তিনটি কবিতা/ নূরুল আলম আতিক
মানুষের বাগান
আমার জানালার পাশে একটি বাগান; সেই
বাগানে ফুল নয়, ফোটে মানুষ।
এই সব মানুষেরা ফোটার জন্যে এতোটা ব্যাকুল
থাকে ব’লে চেয়ে চেয়ে দেখি। দেখি তারা সকলে
মুখটাকে মুখোশ বানিয়ে তুলতে রীতিমত হুড়াহুড়ি
করে। হুলাহুলি করে। বাগানের ফুটতে থাকা মানুষ
দেখে ভালো লাগে। আর মনে মনে ভাবি ‘ মনা তুই ত
ফুটলি না! বাগানের পাশের জানালায় লতানো গাছ হয়ে
ঝুলে থাকলি শুধু।’
তবে এইসব মানুষের বাগান দেখে দেখে এতোদিনে
আমি নিজেও একটি বিছানা-বাগান বানিয়ে ফেলেছি।
সেই বাগানে একটি সিলিংফ্যান ফুটে আছে।
সেখানে তিনকন্যা ঘুরে ঘুরে নাচে। আর কী আশ্চর্য,
তারা তিনজন এক সময় এক হয়ে যায়, একাকার হয়ে যায়।
অস্ট্রিচে চেপে বহুকাল আগে একবার বরিশাল গিয়েছিলাম,
লাক্ষার মতো অসংখ্য নারীর রক্ত পেরিয়ে।
আজ আমার নাম- ‘আলতা মিয়া।’ মানুষের
বাগানের মালী নই, শুধুই দর্শক।
জলপানি, জন্মসূত্র
ছোটবেলায় ইশকুলে বড় ভাব নিয়ে চলতাম,
বন্ধুরা জানে, আমি জলপানি পাই। লালপিপড়া-কালোপিড়া,
আমার সারাটা শৈশব জুড়ে গুয়ের গাড়ি। নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন
অলড্রিন, চাঁদে মানুষের পায়ের ছাপ। কিন্তু এবেলায় শুধুই
রক্তের ছোপ। চাপ-চাপ রক্ত, বাঁশের গা বেয়ে রক্ত গড়ায়
হায়, রশোমন!
ডাকাতির ইচ্ছা হয়, প্রাগৈতিহাসিক
পাঁচির ঠেঙানি খেয়ে ঘাঁয়ের পুঁজ ছালায় বিছানায় মুছি। তবু
আমোদ, শীতাতুর এই ভোরের বেলায় যদি পাই এক টুকরা
রোদের ওম…ফের ডাকাতির কথা মনে আসে। লোভাতুর
চোখ চেয়ে আছে, রক্ত-নেশা মাখা; জন্মসূত্রের মানসাঙ্ক…
উফ্ মা! কেনো জন্ম দিয়েছিলি এতো রক্তপাত ক’রে
এতো রক্তাক্ত আমি নিজে প্রতিদিন।
পায়ে-পায়ে
ক.
একটু জলের ছোঁয়া
আঙুলের ফাঁকে কাদামাটি
আকাশের দিকে চাই
চাহনির খোঁজে।
খ.
হোঁচট খাই, উফ্!
উপড়ে গেলো নখ।
পথটা যে অনেক দূরের।
গ.
সাধুর পায়ে ছাপ
আজ দেখলাম
সাত বছর বাদে ।
ঘ.
আগুন দেখে দেখে এতো মুগ্ধ!
সিগারেট ছাড়তে পারলাম কই?
ঙ.
বিনয়দা’র মতো আমারও বলতে
ইচ্ছা হয়‘গোলাপ নয়,
আমার সন্তানের পায়ের আঙুল গুলিই সুন্দর !’