দুইটি কবিতা || শেলী জামান খান
সৌর-ষড়যন্ত্র
চাঁদ, সূর্য, পৃথিবী, মঙ্গল আর শনি
সৌরজগতের গরবিনী সৌর-কন্যা এরা,
মহা পরাক্রমশালী সৌর পরিবার,
মনে হয়, কত না মহাসুখেই আছে তারা,
কিন্তু না।সেখানেও চলে সৌর রাজনিতী, কূটচাল বা ষড়যন্ত্রের ঢেউ,
সেসব খবরও পৌঁছে যায় পৃথিবীর বুকে,
অহরহ তা আলোড়ন তোলে এই মাটির ধরায়।
তেমনি এক আকাশি ষড়যন্ত্রের খবর এসেছে আজ,
পশুপাখি, মানুষের দল বিস্ময়ে হতবাক,
বন-প্রান্তরে, নগরে-জনপদে নেমেছে হঠাৎ অন্ধকার!
আঁধারে দুপুর ছেঁয়ে গেছে, যদিও ক্ষণকাল,
শোনা যায়, মাধুকরী চাঁদ বাঁধসেধে দাঁড়িয়েছে আজ,
পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে।
অতি নিরীহ ভোলাভালা চাঁদ, সেও রুখে দিতে জানে সূর্যের আলোকে,
রুদ্ধশ্বাস পৃথিবী কন্যা, সূর্যের আচমকা নির্বাসনে।
ক্ষীণকায়া, বোকাসোকা চাঁদ, ক্ষমতা কী তার,
সূর্যকে দীর্ঘক্ষণ আড়াল করে।
খানিকবাদেই রূপালি রোদ,
ঝিলমিল করে ওঠে পৃথিবীর বুকে।
হেসে ওঠে পৃথিবীকন্যা, আলো’র উৎসবে।
সূর্যালোক বহুকাল নিষিদ্ধ এখানে
কখনও লোকালয়ে কিংবা গৃহে, বহুবার ধর্ষিত হয় নারী,
বিজয় গর্বে, পৌরষদীপ্ত পুরুষাঙ্গ উঁচিয়ে, আস্ফালন করে পুরুষ।
নারীর চাপা ক্ষোভ, আর্তচিৎকার, বিচারের ফরিয়াদ,
চাপা পড়ে পরিবারের মান বাঁচাতে আর সমাজের রোষানলে।
ধর্ষিতার আকুতি কখনও পৌছায়না জন্যারণ্যে,
সূর্যালোক বহুকাল নিষিদ্ধ এখানে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজবদ্ধ সব মানুষ, কার্যত তারা সব মূক ও বধির!
নেতারা দাঁড়িয়ে থাকেন মন্চ আলোকিত করে।
আমলার দল, বসেন আরাম কেদারায়,
রাজা বা রানীরা পাকাপোক্ত বসা রাজসিংহাসনে,
মুখে তাদের তেলতেলে হাসি।
যখন ধর্ষিত নারীর উরু বেয়ে বয়ে যায় রক্তের স্রোত,
স্তনে নখের আঁচড়,
ঠোঁট ক্ষতবিক্ষত হায়েনার দংশনে,
“বেহায়া নারী, আবৃত কর তোমার শরীর।”
সফেদ পোশাকের ধর্মগুরুরা বলেন, কেশে।
কমবখত জেনানা সব, মান-সম্ভ্রম বলে কোন বোধ কী এদের আদৌ আছে?
কে আছ…? আত্মনাদ করে কাঁদে অসহায় নারী,
মূক ও বধির নও, তেমন কেউ কী কোথাও নেই???
মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার স্মৃতি কিছুই কী পড়ে না মনে?
যেখানে তোমার আবাস ছিল দশমাস দশ দিন!
মায়ের যোনিপথ ভেদ করে যারা এই ধরায় এসেছিলে একদিন।
সেই রক্তাক্ত যোনিপথের দিব্বি, সেই মমতাময় উষ্ণ জরায়ুর কসম,
তোমাদের উলঙ্গ, উদ্ধত, যৌনাঙ্গটি নত কর একবার।
একবার ভাবো, তোমার মা, বোন, আর কন্যাটির মুখ।
তারা কী নিরাপদ তোমার যৌন উন্মাদনার কাছে?
বিপন্ন মানবতা, কাঁদে দু’হাতে মুখ ঢেকে।
আছো কী..কেউ? বাঁচাতে আমাকে?
*************************