দুটি কবিতা/ দস্তগীর জাহাঙ্গীর
সোনালী প্রাগ
প্রিয়তমা সখী আমার
আজকাল খুব বেশি বেশি মনে পড়ে তোমায়
দিনে দিনে ১৮টি বার সুর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে
বসুন্ধরা,
উত্তাল যৌবনের সকল কিছু উজার করে
আমি ঠিক দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার উঠোনে।
ভাল’তবা নদী বেয়ে কত জল
গড়িয়ে গেছে উত্তর সাগরে
টালি রাখিনি তার কোনদিন।
স্বর্ণকেশী গুল্ম লতারা
কতইনা হেসেছে কোলেকোলে
তবু তাতে কোনদিন প্রান প্রতিষ্ঠা করতে পারলামনা।
কোলকাতার মতই ট্রামের চাকারা
কবিতার উৎসবে মেতে থাকত,
দিন রাত রাত দিন,
সুদূর দেশ থেকে কোন প্রেমিকার
উষ্ণ প্রেমের চিঠি, কোনদিন
হেমন্তের গভীর অনন্ত সুরপথ হয়ে আসেনি
মায়ের চিঠি যেদিন হাতে পেতাম
আনন্দ পার্বণে ভেসে যেতাম।
চৌধুরী পাড়ার মামুর
সপ্তাহে না হলেও মাসে একটি করে
প্রেমের চিঠি ঠিকই পেত।
বড়ই ঈর্ষা হত বেটাকে
শেষে স্বর্ণকেশীরনিয়ত শয্যায়
বিলিয়েছে দেহ মন প্রান।
প্রাগ তোমায় ভালবেসে আমি
যৌবন কালকে মিশিয়ে দিয়েছি
তোমার বুকে ছড়ানো
পাথরের টুকরো বিছানো পথে।
স্ট্রাহোভ থেকে
পুরাতন কার্লিনের অলিগলি রথে।
রাজীব কুমার প্রায়ই বলত,
কপালে লাল টিপ
তাঁতের সুতোয় বুনা লাল সবুজের
শাড়ি জড়ানো রমণীরা কোথায়?
রাজীব আজ গাঢ় লাল টিপ লাগানো
রমণীর বঁধু দেশে,
বছর দীর্ঘ সবুজ যেথায়।
প্রাগ তোমায় ভালবেসে আমি সর্বশান্ত হয়েছি,
সম্রাট হয়েছি,
জাদুঘর থেকে মুস্তেক হয়ে,
প্রাচীন শহরে হেটে গিয়েছি কয়েক হাজারবার
কিন্তু প্রাণ তো প্রতিষ্ঠা করতে পারলামনা।
রয়দা বলেছিলেন,
দেখ বোকা হটাত কোথায়
উধাও হোসনি যেন আমায় রেখে।
রয়দা জানেন আমি কথা রাখিনি তাঁর।
আজ রয়দা ও ভালবাসেন স্বর্ণকেশীকে না,
বাসেন দীঘল রাতের মত চুল যার।
প্রাগ আমি সত্যি তোমায় খুব বেশি ভালবাসি।
লাবে নদী, ছোট্ট শহর,
নাম পজেব্রাডী,
হোস্টেল থেকে ইস্কুল
ইস্কুল থেকে হোস্টেল
এই নদী স্বাক্ষী হয়ে থাকে,
হরি তে রাজ হংসী
কোল বেয়ে রাজ হংস ও হংসীরা
কতো না আমোদে হেসে
গিয়েছে পথ বেয়ে।
পথের ধারের ঘনঘাস
বনফুলে সাজিয়েছে উষ্ণ দিনে
মায়াবী ফুলসজ্জা।
উৎসুক পথিকেরা হেসেছে
চিত্তে আনন্দে।
আমার পরাণে সদাই কেন জানি
বাজিয়াছে সুর…
“কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া”।
প্রাগ মায়াবী মনহরণী
আজ কেন জানি
বার বার মনে পড়ে তোরে
বার বার মনে পড়ে তোরে
বার বার মনে পড়ে তোরে।।
“নিরু” ও নন্দিনী
স্বর্গের কামধেনু সুরভী কন্যার মিলনের আহ্বান,
তখন একদা হ্যালীর ধূমকেতুর শোভায় গগন।
দ্রাক্ষারস ছেড়েছি তখন।
নয় সুমেরু পর্বত,
নয় বিন্ধ্য পর্বত,
কার্পেথীয় পর্বতমালার গিরিপথ,
ভিতরে আমি, স্কোডা শকট,
বাহিরে তাপ হিমাঙ্কের বহু নিচে,
সতেরো কি বিশ কিযে?
মনে নেই আজ।
দিকচক্রবাল ঘিরে,
তুষারে তুষারে ঢাকা প্রান্তর,
রুপালী থালা যেনো এক,
চলেছি একা , দিতে হবে
অর্ধসহস্র কিলো পথ পাড়ি।
আমি এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী।
মানুষ তৈরি শকট,
একা আমি, আর শুধু পথ।
সম্মুখ কিংবা পিছে, ডানে বা বামে বন্ধুর পর্বত,
একা আমি আর স্কোডা শকট।
রাত্রি তখন দ্বিপ্রহর,
দুঃসাহসী এক অভিযাত্রী আমি ,
নেই কিঞ্চিত মাত্র তরাস আমার,
ছেড়েছি দ্রাক্ষারস প্রবল বাসনায়
শূন্যলোক নভঃ অভ্র নীলিমায়
ভেসে থাকা কদাচিত দৃশ্যমান ধূমকেতু
অবলোকনের নেই অবকাশ।
আমি শূদ্রকন্যা অক্ষমালা আসক্ত বশিষ্ঠ
মন আমার প্রবল তৃষ্ণার সাহারা
করিবো পান প্রেমামৃত, তোমারই শুধু
আকণ্ঠ, আকন্ঠ পিটলাকু।
তুঘ্রীল
২৩ জানুয়ারী ২০২১