ডায়েরির পাতাগুলো
বিচিত্রা সেন
বইয়ের আলমারি গোছাতে গিয়ে সারিবদ্ধ বইয়ের পেছন থেকে ওর ডায়েরিটা যখন পেলাম,সত্যি বলছি তখন আমার কোনো কৌতূহলই কাজ করেনি। নিছক একটা পুরানো ডায়েরি ভেবে ডায়েরিটা সরিয়ে রেখেছিলাম একপাশে। তারপর পুরো আলমারি গুছিয়ে সেদিনের মতো ঘর গোছানোতে ইস্তফা দিয়েছিলাম। কয়েকদিন অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর আজ সকালে ও অফিসে চলে গেলে হঠাৎ মনে পড়ল ডায়েরিটার কথা। আজ কিন্তু কৌতূহল জাগলো। মনে হল,আচ্ছা ওর ডায়েরিটাতে কী লেখা আছে! ডায়েরিটার ওপরে সাল লেখা। সেই হিসাবে প্রায় দশবছর আগের। তার মানে ও তখন ছাত্র। হিসাব করলে দেখা যায়, ও তখন আমার প্রেমে দেওয়ানা। নিশ্চয় সেই অনুভূতিগুলো তুলে ধরেছে ডায়েরির পাতায় পাতায়। যদিও জানি,একজনের একান্তই ব্যক্তিগত ডায়েরি কখনোই অন্যের পড়া উচিত নয়,তবুও জানতে ইচ্ছে করছে আমাকে নিয়ে তার গোপন অনুভূতিগুলি। কী যে পাগলামি করেছে সে দশটা বছর!
আপনাদের বরং সে গল্পগুলোই খানিকটা বলি। তাহলে বুঝতে পারবেন ও কেমন উদ্দাম প্রেমিক ছিল। ওর পাগলামির কারণেই তো শেষপর্যন্ত ওকে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম। কারণ এমন প্রেমিক তো ত্রিভুবনে খুঁজে পাওয়া ভার। আমরা একই পাড়াতে থাকতাম। ও ছিল আমার পাঁচ বছরের সিনিয়র। তাই ওর সাথে কখনো তেমন কথাবার্তা হয়নি। ও ছিল ভীষণ দুরন্ত। প্রতিদিন কোনো না কোনো কাণ্ড ঘটাতো পাড়ায়। ওসব শুনতাম,কিন্তু আমি ছিলাম তখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী। তাই ওসব নিয়ে আমার কখনো মাথাব্যথা ছিল না। আমি থাকতাম আমার দলবল নিয়ে। সমবয়সী বারো চৌদ্দজনের আমাদের একটা দল ছিল। ওরা বড়রা মাঠে ফুটবল খেলতো। আর আমরা খেলতাম দাড়িয়াবান্দা,বৌচি,সাতচাড়া,হাডুডু এসব। খেলতে খেলতেই একসময় বড় হয়ে গেলাম। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। ও তখন ভার্সিটির ছাত্র।
একদিন কলেজে যাচ্ছিলাম,ও বাইরে থেকে ফিরছিল। গলিতে ঠিক মুখোমুখি হয়ে গেলাম। সেইসাথে চোখাচোখি। এই প্রথম দেখলাম ওর চোখে বিস্ময়। ও যেন আমাকে প্রথম দেখল,এমন একটা দৃষ্টি ওর চোখে। আমি চোখ নামিয়ে পাশ কেটে চলে গেলাম। তখন আমার কিশোরী মন। ওর বিস্ময়াপন্ন চোখ আমায় কেমন যেন ধাক্কা দিল। মনে হল,ওর চোখে আমি বিস্ময়ের সাথে মুগ্ধতাও দেখেছি। যদিও মন আন্দেলিত হচ্ছিল কিন্তু কাউকে কিছু বললাম না। কারণ আমি নিজেই সন্দিহান ছিলাম আমার দেখা ঠিক ছিল তো! তাছাড়া ও আমার অনেক সিনিয়র হওয়াতে ওকে নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথাও ছিল না। প্রথম ধাক্কাটা খেলাম
কয়েকদিন পর ওকে আমাদের বাসায় দেখে।
সন্ধ্যায় আমি পড়ছিলাম,হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ। বাসায় কেউ আসলে দরজা খোলার দায়িত্বটা বরাবরই আমার ওপর ছিল। তাই আমাকেই উঠতে হলো। দরজা খুলে ওকে দেখে আমি তো হতবাক। অপার মুগ্ধতা নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর পাশে আমাদের নিচের তলার রতনদা। আমি কিছু বলার আগে ও ফিসফিস করে জানতে চাইলো,
-জনি ভাই আছে বাসায়?
আমি ওকে দেখে এতটাই হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম যে,আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুলো না। মাথা নেড়ে জানালাম ‘না’। সে ঠোঁট চেপে একটা দুর্ধর্ষ হাসি দিয়ে বলল,
-আই লাভ ইউ।
আমি এত বোকা,এত হাবা যে,প্রথমে বুঝতেই পারলাম না ও কী বলেছে। রতনদার বিব্রতকর চেহারা দেখে আমি বললাম,
-কী বললেন? বুঝিনি।
ও আবারও সেই উথালপাথাল করা হাসিটা দিয়ে একটু জোরেই বলল,
-আই লাভ ইউ।
ঠিক এসময় ভেতর থেকে মেজ আপা চিৎকার করে জানতে চাইল,
-বীথি,কে এসেছে রে?
মেজ আপার গলা শুনেই ওরা দুজন দৌড়ে পালালো। আর আমি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ওখানে সোফাতেই বসে পড়লাম। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এরকম কারো বাসায় কেউ এসে কলিংবেল দিয়ে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে পারে এমন ধারণা আমার কখনোই ছিল না। আমি ওর সম্বন্ধে জানতাম। জানতাম ও ভীষণ দুষ্ট,একরোখা,কখনো কখনো কাণ্ডজ্ঞানহীন। তাই ওর প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু বয়সটা তো পথ হারানোর। ওর উথালপাথাল হাসি, আর তিরবেঁধানো দৃষ্টি আমাকে কেমন যেন ভাসিয়ে নিচ্ছিল। এসময় মেজ আপা এসে বলল,
-কে এসেছিল রে?
উত্তর দিতে গিয়ে আমার গলাটা কি একটু কেঁপে উঠেছিল! বললাম,
-শিহাব ভাই ভাইয়ার খোঁজ করতে এসেছিল।
মেজ আপা একবার আমার দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল। আমার কানে গুনগুন করতে লাগলো “আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ”।
এরপর থেকেই শুরু হল উৎপাত। কলেজে যাওয়ার সময় প্রায়ই শিহাব ভাইকে দেখা যেতে লাগল গলির মুখে। কিছুই বলে না,শুধু হাসে আর গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি দূর থেকে তাকে দেখলেই মাথা নিচু করে ফেলি। আমি জানি তার সাথে আমার মিলবে না,তবুও সে যে আমার জন্য পথ চেয়ে থাকে,ওই বয়সে তা আমার বেশ ভালোই লাগছিল। একদিন বান্ধবী মুনা বলল,
-শিহাব ভাই মনে হয় তোর প্রেমে পড়েছে।
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বললাম,
-বলিস কী? আমি তো জানি না।
মুনা হেসে বলল,
-তুই না জানলে কী হবে! পাড়ার সবাই জানে।
বুকের ভেতর কেমন একটা আশঙ্কা জেগে উঠল। হায়! বলে কী? পাড়ার লোকেরা সবাই আমাদের নিয়ে কথা বলছে? এ খবর ভাইয়ার কানে গেলে তো সর্বনাশ হবে। না,কিছুতেই শিহাব ভাইয়াকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এতদিন মাথা নিচু করে লজ্জা লজ্জা ভাব করে উনাকে পাশ কাটিয়ে গেলেও সেদিন উনার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে তুললাম। চোখ তুলে তাকালাম না বলে বুঝতে পারলাম না তার প্রতিক্রিয়া। কিন্তু সেই রাতেই ঘটলো বিপত্তি।
সন্ধ্যায় আমি আর ছোট আপা পড়ার টেবিলে বসে নাস্তা করছিলাম,হঠাৎ কলিংবেলের টুং টাং। যথারীতি আমাকেই উঠতে হল। দরজা খুলে আমি তো হতবাক! শিহাব ভাই দাঁড়িয়ে আছে তার মাসহ। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আমাকে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিহাব ভাইয়ের মা বললেন,
-তোমার আম্মা আছে বাসায়?
আমি জবাব দেবার আগেই আমার পেছন থেকে মেজ আপা বলল,
-আছে,আপনি আসুন খালাম্মা।
আমি একপাশে সরে দাঁড়ালে তাঁরা ঢুকলেন আমাদের বাসায়। আমি আর ছোট আপা ডাইনিং টেবিল থেকে বইখাতা গুছিয়ে বেডরুমে চলে গেলাম। ততক্ষণে মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে শিহাব ভাইয়ের মাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে আলাপ জুড়ে দিয়েছেন। সেদিন তাঁরা অনেকক্ষণ ছিলেন আমাদের বাসায়। পরে শুনেছিলাম শিহাব ভাইয়ের মা নাকি আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। মা সরাসরি নাকচ না করে বলেছিলেন আমার বড় দুবোনের বিয়ে হয়ে গেলে তারপর এটা নিয়ে ভাববেন।
তারপর কিছুদিন শিহাব ভাইকে আর দেখিনি। এর মধ্যে আমরা ও পাড়া থেকে বাসা পাল্টিয়ে অন্য এলাকায় চলে আসি। মেজ আপারও বিয়ে হয়ে যায়। একসময় কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। একদিন ক্লাস শেষ করে করিডোরে এসেই থমকে গেলাম। এক বন্ধুসহ শিহাব ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ক্লাস থেকে বেরুতে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
-বীথি,চল,তোমার সাথে কথা আছে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-এখন তো আমার ক্লাস আছে। কোথাও যাওয়া যাবে না।
শিহাব ভাই একটু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
-দূর,একটা ক্লাস না করলে কিচ্ছু হয় না। চল,চা খাব।
আমার বুকটা ঢিব ঢিব করছিল। কেমন যেন ভয় পাচ্ছিলাম। আমি তো তাকে চিনি। সে যে কোনো মুহূর্তে সিন ক্রিয়েট করতে পারে। অহেতুক ঝামেলা এড়াতে আমি বললাম,
-আচ্ছা চলেন।
আমরা চারুকলার সিঁড়ি দিয়ে নেমে ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে বসলাম। ক্যাফেটেরিয়া তখন একেবারে ফাঁকা। সবাই মনে হয় ক্লাসে চলে গেছে। ও চা আর সিঙারা নিয়ে আমার সামনে চেয়ার টেনে বসল। বন্ধুটিও পাশে আছে। আমার চোখে চোখ রেখে শিহাব ভাই বলল,
-বীথি,চোখ নামাবে না। আমার চোখের দিকে তাকাও। একবার ভালো করে চেয়ে দেখো,এ চোখে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই,কিছু নেই। আমার এ ছন্নছাড়া জীবনটাতে তোমাকে খুব বেশি প্রয়োজন। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ।
বন্ধুটিও বলল,
-প্লিজ বীথি,আপনি শিহাবকে ফিরিয়ে দেবেন না। ও অনেক দুষ্ট,অনেক খামখেয়ালি আপনিও জানেন। কিন্তু কখনো কোনো মেয়ের জন্য এমন কাতর হয়নি। আপনাকে ছাড়া ও বাঁচবে না। আপনি ওকে গ্রহণ করুন।
সত্যি বলতে কি,আমার জন্য কোনো ছেলে এমন অনুনয় করছে,সেটা আমার কাছে ভালোই লাগছিল,কিন্তু শিহাবের সাথে চিরজীবনের জন্য জড়িয়ে যাব মন থেকে এটাও মানতে পারছিলাম না। কোথায় যেন একটা বাধা কাজ করছিল। আমি শিহাবের চোখ পড়তে চাইলাম। কী গভীর আকুতি ওই দুটি চোখে। যেন সর্বস্বের বিনিময়ে সে আমাকে চায়। আমি কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বললাম,
-আসলে আমি প্রেম ট্রেম করতে চাচ্ছি না। জানি, আপনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু আমার ছোট আপাকে রেখে আমি তো এখন বিয়েও করতে পারব না। আপনি বরং অপেক্ষা করুন।
শিহাব বলল,
-দেখ,তোমার মেজ আপার বিয়ে পর্যন্ত তো আমি অপেক্ষা করলাম। ছোট আপার বিয়ে কখন হয়, তার ঠিক আছে? আমাদের বিয়েটা আগে হয়ে গেলে কী এমন ক্ষতি? আমরা দুজনে মিলে না হয় ছোট আপার জন্য বর দেখব।
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
-না না,আমি বড় বোনকে রেখে বিয়ে করতে পারব না। আপনি অপেক্ষা করুন।
অপেক্ষা শিহাব আমার জন্য করেছিল প্রায় আট বছর। তবে মাঝে মাঝে এমন সব ঘটনা ঘটাতো,আমাদের পুরো পরিবারের আক্কেল গুড়ুম হয়ে যেত। যেমন একবার রাত একটায় আমাদের বাসায় কলিংবেল বেজে উঠল। আমার ভাইয়া ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
কে?
বাইরে থেকে জবাব এল,
-আমি শিহাবের বন্ধু রোমেল। শিহাব খুব অসুস্থ। ওর রক্ত বমি হচ্ছে। ও শেষবারের মত একবার বীথিকে দেখতে চাইছে। প্লিজ বীথিকে একবার ওর কাছে যেতে দিন। আমি আবার ওকে বাসায় দিয়ে যাব।
ভাইয়া তো রাগে দিশা হারিয়ে ফেলল। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
-বীথি কি ডাক্তার? ওকে দেখলে ওর রক্তবমি বন্ধ হয়ে যাবে? আমি তোমাদের নামে থানায় মামলা করব।
আমি তো ভয়ে কাঁপছিলাম। না জানি ভাইয়া আজকে আমাকে কী করে! না,শেষ পর্যন্ত ভাইয়া আমাকে কিছু বলেনি। তবে পরদিন শিহাবের নামে নারী নির্যাতনের মামলা করার জন্য থানায় যেতে চেয়েছিল। মা অনেক কষ্টে ভাইয়াকে নিবৃত্ত করতে পেরেছিল। আসলে বাবা বিদেশ থাকাতে ভাইয়াই ছিল আমার অভিভাবক। পরে অবশ্য জেনেছিলাম ওর রক্ত বমি টমি কিছু হয়নি। শুধু আমার প্রতি তার প্রেমের গাঢ়ত্ব বোঝাতেই নাকি দু বন্ধু মিলে এ প্ল্যান করেছিল। এর কিছুদিন পর ছোট আপার বিয়ে হয়ে যায়। এসময়ও শিহাব আবার আমাদের বাসায় এসেছিল। বলেছিল,
-এবার তো আর কোনো অজুহাত নেই তোমার। মা বাবাকে নিয়ে আসব বিয়ের তারিখ ঠিক করার জন্য?
মা রাজি থাকলেও আমি বেঁকে বসেছিলাম। বলেছিলাম,
-না,এখন না। আমি আগে মাস্টার্স শেষ করি।
ধৈর্য পরীক্ষায় শিহাব উত্তীর্ণ হয়েছিল। আটটি বছর অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত সে জিতেছিল। তার একনিষ্ঠ ভালোবাসার কাছে আমি হার মেনেছিলাম। সেই যে এইচএসসি পড়ার সময় থেকে সে একাগ্রচিত্তে আমাকেই চেয়ে গেছে,এই সাধনাটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছিল। আমার মাও বলেছিলেন,
-যে ছেলে এতটা বছর তোর জন্য অপেক্ষা করতে পারে,সে ছেলেকে বিয়ে করলেই তুই বেশি সুখী হবি।
ভাইয়ার অবশ্য তেমন মত ছিল না। কিন্তু বাবা মা রাজি থাকাতে সে আর আপত্তি করেনি। শিহাবকে বিয়ে করে আমি ভালোই আছি। যদিও ওর অঢেল টাকা পয়সা নেই। মাসের শেষদিকে বরং কিছুটা টানাটানিই চলে,তবুও এটাই সান্ত্বনা, সে শুধু আমার। আমার জন্য টানা আটটি বছর অপেক্ষা করেছে। আমাদের দুবছরের বিবাহিত জীবনে অনেককিছু নিয়ে তর্কাতর্কি হয়,তবুও শেষমেষ আমিই কম্প্রোমাইজ করে ফেলি এই ভেবে যে, ছেলেটা তো আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। তাই আজ ডায়েরিটা পড়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠল। নিশ্চয় এ ডায়েরির পাতায় পাতায় সেইসব স্মৃতিগুলো লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। ও ফিরতে এখনো অনেক দেরি। আমি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বেডরুমের খাটে এসে শুলাম। তারপর চোখ রাখলাম ডায়েরির পাতায়। প্রথমেই বড় বড় করে লেখা “মৌরি আমার মৌরি”।
ভ্রু কুঁচকে গেল আমার। মৌরি? মৌরি কে? আমাকে ছদ্মনামে মৌরি ডাকত শিহাব? নারীসুলভ ব্যগ্রতায় পরের বাক্যগুলোতে চোখ বুলাতে লাগলাম । পাতার পর পাতা উল্টাই,আর ডুবে যেতে থাকি অন্ধকারে। খাবি ওঠে আমার,দম বন্ধ হয়ে আসে। অবাধ্য চোখের জল কামিজের বুক ভাসিয়ে দেয়। পাতার পর পাতায় একেকটি সাল উঠে আসে,উঠে আসে মামাতো বোন মৌরির শরীরে প্রথম নারীর স্বাদ পাওয়া শিহাবের অনুভূতি,উঠে আসে বাসার সবার অনুপস্থিতিতে একেকটা দিন কীভাবে কাজের মেয়েকে নানান কায়দায় ভোগ করেছে তার বর্ণনা,আসে টিউশনি করতে গিয়ে ছাত্রীর বক্ষমর্দনের কথা। ছিটেফোঁটাভাবে আমার কথাও আসে। আসে আমার লাজুকতার কথা,আসে আমার অন্তর্মুখী স্বভাবের কথা। আসে এমন মেয়েকে ঘরের বউ করার ফায়দার কথা। হাবুডুবু খেতে খেতে আমি জানতে পারি এক নারীলোভী কামুক লম্পটের কথা। আরও জানতে পারি সেসব কথা লিখে রেখে তার বিকৃত তৃপ্তি পাওয়ার কথা। আমি হাঁউমাঁউ করে কাঁদি,আমি চিৎকার করে কাঁদি। কিন্তু চারপাশের চারটা দেয়াল ছাড়া আমার কান্না কেউ শোনে না,কেউ জানে না। দেয়াল থেকে নিথর তাকিয়ে থাকে আমাদের হাস্যজ্জ্বোল যুগলবন্দি ছবি।
=======================