You are currently viewing পাঁচটি কবিতা > শিবালোক দাস

পাঁচটি কবিতা > শিবালোক দাস

পাঁচটি কবিতা
শিবালোক দাস
 
 

 

টানাপোড়েন 

 
 
বিকেল শেষ হতে কিছুটা বাকি।
আমি বন্ধ চোখে এগিয়ে যাই
দুই পায়ের লয়ে সমুদ্রের সীমান্তে।
 
বালুকণা ধারন করে জলবিন্দু।
নিভে আসে ধিমিয়ে যাওয়া আঁচ !
 
দৃঢ় আলিঙ্গন। চোখে জল কেন ?
পেরেক পুঁতে যায় আঙুলের ডগায়,
সুগন্ধি ঝরে, ছড়ায় নবাগতার মতন।
বোবার ভাষা এমন করেই অনুভব করি।
 
রাতের ছড়ানো জ্যোৎস্নায় বুনি কবিতা,
তাদের নগ্ন শরীরে দাগ বড্ড চোখে লাগে !
ছুঁড়ি শূন্যে হাত, বাজাই খালি বাসন; বাটি
আমি আছি ! আমি আছি ! আমি আছি !
ঘুর্ণিপাকে শ্বাসবায়ু গরম। করাঘাত করে কেউ।
 
সমুদ্রের শেষ নেই। সীমান্ত কাল্পনিক।
টানাপোড়েন আসে ফিরে জোয়ার ভাটায় !
 
 
 

ক্রৌঞ্চ 

 
 
 
মুখোমুখি আমি ও এক ক্রৌঞ্চ,
অনুরণনের নিঃশব্দ আদান-প্রদান !
তখন ঘরটা আমার নিজস্ব ঘেরাটোপ।
 
অঙ্গুলিস্পর্শে উঠে এল একটু ছাই,
ঘাম ও অশ্রুতে হল অব্যর্থ গঙ্গামাটি,
আমি কপালে ঠেকিয়ে একবার ভাবি,
মহর্ষি বাল্মিকী নেহাত ভুল ছিলেন না।
 
সিঁদুরে মেঘ; তাই সম্ভোগে বিশ্বাসী নই।
আশ্বিনের কাছে চেয়ে নিই অকাল শ্রাবণ।
ক্রৌঞ্চ ঠান্ডা করবে তার তৃষ্ণার্ত বুক !
 
অস্থিমজ্জায় লেপটে থাকে মুহূর্ত,
এখানে গোধূলি একটু দেরীতে আসে।
অনুরণন শুষে নেয় ছলছলাৎ সরোবর
থেকে অপরাহ্নের নরম উষ্ণতা।
এমনভাবে কেউ পূর্ণ করেনি আগে আমায়।
 
মুখোমুখি আমি ও সেই ক্রৌঞ্চ,
অনুরণনের নিঃশব্দ আদান-প্রদান !
যে অনুরণনে বাল্মিকী রচনা করেছিলেন রামায়ণ !
 
 
 

আত্মা

 
 
 
শরীর নয়; আত্মাকে রাখি হাতের মুঠোয়,
অস্বাভাবিক পাণ্ডুর, বিস্ফারিত চোখ।
 
না, না, গরল ঢেলো না একদম !
নীলচে মস্তিষ্ক, নীলচে হৃদয়, অহংকার;
সে ধ্বংস চায়নি, চায়নি প্রেতপুরুষের মান।
 
ভোরের ক্ষীণ আলো এসে পড়েছে আমার
বিছানার উপর, আশাতীত জ্যোতিঃপাত।
সপ্তচক্রের মধ্যে দিয়ে খুলে যাচ্ছে স্বর্গদ্বার !
আঃ কি প্রশান্তি ! অমরাবতীর মতো বাতাস।
বাঁধবো না আত্মাকে, রাখবো কেবল হাতে,
সে ওখানেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
 
আমি চোখ বুজেই ছিন্ন করবো পাহাড়,
আমি চোখ বুজেই হাত বাড়াবো অতলে,
আমি চোখ বুজেই অনুভব করবো পারিজাত।
আমি সমুদ্রগহ্বরের শেষ প্রান্তে দাঁড়াবো, বলবো–
আজ থেকে আমার পরিচয় শুধুই অপার্থিব !
 
আমি আত্মাকে হাতের মুঠোয় রাখি,
আকাশগঙ্গায় রয়েছে বিন্দু বিন্দু মৌলকণা,
হতে চাই আবার প্রথম মানব।
 
 

ফাঁসি         

 
 
 
আর কোনোদিন হবে না সূর্যোদয়,
ঋণের জ্যোৎস্না ফিরিয়ে দেব পুষ্করিণী কে,
আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিও।
 
অন্ধকারের রাস্তা লুণ্ঠন। পাথর চোখ।
 
করো, করো আরো আরো আয়োজন,
হয়েছে আগুন পিপীলিকাভুক; অঙ্গারবর্ষণ।
জল দাও আমায় এক ঘটি, দীর্ঘদিনের তৃষ্ণার্ত।
 
আর কোনোদিন হবে না সূর্যোদয়,
রয়েছে থালা সাজানো ঘরে,
কোণে পয়সার ঝন-ঝনাৎ শব্দ,
আঃ, চুম্বন, তুমি সবচেয়ে বড় প্রতারক !
প্রিয়তমার জন্য রাখা আছে যত্ন করে
সাদা কাগজে মোড়া উড়ন্ত আলোর চিঠি।
ঐ চিঠির জন্য একদিন অমানিশা চেয়েছিলাম।
 
এখনো কি আমার জন্য জোনাকির আলোর
ছন্দ খুঁজতে যাও বারান্দায় আগের মতন ?
 
আকাশে অগ্ন্যুৎপাত ! আমার ফাঁসির সাজা হল।
কিন্তু কাউকে কি একটু হলেও একা করে গেলাম ?
পায়ের কাছে ধুলো, বলো, তার কি দোষ ছিল,
সেও তো একদিন  মিলিয়ে যেত বাতাসে সবার মতো।
 
আমার ভুল ছিল একটাই, ভালোবাসতে পারিনি কাউকেই।
 
 
 
অনন্যা, তোমার শুভ্রস্পর্শ 
 
 
ইচ্ছে করে মেঘের গায়ে লিখে দিই ঠিকানা,
কাশ এখন একটু বেশী মুগ্ধ হতে চায়।
চার দেওয়ালে লেগে তুলোর বীজ; অফিস
টাইমে জেব্রা ক্রসিং-এ জমে মানুষের ভীড়।
 
অনন্যা, তোমার শুভ্রস্পর্শে কোনো সংকোচ নেই।
 
না, তাজমহল কে প্ররোচিত করব না আত্মহননে,
হাতে শুভ্রস্পর্শ নিয়ে কে পাপের ভাগ নেয় ?
কবিতায় নামে জ্যোৎস্না; সমুদ্র সফেন,
খণ্ডিত হয় কোনো প্রাচীন চিরাচরিত অভিশাপ।
 
গাংচিল, তোমার স্বপ্ন পূরণ হল, ভয় নেই আর;
যাও, আকাশ কে মুড়ে ফেলো রাংতায়।
 
অনন্যা, তোমার শুভ্রস্পর্শ আজ এতটাই নান্দনিক।
 
কুঞ্জবনে যেতে মাঝে মাঝে খুব সাধ হয়,
চক্ষু নিমীলিত, ছুরি বিঁধে গেছে সবার আড়ালে,
পায়ের তলায় অসহিষ্ণু বালি, ঢাকা মুখ,
কুঞ্জবনে যেতে মাঝে মাঝে বড় সাধ হয়।
 
পৃথিবীর শেষ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে মনে হয়
যদি পথ হারিয়ে ফেলি, সর্বহারা হতে
থাকে না বাকি; তখন তোমার শুভ্রস্পর্শের
কথা খুব মনে করি অনন্যা, তোমার ঐটুকু
স্পর্শ আমাকে কোনোদিন হারাতে দেবে না !
 
 
শিবালোক দাস 
মুর্শিদাবাদ