You are currently viewing দিওলির রাতের ট্রেন || মূলঃ রাসকিন বন্ড || ভূমিকা ও তরজমাঃ খায়রুল আলম চৌধুরী

দিওলির রাতের ট্রেন || মূলঃ রাসকিন বন্ড || ভূমিকা ও তরজমাঃ খায়রুল আলম চৌধুরী

দিওলির রাতের ট্রেন
মূলঃ রাসকিন বন্ড
ভূমিকা ও তরজমাঃ খায়রুল আলম চৌধুরী

(বৃটিশ বংশোদ্ভূত ভারতীয় লেখক রাসকিন বন্ডের জন্ম ১৯ মে ১৯৩৪ হিমাচলের কোশৌলিতে। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর বিমান বাহিনীর অফিসার বাবার সাথে থেকেছেন কয়েক বছর। কিন্তু মাত্র দশ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর আরো নিঃসঙ্গ হয়ে যান রাসকিন। বাবার সাথে তার কয়েক বছরের অন্তরঙ্গ সময়টাকে জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় মনে করেন তিনি। সিমলার বোর্ডিং স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে মুসৌরিতেই স্থায়ী হন রাসকিন। এখানেই দত্তক পরিবারের সাথে এখন বাস করেন চির অকৃতদার এ বিপুলপ্রজ লেখক।
এ পর্যন্ত পাঁচশতাধিক গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস আর শিশুদের জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক বই লিখেছেন রাসকিন। লেখক হিসাবে তিনি ইতোমধ্যে ১৯৯২ সালে সাহিত্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১৪ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চনার ক্ষুধা মিটিয়েছেন রাসকিন বই পড়ে আর পাহাড়ি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে, যা অচিরেই তাকে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করেছে। হিমালয়ের পাহাড়ি জীবন আর প্রকৃতির পটভূমিকায় লেখা রাসকিনের প্রায় সব লেখায় তার নিজের জীবনের ছায়া দেখতে পাওয়া যায়, অনেকটা আত্মজীবনীর মতো যেন। নিজের জীবনের অপ্রাপ্তির বেদনাগুলো ভরেছেন তিনি তাঁর অজস্র লেখায়।
সহজ ভাষায় লেখা তাঁর গল্পগুলো পড়ে পাঠকের মনেও এমন গল্প লেখার ইচ্ছা জাগে, এমনই তাঁর লেখার অসামান্য শক্তি। যেকোনো গল্প লেখার আগে পুরো কাহিনীটি তিনি সিনেমার মতো মনের পর্দায় ফুটিয়ে তুলেন প্রথমে, তারপর অক্ষরের পর অক্ষরের মালা গেথে তাকে প্রকাশ করেন। এজন্যই রাসকিনের গল্পগুলো এত গল্পময়, এত দৃশ্যমান, এত প্রাণবন্ত। রাসকিন বন্ডে আমরা পাই এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের চোখে দেখা উপনিবেশিক, উপনিবেশিকোত্তর আর স্বাধীন ভারতের দেরাদুন, সিমলা আর মুসৌরির বন-বনানী, ফুল-ফল, ঝরনা-নগনদী, সেখানের মানুষের স্নেহ-প্রেম-ভালোবাসার এক আশ্চর্য নিভৃত জগত।)

 

কলেজে থাকতে গ্রীষ্মের ছুটির দিনগুলো দেরায় আমার দাদিমার কাছে কাটাতাম। মে মাসের শুরুতে সমতল ছেড়ে জুলাইয়ের শেষে আবার ফিরে আসতাম। দিওলি ছিল দেরা থেকে প্রায় ত্রিশ মাইল আগের ছোট একটা রেল স্টেশন; এখান থেকেই শুরু হয়েছে তরাই বন।

ভোর পাঁচটায়, বিজলি বাতি আর কুপির ক্ষীণ আলোয় স্টেশনটা যখন আবছা দেখা যেত, নিশিভোরের মৃদু আলোয় ফুটে উঠত রেললাইনের পাশের বনবিথী, দিওলি এসে তখন পৌঁছত ট্রেনটা। শুধু একটা প্ল্যাটফর্ম, স্টেশন মাস্টারের একটা অফিস আর একটা ওয়েটিং রুম— এ নিয়ে ছিল দিওলি। প্ল্যাটফর্ম বলতে ছিল কেবল একটা চা আর একটা ফলের দোকান আর গুটি কয়েক লাওয়ারিশ কুকুর; এর বেশি কিছু ছিল না এখানে, কারণ শুধু দশ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে এখান থেকে বনের ভিতর দিয়ে ছুটে যেত ট্রেন।

কেন ট্রেনটি দিওলিতে থামতো তা জানা নেই আমার। কিছুই হত না এখানে। কেউ নামতো বা উঠতো না এখানে। কোনো কুলিও থাকতো না প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু তারপরও ট্রেনটি পুরো দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতো এখানে। তারপর ঘন্টা বাজলে গার্ড হুইসেল দিত, দিওলি পড়ে থাকত পিছনে, বিস্মৃত।
স্টেশনটির দেয়ালের ওপারে কী আছে, এ কথা প্রায়ই ভাবতাম আমি। নির্জন, প্রায় পরিত্যাক্ত, নিরালা এই স্টেশনটির জন্য একটা অদ্ভুত মায়া জন্মেছিল আমার। মনে মনে ঠিক করেছিলাম, ট্রেন থেকে দিওলিতে নেমে যাব একদিন, সারাদিন ঘুরে ঘুরে দেখব শহরটা।
বয়স তখন আমার আঠারো, দাদিমা’র কাছে বেড়াতে যাচ্ছিলাম, রাতের ট্রেন এসে থামল দিওলি স্টেশনে। বেতের ঝুড়ি হাতে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো প্ল্যাটফর্মে।

শীতের সকাল। গায়ের ওপর একটা চাদর জড়িয়ে আছে মেয়েটি। খালি পা, গায়ের জামা পুরনো হয়ে গেছে, কিন্তু কৈশোরোত্তীর্ণ মেয়েটি হাঁটছিল একটা মুগ্ধতা ছড়িয়ে, সম্ভ্রম বজায় রেখে।
আমার জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি। খুব মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখছিলাম আমি, খেয়াল করেছে সে। প্রথমে না বোঝার ভান করল। গায়ের রং শ্যামলা, চুল চকচকে কালো আর চপল কালো দুটো চোখ। সেই সন্ধানী আর কথাবলা চোখগুলো এক সময় খুঁজে পায় আমাকে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো সে আমার জানালার পাশে, কোনো কথা হয়নি আমাদের। যখন সে অন্যদিকে সরে গেল, আসন ছেড়ে দরোজার দিকে গেলাম, প্ল্যাটফর্মে নেমে চা দোকানটার কাছে এসে দাঁড়ালাম আমি। অল্প আগুনের ওপর একটি কেতলিতে চায়ের পানি ফুটছে। দোকানের মালিক চা বেচতে গেছে ট্রেনের কামরায়। আমাকে অনুসরণ করে মেয়েটিও চা দোকান পর্যন্ত এলো।

‘একটা ঝুড়ি নেবে?’ জিজ্ঞেস করল সে। ‘এগুলো খুব মজবুত, সবচে’ ভালো বেতের তৈরি…।’
‘না’, বললাম, ‘ঝুড়ি দরকার নেই আমার।’
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমরা, নিস্বর, মনে হয় অনেকক্ষণ। তারপর সে বলল, ‘একটা ঝুড়ি নেবে না?’
‘ঠিক আছে, দাও একটা,’ বলে ওপর থেকে একটি ঝুড়ি নিয়ে এক রূপি দেয়ার ছুতোয় তার আঙুলের পরশলহরী অনুভবের সাহস কুলোয়নি সেদিন আমার।

যখন কিছু বলতে যাচ্ছিল সে তখনই বেজে ওঠে গার্ডের হুইসেল; কিছু একটা বলেও সে, কিন্তু ঘন্টার ঢংঢং আর ইন্জিনের ঝিকঝিক শব্দে হারিয়ে যায় সেসব। তড়িঘড়ি করে কামরায় ফিরে আসতে হল। কাঁপুনি আর ঝাঁকুনি দিতে দিতে সামনে এগিয়ে চলল ট্রেন।
প্ল্যাটফর্ম অদৃশ্য হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত আমি তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। প্ল্যাটফর্মে একাই ছিল সে, নড়েনি একটুও, সেও তাকিয়ে ছিল আমার দিকে, অপলক হাসিমুখে। পথের সামনে সিগন্যাল বক্স এসে পড়ার আগ পর্যন্ত চেয়ে রইলাম তার দিকে, তারপর বনের আড়ালে যখন ঢাকা পড়ল স্টেশন, তখনও দেখতে পাচ্ছিলাম তাকে, দাঁড়িয়ে আছে, একা…।
পথের বাকি সময়টা জেগে কেটে গেল। মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছিলাম না মেয়েটির মুখ আর ধিকিধিকি জ্বলা ডাগর কালো চোখের ছবি।

কিন্তু দেরায় নেমে সেখানের নানা বিষয় মনে জায়গা করে নেয়ায় ঘটনাটি আমার কাছে ঝাপসা আর দূরবর্তী হয়ে গেল। মেয়েটির কথা আবার মনে পড়লো কেবল দুমাস পর ফেরার পথে।
ট্রেনটি স্টেশনে ঢোকার মুখে ইতিউতি তাকে খুঁজছিলাম এবং অপ্রত্যাশিত একটা শিহরণ অনুভব করলাম যখন তাকে প্ল্যাটফর্ম মাড়িয়ে হেঁটে আসতে দেখলাম। আসন থেকে এক লাফে দাঁড়িয়ে হাত নাড়লাম তার দিকে।
আমাকে দেখতে পেয়ে হাসলো সে। মনে রেখেছি দেখে খুশি হল। আমাকে মনে রেখেছে দেখে আমিও খুশি হলাম। দুজনই পুলকিত, এ যেন অনেক দিন পর পুরনো বন্ধুর সাথে মিলন।
ঝুড়ি বেচতে ট্রেনের কামরার কাছে আজ আর গেল না সে, সোজা চলে এল চা দোকানের সামনে; গভীর কালো চোখ থেকে যেন আলো ঠিকরে পড়ছে। অনেকক্ষণ আমাদের কারো মুখে কোনো কথা সরলো না, অবশ্য সে সময় আমাদের বলারও তেমন কিছু ছিল না।
মনে হল যেন তাকে ট্রেনে তুলে নিয়ে যাই আমার সাথে; দিওলি স্টেশনের এই দূর দেশে তার হারিয়ে যাবার দৃশ্য চেয়ে দেখতে মন সায় দিচ্ছিলো না কিছুতেই। তার হাত থেকে ঝুড়িগুলো নিয়ে মাটিতে রাখলাম। ওখান থেকে একটা তুলতে যাচ্ছিল সে, অমনি তার হাত ধরে মুঠোবন্দী করলাম আমি।

‘আমাকে দিল্লি যেতে হবে,’ আমি বললাম।
মাথা নাড়ে সে। ‘আমাকে কোথাও যেতে হবে না।’
ট্রেন ছাড়ার হুইসিল দিল গার্ড। গার্ডের ওপর রাগ হল আমার।
‘আবার আসব,’ বললাম আমি। ‘তুমি আসবে তো?’

আবার মাথা নাড়ে সে। তখনই বেজে ওঠে ঘন্টার শব্দ। চলতে শুরু করে ট্রেন। এক ঝটকায় মেয়েটির কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে চলন্ত ট্রেন ধরার জন্য ছুটলাম।
এবার আর ভোলা গেল না তাকে। বাকি পথজুড়ে আমার সাথে ছিল সে, এবং ছিল তারও পরে আরো দীর্ঘ সময় ধরে। পুরো সেই বছরটা আমার কাছে সে উজ্জ্বল আর জীবন্ত হয়ে রইলো। কলেজ ছুটি হতে না হতেই তড়িঘড়ি করে ব্যাগ গুছিয়ে অন্যবারের তুলনায় আগেভাগে দেরার পথ ধরলাম। তাকে দেখার জন্য আমার আগ্রহ দেখে দিদিমা খুশি হবে খুব।

ট্রেন যতই দিওলির কাছে আসছিল ততই দেখা হবার পর মেয়েটিকে কী বলবো কিংবা কী করবো এসব ভেবে ভেবে অনেক নার্ভাস আর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিলাম আমি। প্রতিজ্ঞা করলাম, তার সামনে নিরুপায় নিশ্চুপ হয়ে কিংবা মনের আবেগ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো না।

দিওলি এসে পৌঁছলো ট্রেন, প্ল্যাটফর্মের এদিক ওদিক সবদিকে দেখলাম, কিন্তু কোথাও দেখা গেল না মেয়েটির কোনো চিহ্ন।
দরোজা খুলে পাদানি পেরিয়ে নিচে নেমে এলাম। ধক করে উঠল বুকটা, একটা অজানা অমঙ্গল আশংকায় ভারি হয়ে গেল মনটা। মনে হল কিছু একটা করতে হবে, দ্রুত এগিয়ে গেলাম স্টেশন মাস্টারের কক্ষে, বললাম, ‘এখানে ঝুড়ি বেচতো একটা মেয়ে, তাকে চিনো তুমি?’
‘না, চিনি না’, বলল স্টেশন মাস্টার। ‘এখানে পড়ে থাকতে না চাইলে, ট্রেনে উঠে বসাটাই তোমার জন্য ভালো হবে।’

চকিতে প্ল্যাটফর্মের আশপাশ পুরোটা তাকিয়ে দেখলাম, স্টেশনের দেয়ালের ওপারেও দেখার চেষ্টা করলাম; দেখতে পেলাম কেবল একটা আম গাছ আর একটা ধূলিময় মেঠোপথ ঢুকে গেছে বনের গভীরে। কোথায় গেছে এই পথ? স্টেশন ছেড়ে যেতে শুরু করেছে ট্রেন, প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে দৌড়ে লাফ দিয়ে কোনো রকমে বগির দরোজা ধরলাম।

তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো ট্রেনের গতি, এক সময় বনের ভিতর প্রবেশ করল ট্রেন, রাজ্যের চিন্তা মাথায় নিয়ে জানালার পাশে বসে পড়লাম আমি।
মাত্র তিনবার যাকে দেখেছি তার জন্য কি করতে পারি আমি, যার সাথে তেমন কোনো কথাই হয়নি আমার, যার বিষয়ে তেমন কিছু — বলতে গেলে একেবারেই কিছু জানি না — এমন একজনের জন্য কেন এত ভাবালুতা, কেন এত দায় আমার?

সেবার দিদিমা আমার ওপর বেশি প্রসন্ন হয়নি, কেননা কয়েক সপ্তার বেশি তখন তার কাছে থাকিনি আমি। একটা অস্থিরতা আর অস্বস্তিতে ভুগছিলাম। তাই ফিরে যেতে মনস্থির করলাম, যেন দিওলির স্টেশন মাস্টারকে আরো কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে পারি।

কিন্তু দিওলিতে নতুন স্টেশন মাস্টার এসেছে। আগের লোকটি গত সপ্তায় বদলি হয়ে অন্য স্টেশনে চলে গেছে। নতুন লোকটি ঝুড়ি বিক্রেতা মেয়েটি সম্পর্কে কিছু জানে না। চা দোকানের মালিকটিকে পাওয়া গেল, ছোটোখাটো, বয়সের ভারে কিছুটা কুঁজো, তেলচিটে জামা গায়। তার কাছে ঝুড়িঅলা মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করলাম।

‘হ্যাঁ, এমন একটি মেয়ে ছিল বটে, বেশ মনে আছে আমার,’ বলল সে। ‘কিন্তু অনেকদিন হয় তাকে দেখি না আর।’
‘কেন?’ জিজ্ঞেস করি আমি। ‘কি হয়েছে তার?’
‘আমি জানবো কিভাবে?’ বলল লোকটি। ‘আমার কেউ হয় না সে।’
আরো একবার ট্রেন ধরতে ছুটতে হলো আমাকে।

দিওলি প্ল্যাটফর্ম যখন আমার দৃষ্টিপথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো তখন ভাবছিলাম একদিন পথে যেতে নামবো এখানে, সারাদিন থাকব এ শহরে, খুঁজবো সবখানে সেই মেয়েটিকে, আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে যে, তার কালো আর চঞ্চল চোখের চাহনি দিয়ে।

এমন ভেবে ভেবে সেবার কলেজের শেষ টার্মের পুরো সময়টা নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। গ্রীষ্মের ছুটিতে দেরায় গেলাম আবার, নিশিভোরে দিওলি পৌঁছলো রাতের ট্রেন, আর পাবো না জেনেও, প্ল্যাটফর্মের এদিক ওদিক সবখানে খুঁজলাম মেয়েটিকে, কোনো দৈবযোগে যদি দেখা হয়ে যায়, এ আশায়।

যেভাবেই হোক, যাত্রাপথে দিওলিতে নেমে সারাদিন ঘোরা আর কখনো হয়ে ওঠেনি আমার। (এটি সিনেমা কিংবা গল্পকাহিনী হলে ট্রেন থেকে নেমে এ রহস্যভেদের পর একটা সুন্দর সমাপ্তির ভেতর নটে গাছটি মুড়াতে পারত)। আমার মনে হয়, এমন করতে ভয় ছিল আমার। মেয়েটির ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা জেনে যাবার ভয় ছিল আমার। হয়ত সে দিওলিতে থাকতোও না আর, হয়ত বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তার, হয়ত রোগশয্যায় ছিল সে …।

গত কয়েক বছরে দিওলির ওপর দিয়ে বেশ ক’বার গেছি, কামরার জানালা দিয়ে প্রতিবার চেয়ে থেকেছি বাইরের দিকে, আমাকে দেখে হাসছে অবিকল সেই মুখ — ক্ষীণ এ আশায়। ভাবি, কী আছে স্টেশনটির দেয়ালের ওপারে! কিন্তু কখনো সেখানে নামবো না আর। তাতে শেষ হয়ে যাবে আমার এ খেলা। আশা আর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে চাই আমি, জানালা দিয়ে খুঁজতে চাই নির্জন সেই প্ল্যাটফর্মের সবখানে, অপেক্ষা করতে চাই ঝুড়ি হাতের মেয়েটির জন্য।
এখন আর দিওলিতে নামি না আমি, কিন্তু ওপর দিয়ে যাই, যতবার সম্ভব।

====================================

খায়রুল আলম চৌধুরীঃ প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক

***************************************************