দু’টি কবিতা
নিগার সুলতানা
প্রার্থনা
আমি প্রার্থনা করি আবার দেখা হলে,
ঠিক এভাবেই সাজানো থাকবে আমার দেশ, আমার পৃথিবী!
নিজের মতো থেকে যাবে বিশাল আকীর্ণ জলরাশি; ভূমন্ডল!
শহীদ মিনারের প্রতিটি ইট থাকবে অক্ষত;
কেউ ভুলে যাবেনা প্রিয় রমনা বটমূল;
কেউ ভুলে যাবেনা একাত্তর; লাল সবুজ আমাদের সেই প্রাণের পতাকা;
সমস্ত সমীকরণ হবে সহজ, নির্ভুল!
অন্ধকার বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা; অনিদ্রা হবেনা সঙ্গী;
ভালোবাসা হবে এক সহজ সরলরেখা; কবি শব্দ খুঁজে পাবে অহরহ;
শেখ মুজিব নিয়ে হবেনা বাকবিতন্ডা; স্বপ্নগুলো প্রতিবার সাহসী অমলিন!
থাকবেনা কোনো পাপী, বেহেস্ত পাবার হিসেব নিকেশ হবে বন্ধ;
নারীদের কর্তব্য নিয়ে সভা সমিতি হবে নিষিদ্ধ;
মানবধর্মই হবে এক পবিত্র পুণ্যগ্রন্থ!
আমি প্রার্থনা করি আবার দেখা হলে,
ঠিক এভাবেই সাজানো থাকবে এই পৃথিবী!
শুধু পাল্টে দেবো কিছু অঙ্ক;
পৃথিবীর হবেনা কোনো অসুখ, কোভিড কিংবা জলাতঙ্ক;
সব ভূমি করে নেবো সমানভাবে ভাগ;
পৃথিবীর বুক চিরে হবেনা রক্তক্ষরন;
থাকবেনা ভয়, নেই জ্বরা, নেই কোনো মরণ!
মানুষ কথা রাখবে, দ্বিধামুক্ত হবে সত্যভাষণ;
পৃথিবীর বুক চিরে আর কোনোদিন হবেনা রক্তক্ষরন!
আমি প্রার্থনা করি আবার দেখা হলে,
ঠিক এভাবেই সাজানো থাকবে আমার দেশ, আমার পৃথিবী!
এক সুখী মানুষের আত্মকথা!
কত শত বছর পেরিয়ে গেলো আমি ঘুমাইনা;
আমি স্বপ্ন দেখিনা কত যুগ!
সারাক্ষনই ভয়ে থাকি, তিল তিল করে জমানো পুঁজি হয়ে যাবে চুরি!
চারিদিকে এতো ধোঁয়া, এতো ভয়,হতাশার বাড়াবাড়ি!
পুঁজিবাদের দাপটে লাগামছাড়া বাজারদর,
বিষাক্ত নদীর জল, ধর্মের উস্কানি,আর সুনিপুণ সাজে —সাবধানী নারী!
সবকিছু ছেঁকে ছেঁকে তুলেছি সুখ,বাড়িয়েছি পুঁজি;
বলতে পারো আমি একজন নীতির রাজা,
নীতিগুলো সব পকেটে পুরে, গড়েছি এক মরীচিকা!
ঘুমুতে গেলেই তাই হারিয়ে যাওয়া সে রাজ্যপাট খুঁজি!
তারপরও কত শত বছর পেরিয়ে গেলো, আমি দু–দণ্ড শান্তিতে ঘুমাইনাI
আমি স্বপ্ন দেখিনা কত যুগ!
ঘুমুতে গেলেই আমার ভালো মানুষ হতে ইচ্ছে হয়,
নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে ফেলি–
ফিরিয়ে দেব ভুল করে কেড়ে নেয়া চাষের ভিটেমাটি;
ফিরিয়ে দেব অনাহারী শিশুর দুমুঠো অন্ন;
যদি পুঁজির বাক্সে বেশি টানাটানি না হয়
নদীটিকেও বইতে দেব মনের মতন ধারায়I
আমিতো তেমন কিছু চাইনি, শুধু নিজের সুখটুকু ভাবতে গিয়েই
বুনে দিয়েছি একটু হানাহানির বীজ!
রক্তপাতে দিয়েছি নীরব সায়, জ্বালিয়েছি পোড়া আগুন!
বলতে পারো আমি একজন সুখী মানুষ,
শুধু নিজের সুখটুকু ভাবতে গিয়েই, অবুঝ গ্লানির কথা ভাবতে গিয়েই
গলা চেপে ধরেছি শ্যামল বরণ কিশোরের বাঁশি!
তোমার হৃদয় দেখার ব্যকুলতা; মিছিলের ডাক, ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত,
আমার চোখেতো সবই নষ্ট ফানুস!
আমিতো তেমন কিছুই চাইনি, শুধু নিজের সুখটুকু ভাবতে গিয়েই
শ্রান্ত দেহে, ক্লান্ত মনে পুঁজি বাড়িয়ে চলেছি;
বলতে পারো আমি একজন পুঁজিবাদী মানুষ,
তারপরও কত শত বছর পেরিয়ে গেলো, আমি দু–দণ্ড শান্তিতে ঘুমাইনাI
আমি স্বপ্ন দেখিনা কত যুগ!
*************************************