বিশ্ব দিগন্তে জেগে ওঠে স্বপ্ন সুনিশ্চয়
দ্বিভাষিক কবিতার একাগ্র উন্মিলন
কাজটা তেমন সহজ নয় যেমন, তেমনি অনেকে আবার দায় বলে মনে করেন না। অনেকে বলেন, বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদের কোনো প্রয়োজন নেই বরং ইংরেজিতে লিখলেই পারেন কবিরা। অনেকে এও বলেন, বাংলা কবিতায় ব্যবহৃত উপমা অনুবাদযোগ্য নয়।
অবাঙলাভাষীদের জীবনাচরণ থেকে শুরু করে তাদের শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহের অন্ত নেই। উপনিবেশিকতায় অভ্যস্ত মানসে গেঁথে যাওয়া বোধের দাসত্ব থেকে যেমন আমাদের মুক্তি ঘটেনি, তেমনি মোগল-পারস্য-পাকিস্তানি গোলামিজীবনের নতজানুকতা আমাদের ছেড়ে যায় নি। অতীতের সুদীর্ঘ ইতিহাস আমাদের নিজস্বতা বোধই কেড়ে নিয়েছে। আমাদের দর্শনের সামিয়ানার তাঁতিরা হলেন অবাঙালী এবং আমাদের আধ্যাত্মিক জগতও দখল করে নিয়েছেন তারা। তাই আমরা নিজেদের যা যতোটুকু আছে ততোটুকুও আমাদের বলে বাইরে বলতে চাই না (লজ্জায় না হীনমন্যতায়?)। সেজন্য বাংলাসাহিত্য-সংস্কৃতিকে অনুবাদযোগ্য মনে করছি।
মন-মানচিত্র একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ এবং ক্ষমতা ও পরিধি অতিসীমিত। আমরা দায়বোধ থেকে বাংলা কবিতার দ্বিভাষিক উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের উদ্যোগটাই প্রথম ও একমাত্র উদ্যোগ নয়, আরো অনেকেই হয়তো এমন কাজ করে চলেছেন। আমরা নিজেদেরকে তাদের সহযাত্রী মনে করি।
যারা বলেন যে, ইংরেজিতে অনুবাদের চেয়ে ইংরেজিতে লিখলেই তো হয়। যারা এমন বলেন, তারা (কেউ কেউ) একধরণের অহং থেকে এমন উন্নাসিকতা দেখিয়ে থাকেন। তাদের বলতে চাই, তারা যাদের কবিতা (সাহিত্য) বাংলায় অনুবাদ করে নাম-যশ-খ্যাতি কুড়োচ্ছেন, তাদের উচিত বাংলায় অনুদিত কবিদের বাংলায় কবিতা লিখতে পরামর্শ দেয়া।
বাংলা কবিতায় ব্যবহৃত উপমার যথাযথ ইংরেজিকরন সহজ নয় কিংবা হয় না। চেষ্টা ও চর্চা না করে এমন উপসংহার টেনে দেয়া আমরা সঠিক মনে করি না। স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, রাশান, চায়নিজ, জাপানিজ ভাষাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের অনুবাদ ইংরেজিতে অহরহ হচ্ছে। যেকোনো ভাষার সঞ্জীবনীশক্তি হলো তার গতিশীলতা ও আদান-প্রদান। মেদবাহুল্য পরিত্যাগ করে আমরা বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের অপরাপর সকল ভাষাভাষী মানুষদের কাছে নিয়ে যেতে আগ্রহী। শতভাগ সঠিক/নির্ভুল অনুবাদ কিংবা ভাবানুবাদ হয়তো হবে না, তবে আমরা মনে করি ভুলকে সংশোধন করে করে আমরা ক্রমশঃ নির্ভুল হয়ে উঠতে পারবো। এজন্য আগ্রহী সকলের সহযোগিতা কামনা করি।
আমাদের প্রথম প্রয়াসে সাড়া দিয়েছেন অনেকেই। পরীক্ষামূলকভাবে সাতজন কবির কবিতা নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। তাঁরা হলেন বদরুজ্জামান আলমগীর, জিললুর রহমান, ফাল্গুনী ঘোষ, কাকন রেজা, সজল আশফাক, এইচ বি রিতা ও আলী সিদ্দিকী। পাঠকের মতামত ও পরামর্শ আমাদের পথচলায় সাহস ও প্রেরণা জোগাবে।