তিনটি কবিতা
নজরুল ইসলাম সৃজন
বীজতলা
একান্ত ভাবনাগুলো এসে মিশে যায় ধানদুধে
ধানের ডগাগুলো নিয়ে এমনই সময় বিড়ম্বনা,
আশা- নিরাশার ছলে তবু পাশ ঘেঁষে বসা
থিরথির বাতাসে গা হেলিয়ে দিলে কারও নাক ডাকে
কারওবা অবচেতন শরীরে তীব্র ঝিমুনী আসে,
যখনই দম ফেলে আলস্যের এই বাড়াবাড়ি
ঠিক তখনই সুদৃঢ় দুপুরটা পশ্চিমে নুয়ে পড়ে,
যারা অলসতা ভেঙ্গে বপন করে সময়ের বীজ
প্রচন্ড রোদ সয়ে দেয় ফসলের নিড়ান
তারা শক্ত সাবুদ,তারাই জেনেছে মাঠের আদ্যন্ত-
এটা সৃজনের বীজতলা-চারদিকে জ্বলাপুড়া গন্ধ
মিশে যেতে হয় আগুন,পানি, রোদ আর বাতাসে,
এমনকি বিক্ষুব্ধ ঝড়কেও সামলাতে হয় নিজের ভেতর
যদি ধানদুধে ভরে দিতে চাও চিটা-ফাটা বুক।
আধমরা বেখেয়ালে বাঁচে অমৃত কাছে ফেলে
নিরেট বিষয়বৃত্তে ঝুলে থাকে তুমুল উল্লাসে,
প্রকৃত কৃষিজীবি না হলে–
কেউ তালাশ করেনা বীজতলার তত্ত্ব।
রূপান্তর
আমি ছাইপাঁশ হলেও
কুড়াই মহিরুহের অস্তি,
আমি উর্বর হলে উষসী হাসে
সারারাত হাঁটে চাঁদ,
আমি রাখাল হলে
রোদের প্রহরায় সারাদিন
গোবর ছিটিয়ে ফেরাই
মাঠের সঞ্জীবন।
আমি বাঁশিতে বুঁদ হলে
মধ্যহাওরে ডালপালা বেয়ে নামে
সুগন্ধি মখমল,
মেঘবৎ ডানার উড়াল হয়ে
নামে সুদূরের ঢেউ ঢেউ কৌপিন,
আমি ক্ষীণতম হলেও
কচুপাতার চকমক ফোটা হয়ে
ভেজাই মাটিসমেত শেকড়-কাঁকর
অত:পর
আমি ভূমিষ্ঠ হই
অপঘাত আমাকে ছুঁয়না কখনও।
সময়ের টানে
আমি নাকফুল দেখেছি ঘাসের তৃণে
পলিত মাটি শুঁকেছি রক্তঋণে,
দেখেছি জলের গহিনে ফাঁদ
আঁধারের ভাগে পড়েছে চাঁদ,
যতই থেকেছি গলুই-এ বসে
আকাশ বেয়ে সময় গেছে খসে,
এতোদিনে তাই বেড়েছে নতুন ঋণ
কাটেনি দীনতা, ধড়পাকড়ের দিন,
মূর্খের কাছে জ্ঞানীদের দেখেছি চুপ
আলোর বদলে নেমেছে আঁধার কূপ,
জানি, চোখের তারায় সূর্য উঠে
চোখের আলোয় দিনমান টুটে,
মেঘের কাছেই চাইছি অঝোর বৃষ্টি
সরে যাক পৃথিবীর যত অনাসৃষ্টি।
===================