দুইটি কবিতা || তূয়া নূর
কপালে কাজলের ফোঁটা ছিলো
আমার সাথে যে মেয়েটা কাজ করে তার প্রতিবেশীর নয় বছরের ছেলে
নিখোঁজ সাত দিন ধরে।
পুলিশ শিকারি কুকুর নিয়ে খুঁজছে
উপরে চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টার।
এতো বড় দেশ— কেউ কাউকে লুকিয়ে রাখলে খুঁজে বের করা দুরূহ।
আজ সকালে কাজে ঢুকে মেয়েটা বললো,
হারানো ছেলেটাকে পাওয়া গেছে মৃত দূরের জঙ্গলে!
আমার চোখের সামনে তখন রাতে বাংলার পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণ থেকে দেখা
তিন বছরের একটা ছেলের ছবি—
ধানের ক্ষেতে মৃত।
কথার পিঠে কতো কথা বলে মানুষ
আমার আর বলা হয় নি।
বলা হয় নি ছেলেটার কপালের বাম দিকে
ঢাউস মাপের কাজলের গোল টিপ ছিলো।
তার মা খাঁটি সরিষার তেলে সলতে জ্বালিয়ে কালি বানায়ে
সেই কালির কাজলের টিপ দেয়
তার কপালে প্রতিদিন গোসল দিয়ে চুল আঁচড়ে তারপর–
যেন কোন বদলোকের নজর না পড়ে, যদিও এটা কুসংস্কার।
কপালে কালো ফোঁটাটা মহাশূন্যের কালো বিবরের মতো ঝুলে ছিলো বলে
খুব সহজে শিশুটার লাশটা
শনাক্ত করা গিয়েছিলো।
পাখিদের কথা
স্প্যানিশ বলা মেয়েটা কতো কিছু বললো হাত নাড়ায়ে হাসি খুশী মুখে।
যখন বুঝলো, আমি তার ‘বইনুস দিয়াস’!
এই রকম দুই একটা বাক্য ছাড়া আর কিছুই বুঝি নি।
তখন চলে গেলো, এক বারো ফিরে তাকায় নি।
জানালায় পাখিরা আসে কাঠির মত সরু পায়ের আঙুল দিয়ে
আঁকড়ে ধরে জানালার গরাদ।
ছিটায়ে রাখা বাসি ভাত, চাল, শস্যদানা
পাখিরা ঠোঁট দিয়ে নাড়াচাড়া করে, ইচ্ছে হলে খুঁটে খায়
কিচির মিচির শব্দ করে কিছুক্ষণ তারপর চলে যায়।
তোমার কাছে খাবার খেতে আসে—
পাখিদের নিয়ে কতো গল্প
স্কুলে মেয়েকে দিয়ে বান্ধবীরা মাঠের এক পাশে গাছের নিচে বসে।
পাখিরা প্রতিদিন খবর নিয়ে আসে
ভাল হতে পারে, মন্দও হতে পারে
কোন অভিযোগ হতে পারে,
অথবা কেমন আছ—এটুকু শুধু জানতে আসে।
ভাবে তু্মিও সুলাইমান নবীর মতো পাখিদের ভাষা বুঝো,
যেমন স্প্যানিশ ভাষায় মেয়েটা আমার কাছে কতো কথা বলে গেলো অনর্থক,
আমাকে একজন স্প্যানিশ বা মেক্সিকান ভেবে।
যখন বুঝে চেহারায় মিল থাকলেও আমি তাদের কেউ নই,
পাখিদের মতো মন খারাপ চলে যায়।
আর ফিরে আসে না যতক্ষণ স্মৃতিটুকু তার মনে থাকে
***************************