পাঁচটি কবিতা / সাজিদুল হক
প্রতিধ্বনির মতো বেঁচে থাকা
মনের সব মেঘ জমে ভোরের শিশিরে
প্রিয় শহর তুমি লুকালে রাতের প্রহরে
রুপোলি অনুভূতি কখন মুছে বিষাদে
সত্তার অনন্তে পুড়েছে হৃদয়-কানন
আমিতো মরেছি চাঁদরাতে জ্যোৎস্নার বিচ্ছেদে
যে নগর স্বপ্নে বিভোর সেখানে কোথায় প্রেমিক?
জেগে থাকে রক্তের পিপাসায় বিশাল দানব
স্তব্দতার ভেতরে গোপন থাকে না আলো;
কচ্ছপের পিঠে লিখেছো গোলচাঁদের কাহিনি।
সমুদ্রের জলে ভেসে ওঠে মৃতসব তিমিরা
আকাশের সর্বশেষ প্রান্ত ছোঁয় না ভূমি!
মানুষের চিহ্ন দেখি না পৃথিবীর কোথাও
ক্ষুধার্ত সময় গাধার পিছনে দৌঁড়ঝাপে ব্যস্ত
ধ্বংস স্তূপের নীচে কবিকে বলতে শুনি,
প্রতিধ্বনির মতো বেঁচে আছি আমি।
০৮.০৯.২০২২
গোধূলি বেলায় কে ছিল?
জ্যোৎস্না পাগল রমণীয় পৃথিবীকে পহেলা অধিকারে নিয়েছি চন্দ্রগ্রহণের বিমূর্ততায়;
পূর্ণিমার প্রত্যাখ্যানে কম্পমান চাঁদ বেছে নেয় ব্রোথেল
বেদনায় ন্যুব্জ নক্ষত্রগুলো পালায় নাড়ির বন্ধন ছেড়ে
বিস্মিত নীল জমিনের প্রশ্ন মেঘাচ্ছন্ন রৌদ্রকে
কুমারী স্তন যুগলে মগ্ন আলোর খেলায় মেতেছে সে কোন অতিথি?
প্রতিক্ষণে প্রতিমার তনুমন অপেক্ষায় মদির মুহূর্তের!
আশ্চর্য জাদুকরী রূপকথার মেয়েটার আর্তচিৎকার
আমাকে অপেক্ষায় রেখেছে এতটাকাল
হরিণীর নীরব স্থিতিশীল দৃষ্টি বলেছিল আমায়, তুমিও পুরুষ!
জ্যোৎস্নার আশ্রয়ে নগ্নতাকে একা রেখে
অরণ্যময় গ্রীবাদেশে আমি খুঁজি লোকালয়
প্রণয়িনীগণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আরণ্যকের কাছে
তারা কেউ নয় ধর্মজাজক
অপরাহ্ণ শেষে কৃষ্ণপক্ষের উদযাপনে নেই আমার অধিকার
মুখস্থ হয়ে যায় প্রহরান্তে প্রতিটি বিরহ ধ্বনি
যদি বিরহীর স্ফটিক জলে মুছে লিপিকা
স্পর্শমাত্র অনুরাগ রূপ নেবে দৈহিকতায়
ঘৃণায় আরও নিকটে আসে আগন্তুক
জ্যোৎস্না ও নক্ষত্রের হন্তারক ছিনিয়ে নিল প্রতিমার আশৈশব অনুভূতি
আমি দেখেছি সৃজনে চাঁদের ডুবে যাওয়া রক্তের ভেতর
সম্মিলিত ক্ষুব্ধ ধ্বনি লিলুয়া হাওয়ার সত্তাকে ছাড়িয়ে স্পর্শ করে না বেদি
বেদিমূলে পড়ে থাকা বাসিফুলের স্তূপে চন্দ্রমল্লিকার মৃতপ্রেম
দীর্ঘস্থায়ী করে আমার প্রতীক্ষিত সন্ধ্যাকে
বিরহের দ্বিপ্রহরে কেউ একজন ছিল সাথে
গোধূলি বেলায় কে ছিল তার সঙ্গে?
লিলুয়া হাওয়ায় ভাসানো হোক তবে শুরু সবকিছু।
২৫.০৮.২০২২
নিসর্গের ভেতরে ফুলবউ আর কাঁটা
এই জীবনের বাইরে আর কোনো জীবন নেই
অন্তত আমার জ্ঞানে
সেই জীবন আমায় দেখিয়েছে কতগুলো মুখ
নিসর্গের ভেতরে অনেকেই ভাগাভাগি করে
নিয়েছি ফুলবউ আর কাঁটা
পৃথিবীর বাহিরে গ্যালাক্সির ঘূর্ণন
ভাবায় না আমার কবিমানস
আমি উত্তরাধিকারের আলো ছড়িয়ে
নির্মাণ করেছি আমাদের চৌহদ্দি
অনার্যের আর্তনাদ ঝুলে থাকে মাধ্যাকর্ষণে।
০৪.০৮.২০২২
সাগর দুহিতা
আমি সাগর দুহিতা
লবন জলে যাপিত জীবন
কে দিলে অপবাদ নুনে খেল এ শরীর?
সারা অঙ্গে মিশে আছে মাছের আঁশের গন্ধ
জলের ছন্দ ছাড়া অন্ধের চলে না পথ
জলের জীবনে পাবে শামুকের খোলসে
পথের আলো;
আমি মৎস্যকন্যা
সাঁতার কেটেই কাটে জীবন সমুদ্রকোলে
ধর্ম নেই বর্ণ নেই সাম্যের দোহাই দিয়ে
মানবীয় আদলে বাঁধে না
কেউ এখানে রাখি বন্ধন
বন্ধু হতে আসে গাঙচিল সামুদ্রিক মায়ায়
মেঘের ছায়ায় গোপন করি আপনা ছায়া
পথে পথে বিছিয়েছো বিষকাঁটা
কখন বধিবে মরণ জালে এই আমারে;
আমি কী আজ একা মৃত্যুভয়ে ভীত?
সমুদ্রের নোনা জলও নেবে শোধ
মানব, তুমি অপেক্ষায় থেকো বিপন্ন-বিষ্ময়ে
অন্তিম ক্রান্তিকালের।
২২.০৬.২০২২
আলোর ছদ্মবেশে পথ খোঁজে ত্রসরেণু
ও চাঁদ যাচ্ছো কোথায় এলোমেলো চুলের রেখা ধরে?
অল্প আগে আমি ছিলাম শহরের দক্ষিণে
তুমিও ছিলে আমারই সাথে
সহস্র শব্দের অর্গল ভেঙে
যখন এসেছি প্রিয়াঙ্কার শহরে
সেই তুমি আকাশ জুড়ে
আলো দিচ্ছ আমাকেই
প্রিয়াঙ্কা জানালো এখনও সেখানে আলোকবর্ষণ হচ্ছে;
অবিরাম এই অগ্রযাত্রা রুখতে কে পারে?
আলোরেখার পথে তুমি চলে গেলে ভিন্ন গ্রহে
সেখানে নেই আসলে আলো
ছিলো না কখনো;
আমি যেখানেই যাই, গভীর হোকনা রাত
আমার সাথে সাথে থাকে সূর্য
সূর্যপথে বেঁচে থাকে আলোহীন জগতের মানুষ।
অন্ধকারের চতুর্দিক পরিভ্রমণে ক্লান্ত
অনেকের প্রশ্ন অন্ধকার ক্লান্তিহীন?
চন্দ্রের গ্রহণ হয়
সূর্যগ্রহণ নামায় অন্ধকার
আলোর ছদ্মবেশে পথ খোঁজে ত্রসরেণু।
২১.০৪.২০২২