You are currently viewing নীল অপরাজিতা || লুনা রাহনুমা

নীল অপরাজিতা || লুনা রাহনুমা

নীল অপরাজিতা 

লুনা রাহনুমা

কথা ছিল টবে অপরাজিতার প্রথম ফুলটি ফোটার আগেই কিয়ারা দেশে যাবে। স্কটিশ ঠান্ডা আবহাওয়ায় গ্রীষ্ম দেশের গাছ অপরাজিতাকে বাঁচিয়ে রাখা আর সেই গাছে ফুল ফোটানো পর্যন্ত লতাকে টিকিয়ে রাখার প্রতিজ্ঞাটি কিয়ারার কাছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মতো হয়ে উঠেছিল। বাগান করতে ভালোবাসেন এমন একজন বাঙালি প্রতিবেশিনীর কাছ থেকে চেয়ে আনা অপরাজিতার সেই ছোট্ট এক বিঘৎ চারাটি ওর তিন কামরার গৃহে প্রবেশ আর কিয়ারার জীবনে ইশতিয়াকের আগমনের সময়কাল এক হওয়ায়, সেই ছোট্ট চারাটিকে বাঁচিয়ে রাখা আর লতায় পাতায় প্লাস্টিকের চিকন কঞ্চিগুলোকে সবুজ করে তোলার মধ্যে একটা অনঙ্গ স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছিল সে নিজের অজান্তেই। ইশতিয়াক যতবার মেসেঞ্জারে কল করত, কিয়ারা প্রতিবার গাছটিকে একটি চুমু খেত। প্রতিবেশিনীর বাড়ি থেকে কিয়ারার বাড়িতে পৌঁছে অপরাজিতার ছোট্ট চারটি বেশ অনেকগুলো মাস থমকে ছিল। হয়তো ঝিম মেরে পড়ে থেকে দম ধরে ভাবছিল। ভাবছিল এই মানবীর নিকট সে নিজেকে বিকশিত করবে কি করবে না। অনেকটা কিয়ারা নিজেও যেমন সেই সময় লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ভাবছিল ইশতিয়াককে নিয়ে কতখানি ভাবা যায়। কিয়ারার জীবনে ইশতিয়াক কিংবা ইশতিয়াকের জীবনে কিয়ারা পরস্পরের অবস্থান নির্ণয়ের সময়টুকুতে ধ্যান করতে থাকা সাধুর মতো অপরাজিতার টবে অল্প অল্প যত্ন, জল, কাটা চামচে গোড়ার মাটি আলগা করে দেওয়া, এইসব প্রতিটি কাজে মিশে আছে ওদের সম্পর্কের আরম্ভদিনের সেই মিষ্টি সুখময় অনুভূতি। একই সময়ে উলের একটা জাম্পার বুনতে আরম্ভ করেছিল কিয়ারা। যদিও প্রথমে সেটি ছিল আরেকজনের জন্য। দুই দুই ব্যক্তির পছন্দে তফাৎ আছে জানার পর জাম্পারের কলার ঘর তুলে ফেলে বুক কাটা কার্ডিগানে শেষ করেছে বুনন। “কেঁদো না মেয়ে মেঘের দেশে, একেলা বসে হৃদয়পুরে, ডাহুক ডাকে বুকের ওমে, আমায় ডেকো দুঃখ পেলে।” ইশতিয়াক মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছে কিয়ারাকে। কবিতার অংশ মনে হয়েছে কিয়ারার কাছে। জিজ্ঞেস করেনি কার লেখা। শুধু রিপ্লাই লিখেছে, সুন্দর! 

ইশতিয়াক ব্যবসায়ী। মতিঝিলে অফিস নিয়ে ব্যবসা জমিয়েছে অনেক বছরের চেষ্টায়। পরিবারে একজন স্ত্রী আছে আর আছে দুটি সন্তান। বাইরে খুব উচ্ছল আর সুখী দেখালেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ একা, কথাটি সে কিয়ারাকে জানিয়েছিল পরিচয়ের পরপর মেজেঞ্জারে একদিন ঘন্টাখানেক আলাপের মধ্যম পর্যায়ে। স্কটল্যান্ডে, কিয়ারার দেশে তখন নভেম্বরের তুষারপাত। জানালার বাইরের কাচে জমে থাকা সাদা বরফের ছোপ ছোপ আদর। মোবাইলের অপরপাশে নিঃসঙ্গতার গল্প শুনিয়ে যাওয়া ইশতিয়াকের কণ্ঠস্বর থেকেও একই ধরণের তুলো তুলো কষ্ট জমে ওঠা টের পেয়েছিল কিয়ারা। হয়তো সেদিন, সেই মুহূর্তে, হয়তো সেই তুষারপাত আর সুরেলা পুরুষকণ্ঠের মিলিত সমন্বয়ে কিয়ারার হৃদয়েও নকশি কাঁথা বুনতে থাকে মমতা আর স্নেহের উন্মুখ রেশমি সুতোর গুটি। ইশতিয়াকের প্রতি সহসা মুগ্ধতার বাড়াবাড়ি না ঘটলেও কিয়ারা একসময় নির্ভর করতে আরম্ভ করে ইশতিয়াকের বাড়িয়ে রাখা অদৃশ্য অথচ অনুভবযোগ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সঙ্গের সান্নিধ্যে। পনের বছরের সংসারে আহমেদের সঙ্গে বিবাদ, বিরোধ, ইগো সংঘাত, পৃথক শয্যা, সাময়িক মুখ দেখাদেখি বন্ধের পর্ব পার করে গালাগাল আর হাতাহাতির শেষে পুলিশ ও সোশ্যাল ওয়ার্কারের নথিপত্রে নাম লিখিয়েও সংসারের খাঁচা থেকে মুক্তি পাচ্ছিল না যখন কিছুতেই, ঠিক তখন ইশতিয়াকের বাড়িয়ে রাখা হাতটি যেন একটানে অসীম শক্তিতে কিয়ারাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিয়েছিল। অসুখী দাম্পত্য আর কলহপূর্ণ সংসার এই দুইয়ের চেয়ে বিভীষিকাময় আর কিছু নেই, এই সত্যটি তখন থেকে আরো বেশি করে জ্বলে ওঠে কিয়ারার মনে। আহমেদের সঙ্গে সেপারেশনের পর কিয়ারার বেশ কিছুদিন লেগেছিল নিজেকে একলা জীবনে অভ্যস্ত করে নিতে। মানসিক বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে কেটে গেছে আরও অনেকগুলো মাস। ছেলেমেয়ে দুটি ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। তারা ছুটি ছাটায় কখনো কখনো মায়ের কাছে আসে, কখনো বাবার কাছে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় তারা কারো কাছেই যায় না। 

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একটা উবার নিয়ে কিয়ারা উত্তরা তিন নাম্বারের হোটেলে বুক করে রাখা রুমে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে নেয়। লম্বা জার্নির ধকলে শরীর ভেঙে পড়তে চাইলেও মন বেশ ফুরফুরে আছে। এরমধ্যে কয়েকবার কথা হয়েছে ইশতিয়াকের সঙ্গে। মেসেঞ্জারে যদিও বহুবার দেখেছে একে অপরকে কিন্তু সাক্ষাতে দেখা হবে এই প্রথম। তবে সেটি ঢাকায় নয়। ঢাকায় কিয়ারার আত্মীয়স্বজনেরা আছেন। ইশতিয়াকেরও বন্ধু বান্ধব আর পরিচিতজনে শহর ভরা। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে সরাসরি কক্সবাজারের নিভৃত গ্রামে পৌঁছে দেখা করবে তারা। হোটেলের চারতলার উপর থেকে নিচের রাস্তায় মানুষজনের চলাচল দেখে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়ে কিয়ারা। এই শহরে ওর জন্ম, শৈশব থেকে আরম্ভ করে স্কটল্যান্ডে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিন দশকের স্মৃতি জমা রাখা আছে এই শহরের ধুলোতে, বাতাসে, বৃক্ষের সোনালী বাকলে, যা দীর্ঘ ক্ষতের মতো খসখসে। 

জানুয়ারির ২২ তারিখ। শীতের আবহ চলছে চারপাশে। মানুষজন কেউ কেউ উলের কাপড় পড়েছে, কেউ কেউ একটির উপরে আরেকটি কাপড় গায়ে চাপিয়ে পথে নেমেছে। কক্সবাজারের এই নির্জন এলাকায় তৈরী হয়েছে কয়েকটি হলিডে কটেজ। এমন একটা কটেজের সামনে একটা ছোট বসার জায়গায় বসে আছে কিয়ারা আর ইশতিয়াক। মুখোমুখি, দুই বছরের পরিচয়ের পর এই প্রথম স্পর্শের নাগালে। যদিও প্রথমবার দেখা, তবু দুজনেই যেন অনেকদিনের চেনা এমন ভঙ্গিতে কথা আরম্ভ করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে কোথা থেকে যেন অল্প অল্প করে হামাগুড়ি দিয়ে আসে লজ্জা। বসে থাকা চেয়ারটি, আলতোভাবে কাঁপতে থাকা টেবিলে ফেলে রাখা দুটি হাত, আর ইতস্তত এদিক ওদিক তাকানো কিয়ারার চোখের দৃষ্টিতে সংকোচের বহিঃপ্রকাশ। পুরুষ মানুষ হিসেবে ইশতিয়াক ধরে নিয়েছিল দায়িত্বটা আসলে তারই, বন্ধুত্বে অথবা প্রেমে কিয়ারাকে সহজ আমন্ত্রণ জানানো। নিজের ভেতরেও যে উত্তাল অস্থিরতার ঢেউ ফুলে ফুলে উঠছে সেটিকে যথাসম্ভব সামলে রেখে কণ্ঠস্বর অকম্পিত রেখে ইশতিয়াক বলে, এখন কেমন লাগছে?

চায়ের কাপটি দ্রুত মুখের কাছে নিয়ে একটা ছোট্ট চুমুক দেয় কিয়ারা। কয়েক সেকেন্ডে সরাসরি তাকায় ইশতিয়াকের চোখের দিকে। বলে, ভালো। বেশ ভালো লাগছে এখন। আমাদের দেখা হলো অবশেষে! অপেক্ষার কাল শেষ করে মুখোমুখী আমরা দু`জন। 

জেট ল্যাগ কেটেছে তোমার? 

হুম। আমি ঠিক আছি। শান্ত কণ্ঠে বলে কিয়ারা। ইশতিয়াক অন্যদিকে মুখ ঘুরাতেই তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে কিয়ারা। মনে মনে ভাবে, দূর থেকে মানুষটাকে যতটা নিঃসঙ্গ আর দুঃখী মনে হয়েছিল এখন ততটা লাগছে না। বেশ সুখী, সংসারী, দায়িত্বপূর্ণ সামাজিক পুরুষেরা যেমন হয়। সকালে দুটো আটার রুটি সঙ্গে সবজি অথবা ডিম ভাজা দিয়ে নাস্তা সেরে গিন্নিকে বাই বলে বেরিয়ে যাওয়া আর দিনমান পরিবারের মানুষগুলোর জন্য আয়-রোজগারের ব্যস্ততায় নিজের সুখ খুঁজে পাওয়া একজন আদর্শ স্বামী। যদিও পরিচয়ের পর থেকেই ইশতিয়াক জানিয়েছে সংসারে আর এই জীবনে সব থেকেও সে কতটা নিঃস্ব। জীবনের পলে পলে লুকিয়ে থাকা ঐশ্বর্যের কণামাত্র উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়নি তার কখনো। কিন্তু ব্যক্তিত্ববান সুপুরুষ ইশতিয়াকের জুলফির অহং আর সুগঠিত শরীরের দীপ্তি কিয়ারাকে অন্য কথা বলে। কোনো সন্দেহ নেই এই মানুষটা নিজেকে যত্ন করে। পঞ্চাশের কাছাকাছিতে এসেও নারীর চোখে নিজেকে আবেদনময়ী করে উপস্থাপন করতে জানে। কিয়ারার মনের সন্দেহের কথাটি জেনে গাল ভরে হেসেছে ইশতিয়াক। বলেছে, আমার প্রেমিকা এখন কাছে এসেছে, পাশে বসেছে, আমার সকল দুঃখের হয়েছে অবসান। অতীতের না পাওয়াগুলো সব এবার পাওয়ায় পাওয়ায় ভরে উঠবে বলেই ঝং ধরা পুরোনো আমি তেঁতুলে ধোয়া কাঁসার থালির মতো ঝলমল করে উঠেছি আজ। শুধুই আপনার জন্যে, জনাবা! 

বেশ গুছিয়ে কথা বলতে জানো তুমি। যেকোনো মেয়ে আচ্ছা মতো পটে যাবে তোমার মুখের কথায়। মৃদু হেসে বলে কিয়ারা। 

লোকে যে তবে বলে শুকনো কথায় চিড়ে ভেজে না!  

সেই জন্যেই বুঝি তোমার কথায় এত প্রেম এত আবেগের মাখামাখি!

ইশতিয়াক সরাসরি কিয়ারার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। গম্ভীর আর সিরিয়াস মুখে বলে, আর কাউকে চাই না। শুধু তুমি পটলেই হবে আমার জন্য। 

না পটলেই কি আর এতদূর চলে এসেছি জনাব, এখানে এই নির্জন কটেজে শুধু তোমার কাছে! আচ্ছা, ভেবে বলো, আমার কারণে তুমি যদি দুঃখ পাও আবার, পুনর্বার? চোখে দুষ্টামি ফুটিয়ে বলে কিয়ারা। 

আকাশের বুকে তখন উড়ে যায় কিছু ছোট ডানার পাখি। দেখতে সুন্দর পাখিগুলোর গলার স্বর খুব বিশ্রী। কাকের মতো কর্কশ। ইশতিয়াক প্রথম স্পর্শ করে কিয়ারাকে। নিজের হাতে কিয়ারার একটি হাত তুলে নিয়ে বলে, সে তুমি চাইলেই পারো। আমাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে আবার উড়ে চলে যাবে সুদূরের দেশে। সাত সাগর আর তের নদীর ওপারে দূরের সেই ঠিকানা, আমার সাধ্য নেই সেখানে গিয়ে তোমাকে খুঁজে বের করব। 

কিয়ারা টের পায় ওর কম্পমান হাতটিকে জড়িয়ে থাকা ইশতিয়াকের হাতটি ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছে। চারপাশের বিশুদ্ধ বাতাসে কিসব বুনো ফুল সৌরভ ছড়াচ্ছে। মহুয়া ফুলের সুঘ্রাণ টেনে নেয়ার মতো মাথাটা ঝনাৎ করে ওঠে কিয়ারার। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পিঠ সোজা করে বসে চেয়ারে। বলে, তোমার বাড়িতে জানিয়েছ আমার কথা? আমার দেশে আসার সংবাদ?

মুহূর্তে ইশতিয়াককে আরও সিরিয়াস দেখায়। বলে, হুম জানিয়েছি। 

আমরা যে এখানে একসঙ্গে আছি এই কথা জানে তোমার স্ত্রী?

না। আমার স্ত্রীকে বলা আর না বলায় কী যায় আসে! বেশিরভাগ সময় সে অচৈতন্য থাকে। আপন জগতে উদাস উন্মনা। আম্মাকে জানিয়েছি তোমার দেশে আসার সংবাদ। ঢাকায় ফিরে তোমাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাব। আম্মা আর আমার বাচ্চাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। 

ইশতিয়াকের কথা শুনে কিয়ারার ভালো লাগে এইভাবে যে সবকিছু আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছে মানুষটা। তাছাড়া সময় একটা বড় বিষয় এখানে। তিন সপ্তাহের ছুটিতে দেশে এসেছে সে। দুজনের পরিকল্পনা মতো স্কটল্যান্ডে ফিরে যাবার আগে ওরা বিয়ের একটা তারিখ ঠিক করে ফেলবে। কয়েক মাস পর কিয়ারা আবার দেশে এলে ঘরোয়াভাবে বিয়ের কাজ সারবে। আহমেদের সঙ্গে ডিভোর্স ফাইল করেছে কয়েক মাস আগেই। উকিলের ভাষ্য মতে কিয়ারা এখন একরকম মুক্তই। কিন্তু ইশতিয়াক তার স্ত্রীকে তালাক দেয়নি এখনও। মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলাটির সঙ্গে বহু বছর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক না থাকলেও ইশতিয়াক বলেছে মানবিক কারণে তাকে সংসারে রাখা হয়েছে। কিন্তু এভাবে তো কোনো সুস্থ মানুষের জীবন চলতে পারে না চিরদিন! জঙ্গলে যে পশুটি রোদে শীতে বিনিদ্র কষ্টে বাঁচে, তার জীবনেও কিছুটা সুখ শান্তি থাকে, কিন্তু ইসতিয়াকের জীবনে তাও নেই। এবারে সে মন শক্ত করে ফেলেছে, কিয়ারার সঙ্গে দ্বিতীয়বার সুখী হবার চেষ্টা করবেই। 

তোমার স্ত্রীকে তাহলে কী করবে? তার কোনো ব্যবস্থা করেছ? কিয়ারা জানতে চায়। 

ইশতিয়াক বেশ সহজ গলায় কথা বলে। বলে, ওকে ওদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেব। ওখানে দূর সম্পর্কের খালা খালুর কাছে থাকবে। আমি প্রতি মাসে একটা মাসোহারা পাঠিয়ে দিব। 

ডিভোর্স ফাইল করবে কবে, ঠিক করেছ? কিয়ারা প্রশ্ন করে। 

তুমি যাবার আগেই করব। দুজনে একসাথে উকিলের সঙ্গে বসে কথা বলে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে ফেলব আগামী সপ্তাহে। কথা শেষ করে ইশতিয়াক বলে, চলো ভেতরে যাই। তুমি রেস্ট করো। আমি একটু নিউজ দেখব টিভিতে।

কটেজের সাতটি দিন সুখ স্বপ্নের মতো বিভোর কাটে ওদের। যদিও পরস্পরের জীবনের গল্প অনেকাংশেই জানা, তবু মুখোমুখি বসে, হাতে হাত রেখে উত্তাপের বিনিময়ে গল্পগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। অতীতের গল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। ইশতিয়াকের ছেলে আর মেয়েকে ঢাকায় সেটেল্ড না করে স্কটল্যান্ডে নিয়ে যাবার প্রস্তাব করে কিয়ারা। কথাটি ইশতিয়াকের পছন্দ হয়। কিন্তু ছেলে মেয়ে যেতে রাজি হবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। এক বিকেলে কটেজের পাশের ঝোঁপ থেকে ফণাচিত্রিত কলকা পাতার একটি নীল অপরাজিতা ফুল এনে কিয়ারার চুলে গেঁথে দেয় ইশতিয়াক। বলে, সুবাসহীন একটি ফুল, অথচ কত কদর পায় সে পুস্পপ্রেমীর কাছে! মখমলের মতো গাঢ় নীলের একটিমাত্র ছড়ানো পাঁপড়ি, কিন্তু নিচের দিকটা সাদা। ফুলটি নারী দেহের একটি অঙ্গের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বলো তো কোন অঙ্গ?  

মৃদু ভৎসনা করে হাসে কিয়ারা। বলে গোপনাঙ্গ! জি না, ওটা তোমাদের পুরুষদের বাড়াবাড়ি কল্পনা। যা দেখো তাই নারী শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলো। এটাও একটা অসুস্থতা মিস্টার পারভার্ট। 

কিয়ারার পরিহাস গায়ে মাখে না ইশতিয়াক। হয়তো জানে, সকল কথা আতরের মতো গায়ে মেখে নিলে অত আর প্রেম হয় না নারীর সঙ্গে নরের। প্রসঙ্গ বদলে ইশতিয়াক জিজ্ঞেস করে কিয়ারার ঘরে জানালার পাশে অতি যত্নে বাঁচিয়ে রাখা অপরাজিতা গাছটির কথা। কিয়ারা জানায় গাছটিকে সে দেশে আসার আগে বৃক্ষপ্রেমী প্রতিবেশিনীর কাছে রেখে এসেছে। কিয়ারা ফেরার আগেরদিন তিনি ওর বাড়িতে অপরাজিতার টব রেখে আসবেন। ভদ্রমহিলার কাছে একটা চাবি রাখা আছে বাড়ির। 

বলেছিলে অপরাজিতার ফুল ফুটলে তবেই আসবে তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ফুল ফোটার কোনো লক্ষণই তো পেলে না এখনো। ফুলহীন বৃক্ষ আর চুম্বনহীন প্রণয়, অভাগার জীবনের গল্প এমনই হয়! ঠাট্টার সুরে বলে ইশতিয়াক।  

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরোয় কিয়ারার বুক থেকে। মনে ভাবে, অতি ভালোবেসেও যেমন কখনো কখনো মানুষের মন পাওয়া যায় না, তেমনি গাছেরা অনেক সময় বাগানীর অতি যত্নেও বিমুখ হয়ে মুখ ফিরিয়ে থাকে। আর মুখে বলে, ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আমি এসেছি তোমার কাছে। আমার জীবনে বসন্ত এসেছে তোমাকে পেয়ে। 

ভালোবাসার এমন অজস্র ক্ষুদ্র সংলাপ আর অগণিত মিঠে স্পর্শের শেষে আলিঙ্গনের মুগ্ধতা কাটবার আগেই বারবার আবেগে আপ্লুত হয়েছে কিয়ারা। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কিশোরকালের মতো প্রেমের উত্তেজনায় শিহরিত হয়েছে ইশতিয়াক। ভালো সে অল্প বলেই ভালো, মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে কিয়ারা যতবার, ততবার ইশতিয়াক বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কিয়ারার উপর। গুনগুন করে গেয়েছে, আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনোদিন নয়! এভাবে কক্সবাজারের কটেজে আর ঢাকার একটি হোটেলে মিলেমিশে তিনটি সপ্তাহ চোখের পলকে ফুরিয়ে গিয়েছে। সুখের পিদিম নিভু নিভু আলোয় মিটিমিটি জ্বলে থাকে কিয়ারার চোখে। কিয়ারা ভাবে, স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে লাগে আর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রয়োজন হয় সদিচ্ছার। 

বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে কাতার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি যাত্রীতে ঠাসা। জানালার পাশের সিটে বসে কিয়ারা তাকিয়ে থাকে বাইরে সাদা কুয়াশার দিকে। মেঘের যতটা উপর দিয়ে প্লেন উড়ছে, সেখানে বাইরে ঘোলা কুয়াশার মতো একটা ঘন চাদর ছাড়া আলাদা আর কিছু দেখা যায় না। তবু বাইরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে কিয়ারা। যেখানে দেখার মতো কিছুই নেই, সেখানেও কী যেন দেখে। চোখ থেকে গড়িয়ে নামে অশ্রুর ধারা। ধারণকৃত ভিডিওক্লিপের মতো খন্ড খন্ড চিত্রগুলো যেন ভাসছে জানালার ঘোলা কাচে, কিয়ারার চোখে। ইশতিয়াকের সঙ্গে দেখা হওয়া। কটেজে কাটানো মধুর একটি সপ্তাহ। ঢাকায় ফিরে আরও কিছুদিনের চড়ুই পাখি প্রেম। জঙ্গলের উদোম খোলা হওয়ার মতো কার্জন হলের সামনে রিকশায় খোলা চুলে বাতাসের খেলে যাওয়া। আর চলে আসার দিন চারেক আগে ইশতিয়াকের বাড়িতে কিয়ারার দেখা করতে যাওয়া। সব মনে করতে থাকে কিয়ারা। প্লেনের যাত্রীরা বেশিরভাগ কম্বলে শরীর ঢেকে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিয়ারার ঘুম আসে না। গত অনেকগুলো বছরে দাম্পত্য কলহের জের ধরে রাতের পর রাত বিনিদ্র থাকার অভ্যাস আছে তার। কিন্তু প্লেনের ভেতর ঘড়ঘড় শব্দ আর একটু আগে এয়ারহোস্টেজের নিভিয়ে দেওয়া বাতির মৃদু আভায় মুখটি চোখের সামনে প্রকট হয়ে ওঠে। ইশতিয়াকের স্ত্রী, সোমা! 

সেদিন ইশতিয়াকের বাড়ি যাবার সময় কিয়ারা একটা হাফ সিল্কের শাড়ি পরেছিল। যৎসামান্য মেকাপে নিজেকে পরিপাটি গুছিয়ে নিয়েছিল ঠিক যতটা করলে এই বয়সের নারীকে বেমানান লাগে না, ততটা। ইশতিয়াকের বাচ্চাদের জন্য স্কটল্যান্ড থেকে নিয়ে যাওয়া চকলেটের বক্স আর ওর মায়ের জন্য পাকিস্তানী দোকান থেকে কেনা একটা পশমিনা শাল নিয়ে হাসি মুখে উপস্থিত হয়েছিল কিয়ারা। দরজা খুলেছিল ইশতিয়াক নিজেই। ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ উসখুস করার পর একসময় কিয়ারা বলেছে, তোমার বাড়ির লোকজন সব কোথায়? আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে না?

ইশতিয়াক উঠে গিয়ে ওর মাকে ডেকে আনে। পরিচয় করিয়ে দিল সংক্ষিপ্তভাবে মুখে, বেশিরভাগটুকু চোখে আর হাতের নাড়াচাড়ায়। আরো কয়েক মিনিট পর ভদ্রমহিলা নিজেই চায়ের ট্রে হাতে করে সামনে আসে। ভীষণ রোগা, হার জিরজিরে শরীরের মানুষটি কিয়ারার পাশে সোফায় বসে। জিজ্ঞাসু চোখে কিয়ারা ইশতিয়াকের দিকে তাকালে, ইশতিয়াক পরিচয় করিয়ে দেয়, আমার স্ত্রী সোমা। এরপর আরো কিছুক্ষণ তারা চারজন ড্রয়িংরুমে বসে কথাবার্তা বলে। কিয়ারা লক্ষ্য করে, সোমা মেয়েটি কথা খুব কম বলে। জিজ্ঞেস না করলে নিজে থেকে একটি কথাও বলে না। তবে কিয়ারা লক্ষ্য করেছে, ইশতিয়াকের আম্মা সোমার ব্যাপারে খুব যত্নশীল। নিজের একটা মেয়ে যদি অসুস্থ থাকত তাহলে যেভাবে যত্ন করতেন তাকে, সোমাকে তিনি ঠিক সেভাবেই যত্ন করছেন। বৌমা বৌমা করে ডাকছেন প্রতিবার কথা বলার সময়। চা নাস্তার পর সেদিন দুপুরে খেয়ে তারপর হোটেলে ফিরেছে কিয়ারা। দেশে যাবার সংবাদ নিজের পরিচিত কাউকে জানায়নি বলে হোটেল রুমে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না তার। ইশতিয়াকও ধুম করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে অভিমান, রাগ, বিরক্তি, উৎকণ্ঠার নানা স্তর পার হয়ে থাকতে না পেরে কিয়ারা নিজেই কল করে ইশতিয়াককে। কয়েকবারের পর কল রিসিভ করে কেমন আনমনা গলায়। ইজ এভরিথিং ওকে? কিয়ারা প্রশ্ন করেছে। হুম, সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছে ইশতিয়াক। এরপর রেশমের গুটি থেকে টেনে টেনে সুতো বের করার মতো ইশতিয়াকের মুখ থেকে কথা বের করতে হয়েছে কিয়ারার। অথচ তার আগে পর্যন্ত যেকাজটির ঠিক উল্টোটাই ঘটত ওদের মধ্যে। 

তোমার কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাও। কত দূর থেকে এসেছি আমি তোমাকে কাছে। আমাদের নির্ধারিত পরিকল্পনায় যদি কিছু বদল ঘটে, সেটি আমাকে জানানো উচিত তোমার। প্রায় অনুনয় করে কিয়ারা বলে, আমাকে কী তোমার আম্মার ভালো লাগেনি?  

অযথা খুক খুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করে ইশতিয়াক বলেছে পুরো ব্যাপারটিকে সে যেভাবে সাজিয়ে রেখেছিল, এখন আর সেভাবে আগানো সম্ভব নয় বলে সে অত্যন্ত দুঃখিত। ইশতিয়াক বলেছে কিয়ারাকে অপছন্দ করার সাধ্য নেই কারো কিন্তু সোমাকে ভীষণ ভালোবাসে ইশতিয়াকের মা। তিনি বলেছেন, ছেলে যদি বৌকে ছেড়ে দিতে চায় তাহলে আগে তার মাকে ছাড়তে হবে। 

তুমি কী চাও ইশতিয়াক? কিয়ারা প্রশ্ন করেছে সরাসরি, জোরালো গলায়। 

এক সেকেন্ডও দেরি না করে ইশতিয়াক বলেছে, আমি তোমাকে চাই। আমি শুধু তোমাকেই চাই এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার আম্মা সারাজীবন এত কষ্ট করেছেন, এই বয়সে এসে তাঁর মনে দুঃখ দিতে পারব না আমি। পারলে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও প্লিজ।

ব্যাস ,এরপর আর কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেনি কিয়ারা। মানুষ দেখে দেখে বয়স আর অভিজ্ঞতা দুইই অনেক জমেছে কিয়ারার ঝুলিতে। কোন আঘাতে রক্ত ঝরে আর কোন আঘাতে বকুল ফোটে, সেকথা তার অজানা নয়। সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া ব্যাগ দুটি গুছিয়ে তৈরী থেকেছে কেবল নিজ গৃহে ফিরে আসার অপেক্ষায়। মিছে ভালোবাসা পাবার সাধ মিটেছে ওর। ইশতিয়াকের চেয়ে নিজের উপর রাগ হয় বেশি কিয়ারার, চোখে ভাসে সোমা নামের রুগ্ন, চোখের তলায় কালি পড়া মেয়েটির মুখ। প্লেনের সিটে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদার সময় কিয়ারা ভাবে নিজের চোখের জল সে মুছে যাবে আজীবন টিস্যু পেপারে অথচ সোমার চোখের জল মুখ দেবে তখনও ওর স্বামী ইশতিয়াক! কিয়ারার বুক কেমন মুচড়ে ওঠে। ভাবে, বিবাহিত সংসারে প্রেমের পর্ব শেষ হলে পড়ে থাকে অগোছালো বিছানার চাদর, আর আইনত সম্পর্কহীন প্রেমে ভালোবাসার পর্ব শেষ হলে পড়ে থাকে শত শত দুঃসহ মিথ্যে স্মৃতি। 

বাড়ির সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে ট্যাক্সিটা ধীরে বেরিয়ে যায় ড্রাইভ ওয়ে থেকে। হাতব্যাগের চেইন খুলে ঘরের চাবি বের করে কিয়ারা। হাত দুটি যেন আর চলতেই চায় না কিছুতে। তিন সপ্তাহের জন্য দেশে যাবার আগে বয়স যতটা ছিল, ফিরে এসেছে যেন কয়েকগুন বেশি বয়সের ভার নিয়ে। মাঠভরা কাশফুল ধুম করে সাদা হয়ে ওঠার মতো ধুম করে যেন অনেকটা পথ পার হয়ে এসেছে সে জীবনের। ঘরের ভেতরটা একই রকম আছে। সোফার উপর ফেলে যাওয়া বিস্কিটের প্যাকেটটি এখনও তেমনি পড়ে আছে। ক্লান্ত পায়ে কিয়ারা হেঁটে যায় রান্নাঘরের দিকে। একগ্লাস পানি খাবে। বসার ঘরের পাশে ছোট্ট প্যাসেজটা পেরিয়ে রান্নাঘরের সাইট টেবিলের উপর রাখা খাবারের বাক্সগুলোর দিকে চোখ গেল। বৃক্ষপ্রেমী প্রতিবেশিনী আগেই এসে কিছু খাবার রান্না করে রেখে গেছেন কিয়ারার জন্য। পনের ষোল ঘন্টা জার্নি করে আসার পর দুই দিন আর নিজে রান্না করার শক্তি থাকবে না, কথাটি অনুমান করেই হয়তো খাবার রেখে যাওয়া। সন্তুষ্টির হাসি ফোটে কিয়ারার ঠোঁটে। কিয়ারার মন ভালো লাগায় আপ্লুত হয় এই ভেবে, অন্তত এই দেশে সে একা নয়! বন্ধু হিসেবে কিছু মানুষ আছে তার পাশে। পানি পান করে কিয়ারা শোবার ঘরের দিকে আগায়। কাপড় বদলে হাত মুখ ধোবে। মনে মনে ভাবে, ভাগ্যিস আহমেদের সঙ্গে ডিভোর্সটা হয়েছে শেষ পর্যন্ত, নইলে এখন পড়ে পড়ে রেস্ট করার বদলে লোকটির মুখের অশ্রাব্য খিস্তি খেউর শুনে যেতে হতো মুখ বুঁজে। সংসারী পরিচয়ে জাহান্নামের আগুনে পুড়ে পুড়ে মরার চেয়ে একা জীবনে একাকিত্বের যন্ত্রণা নিশ্চয় অনেক স্বাচ্ছন্দের, কিয়ারা ভাবে। শোবার ঘরে ঢোকার আগে প্যাসেজের কনসোল টেবিলটার পাশ দিয়ে যাবার সময় টবটার দিকে চোখ পড়ল। সেই অতি যত্নের অপরাজিতার লতানো গাছটি মাত্র তিন সপ্তাহেই প্লাস্টিকের কঞ্চিগুলোকে ঢেকে দিয়েছে মটরশুঁটির মতো সবুজ পাতায়। সুস্থ সবল গাছটি যেন কিয়ারার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর একটি লতায় ফুটে থাকা দুটি নীল অপরাজিতা, মালয়ালম ভাষায় যার নাম সঙ্খপুস্পম, আর যে ফুলের নিচের দিক এবং ভেতরটা সাদা, কেমন যেন আত্মতৃপ্তিতে উজ্জ্বল হাসিতে মুখ উঁচু করে আছে টবের প্লাস্টিক কঞ্চিতে হেলান দিয়ে। অবিশ্বাসের চোখে কিয়ারা তাকিয়ে থাকে ফুল দুটির দিকে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে যায় কিছুক্ষণ। নিষ্পাপ হাসির অপরাজিতা দুটি যেন শুধু ফুল নয়, তারা কিয়ারার জীবনে আত্মজয়ের নিশান হয়ে উড়ছে চোখের সামনে। কথা ছিল টবে অপরাজিতার প্রথম ফুলটি ফোটার আগেই কিয়ারা দেশে যাবে। স্কটিশ ঠান্ডা আবহাওয়ায় গ্রীষ্ম দেশের গাছ অপরাজিতাকে বাঁচিয়ে রাখা আর সেই গাছে ফুল ফোটানো পর্যন্ত লতাকে টিকিয়ে রাখার প্রতিজ্ঞাটি কিয়ারার কাছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মতো ছিল। কিয়ারা দেশে যাবার আগে ইশতিয়াকের সঙ্গে সম্পর্কের পরিণতি সম্পর্কে অবগত ছিল না বলেই হয়তো অপরাজিতা মুখ বের করতে নারাজ ছিল। এবার অপরাজিতা ফুটেছে কিয়ারার ঘরে, একটি নয় দুই দুইটি একসাথে! 

====================