তাপস চক্রবর্তীর একগুচ্ছ কবিতা
সাদারঙে শান্তির বিষাদ
মানুষ সবুজ লাল কিংবা কালো রঙের
পাথর্ক্যে ধরলেন সমাধি বৈশ্যের নিয়মে
আর্য ভট্ট আর বিশ্বমিত্ররা দেখলেন
বেহাত হওয়া এ টু জেড পরিকল্পনা।
কেউ শুনলেন— বললেন, সাদারঙে শান্তির বিষাদ
অতঃপর একজোড়া কপোত
আর অজস্র স্লোগানে ভেসে গেলো পোষা নীল হাঁস
কেউ একজন রাজহাঁসের পালক খসিয়ে
মানচিত্র আঁকলো গ্যালেন গ্যালেন পার্পেল রঙে
লিখলো দ্বিখণ্ডিত হওয়া মানসের সুর।
কেউ লিখলো সংসারে আরেকবার বসন্ত হাজির
কেউ হলুদ খুঁজে নিলো— শ্মশানের পোড়া লাভা থেকে…
আফসোস— আফরোজার নিয়ম করা সংসারে
একুশ বছর নমাস দুদিন…
তবুও দেখলো দূরে বহুদূরে তালাকের সুমদ্র যোনি
আর
স্বদেশের ভুল অংক ভুল কষানো হয়েছে বারবার।
আফরোজা জানে শূন্যতত্বে
শূন্যের বয়স হয়েছে বৃক্ষের মতো মাটির মতো
কিংবা জল ও ঘরের চৌহদ্দির মতো…
বিধবা মায়ের চোখ গড়িয়ে যে হীরের রং পড়ে
তা কিনবার আকুতি এখন সামন্তবাদী চেতনায়
অনাথ আশ্রমের জানালায় হাজার চোখে সাম্যের কমা
আর শান্তির জীবন দেখে জাতিসংঘ।
অথচ আফরোজার একুশ বছর ছমাস দুদিন
দীর্ঘ বিরতি পরিয়ে চাঁদের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত
অনাবাদি আরো কিছু সময়
সব যেন ভাই ব্রাদারের টেকনোলজিতে পাওয়ার অব মব।
শান্তির মচ্ছব
আমি পাহাড়ের কথা বলতে আসিনি
কখনো আসিনি বলতে কে আদিবাসী আর কে বাঙাল।
তবু শুনুন
আমি এসেছি একদলা পোড়া মাটির কথা বলতে
মানুষের চিৎকার
ধিক্কার
আর ওমকারের কথা বলতে।
যেখানে বুদ্ধের ধ্যান গম্ভীর হতে হতে
একদিন
গ্রাম হেঁটে যায় শহরে—
শহরও থমকে যায় শিরিষকাগজে
যেখানে পথ সমুদ্র ছুয়ে আসে মৃত শামুকের খোলস
সেখানে বালিহাঁস আশ্রয় খুঁজে নির্বাণে।
তবু আমি পাহাড়ের কথা বলতে আসিনি আজ
পাহাড় আমাকে কিছু দেয়নি
দেয়নি ছায়া—
দিয়েছে শুধু স্যাটেলার আদিবাসী আর পাহাড়ির তকমা।
অথচ গত রাত দেখেছি বুদ্ধের শরীর ছুঁয়ে
কালো ধোঁয়াগুলো উড়ে গেছে উত্তরে…
পাহাড়ের মানুষ বলে সেখানে ঈশ্বর থাকে
আমি দেখি জুম খেতের গমে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ চোখ
ঝর্ণার স্রোতে দেখি জীবন্ত লু
তবু আমি পাহাড়ের কথা বলতে আসিনি
বলতে এসেছি মানুষের কথা…
শুনুন প্রাজ্ঞজন
ধীরে আসুন— সমবেত গুঞ্জনে শপথ করি
বিভাজন ভাঙি উপলি পাড়ার আগুন নেভানোর আগে…
বুদ্ধের শরীরে ক্ষত শুকানোর আগেই
বলি আমরা মানুষ
সজোরে খুলবো আজ দক্ষিণ দুয়ার
সমতলে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ুক শান্তির মোচ্ছব।
লাস্ট সাফার
ভাতের মোটা দানাগুলো বারবার হাসছিল
বলছিল আমাকে,
ভর্তা ডাল একটুকরা পাঙ্গাসের গল্প
কিংবা ঈশ্বরের লাস্ট সাফার।
ঠান্ডা জলে কুলকুচি শেষে
তিনি
ইনি
আপনি
কতো নির্বিঘ্নে হিসাব কষলেন একটা জীবনমৃত্যুর।
অথচ
স্পর্ম যখন জরায়ু ছুঁই তখন কি মানুষের হাত থাকে?
জরায়ুর গভীরে নিরাকার ইশ্বর হয়ে
ওঠে জীবনের রূপকার
একদলা তরল বীর্য্যকে কখন যে মাংস হাড়
স্পন্দন আনে…
কে জানে!
অথচ তোফাজ্জলের ভাতের থালায় ভাসে মৃত্যুর ছবি।
মানুষও এখন কুকুরের ছায়া মাড়িয়ে যায়
কুকুরাও মানুষ হয়ে গেছে
ওরাও সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝে— বোঝেনি মানুষ।
তাই ভাবি তোমার ভাতের থালায় সেদিন কে ছিল
তোফাজ্জল নাকি যিশু?
***************************