তিনটি কবিতা/ বদরুজ্জামান আলমগীর
আয়ুর পরাবাস্তব
জালে উঠে আসে গুগলি, শামুকের বদলে
স্মৃতি হরিণের দুরঙা শিং, উঠে আসে ধুন
রাগ মিরু বিহাগ- মাঝরাতের দোলানো পর্দা।
বুক ও অন্তরীক্ষের মাঝপথে জেগে থাকে গ্যালাক্সি
কোটি নক্ষত্রের আলপথে ফোটে কথার দানা
কথারা ক্রিসেনথিমামের চারপাশে কল্লোলিত নীরবতা।
কথারা বুঝি শেষ হয়ে এসেছিল ফুরিয়ে যাওয়া বীজধানের সাথে।
লক্ষ্মীপেঁচা নিরাশায় ঠোঁট গুঁজে বসেছিল শ্যাওলাপড়া কিশোরীর অশীতিপর বোধে।
ভৈরবী ভৈরবী- প্রথম অঙ্কুরোদ্গমে ফেটে পড়ে
মন্দিরে সচকিত পেয়ারা দিনের ঘ্রাণ!
বালুর পাহাড় বেয়ে পুঁই লতা সঞ্চারীতে মেশে।
মাথার উপর নিমপাতার ভেষজ মর্মরধ্বনি ; কিশোরী আমোনকর- দুঃখজাগানিয়া আনন্দমর্মর, সামসাদ বেগম, কী হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, গাঙ্গুবাই হেঙ্গল, কী ইয়াহুদি মেনুহিন;
সব সঙ্গীত যায় থামিয়া- অবসাদে নুয়ে পড়ে, পেঁচাদের সাথে বালুর ধসে মুখ ঘষে প্রাণ আর চোখের পানচিনি;
বিস্রস্ত জলের তোড়ে আহা ভেসে যায় তারাদের আম্রমুকুল!
আকস্মিক কথারা তোমার- মধু প্রজাপতি
উড়েউড়ে বসে যাদুর হুডিনী এক- মৃতে আনে প্রাণ।
যেই তুমি কথা বলে ওঠো – বৃষ্টির পয়ারে তুমি
কথা বলে ওঠো- কথারা ঝাঁকে ঝাঁক তোমাকে বলে ওঠে ;
তোমার কথাদের পুণ্যে মৃতবৎ গাছের গোড়ায় ছলকে ছলকে বৃষ্টির জল এসে পড়ে,
আর এ-কেমন এক মোচড়ে আমার আয়ু বেড়ে যায়!
প্রথম বৃক্ষরোপণ
মাছ বাজারে সরল তাজা জিয়ল মাছ খুঁজি
কিন্তু কী আশ্চর্য, নুয়ে দেখি ছুঁয়ে দেখি
কোন মাছটির কানকোর নিচে রক্ত জমে আছে
সে পরে আছে কেমন রক্তের নোলক
বড়শির কাঁটাও যে বাঁকা, হাঁপরে নোলক আঁকা।
হাসপাতাল আশা নিরাশার ডেন্ডিলায়ন
একজনমের মায়া মায়া ভুল,
হাতের রাঙা উত্তাপ আর কপালে জমে থাকা ঘাম
মন বাড়িয়ে কোদালে নিজেকে মাটিতে রুই
প্রণমি তোমায় বিরহে আমায় করো না নির্মূল।
স্টেশনে এলে দেখি, বারবার দেখি
সব যাত্রীর মুখে লেগে থাকে বিদায় বলার মেঘ
কারো চোখে লেগে আছে রঙের হাওয়াই
মিলনের ফুটে থাকা আবীর, সুস্বাগতম।
সবার ভিতরে দূরাভিলাষী মানুষের ভিড়ে আমি
হোমলেস ভিখারি লোকটিকে খুঁজি- যে এখনও এই
নির্দয় প্রতিষ্ঠা কালে আমাকে মনে করিয়ে দেয়-
আমারও বুকের ভিতর একমুঠো মাটি আছে,
পাখির পালকের উষ্ণ কুশিকাঁটায় তোলা আছে প্রাণ
ওখানে এস এম সুলতানের প্রথম মানুষ
একটি শস্যের চারা রুয়ে প্রতিদিন নাই হয়ে যায়।
নদীকূলে নির্বাণের মাছ
পাথরে জমাট তোমার ধ্বনি বিচলিত কম্পন
মৌলে চিরপদ্মখানি ফুল, নদীপাশে নিরূপণ।
অন্তরালে বিন্দুবিন্দু স্ফটিকতম কণা অনুকণা
বাতাসনাড়ানি তামাটে রঙ সাদার বনিবনা।
স্টিল লাইফে ফোটে থাকো নিরালার গতি
ঘোড়া বহে দিগন্ত ছাড়ি স্তব্ধ গ্রীবার জ্যোতি।
সে স্থির তবু বোধিপাওয়া কালের জরুল
সময়ের পাখে জমে ধুলামেঘের বহতা বকুল।
হাতের তালুয় বালুর রেখা পিছনে সুরের দাগ
চোখভরা নীল দূরে সরে বিল জলের তিনভাগ।
পাতা শনশন এতো ঘন মন দুধ মোলায়েম আঁকা
পথে ঘুরি ভুল হাওয়া প্রতিকূল শঙখ নদীর বাঁকা।
আমাকে নিয়ে বুদ্ধ ফোটেন শত জনমের আগে
আমাকে নিয়ে পাথরে উড়াল শত জন্মের পরে।।