পিঙ্কি ঘোষের কবিতা
শিলাবৃষ্টি
বুক জুড়ে বিস্তীর্ণ কুরুক্ষেত্র প্রান্তর,
বহুরূপী আমি’র সাথে একাকী আমি’র
রক্তক্ষয়ী ভয়াবহ মহাযুদ্ধ।
কত রক্তাক্ত আমি’র মৃতদেহ,
কত ক্ষত বিক্ষত আহত আমি’র ভিড়।
কোনো শর্ত নেই, কোনো সন্ধি নেই,
শুধুই আঘাতের গোলাবর্ষন,
সমাজ-সংসারের চেনা মুখেরা উপহাস করে,
ওদের অভিধানে ব্যর্থতা নামে কোনো শব্দ নেই।
কত রাতের উল্কাপাতের সাক্ষী থাকে মন,
কত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের দৃশ্য দেখে চোখ,
চোখ জুড়ে অবিরত শিলাবৃষ্টি…
তবুও, কবিতারা সেজে ওঠে শৈল্পিক শব্দমালায়।
……………………….. ……….
কাঁসাই পাড়ের ইতিহাস
শেষের কবিতা আজও স্বপ্নময়
অন্তমিলের রাজ্যে সর্বত্রই নৈরাজ্য,
তোমার ভাবনায় হারিয়েছি বহুবার।
দেখেছি সন্ধ্যাতারার স্নিগ্ধতা,
খুঁজে পাইনি ধ্রুবতারার ঔজ্জ্বল্য,
কাঁসাই পাড়ে ঘুমিয়ে আছে একটা ইতিহাস…
শাড়ির ভাঁজ এখনও কাঁসাইয়ের বালিকে
আগলে রেখেছে স্বযত্নে।
দূরে সরে গেছে কত চেনা মুখ
ধূসর হয়েছে কত তীক্ষ ঈঙ্গিত।
প্রহরান্তে তুমি ধারাপাতের হিসাবে ব্যস্ত হও,
তোমার চাহিদার সাদা ক্যানভাস ভরে ওঠে
আমার আত্মহনন আর আপোষের রঙে।
তবুও তোমার সহস্র আবদারেও-
টিউলিপকে আমি পদ্ম বলবো না।
………………………… ………………..
আমাদের পৃথিবী
সবুজ ঘাসে পা রেখে তোর পাশাপাশি হাঁটলেই
জীবনের সিঁড়ি ভাঙা কঠিন অঙ্কের সমীকরণ
অদ্ভুত ভাবে মিলে যায় সহজ সরলীকরণে,
তোর সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করলেই
খোঁপাটা বায়না করে এলোচুলে বনলতা হবে বলে,
বিদিশার অন্ধকারে নিভৃতে হারাতে ইচ্ছে করে।
লাইব্রেরীর পুরোনো বইয়ের গন্ধের মাদকতায়
অপূর্ব এক নস্টালজিয়া মিশে আছে তোর নামে,
ধানসিঁড়ি নদীতীরে , ব্যস্ত নাটোরের চেনা রাস্তায়
রেডকার্পেট আর অভিবাদনের মুহূর্ত জেগে আছে,
কৃষ্ণকলি মেঘের আঁচল ছিঁড়ে বর্ষা দিনেও
তোকে এনে দেবো রামধনুর কমলা অপরাহ্ন।
………………………… …………….
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিল খুব-
তাইতো এক বর্ষায় মেঘবালিকা হলাম,
ঢেকে দিয়েছিলাম গোটা আকাশটাকে
আমার কৃষ্ণকলি আঁচল দিয়ে।
তারপর…
নিজের অজান্তে কখন যেন নদীর
বুকে ঝাঁপ দিয়ে সাগরে মিশে গেলাম,
নদীর কাছে জানলাম-
বৃষ্টি নামের মৃত্যুটা আমাকে মাটিতে
নামিয়ে এনে তার বুকে ফেলেছে।
মেঘবালিকা আকাশকে ঢাকতে পারে,
আকাশকে ছুঁতে পারেনা কোনোদিনও।
ছেলেবেলা কেটে গেছে-
মেঘবালিকা হতে চাওয়ার স্বপ্নটা ফেরারী হয়েছে,
কেউ কথা রাখেনির মহামিছিলে তুমিও সামিল।
মেঘবালিকা আজ বোঝে-
আকাশ অস্তিত্বহীন,শূন্য,অনন্ত।
তবে তুমি কি জানো?
বরুনার বুকে মাংসের গন্ধ থাকলেও
ভালোবাসার জীবাশ্ম আজও আছে।
………………………… ………………
পুনর্জন্মের কবিতা
এখনও রাত্রে স্বপ্ন আসে তোর চোখে?
প্রতিবেদনশীল মনটা কি রাত জাগে?
আমি রাত জাগি সঞ্চয়িতার মরণের সাথে,
নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় ধূসর হয় কাঁচ,
তবে আগের মতো আর শাড়ির আঁচল
দিয়ে যত্ন করে মুছে দিই না।
স্বচ্ছতা নিরুদ্দেশের যাত্রী,
আমার কলমকলি শাড়ি জুড়ে তোর
বেহিসাবী আবদারের চিহ্ন ,
দূরত্বের প্রাচীর বড়ো দৃঢ়, সুউচ্চ।
বড়ো ইচ্ছে করে তোর লেখা
কবিতার শিরোনাম হতে,
বড়ো ইচ্ছে করে তোর লেখা
সনেট আর অমিত্রাক্ষর ছন্দে হারিয়ে যেতে।
পুনর্জন্মের কবিতাটা লিখে রাখি চল।
পরিচিতি
********
১৯৯৪ সালের ২৫ শে মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। ২০১৫ সালে কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম.এ. পাশ করার সাথে সাথেই নিয়মিত কবিতা ও প্রবন্ধ লেখা অব্যাহত থাকে, প্রথম কাব্যগ্রন্থ “একমুঠো প্রেম”, দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কবি তীর্থঙ্কর সাথে ” চিহ্ন স্মৃতির অন্য পৃথিবী”। ২০২১ সালের ২১ শে মার্চ পিঙ্কি ঘোষের উদ্দ্যোগে বিশ্ব বঙলা সাহিত্য পরিষদ” স্থাপিত হয়, দেশের বাইরেও যথা – বাঙলাদেশ, প্যারিস, নিউজার্সি, সৌদি আরব এবং উত্তর আমেরিকার নিউইর্য়ক এর দেশ পত্রিকাতেও নিয়মিত লিখে চলেছেন।
=====================