জন্মদিনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা নাট্যকার, কবি ও অনুবাদক
বদরুজ্জামান আলমগীর
নতুন পলিমাটির উর্বরতা যেমন অতুলনীয় তেমনি মাটি ও মানুষের স্পন্দন নিয়ে জেগে থাকা লড়াকু মননশীলতাও সমাজ ও রাষ্ট্রের পাহারাদারের ভুমিকা পালন করে। নাট্যকার, কবি ও অনুবাদক বদরুজ্জামান আলমগীর তেমন এক অপ্রতিরোধী ও নিরাপোষী মনন যিনি উচ্চকন্ঠে কদর্য চাটুকারিতাপূর্ণ বর্তমানের বিপরীতে কালাপাহাড় হয়ে দাঁঁড়িয়ে আছেন। সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে উদ্বেল জনস্রোতের ঢেউ হয়ে যিনি আয়ত্ত্ব করেছেন শোষকনন্দিত ও প্রতিপালিত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিপরীতে ডায়ালেক্টিকের ব্যাকরণ। সামরিক শাসনোত্তর বাংলাদেশের প্রতিবাদী নাট্যান্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে। চাটুকার, আপোষকামীরা দলদাসে পরিণত এবং সুবিধাবাদীরা নানামুখী ধান্ধায় লিপ্ত হলে গৌরবদীপ্ত নাট্যান্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে। তবে জেগে থাকে একজন বদরুজ্জামান আলমগীর।
নাটক নিয়ে আলোচনা, বাংলাদেশের নাট্যান্দোলনের গতিপ্রকৃতি, সামরিক শাসনোত্তর বাংলাদেশে থিয়েটার আন্দোলনের মুখ থুবড়ে পড়া, গ্রাম থিয়েটারের অপমৃত্যু, নাটকে লোকজ আলেখ্যের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে বদরুজ্জামান আলমগীরের যে গভীর জ্ঞানের পরিচয় পেয়েছি তাতে আমার ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, সেলিম আলদিন উত্তর বাংলাদেশের থিয়েটার আন্দোলনের পুরোধা নাট্যকার হলো বদরুজ্জামান আলমগীর। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে বদরুজ্জামান আলমগীর নিজের একটি পরিষ্কার অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের শিক্ষকগণ তার নাটকের রেফারেন্স ব্যবহার করছেন, বিভিন্ন থিয়েটার মঞ্চস্থ করছে তার লেখা নাটক এবং দেশের বিদগ্ধ নাট্যজনেরা তার নাটকের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। তার রচিত ও অভিনীত নাটকগুলো হলো: নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে, পুণ্যাহ, আবের পাঙখা লৈয়া, জুজুবুড়ি, চন্দ্রপুরাণ, পানিবালা, যোজনগন্ধা মায়া, বাঘ, পরীগাঁও, ইলেকশন বাজারজাতকরণ কোম্পানি লিমিটেড, এক যে আছেন দুই হুজুর, পিঁয়াজ কাটার ইতিহাস, ডুফি কীর্তন, ভাসিয়া যায় লাল গেন্দাফুল ইত্যাদি।
নাটক অন্তপ্রাণ বদরুজ্জামান আলমগীর নিজের বিচরণ ক্ষেত্রকে ক্রমেই বিস্তৃত করে চলেছেন কাব্যচর্চায় ও বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদে। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো: প্যারাবল : হৃদপেয়ারার সুবাস। কবিতা : পিছুটানে টলটলায়মান হাওয়াগুলির ভিতর। নদীও পাশ ফেরে যদিবা হংসী বলো। দূরত্বের সুফিয়ানা। ভাষান্তরিত কবিতা : ঢেউগুলো যমজ বোন। ছিন্নগদ্য : সঙ্গে প্রাণের খেলা।
বদরুজ্জামান আলমগীরের সৃজনশীলতার বিস্তৃত ক্ষেত্রে হিরন্ময় হয়ে জ্বলজ্বল করছে তার নিজস্ব ঘরানার নাট্য অভিজ্ঞান। আজকের বিরানপ্রায় বাংলা নাট্যজগতে তার নাটক বক্তব্য, ভাষার বৈচিত্র্য, উপস্থাপনের কলাকৌশল, সর্বোপরি আঙ্গিকগত বিন্যাসের নৈপুণ্য তাকে অনন্যসাধারণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। এখন তার সময় বাংলা নাট্যজগতে নেতৃত্ব দেয়ার, নতুনধারায় মিইয়ে পড়া থিয়েটারকে পরিচালনা করা। চিরন্তন এই কুরুক্ষেত্রে তার আগমনের এই দিনে জানাই অফুরান শুভকামনা এবং প্রত্যাশা করি তার গতিময় সৃষ্টিশীলতার সবল বিকাশ।