দুইটি কবিতা || বেনজির শিকদার
১.
অনন্ত চাঁদ
দুয়ারে নেমেছে অবাক জোছনা, ভুবন মেতেছে প্রেমে;
আকুলি-বিকুলি মনের আঙিনা ইচ্ছেরা বাঁধা ফ্রেমে।
আলোর আদরে চাঁদের-ভেলায় ভেসে যায় কত মায়া;
দিকে দিকে ক্ষয় খুঁজে ফেরা তবু, অলীক সুখের ছায়া।
অদূরে ডাকিছে বেড়ালের ছানা, কান্না জড়ানো সুরে;
মায়ার আকাশে ঘন মেঘ ঘোরে, ভালোবাসা বহুদূরে।
আঁধারের গায়ে আঁধার জড়িয়ে বেদনায় বাড়ে ক্ষত;
জীবনের দেনা মস্ত-বিশাল জন্ম সুখের মতো।
ঘাটে ঘাটে জমা ক্লান্তির খেয়া বাতাস গুনিছে ঢেউ;
দূরবনে বাজে বাঁশের বাঁশরী, কানপেতে আছে কেউ।
বেঘোরে বেহুঁশ চোখের হিসেব, ভুলিয়া আপন যত;
বাড়িতেছে রোজ কতশত ভুল, খোলামকুচির মতো!
নিজের ভিড়েতে নিজেই একাকী শূন্যতা করে ভর;
নীলিমায় গেঁথে দুঃখের আবাস– আপন হয়েছে পর।
অনিয়ত সব আয়োজন ভবে, পাশকেটে যায় লোকে;
উড়ে যায় মেঘ, আসে না তো ফিরে, উদাস চাহনি চোখে!
প্রজাপতি সুখ ফেরারি যখন, থাকে না কিছুই আর;
গোপন জখম গোপনেই বাড়ে ব্যথার পাহাড় ভার।
মরমের ব্যাথা মরমে ধরেছি চোখের কোনায় দিশা;
অনন্তচাঁদ ভুলে গেছে সব, কালোকালো অমানিশা।
২.
অনন্ত অনল
এই যে এমন বৃষ্টিমুখর উদাস করা দিন
বুকের ভেতর খুব গোপনে একলা একার ঋণ!
ঝিরিঝিরি এলোমেলো বইছে হিমেল হাওয়া
দস্যিপনায় তোমার মতো হঠাৎ ছুঁয়ে যাওয়া!
এই যে পাশেই পড়শিবাড়ি, বৃষ্টিফুলের মতো
জলের ঘ্রাণে মাখামাখি, জল-সোহাগে নত!
সপ্তপাতাল ভুলে গিয়ে ভালোবাসার সাধ;
হৃদয়ভূমি সমর্পনের সুতীব্র আহ্লাদ।
এই যে আমার ব্যাকুল তিয়াস তোমার নামের পরে
সঙ্গোপনে কাঁপছি ভীষণ জল-যাতনা জ্বরে।
বৃষ্টিমাতাল এমন দিনে নিজের কাছাকাছি
অন্ধকারে আলোর আশায় দুচোখ মেলে আছি।
এই যে ভীষণ পড়ছে মনে একটা তোমার কথা
কোথায় তুমি? কোন আঁধারে? অমোঘ নীরবতা!
সরল ঘোরের গরল নেশায় মুখটি কেবল আঁকি
দিনের গায়ে রাত জড়িয়ে তুমুল জেগে থাকি।
বর্ষাতানের এই অনুভব, ব্যক্ত নাহয় ভাষায়
অনন্তকাল জেগে আছি, অন্ত ছোঁয়ার আশায়।
বুক জমিনে শ্রাবণ ধরে আঁকি নয়নজলে
ভেতর-বাহির যায় ভিজে যায় অনন্ত অনলে।
***********************