You are currently viewing তিনটি বৈশাখী কবিতা/ খালেদ হোসাইন

তিনটি বৈশাখী কবিতা/ খালেদ হোসাইন

তিনটি বৈশাখী কবিতা

খালেদ হোসাইন

এই বৈশাখের প্রথম কবিতা

সোনালি ধুলোর খুরে ধূলি ওড়ে, দহনের পর আসে চন্দ্রগ্রহণ, অনিন্দ্য প্রহর। তোমার বিদায়-সম্ভাষণ আকাশের ইতিহাসে সম্পর্কের প্রকৃত বয়ান। একজন গৃহহীন তাই অহোরাত্র নরকের নীরবতা নিয়ে রচনা করছে কবিতার পর কবিতা।

উন্মাদ না-হলে কেউ সৃষ্টি করে না, তাই সবকিছু বিপজ্জনক, বিশেষত যখন তুমিই এই কবিতার উপজীব্য এবং এটাই এই বৈশাখের প্রথম কবিতা, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নতুন বাস্তবতা, অপ্রত্যাশিত গন্তব্য, পিছুটান, এমনকি সংক্ষিপ্ত বিরতি।

চুড়ান্ত বিদায়ের আগে গলে পড়ে বৃষ্টির ছাঁট। ঘটনা উদ্ভট-স্বর্গীয় নীরবতার চেয়ে হিম। অর্থাৎ সবারই যন্ত্রণা অছে, পতনের বাস্তবতা আছে। তবু একদিন অবসর এসে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে অস্তিত্বহীন সত্তার মতো; অন্তত একবার অনুকুল হও, অন্তত একবার প্রবেশ করো অবচেতনের লীলালাস্য-ভরা ডাকঘরে।

আমাদের মনের ঘরেও পৃথিবীর স্পর্শ লেগে থাকে। পুরনো বৃষ্টির মতো আনন্দও সমাহিত হয় না কখনো, জেগে থাকে অস্পষ্ট ধুলোয়।

যখন কোনোকিছুতেই কারো কোনো ভূমিকা থাকে না, না-দেখাই সবচেয়ে ভালো-বাগানের গ্রীবা, ঘাসের উপস্থাপনা, নিরাপদ ভোর; পুনরাবৃত্তিতে প্রতিটি মুহূর্ত ক্লান্তিকর, তেমন এক চৈত্রের রাতে তুমি উদ্ধত হয়ে উঠেছিলে। তবু শেষাবধি চমকপ্রদ কিছু ঘটে না জীবনে, বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে ভেসে বেড়ায় উদ্দেশ্যহীন চাঁদ আর ঘোরলাগা প্রেম।

আবহমানতায় বছরের পর বছর বেঁচে থাকি মূর্খতা নিয়ে। সত্যহীন জনপদে বিস্ময়ের উপান্তে আমাদের বসবাস, মর্মান্তিক পথ। পথে জনবিচ্ছিন্নতা, ঝাপসা মেঘ, শবনৃত্য, সারি সারি পরাঙ্মুখ ঘর।

 

এবার বোশেখ এসে

আমের বোলের গন্ধে মাতোয়ারা ছিল যে বৈশাখ

আমি তাকে খুঁজে ফিরি অন্তরের একান্ত নিভৃতে

কেবল সবুজ বর্ণ-সবুজের আছে কতো ধাঁচ

ছিল তারা উৎসুক দৃষ্টিতে অঞ্জন মেখে দিতে।

 

ধীরে ধীরে কীভাবে যে বদলে যায় সকল সুষমা

প্রকৃতি ও প্রত্যয়ে জমা হয় রুক্ষ যতো পাথরের চাঁই

নাই কোনো সরসতা, নাই কোনো রঙের মহিমা

অস্থির অন্তর আর কোথাও পায় না খুঁজে ঠাঁই।

 

যদিও এখানো কালো মেঘগুলো আকাশের কোণে

জমা হয়, তারপর ধেয়ে আসে এ মাটির দিকে

আর্দ্রতা সঞ্চার করে, উপড়ানো গাছগুলো পথে

পড়ে থাকে, মৃত্যু হয়, বদলায় না যা রয়েছে ফিকে।

 

এবার বোশেখ এসে বদলে দিয়ে যায় যেন সব

সমস্ত আতঙ্ক যেন আনন্দের পায় অবয়ব।

 

আহা বৈশাখ!

প্রচন্ড গরম। তারপর বৃষ্টি

ভাসিয়ে নিয়ে গেল বহুদূর।

তারপর লাগাতার ধর্ষণ।

তারপর মূর্তি ও ভাস্কর্য।

তারপর জোছনা সুমধুর।

 

তারপর মৃত্যু ও জানাজা

সত্য ও মিথ্যার মায়াজাল

তারপর হাওড় তো বিস্মৃত

বিনা মেঘে কিছু বজ্রপাত।

দিনাজপুরের লিচু  লাল!

 

তারপর সিয়ামের মাস।

সন্ধ্যায় রাজকীয় ভোজ।

কারো কারো নাকে গন্ধÑ

পলিথিন ব্যাগ নিয়ে হাাঁটা।

আকাশে তারারা নিখোঁজ।

 

এর মধ্যে বাজেটের ঘাই

যেহেতু বাঁচার জন্য খাই

অথবা খাওয়ার জন্য বাঁচি

পচা আম-কাঁঠালের মাছি

তেল ও তোষণ দেখে যাই।