You are currently viewing দেবশ্রী দে’র ১০টি কবিতা

দেবশ্রী দে’র ১০টি কবিতা

দেবশ্রী দে’র ১০টি কবিতা

 

কবিতা- ১
দস্তখত 

দস্তখত করতে গেলেই ঘাবড়ে যাই খুব
না জানি কীসব শর্ত
মেনে নিলাম, নাকি মানিয়ে নিল কেউ
অজান্তে, আশু অছিলায়

চলে যাবে সব, ভয় হয়, বড়ো ভয়

ঠিক যেমন আকাশটা লিখেছিল
মতলবি মেঘেদের গায়ে
নিরুপায়, নির্বিবাদে নিজের নাম
প্রেয়সী পৃথিবীর মোহে

ঝরে গেছে সব, ভয় হয়, বড়ো ভয়

 

কবিতা- ২
শো-পিস

ড্রয়িংরুমের চারপাশটা ঘুরে দ্যাখা যেতেই পারে
কোনও কোনও দিন
সাজানো শো-পিসগুলোকে
করা যেতে পারে খামখেয়ালের ঝাড়পোঁছ
আর চারদিকে চাপ চাপ ধুলোয়

হয়তো দ্যাখা যাবে
ওরা এক-একটা আস্ত কবিতা
কেউ হাংরির, কেউ প্রেমের
ওই যে পোড়ামাটির সাঁওতাল মেয়েটা
আদতে আঞ্চলিক ভাষার

অথচ এসবে নজর না দিয়েই
চলে কথা-কালচার,
সকলে হয়ে উঠি
কবিতার একেকটি শো-পিস
ধুলো জমতে থাকে দিনের পর দিন

 

কবিতা- ৩
দরদাম 

দরদাম না করে কিছুই কিনি না। কিনতে নেই। সাবধানী মা, শিখিয়েছিল অনেক আগেই।

গাছকে জল দিই, ফললাভের আশায়। পোষ্যের নেশায় পাখিকে দানা। হাওয়াকে নিষ্ফল নিঃশ্বাস।

মন পরিমাপ করি প্রেমিকার। তাকে কতখানি দেওয়া যেতে পারে প্রেম। পরিণত পরিণয়।

জিতে যায় জন্মগত জিজীবিষা। এমনকি
কবিতার সাথেও দরদাম চলে। ভাব এবং ভাবনার।

শুধু চিতাকাষ্ঠে জ্বলে ওঠে পরাজয়। মূল্যহীন ভস্মের কাছে পড়ে থাকে অমূল্য জীবন।

 

কবিতা- ৪
উলোট 

কখনও দীর্ঘ, কখনও হ্রস্ব
পিছনের জন ভাবছে
সামনেরটাকে টপকে যাব,
সামনের লোকটাও চিন্তায়
পিছনেরটা এগিয়ে না যায়
সকলেই চায়- লাইন এগিয়ে চলুক
লাইন এগিয়ে চলে

জ্বলন্ত চুল্লিতে বেঁচে থাকা শেষ
পিছনের জন ভাবছে
পিছনেরটাকে টপকে যাব,
সামনের লোকটা চাইছে
পিছনের জন এগিয়ে আসুক
সকলেই চায়- লাইন পিছিয়ে যাক
তবুও, লাইন এগিয়ে চলে

 

কবিতা- ৫
আমসত্ত্ব

তোমার মতে খুব রসালো কিছু
আমার মন, নাকি শরীর- বলা মুশকিল

অনেকটা আম-জাম-কাঁঠালের মত?
আঙুরের মতও হতে পারে
শাঁস, কোয়া যাই হোক
মিষ্টি হওয়াটা ভীষণভাবে জরুরি

পাটে পাটে বেশ জমে ওঠা চাই
কর্তব্য, প্রেম, রতি
আমসত্ত্ব তোমার যেমন প্রিয়
ঠিক তেমনটাই

সব একসাথে হলে
পোকা ধরার সম্ভাবনা খুব বেশি
সংরক্ষণের পদ্ধতি জানা আছে তো?

 

কবিতা- ৬
বিশ্বস্ত

যেসব ইস্তাহার লেখা হচ্ছে
নিয়ত, সেখানে কোনও কুকুর নেই
নেই কোনও প্রেমের খবর
আস্তাকুঁড়ে পড়ে আছে রেনেসাঁ’র লাশ

আমিও পাখির ডানায়
রং ভরে দিচ্ছি। ইচ্ছেমতো সব

“উজবুক” বলে গাল দিল
যে পাগল, তার কাছে বিশ্বাস জমা আছে

 

কবিতা- ৭
তফাত

মনে করুন কোনো ধানজমি বরাবর
হাঁটতে হাঁটতে
সরাসরি ঢুকে পড়লেন
একটা ধানগাছের স্টেম ফুঁড়ে

যেসব সংসারী পোকাদের সাথে
আপনার আলাপ হলো
ক্ষতিকর হিসেবে
বিশেষ পার্থক্য নেই দু’জনের

অথচ পেস্টিসাইড উৎপাদনে
ব্যস্ত থাকেন আপনিই
পোকা-রা অনেক বেশি ক্ষমাশীল

 

কবিতা- ৮
স্টেশন 

পেরিয়ে যাচ্ছে জীবনমুখী ট্রেন

ডাকছে
হাত নাড়ছে
কেউ দিচ্ছে উঁকি
চেনা-অচেনা-আধচেনা মুখ
তবু স্টেশন এলে
দাঁড়াও
স্থির

অনুভব করো হৃদয়ের স্পন্দন

 

কবিতা- ৯
লোভ

মাটির কোল খুঁড়তে খুঁড়তে বেরিয়ে আসে
কেঁচো। অগুনতি। ঢুকে পড়ে চোখে
অথবা মনের ভেতর,
লুকিয়ে থাকা ভয়ে

ওদেরই তো গুটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল
অথচ চলতে থাকে অনায়াস
মাড়িয়ে যায় মৃত্যুর
টানটান বুক

মাটিতে মিশে যেতে যেতে বুঝতে পারি বেশ
বাঁচার লোভগুলো বাদামি লজ্জা বয়ে আনে

 

কবিতা- ১০
যাত্রা

নূপুর দুটো খুলে রেখে
চোখের আড়াল হয়েছে মেয়েটা

হয়তো ফিরবে, হয়তো না
অথবা ফিরে আসার ইচ্ছে নেই
একেবারে

যারা তাকে খুঁজতে
বেরিয়ে পড়লো চারদিকে,
তাদের
ফেরা-টা কিন্তু ভীষণ জরুরি

জানানো জরুরি,
সে পরকীয়া চায়নি
হয়নি ধর্ষিতা-ও

শুধু আপনমনে হেঁটেছে কয়েক পা

 
 
 
 
 
দেবশ্রী দে
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুর অঞ্চলের বাসিন্দা। স্কুল এবং কলেজজীবনে লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাঝে কিছু বছরের বিরতি। ২০১৯ সাল থেকে শ্রুতিনাটক লেখার মধ্য দিয়ে ফিরে আসা। ইতিমধ্যে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা। বহমান ধারার কবিতা লেখার পাশাপাশি এই কবির মধ্যে পরীক্ষামূলক কবিতা লেখার প্রবণতাও রয়েছে।