এখানে টাকা উড়ে বেড়াচ্ছে। অথচ কি প্রচন্ড কষ্ট করে এখানে রুজি করতে হয় তা কাউকে বোঝানো যায় না। টাকা নেই বললে সবাই মনে করে মিথ্যা বলছি। টাকা আছে, তবে তা যারা বড়ো শহরে কনস্ট্রাকশনের কাজ কিংবা ব্যবসা করে তাদের কাছে। তারা দেশে প্রচুর সম্পত্তি করছে দেখে সবাই মনে করে আমেরিকায় যারা থাকে তারা অঢেল কামায়। কিন্তু যারা ঘন্টা ধরে কাজ করে তারা এখানে স্রেফ বেঁচে থাকে। বাড়ী ভাড়া, ট্যাক্স আর হাজারো বিলের চাপে মানুষ দিশা খুঁজে পায় না। আর এখন অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে তো আমেরিকানরাও সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। প্রতিমাসে দেশে টাকা পাঠানো এখন রীতিমতো কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
তাছাড়া আমি কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠাই আর কিছু সম্পত্তি করছি তা দেখে অনেকে সতর্ক করে আমাকে। আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে দেশে টাকা খাটানো মানে উলুবনে মুক্তা ছিটানো। গচ্চা দেয়া। ও টাকা নাকি কখনো আর ফিরে আসবে না। যখন নিজে দাঁড়িয়ে করতে পারবেন তখন করবেন, না হলে পস্তাতে হবে।
আমার ভাইরা তেমন নয়।
আরে ভাই, আমারও তো ভাই আর শ্যালক, বিশলাখ টাকা দিলাম জায়গা রাখতে, সে জায়গা রেজিস্ট্র হলো ওদের নামে, বললেন হারুণ নামে সোনারগাঁর এক ভদ্রলোক, যখন ফেরত চাইলাম তখন তো শত্রু হয়ে গেলাম।
আমার ভাইরা কি তেমন হবে ? যাদের জন্যে আমি নিজের দিকে তাকালাম না, তারাও ? ভবিতব্য জানে। ভাবতে ভাবতে বাথরুমে ঢুকলাম।
তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে দেখি লিনোরা ঘাড় কাত করে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মুখটাকে এখন ভীষণ সুন্দর লাগছে। যেন এক পরী। পথ হারিয়ে আমার ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে পথ চলার ক্লান্তিতে। ওকে জাগাতে ইচ্ছে হলো না। ঘুমুক। হযতো রাতভর পড়েছে নয়তো কোন অস্থিরতায় ঘুমুতে পারে নি। সে কি আমাকে নিয়ে বেশী ভাবছে ? শুনেছি তার পেরেন্টসরা ছোট ভাইকে নিয়ে থাকে হাওয়াইতে। পড়ার জন্যে সে এদিকে চলে এসেছে। ভেকেশনে গিয়ে তাদের দেখে আসে। বাবা চলে আসে মাঝেমধ্যে। টাকা পয়সা পাঠিয়ে দেয় সময় মতো। পড়া বাদ দিয়ে সে পার্টটাইম কাজ করুক তা বাবা চায় না। আমেরিকানদের মধ্যে এটা বিরল। আঠারো পেরুনোর পরে এখানে সবাইকে নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হয়। এটাই রেওয়াজ। লিনোরা ভাগ্যবতীদের একজন। আর সে কিনা ভাবতে শুরু করেছে এক ভাগ্যাহতকে নিয়ে!
একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে কিচেনে চলে এলাম। হাত চালিয়ে চা নাস্তা তৈরী করে ফেললাম। খাবার টেবিলে সব সাজিয়ে রেখে ওর কাছে এলাম।
কেমন নিঃশব্দে আর আয়েসে ঘুমুচ্ছে লিনোরা। নিঃশ্বাসের সাথে তালে তালে বুকটা ওঠা নামা করছে। গলায় চিকন একটা চেইন, ডানহাতে ঘড়ি, কানে এক জোড়া টপ, আর ঠোঁটে হালকা গোলাপী আভা। ছেড়ে রাখা একরাশ কার্ল করা চুল ঝিঙে লতার মতো ঝুলছে কানের পাশে। বাম হাতটার ওপর মুখটা কাত করে আর ডান হাতটা কোলের ওপর নিয়ে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে সে। জাগাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু আমার খিদে পেয়েছে। হয়তো সকাল থেকে সেও কিছু খায়নি। মাথার কাছে গিয়ে আলতো করে হাত রাখলাম তার কপালে।
চোখ খুললো আস্তে করে। তারপর সলজ্জ ভঙ্গীতে সোজা হয়ে বসলো।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সরি -।
দ্যাটস ওকে, আমি হাত ধরে টেনে তুললাম, ঘুম হয়েছে তো ?
হ্যাঁ। রাতে ঠিকমতো ঘুমুতে পারি নি।
আমি জানি, ওর চোখের দিকে তাকালাম, আমাকে নিয়ে এতো ভাবছো কেন ?
আমার ভালো লাগে।
তোমার পড়ার ক্ষতি হয়ে যাবে।
তোমার হেল্প পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুমি আমার সম্পর্কে তেমন কিছু জানো না।
বেশী জানার দরকার নেই
তুমি বোকা।
ভালোই বলেছো।
টেবিলে নাস্তা দিয়েছি, খাবে এসো।
তুমি করতে পারো সব ? চেয়ার টেনে বসে আমার দিকে পূর্ণচোখে তাকালো সে।
মোটামুটি, আমি হাসলাম, লাস্ট টেন ইয়ারস্ তো এভাবেই কাটিয়ে দিলাম।
ওয়াও ! সে যেন আশ্চর্য হলো, একা থাকতে ভালো লাগে ?
একাকীত্বই আমার কপাল -।
দ্যাটস্ নট ট্রু , সে মৃদু কন্ঠে অস্বীকৃতি জানালো, তুমি তোমার মতো করেই সময় নির্মাণ করে নিতে পারো। লাইফ ইজ টু শর্ট। এই সীমাবদ্ধ সময়ে মানুষ সীমাহীন কোন কিছুই করতে পারে না।
বাব্বা ! আমি পুলকিত হলাম, তোমার কি মাস্টার হবার ইচ্ছে ?
কেন বেশী শক্ত কথা বললাম নাকি ? সে ঘাড় কাত করে অপূর্ব ভঙ্গীতে তাকালো।
তা নয়, আমি পানিটা গলায় ঢাললাম, সুন্দর বলেছো। আর বলার সময় তোমর চোখ নেচে ওঠে, মুখে খেলে যায় রংধনু, আমার দেখতে ভালো লাগে।
তুমি একজন কবি, সে হাসলো, সব মানুষের মনেই একজন শিল্পী লুকিয়ে থাকে। কারোটা প্রকাশিত, কারোটা নয়। তুমি নিজেকে প্রকাশ করো আতিক।
সে বড়ো কঠিন লিনো, আমার গলায় বুঝি বিষন্নতা ফুটে ওঠে, ফুলটাইম কাজ না করলে আমাদের ফ্যামিলিটা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাকে প্রতিমাসেই টাকা পাঠাতে হয়।
কষ্ট বটে, সে উঠে আমারে কাছে এলো, আমার মাথাটাকে বুকে চেপে ধরলো আলতো করে, আমি তোমাকে হেল্প করবো।
ওর স্পর্শে আমার শরীরটা হঠাৎ যেনো দিশাহারা হয়ে উঠতে চাইছে। বুকজোড়ার খাঁজ থেকে উঠে আসা অপূর্ব স্নিগ্ধ এক সৌরভ ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার অনুভূতিতে। আমি হাত বাড়িয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রাখলাম। ওর বাদামী চোখজোড়ায় ফুটে উঠেছে গভীর মমত্ববোধ। মাথাটা নিচু করে ওর কাঁপতে থাকা ঠোঁটজোড়া সে আলতো করো নামিয়ে আনলো আমার মুখে। উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে শরীরের ভেতর মুহূর্তে জেগে ওঠে চরম আন্দোলন।
আমি ওকে চুমুতে ভরিয়ে দিলাম।

**********************************