You are currently viewing তিন গদ্য কবিতা/ বদরুজ্জামান আলমগীর

তিন গদ্য কবিতা/ বদরুজ্জামান আলমগীর

৩টি গদ্য কবিতা

বদরুজ্জামান আলমগীর

পাকদণ্ডী

এভাবেই দেখে এসছি, রত্তিকাল থেকেই দেখে এসছি- ভাঙা গর্তওয়ালা এবড়োখেবড়ো কাদা পথ পড়ে গ্যাছে গোপাটের কাছে; গোপাট হেরে দুমড়ে গ্যাছে মাটি সড়কের কাছে, মাটি সড়ক উঠে গেল পাকা রাস্তার হিম্মতের বলে।

রাতের আঁধারে মাথা ফাটিয়ে সটকে পড়তো হরমুজ, হাতে চাকু নিয়ে যেই এলো জঙ্গু- দিনেদুপুরে চাকু মারে- একলাফে তার দাম ও ক্যারিশমা উঠে যায় আকাশে; হরমুজের আর বাজার নাই, ভাত নাই; যেই রাজনৈতিক ক্যাডার কাম রংবাজ দাইনশার আবির্ভাব ঘটে- তার হাতে রিভলবার আর আছে ক্ষমতা রাজনীতির ব্যাকিং- অতঃপর জঙ্গু হয়ে পড়ে ফেউ, একজন ক্লাউন মাত্র- কেউ আর পোচে না তারে, সবাই চাকভাঙ্গা মধুর চারপাশে- দাইনশার চারপাশে জড়ো হয়।

ও আমার খোদা, সারা দুনিয়ার মালিক, দোজাহানের খুশবু আর তেজ,  বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিকারী- তুমিই বিচার দিনের স্বামী, আমার সব আহাজারি তোমার কাছে, তোমার আবে জমজম কুয়ার কাছে মাথা কুটে মরি, এই দুঃখ আমি কাহারে শুধাই প্রভু- আমার চোখের সামনে তুমি জঙ্গু মিয়া- আর ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক হয় দাইনশা- তুমি ফেউ হে আমার দোজাহানের অধিকর্তা, বারে খোদা, আমার চোখের সামনে দেখি তুমি আর মালিক নও- এই দুনিয়ার সর্বেসর্বা মালিক টাকা- তুমি তার ক্রীতদাস, আমি তোমার ক্রীতদাস- তুমি গোলাম, টাকার কাছে হেরে শতভাগ নাকাল, ইংরাজের কাছে হেরে গ্যাছো নবাব সিরাজ, আমি আর কার কাছে যাই, কার কাছে যাই বলো আমার মনিব পরোওয়ারদেগার, হেরে গ্যাছো তুমি, ব্যাকুল নাদান কেন্দে মরি আমি।

জগৎ সৃষ্টির আদি বিবরণ

শুনতাম এই তরুণ যুবা এলাকার নায়ক- কোঁকড়া চুল, সামনের চুল আবার ঢেউখেলানো- কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার জ্ঞানপুরে তার বাড়ি। তাঁর মায়ের নাম আছিয়া খাতুন, সবাই ডাকে সূর্যের মা; তার বোন আম্বিয়া- আম্বিয়া খাতুন। আমি ছোটবেলায় শুনেছি তিনি রাবেয়া বসরী। রাবেয়া বসরী আমাকে সিন্ধুরিয়া গাছের আম খেতে দেয়। ওই আম দুনিয়াতে একবারই জন্মেছিল।

একাত্তরে যুদ্ধ শুরু হলে কোঁকড়া চুলের যুবক যুদ্ধে যায়- সত্যিসত্যিই মুক্তিযুদ্ধ করে- ওই যোদ্ধা নয়, যারা ইণ্ডিয়া থেকে- মুক্তিবাহিনী মেরে সাফ করার জন্য লিস্টি নিয়ে এসে এলাকায় হাজির হয়েছিল।

যুদ্ধের একদম শেষে মাঠের লড়াকু মুক্তিসেনা মিজবাহউদ্দিন আহমদ- সহযোদ্ধাদের হাতে প্রাণ দেয়।
বোয়াল মাছের সাথে, চিতল মাছের সিথানে তার ফোলা মৃতদেহ ভেসে ওঠে। গ্রামের লোকেরা কাঁধে কাঁধে ভাটির গাঙ থেকে মৃতের শব জ্ঞানপুরে নিয়ে আসে।

শহীদ মিজুর মা আছিয়া খাতুন বুকে থাবড় দিয়ে মাটি ছেঁচড়ে বিলাপ করে। মিজুর বোন আম্বিয়া খাতুন তার মা সূর্যের মা-কে বলে: আপনি কান্দেন কেন? আল্লার দরবারে সোজা হইয়া খাড়ান- খোদার ইচ্ছায় সবুর রাখেন, আগুন হইয়া জ্বলেন!

আড়ালে, পিছ দুয়ারে আম্বিয়া নারকেল গাছের পাতা- কেঁপেকেঁপে কাঁদে, সূর্যের মা আগুন হয়ে মেওয়া ফলে জ্বলে, আর মুক্তিবাহিনী মিজু অনড় মাটি- স্থির শুয়ে থাকে!

উদ্বাস্তু

কেবল সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে গেলেই দেশান্তর
হয় না, দেশের ভিতরেই সবচেয়ে বড় দেশান্তর হতে পারে- আমাদের যেমন হয়েছে।

ভোটের হিসাবে যারা শতকরা মাত্র ৮ভাগ- তাদেরকে পোচার দরকার কী; যাদের ভোটের পরিমাণ আরও কম রাষ্ট্রের কাছে তাদের মান ইজ্জত, নিরাপত্তার কথা বলা মামাবাড়ির আবদার।

যারা ইনসাফ, মায়া আর হৃদয়বৃত্তির হিসাবে চলে- তারা এখন কৌতুক।

এতোটা অসহায়, এতোটা নির্বাসিত, এতোটা উদ্বাস্তু কেম্নে হইলাম আমরা? চোখে পানি আসে। কিন্তু এ-ও আমার ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছু নয়।