জোসেফ ব্রডস্কির একটি কবিতা
ভূমিকা ও অনুবাদ: মুজিব রাহমান
জোসেফ ব্রডস্কি ( ২৪ মে ১৯৪০ – ২৮ জানুয়ারি ১৯৯৬) ১৯৮৭ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লেখক। ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে করতে এবং পাশাপাশি লেখাপড়া শিখতে শিখতে লেলিনগ্রাদে তিনি বেড়ে ওঠেছিলেন। তাঁর সতত বিদ্রোহী সত্তা কবিতা সৃজন ও পাঠের ভেতর কাঙ্ক্ষিত শান্তি খুঁজে পেয়েছিল। ১৯৬৪ সালে যখন সোভিয়েত পুলিশ ‘সামাজিক পরজীবীতা’ র জন্যে তাঁকে গ্রেফতার করেন এবং একটি শ্রম শিবিরে দণ্ডিত করেন তাঁর কবিতা তখনই আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসে দাঁড়ায়। ১৯৭২ সালে দেশ থেকে বহিষ্কৃত ব্রডস্কি নির্বাসিত জীবনে কবি ডাব্লিউ এইচ অডেন এবং সমর্থকদের সহযোগিতায় অ্যামেরিকায় এসে থিতু হন। রাশান-অ্যামেরিকান এই কবির অধিকাংশ কবিতা ক্রোধ, বক্রোক্তি এবং সাংস্কৃতিক সমালোচনা প্রধান। তাঁর ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ শীর্ষক কবিতাটিও একই ধারার।
স্মৃতিস্তম্ভ
আসুন, নগরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ
স্থাপন করি,
দীর্ঘ এভিন্যুর শেষপ্রান্তে,
অথবা বিশাল চত্বরটির কেন্দ্রে।
একটি স্মৃতিস্তম্ভ
যা সমস্ত পটভূমিকে ছাড়িয়ে যাবে
কারণ এটি হবে সুনির্মিত এবং
অতি বাস্তবানুগ।
আসুন, আমরা একটি স্মৃতিস্তম্ভ
স্থাপন করি
যা কারোই বিরক্তির কারণ হবে না।
আমরা স্মৃতিস্তম্ভের পাদমঞ্চে
ফুলের চাষ করবো
এবং নগর পিতাদের
অনুমতিক্রমে
আমরা একটা ছোট্ট বাগান সাজাবো
যেখানে এসে আমাদের শিশুরা
পিটপিট করে
বিশাল কমলা রং সূর্যের
দিকে তাকাবে
এবং তাদের ঊর্ধস্থিত মানবমূর্তিটিকে
ভেবে নেবে সুবিদিত
কোন চিন্তাবিদ
সংগীতকার অথবা সেনানায়ক।
আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি পাদমঞ্চে
প্রতি সকালে
ফুল ফুটবে।
আসুন, আমরা একটি স্মৃতিস্তম্ভ
স্থাপন করি যা কারোই
বিরক্তির কারণ হবে না।
এমনকি ট্যাক্সি চালকেরাও এর রাজসিক
ছায়ারেখাকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখবে।
বাগানটি পরিণত হবে মেলামেশার আখড়াতে।
আসুন, আমরা একটা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি,
আমরা আমাদের কাজের পথে এর পাদদেশ
দ্রুত অতিক্রম করে যাব
বিদেশিরা তার নিচে দাঁড়িয়ে
তাদের ছবি তুলে নেবে,
রাতে ফ্লাডলাইটের চোখ-ধাঁধানো আলোয়
আমরা এটিকে চমকের ঘোর পরিয়ে দেব।
আসুন, আমরা মিথ্যার উদ্দেশে
একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি।
মুজিব রহমান: কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক