You are currently viewing ত্রিস্তান আনন্দ/ একগুচ্ছ কবিতা

ত্রিস্তান আনন্দ/ একগুচ্ছ কবিতা

ত্রিস্তান আনন্দ/ একগুচ্ছ কবিতা

 

কবিপক্ষ 

তোমারও দুহাত আমারও দুহাত

আমি লিখি উজানের দাবিদায়ে

 

আমার আঙুল ফেটে রক্ত ঝরে

রক্তদুধে উপচে পড়ে স্বয়ং শিব

র্যাঁবোরিলকে কাম্যুকাফকার জ্বরে

বলকেফলকেছলকে জ্বলে নিব

তবু শুভঙ্করের আর্যা পড়ুক কেউ

 

ভূনৃপ্রত্ন খুঁড়ে তরতাজা যত কালি

প্রতি পাতায় দেখো অনার্য শ্রাবণ

পুরাবৃত্ত লেখে পুনরায় বনমালি

প্রতি অক্ষরে বঙ্গবাদলের মাতন

তবু যমুনার পালে লাগুক নিধুঢেউ

 

আমারও দুপা তোমারও দুপা

তুমি চলো ভাটিমুখ ভুতপায়ে

 

তোমার চলনে বুজুর্গদের ঢঙ

শতপদী কেন্নচেলাবিছার চল

বহুসন্ততি বেউড়বাঁশের ভড়ং

ভাবচোরেরা হদ্দ খোঁজে তল

উল্টে যায় কিস্তিমাতের বুজরুকি

 

মাকুইঁদুর উল্কি কাটে টিকটকে

গাঁওবুড়ারা ছুছুন্দরের ফাল পাড়ে

জোয়ানেরা কিটকিটে খিটখিটে

ছোকরা যত জ্যাঠামির তাল ছাড়ে

কলমচিদের লুব্ধ করে চুকচুকি

 

আমারও দুচোখ তোমারও দুচোখ

তুমি বাহ্য দেখো ঠুলিপরা অন্ধবধির

 

তোমার দুচোখে পরশ্রীকাতর রাগ

চোলাই যৌবনের বিফল মহরত

বিষ বিঁধেছে কত নাগিনী ও নাগ

কামরূপী লোভে মরমর সহবত

ঐক্যের চেয়ে একক মেনেছ বড়

 

ভীমরতি না রতিভ্রমে জ্বলে উনুন

পোড়াতে পটু ভাটুয়া বেগোড়বাও

দৃশ্যের নেপথ্যে অকথ্য রাগারুণ

জলে ও ডাঙায় ভাসে একটি নাও

কাঠিমে বাঁধা প্রাণ যত খুশি ওড়ো

 

তোমারও দুকান আমারও দুকান

আমি ঊহ্য শুনি গূঢ়স্বর গুহ্যধ্বনির

 

আদিকারণ কোথা পাপ বা পূণ্য

ভঙ্গিতে একা শয্যায় যূথযৌথ

ভিতরে ও বাহিরে দুই মহাশূন্য

অর্থস্বত্বে সকল প্রাণই ভূতভৌত

সুরবাঁধা কথায় নেই গুমরের ভয়

 

আমার কর্ণকুহরে আত্মধ্বনি

ফিনকিতে তোলে সরোদের সুর

আকাশগঙ্গা সে অনুনাদে ঋণী

পঞ্চকোষ তারই অনুবাদে চুর

লাটাই গেঁথে রাখে ঘুড়িদের জয়

 

তোমার মনমননমনীষা আমারও

আমার রিপুস্নায়ুইন্দ্রিয় তোমারও

 

স্নায়ুর তাপে মগজের ভাপে ভ্রান্ত

ছুঁচোর কেত্তন কোঁচার পত্তন কাব্যে

জলবিছুটির বশিভূত ঘায়ে ক্রান্ত

শিল্পীর চোখ সমুদ্রকে দেখে নাব্যে

পদ্যে গদ্যে পর্যাবৃত্তি মাত্রামার্গমূল

 

বাকলে সাধুর সাঁজোয়া মগ্ন পিউরিটানে

টাউটারি ও ব্যাজোক্তিতে ভরা কালকূট

কৃষ্টির বোলে পরচুলা পরা সুপ্ত অধিষ্ঠানে

তুলসী বনের বাঘেরা শুধু দেখো ব্যাসকূট

মারো দিঘালিপাথালি দিগধেড়েঙ্গার শূল —

 

যা দেখি আর যা শুনি

পুরোটা তো সত্য নয়

চাল আর ছলে ভরা

কাল্পনিক বা দার্শনিক

 

খেলার নামে ধুলা চলে

বেশির ভাগই আজগুবি

কুশের কাছে অন্যায্য যা

লবের কাছে নৈয়মিক

 

বৃষ্টি খুলে আকাশ দেখো

আকাশভর্তি খোলা ছাতা

অদূরে মেঘামেঘা দৃশ্যাবলি

সীমানা ভাবি জলপরিধি

 

কল্পনারও প্রভেদ আছে

সব ভাবনাও দর্শন নয়

কিছু ভাব তো আচাভুয়া

বিজ্ঞানে নেই সর্ববিধি

 

ছোট কি বড় ওসব ছেঁদো

রক্তে তোমার কাব্যভাণ

তুমিও কবি আমিও কবি

নিত্য আসুক কবিতাবান

 

কলিম খানের বাড়ি বঙ্গযানে নয় মার্চের রাতে ক্লারা খান ও রী মানবী

 

বিগত আগত পাঁকে আর বাঁকে

এমনই এক ফাগুনফলা রাত

আপেলবন কামরাঙা ডাক হাঁকে

হাতের কোলে আরেক নত হাত

 

আগুনঘন শ্বাসের সোল্লাসে

মহাজগতের জরায়ুতে ওঠে ঝড়

চোখের মণিতে চোখের ছায়া হাসে

আত্মার ঘামে দুই স্নাতকোত্তর

 

শতরূপা মনু হাওয়া ও আদম

ভরা ছিল সে রাতের ওমে ও কুসুমে

গুগল ডুডলের ছিল না তাড়ম

ঘোরে নয় ঐক্যের অলঙ্ঘ্য উসুমে

 

ধড় ও ধার একাকার অতলে তল

তুমিও কিম্ভুত আমিও কিমাকার

একফোটা হলো দুইফোটা জল

জ্বলে উঠি বাঙলায় রাত্রি নিরাকার

 

মগজে নিউরনছায়া অরণ্যে পাইনি

জিহ্বার বিষের আঁচে ঠোঁট দিশেহারা

সত্তাও জানেনি আত্মাও বোঝেনি

কে আকাশের ফুল কে মাটির তারা

 

ফণারও মায়া থাকে মায়াপূর্তি বিষ

নখেও বুক মেলে বুকের দাঁতে মধু

ছোবলের খোল খোলে প্রেমার্ত শিস

নিযুত প্রেমিকা মরে নীড় গড়ে বধু

 

জুড়িয়ে যাওয়া শরীর আমার পোড়ে

তোমার ছায়ায়ও ভাসে ফাউদের রক্ত

মাপা আদরের অভ্যাসে শৈত্য বাড়ে

ফ্রেমে কিবা প্রেমে কবিই অবিভক্ত

 

এসব কথার কথা তুমিই তুরীয় ধ্যানে

তোমারই গর্ভসূত্রে পিতা নাম ধরে

কখনও মর্মে আমি কখনও গহনে

জন্মের ভেদের অভেদে মৃত্যুপ্রহরে

 

কিছু ব্যথা ভাইরাল

কিছু সুখ নেটিজেন –

 

গোত্রের চেয়ে সংঘ বড়

সংঘ থেকে সমিতি শ্রেয়

সমিতি ছেড়ে যৌথ ভাবনা

যৌথ ভস্মে যুগলই যাজক

যুগল ভেঙে একক শুরু

একক মানে নির্জনজ্ঞান

নির্জনে নিজস্বী নিজকিয়া —

 

কূলে আগুন শ্যামের সত্যে

গোলকায়নের নন্দনে তত্ত্বে

 

আত্মখণ্ডন

 

ভূতের ভিতর সরষে পুরে দেখি

সরষের ভিতর ভূত আছে কতখানি

মৃত্যুর তুড়ি জানি এখন ঢালশুমারে

মেলছে পাখনা মৃত মাকড়ের ঠোঁটে

কলিজার মোহে অগ্নিভ্রমর ছোটে

 

নিজের ছায়ার মানচিত্র শুধু দেখি

ছাইচাপা জলে বাড়ছে ধোঁয়া যত

শ্মশান দেখতে কেওড়াতলার ভিড়

মুখ ফিরিয়ে কবির বারামে ঘোরে

লাল কলজেটা জ্বলছে কাব্যপোড়ে

 

বর্শা ছোটে বর্ষণঘন একলা মেঘে

বিদ্ধ চাতক ওষ্ঠে বকছে বৃষ্টিবমি

সংসার যাক সঙ ও সার তো আছে

এমন অচল টানের বিনুনি ছিঁড়তে

কে না চায় অমন মৌতাতে ভিড়তে

 

আকাশ দেখো আকাশ কত দূরে

বুকের মাপে দুহাত উপুড় রাখো

কৈলাসের কষ্ট ঘোচে শক্তির শ্বাসে

মাটির চেয়ে কে পারে ক্ষয়ে যেতে

কার্পাসেরা বসে আছে ফাঁদ পেতে

 

এ গাঁয়ের পলিঘাম শালদুধের সমান

ও ডাঙার বালিরা জেনো শর চুষে খায়

শাঁস মেরে খোসা ছুড়ে নিমিখে উধাও

লোমের অতলে জেগে আছি বিশ্বাসে

ভাঙা হাড়গোড় জোড়া একটি আশ্বাসে

 

গোটা শরীরই হৃদপিণ্ড, পুরো দেহই ঘিলু

 

কারো চোখে ফাগুন ফাগুন

কারো বুকে জ্যান্ত আগুন

তবু বসন্ত ভাপেআঁচেতাপে

এখনও তোমার হৃদের মাপে –

 

একের ভিতরে আট আঁকে

প্রেমের ফাগে একুশ হাঁকে

রক্তে আগুন আগুন দোলে

আগুন জ্বলে প্রেমের তালে

 

হোলিতে রাসে কি-বা আসে

চাঁদ জোছনা বা পূর্ণিমা সেই

শাল পালাম বা মান্দারেরই

কলি ফোটায় বুকে অবশেষে

 

ব্যাকানালিয়া ল্যুপেরক্যালিয়া

কামরূপী গুলালে জীবনাসক্তি

শরীরের তত্ত্বে মনের হুলিয়া

ভক্তিতেই প্রেম উক্তিতেই মুক্তি

 

সব কালোকালি রঙের রায়টে

মুছে দিক কপোত কোকিলারা

গোধূলির কুসুম তিস্তা ঘাঘটে

কৃষ্ণও তুমি রাধাও তুমি চূড়া