তিনটি কবিতা
আনিসুর রহমান অপু
বোঝে না সে বোঝে না
বোঝে না সে বোঝে না , বোঝে না কোথাকার জল কোথায় গড়ায় ..
যেন সে জানে না কার লোভে লঙ্কাপুরি পুড়ে ছারখার ,
কার দোষে ভরসার ভিটেমাটি হয়েছে উজাড় –
কার প্রতিবন্ধকতায় খোলা-হাওয়ার জন্য হাঁসফাস করে বুক
কোন সে অসুখ অথবা বিকৃতি পৃথিবীতে নামায় তাণ্ডব !
আহা কী সে দরদিয়া
পুড়ছে পাঁজর যখন সবার তখনও সে
বাজায় একার লাভের সেতার !
ভুলেছে কে তার পায়ের তলায় দিয়েছে দৃঢ়তা
কার মানে মূঢ় মাননীয়া সভামান্য আজ –
লাল ঠোঁটি টিয়া শিখেছে কথার কারুকাজ !
বোঝে না বোঝে না সে কিছু যেন পক্ককেশ শিশু
সারা গ্রামের চোরাই মুর্গা খেয়ে সেজেছে ধর্মের যীশু –
সে বড় গোলক ধাঁধা
যে দোষে আঙুল তুলছে সে আজ ব্রহ্মাণ্ডের প্রতি
তার শত গুণ তারই আঁচলে বাঁধা ,
সাজে তবু যে অসূর্যস্পর্শা রাধা !
অন্যের ক্ষেতের প্রতিটি দানার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব
তার জানা চাই –
অথচ নিজের সবটাই কোথা-কোন গিরিখাতে
কোন কৃষ্ণগুহায় গায়েব হয়ে যায় জানা নাই ,
কারো জানা নাই –
জানে কি সে ধূর্ত-ধুরন্ধর সেই কবে থেকে কেন্দ্রচ্যুত ,
উম্মুল আগাগোড়াই ?
কেন ভুলে যায়, কেন বোঝে না সে
জবরদস্তির জ্যামিতি পৌঁছায় না কোথাও ?
শূন্যতাতে রঙ মেশানোর হৃদয়কলা
অপেক্ষাতে গুণছি প্রহর
মনের শহর ভাঙছে ডাকাত,
ঝড়ের মুখে পোড়োবাড়ি কখন যেন ভেঙে পড়ে
সকল ছেড়ে কখন যেন পালায় পাখি,
পালায় পাখি ছিঁড়ে বাঁধন, প্রাণের রাখি ।
জীবনটা যার গচ্ছা গেছে ভুলের ফাঁদে
শেষটা কি তার কাটবে ভালো ?
তেমন আলোর আভাস তো নাই, কোথায় যে পাই
ক্ষত-ক্ষতি মুছিয়ে দেয়ার দরদী হাত !
ঘনায় যে রাত, বিকট ছায়া
স্নেহমায়া-ভালোবাসা পালিয়েছে আন্দামানে,
ক’জন জানে শূন্যতাতে রঙ মেশানোর হৃদয়কলা —
পড়ছে কজন লেখা যা সব অনুভবের অভিধানে?
বরং ছলা, চাল চাতুরি নিত্য ঘটায় রক্তক্ষরণ
অভিমানে মরণ বরণ যন্ত্রণারা দাপট দেখায়,
লোভের থাবায় ভাঙলো না হয় বুকের পাঁজর
যায় আসে কার?
থাকে কতক গাঁজর মুলো পেলেই যারা
আপন-পরের ভেদ ভুলে যায় ;
শিখছে তারা কম সময়ে আখের গোছান্
যায় কীভাবে পরের ধনে—
খুঁড়লে কতো আকাশ-বাতাস
মিললো কোথাও বৃষ্টি কিছু ?
মরুর যাপন শেষ হলো কি !
মরুদ্যানের পেলে দেখা ?
অন্ধকারে আলোর রেখা পায় কি সবাই !
মাটির দেহে হাওয়ার বসত নিয়ে মানুষ
সাজছে ফানুস উড়ছে তুমুল বল্গাহারা,
দিশেহারা এমনই সে
নিজের সাথে বসতে তাহার সময়ও নাই ;
তছনছিয়া পৃথিবী তাও যতন করে সাজায় সে ঘর
ঘাড় ফেরাতেই সে ঘর তারই পর হয়ে যায়—
ফেরানো গেলো না
ফেরানো গেলো না,
ফেরানো গেলো না তারে কিছুতেই –
পথে পথে কুয়াশার কারাভ্যান
রাক্ষসের ফাঁদ , হা-মুখো হাঙর
হতাশায় মুড়ে দেওয়া দিগন্তদেয়াল
সুযোগসন্ধানী শকুনের লাল-নীল প্রতারণা ,
জেনে শুনে উদ্দেশ্য বিধেয় সব
অনুভবে মেলেছিল তবু তার মায়ার আঁচল ,
আস্তাবল জুড়ে যার বেড়ে ওঠে স্বপ্নদীর্ঘ ঘোড়ার খুঁড়ের ধ্বনি
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ খামার , জোড়া দীঘি –
ভুল ভালোবাসার বেসুরো গীতি ঝেড়ে মুছে
চলায়-বলায় বুনে যায় বুনো পাখোয়াজ, তানপুরা
নদীর হিল্লোল— অথবা নিজেই যৌবনের জড়োয়া জড়ানো টইটুম্বুর নদীর উৎসব মানবীর বেশে !
যার সান্নিধ্যে খোলা-হাওয়ার উন্মাদনা—মনে হয় এর জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেও নেমে পড়া যায় আগ-পাছ না ভেবেই !
প্রাচীন পাঁজরে ছড়িয়েছিল যে মহার্ঘ ভালোবাসার মায়াবী ঐশ্বর্য ,
নিরাশার আঁধার তাড়িয়ে বুকঝিম আলোর আবাদ —
নির্বিবাদ সয়ে-বয়ে
নীল বিষে উড়েছে আকাশে সে-ই ,
জিতে গেছে কুটিলের কাঁটাতার –
বুক ভাঙা হাহাকার তার
ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর প্রতিটি বন্দরে ;
সেই থেকে একা হয়ে গেছে সব সমর্পিত সুরের মূর্ছনা
বিদীর্ণ যন্ত্রণা ছায়া হয়ে সেঁটে আছে মনের শহর ;
সেই থেকে স্বপ্নের সাফোকেশন , বিরানায় ভেসে গেছে সব
লোনা ঢেউয়ে হারিয়ে গেছে দারুচিনি দ্বীপ , প্রীতি উৎসব !
=======================