You are currently viewing জিওং হো-সেউং-এর দশটি কবিতা > মুহম্মদ ইমদাদ

জিওং হো-সেউং-এর দশটি কবিতা > মুহম্মদ ইমদাদ

জিওং হোসেউং-এর দশটি কবিতা

 তর্জমা : মুহম্মদ ইমদাদ   

 

[জিওং হো-সেউং (Jeong Ho-seung) সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি। জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৫০। বর্তমানে প্রেরণাদায়ী বক্তা হিসেবে প্রায়ই আমন্ত্রিত হন জীবন, প্রেম, বেদনা, আশা ও মৃত্যু নিয়ে কথা বলবার জন্য। তাঁর বইগুলি : Sorrow to Joy (1979), Jesus in Seoul (1982), Sunrise Letter (1987), The Stars Are Warm (1990), The Unshakable Reed (1991), Die in Love (1997), Because I Am Lonely, I Am Human (1998), When Tears Come, Take the Train (1999), The Person I Love , For This Short Time (2004), Embrace (2007), The Cost of Rice (2010), Wayfaring (2013), To the Daffodil (2015), A Letter Not Sent (2016) – bilingual (English and Korean), Though Flowers Fall I Have Never Forgotten You (2016)-bilingual (English and Korean), I Refuse Hope (2017)]

 

ড্যাফোডিলের প্রতি 

 

কাঁদো না।

একা হওয়া মানে মানুষ হওয়া।

বেঁচে থাকা মানে একাকিত্ব খাওয়া।

যে ফোনকলটি আসবে না

তার জন্য বেহুদা অপেক্ষা করো না

তুষার-ঝরা পথে হাঁটো।

বৃষ্টিভেজা পথে হাঁটো।
একটা কালোস্তন লংবিল তোমাকে দেখছে তার

বুনো বিছানা থেকে।

কখনো কখনো ঈশ্বরও একা। তিনি কাঁদেন।
পাখিরা ডালে বসে থাকে—কারণ তারা একা।

তুমিও বসে আছো নদীর কিনারে—কারণ তুমি একা।

পাহাড়ের ছায়া প্রতিদিন একবার

গ্রামের দিকে নেমে আসে—কারণ পাহাড় একা।

ঘন্টাগুলি বারবার বেজে ওঠে—কারণ ঘন্টা একা।

 

 

মরার জন্য প্রিপারেটরি ইশকুল

 


একটা রাস্তা থেকে জেগে আমি হাঁটি আরেক রাস্তায়।

দেখি একটা ছোট পাখি বসে আছে।

তার কাছে যাই, মাথা নত করি আর হাঁটু গেড়ে বসি

পাখি আমার হাঁটুতে ঠুকর দেয় আর বনে উড়ে যায়

আবার আমি

রাস্তা থেকে জেগে হাঁটি আরেকটা রাতের রাস্তায়

দুইটা তারার মাঝে আরো কত তারা

দুইটা গাছের মাঝে আরো কত গাছ

চাঁদ লাল হয় স্বর্গ আর পৃথিবীর মাঝে

তোমার-আমার মাঝে কেউ নাই।

 

এটা খুব ভয়ংকর রাস্তা।

চেয়েছিলাম তোমার-আমার মাঝে ফুটুক ক্ষমার ফুল
কিন্তু না, ঝুলে আছি দেখি শুধু ক্রোধের জামরুল

বনে যাওয়ার আগে আমার জরাজীর্ণ হাঁটুতে

ঠুকর দিয়েছিলো যে-পাখি

সেও কখনো মুখ দেয় না এই জামরুলে

আবার আমি রাস্তা থেকে জেগে

হাঁটি একটা ভোরের সড়কে

তারাদের জন্য কৃতজ্ঞতার হাসি—

দূর করেছে আমার আঁধার

এবং সবার আগে, রাস্তার

ঘাসের জন্য কৃতজ্ঞতার অশ্রু

আদর করেছে আমার পা দুইটারে

যখনই বের হয়েছি আমি কোনো দীর্ঘ ভ্রমণে।

 

ক্ষমার চেয়ার

 

এই গ্রহে

দাঁড়ায়ে আছে একটামাত্র চেয়ার, ক্ষমার।
পরম নিঃসঙ্গতার একটা চেয়ার,

এই চেয়ারে যে বসে

সে-ই ক্ষমা করে

তাকে ক্ষমা করে সবাই,
এই চেয়ার সেই চেয়ার না

যেখানে, সূর্যাস্তে, ক্ষুদ্র এক তারার উপর বসত

সেন্ট এক্সপেরির ‘ছোট রাজপুত্র’,

এই চেয়ার সেই বিশ্রী কাঠের চেয়ার না

যেটা বানিয়ে ছিলো ভেন বেওবজেং

যখন সে একা থাকত তার কুঠিরে, ওডাই পর্বতে
কিন্তু একটা ছোট চেয়ার—

একটা পেরেক বের হয়ে-থাকা চেয়ার

যাতে তুমি বসো কোমর একটু উঁচু করে

এবং যতবার বসবে, ক্ষমার ওই চেয়ার থেকে

বের হবে একটা কান্নার আওয়াজ—
যে-কান্না কেউ কেঁদেছিলো

তারপর চলে গেছে অন্যকোনো নক্ষত্রের দেশে

 

নোট : ১. ফরাসি লেখক ও সেনাবৈমানিক সেন্ট এক্সপেরি রচিত দ্য লিটল প্রিন্স বা ছোট রাজপুত্র একটি ছোট উপন্যাস। ২. ভেন বেওবজেং—একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও দক্ষিণ কোরিয়ান লেখক।

 

যে লোকগুলোরে আমি ভালোবাসি 

 

আমি তাদের ভালোবাসি না—যাদের ছায়া নাই।

আমি তাদের ভালোবাসি না—যারা ছায়া ভালোবাসে না।

আমি তাদের ভালোবাসি—যারা গাছের নিচে ছায়া হয়ে আছে!

ঝকঝকে কিরণ দিতে সূর্যালোকেরও দরকার ছায়া

গাছের ছায়ায় বসে পাতার ফাঁকে সূর্যের আলো—
তখন কী অপরূপ পৃথিবী!

 

আমি তাদের ভালোবাসি না—যারা অশ্রু ভালোবাসে না।

আমি তাকে ভালোবাসি—যে হয়েছে অন্যের অশ্রুফোঁটা!

অশ্রু ছাড়া আনন্দও পূর্ণ হয় না।

চোখের পানিই তো গড়ে তোলে ভালোবাসা।
গাছের ছায়ায় বসে কেউ মুছে দিচ্ছে কারো চোখের পানি

কী নির্জন সুন্দর

এই দৃশ্যটি!

 

 ঘাসের পাতারও ক্ষত আছে

 

ঘাসের পাতারও ক্ষত আছে

ক্ষত আছে পাপড়িরও!

মাঠের পথে হাঁটি

যে পথে তুমি-আমি হেঁটেছি একদিন

যখন সেই পথের ধারে বসে

তাকাই সূর্যাস্তের আভা দেখতে

তখন ঘাসের আহত পাতাগুলি তাদের হাত নাড়ে

 

যে পাপড়ির অনেক-অনেক ক্ষত

সে-ই ছড়ায় সবচেয়ে মধুর গন্ধ।

 

 পাখির বিষ্ঠা

 

আমার চোখে পড়ল পাখির বিষ্ঠা।

জীবনে এই প্রথম আমি

পাখির বিষ্ঠা দিয়ে ধুয়ে নিলাম চোখ।

ফলে শেষ হলো আমার

মানুষের দৃশ্য দেখা।

পৃথিবীতে মানুষের দৃশ্যটিই

দেখতে চেয়েছিলাম আমি

যা আসলে দরকার ছিল না দেখার।

ধন্যবাদ।

 

 পাখির বিষ্ঠা

 

হেঁটে যেতে যেতে

মাটিতে পাখির বিষ্ঠা পড়ে আছে দেখে

ভালো লাগে। মনে হয় হৃৎপিণ্ড

থেকে ঝরে গেছে ব্যথা।

যেহেতু মানুষের পথের মধ্যে সুন্দর একটা পথ আছে

যেখানে পাখিরা তাদের বিষ্ঠা ফেলে যায়

সেই পথ ধরে হেঁটে আজ

আমি আবার একজন সুন্দর মানুষ হলাম।

 

 পাখির বিষ্ঠা

 

আমার খাদ্য আমি খাওয়াই পাখিরে

কারণ আমি ভাগ বসাই পাখির খাবারে!

পথহীন পথ ধরে হেঁটে

আমি কতটা ক্ষুধার্ত

সেটা কোনো বিষয়ই না

আমার সব খাবার আমি খাওয়াই পাখিরে

কারণ আমি জীবনভর ভাগ বসাই পাখির খাবারে!

আমার দেয়া খাবার খেয়ে পাখি

আকাশের অনেক উঁচুতে ওড়ে, উড়তে উড়তে হাগু করে

তার হাগু এসে পড়ে মাটিতে

পাখিরা আকাশে হাগে না

শেষমেশ তারা মাটিতেই হাগে

‘মানুষের পথটি সুন্দর’—বলার আগে

অবশ্যই এই পথে থাকতে হবে পাখির বিষ্ঠা

আমি যেন এ পথেই হেঁটে যাই

কারণ আমি সুন্দর হতে চাই।

 

 আত্মপরিচয়

 

কানই আমার মুখ

মুখই আমার কান।

সকালে জেগে

যখন আমার মুখের দিকে তাকাই

দেখি, মুখের সাথে লেগে আছে কান

কানের সাথে লেগে আছে মুখ।

 

তাই এখন আমি

কান দিয়ে বলি

আর মুখ দিয়ে শুনি

যখন আমি হাসি

কান দিয়েই হাসি

মাঝে মাঝে আমার হাসি দেখে

পাইন গাছে বসে থাকা পাখিরাও হাসে

 

আমি কোথায় যাই

কার সাথে মিশি

ব্যাপার না সেটা

আমি কথা বলি কান দিয়ে আর মুখ দিয়ে শুনি

পাখিদের গানে আমি কথা বলি

আর শুনি সবার কথা

যেন আমি শুনছি পাখিদের

যারা গান-গাওয়া!

 

 

 প্রথম তুষারে পায়ের ছাপ হিসেবে পাখিদের লেখা একটি কবিতা

 

আমি কখনোই ফিরব না

কখনোই ডানা মেলব না

ফিরে আসব না সেই গ্রামে

যেখানে মানুষ থাকে।

আর কখনো

মানুষের নোংরা দৃশ্যের অংশ হব আমি

 

যদিও প্রথম তুষারের ভিতর দিয়ে কর্নেলিয়ান চেরি

আলতো করে দেখায় তাদের লাল স্তন

আর আমার অপেক্ষা করে।

অনেক-অনেক দূর থেকে আমি আর

উড়ে যাব না মানুষের হৃদয়ে

যতই অপেক্ষা করুক তারা

আমি আর গান গাইব না

এখন আমি উড়ব সেই দেশের দিকে

যেখানে কোনো জীবিত বা মৃত নাই

যেখানে ফিরে যাওয়ার কোনো স্থান নাই

যেখানে ফিরে যাওয়ার কোনো কাল নাই

 

আর আমি বলব : চুপ করো, মানুষ, একদম চুপ!

********************************