জসিম মন্ডল তরুণদের কাছে অনুকরণীয় ছিলেন।
নূরুচ্ছাফা ভূঁইয়া
চটগ্রাম বন্দরে চাকুরির সুবাদে ট্রেড ইউনিয়নে হাতখড়ি। শুরুতে রেল, ওয়াপ্দা, পরিবহন, স্টিলমিল, জুট, টেক্সটাইল, ট্যানারি, সুগার হোটেল,বেকারিসহ সকল ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সাথে পরিচয় হয়। খুব কম সময়ের মধ্যে বিরাট একটা সুযোগ এলো ১৯৮০ সালে, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো চট্টগ্রামে। সম্মেলনে নানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, ৪ দিনে সারা দেশ থেকে আগত ট্রেড ইউনিয়ন নেতা/কর্মীদের সাথে আলাপ-পরিচয় হয়। ঠিক অনেকের মত রেল শ্রমিকনেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডলের সাথেও পরিচিত হই। সেই সময়টা ছিল তরুণদের জন্য স্বপ্ন দেখার আবেগের সময়। ছাত্র ইউনিয়ন করা অনেক তরুণের মাঝে শ্রমিক ও মেহনতিদের সাথে কাজ করার উৎসাহ লক্ষ্যণীয় ছিল।
আমাকে কম বয়সে ট্রেড ইউনিয়নের সাথে কাজ করতে দেখে প্রবীণ শ্রমিক নেতারা বিশেষ স্নেহ মাখা অনুপ্রেরণা দিয়েছি। ঠিক তেমনি কমরেড জসিমউদ্দিন মন্ডলও উৎসাহের সহিত বলেছিলেন– ভালো, কাজ করে যাও। তবে বন্দর তো খুব কঠিন জায়গা।
তিনি বক্তব্যের মাধ্যমে শ্রমিকদের হৃদয়ে নাড়া দিতেন পারতেন। পীরের দোয়া, তাবিজ পড়া পানি দিয়ে শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না, সংগ্রামেই মাধ্যমে সমাজটা বদলাতে হবে, সমাজতন্ত্র আনতে হবে। লড়াই ছাড়া মানুষের ভাগ্য বদলানো সম্ভব নয়। সেই থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মেলনে, সভা সমাবেশে বহুবার অতিথি হয়ে তিনি চট্টগ্রামে এসেছেন। খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে, বহুবার আলাপ হয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনের নানান অভিজ্ঞতা নিয়ে মত বিনিময় হয়েছে।
কমরেড জসিম উদ্দীন মন্ডল খুব কম বয়সে বৃটিশ রেলওয়ে কোম্পানিতে চাকুরী নেন। চাকুরির মাধ্যমে তিনিও রেলশ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হোন। তখন বন্দর ও রেল একই সংস্থার অধীনে ছিল। তখন প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা, পশ্চিম বঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী, কমরেড জ্যোতি বসু ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে রেলে ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত হোন। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হলে পূর্ব বাংলায় রেল ও জাতীয় ভিত্তিক শ্রমিদের সংগঠিত করতে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে নতুনভাবে কাজ শুরু করেন। জসিম উদ্দীন মন্ডল এই দেশে শ্রমিক আন্দোলনে মাধ্যমে বাম আন্দোলনের জাতীয় নেতা হয়ে উঠেন। তিনি একটি বইও লিখেছিলেন “জীবনের রেলগাড়ি” নামে। তিনি বাম আন্দোলনের তরুণ কর্মীদের কাছে অনুকরণীয় একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী। শ্রেণীর প্রতি সারাজীবন দৃঢ় অবস্থান ছিল তাহার। বাম আন্দোলনে উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আগতদের শ্রেণী সংগ্রামে পরিক্ষিত করে নেতৃত্বে আনা ক্ষেত্রে তিনি কঠোর ছিলেন। পাবনার আঞ্চলিক ভাষায় মিশানো বক্তব্যে শোষণের স্বরুপ তুলে ধরতেন। শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতি মানুষের মুক্তির সন্ধান দিতে নিজের ও পরিবারের কষ্টদগ্ধ জীবনের কথায় শ্রোতাদের উজ্জ্বীবিত করতেন। ৮০-৯০ এর দশকে কমরেড জসিম মন্ডলের জ্বালাময়ী বক্তৃতার ক্যাসেট জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ৯০-এর পর বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন ও নিজের পার্টিকে বিলুপ্ত কারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
এই দেশের শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতি মানুষের মুক্তির বিপ্লবী কণ্ঠস্বর ছিলেন কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল। তার স্মৃতি অমর হোক, লাল সালাম কমরেড জসিম ভাই ।
====================