You are currently viewing চোখ ও একটি চশমা || খ্রীষ্টফার পিউরীফিকেশন

চোখ ও একটি চশমা || খ্রীষ্টফার পিউরীফিকেশন

খ্রীষ্টফার পিউরীফিকেশন

চোখ ও একটি চশমা

প্রতিদিন পড়ন্ত-বিকেলে খোলা আকাশের নীচে চিলতে উঠানের এক কোণে হাতল-ভাঙ্গা চেয়ারটাতে ব’সে টানা টানা শ্বাস নেন নীলু মাস্টার। আগের সেই মুক্ত বাতাসের আমেজ মাখানো মিষ্টি ছোঁয়াচটা এখন তাঁর বুকটাকে ঠাণ্ডা ক’রে দেয় না। অসীম আকাশের দিকে তাকালে রঙিন কল্পনার ফানুস উড়তে এখন আর দেখা যায় না। এখন যে দিকেই চোখ যায়, তিনি দেখতে পান, রাশি রাশি জিজ্ঞাসার চিহ্ন কিল বিল করছে। যেখানেই তিনি পা রাখেন, কেমন একটা বন্ধুর-পৃথিবীর অস্তিত্ব স্পষ্ট টের পান পায়ের নীচে। অথচ হাতের আঙ্গুলগুলো এখনও আগের মতই নাড়া চাড়া করতে পারছেন মুক্তভাবে। শাদা খড়িমাটির গভীর আঁকাবাঁকা চিহ্ন কালো বোর্ডের উপর এখনও অনায়াসে বসাতে পারছেন। ছেলে-মেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে হাত নেড়ে পড়াতে গিয়ে মাঝে মাঝে থমকে যান, এক কালের বিশিষ্ট শিক্ষক সবার পরিচিত ব্যস্ত চেহারার মানুষটি, নীলু মাস্টার।

বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত অথচ কী তাঁর চাহনির তেজ! অগণিত ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে অনুসন্ধিৎসু চাহনি এখনও খোঁজেন প্রকৃত মেধাবী ও অধ্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের। অবিশ্বাস ও সন্দেহের মিহি দানাগুলো দিন দিন জমাট বেঁধে মস্তবড় ভারী-পাথর হয়ে চেপে ধরেছে যেন এখনকার নীলু মাস্টারের বুকের হাড়গুলোকে! না কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না। তাঁর স্কুলের এক কালের গৌরব সেই কৃতি সন্তান মাণিক, সাগর, আলো আর মায়া জন্ম নেবে না এই জালিয়াতির যুগে। না কোথাও না! শিক্ষার প্রকৃত মান, প্রকৃত মর্যাদা আজকের সমাজের পায়ের নিচে, আস্তাকুঁড়েই যেন নিক্ষিপ্ত!

লোকজন বলে, নীলু মাস্টার এখন আর স্পষ্ট দেখতে পান না। চিন্তাশক্তিও তাঁর লোপ পাচ্ছে ক্রমাগত এবং খুব দ্রুত গতিতেই। হয়তোবা নীলু মাস্টার অবসর নেবেন তাড়াতাড়ি এবং তাঁর স্থলে একজন যুবক, তাঁরই প্রিয় বিদ্যায়তনে ‘মাস্টার’ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এসে দাঁড়াবে।

শুকনো দুটো হাঁটুতে ভর ক’রে নিজের ঘরটার দিকে এগিয়ে যান একজন চিন্তামগ্ন মানুষ, অর্থাৎ একটা সাধারণ হাইস্কুলের পুরনো মাস্টার। যেখানে ব’সে তিনি মাণিক, সাগর, মায়াকে পড়িয়েছেন, শাসন করেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, সেই বেড়া চালে আবৃত; আবার কোথাও অনাবৃত স্কুল-ঘরটি এখন ইট সুড়কি সমৃদ্ধ দালানে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে ছেলে-মেয়েদের সংখ্যাও। দীর্ঘ এই শিক্ষকতার জীবনে কত শিক্ষার্থী এল আর কত যে গেল! শিক্ষক-শিক্ষিকাও বদলি হয়েছে বিস্তর। পুরনো চেয়ার-টেবিল-ব্ল্যাকবোর্ড বদলিয়ে নতুন করা হল কতবার! কত খড়িমাটি এখানে নিজেদের আত্মাহুতি দিয়েছে। সেই সাথে দিনের পর দিন, এই একটি মানুষ পলে পলে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন নিরন্তর! কিন্তু অপসারিত বা অদৃশ্য হননি কখনও! বহাল তবিয়তে এখনও আঁকড়ে ধ’রে আছেন নিজের সোনালী অতীতকে!

নীলু মাস্টার এখন বইয়ের কারাগারে নিজের চশমাটা হাতড়ে মরছেন! পাশের ঘর থেকে রুগ্না মহিলার কাশির-শব্দ সংমিশ্রিত মৃদু আর্তনাদ ভেসে আসছে। নীলু মাস্টার জীর্ণ-ধূতির খুঁটে তাঁর চশমার ঘোলা-কাঁচ দু’টো মুছে পা বাড়ান পাশের ঘরের দিকে।

ঔষুধের চামচ এখন যার মুখে ঢেলে দিচ্ছেন নীলু মাস্টার, তিনি তাঁর স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানের জননী, মেরী। সংসারের অভাব-অভিযোগ টলাতে পারে না নীলু মাস্টারকে। ঘুষ, উৎকোচ কিংবা পরীক্ষায় নকল করা … শব্দগুলো নীলু মাষ্টারের অভিধানে নেই। আর নেই বলেই নীলু মাস্টারের সংসারে নিত্য টানাপোড়েন। রোগব্যাধি।

চশমাটা তাঁর অনেক দিনের পুরনো। গোল সাইজের কালো ফ্রেমের উপর বসানো মোটা কাঁচ দুটো। দু’কানে ধরাধরি ক’রে নাকের উপর ব’সে থাকে অনেক দিনের পুরনো এই চশমাটা। এর কাঁচ ঝাপসা এবং দু’ পাশের দু’ বাহু অনেকটাই নড়বড়ে এবং ঢিলে হয়ে গেছে। অথচ অতি জরুরী এই অবলম্বনটি বদলান সম্ভব হয়নি এ যাবত।

কোন কিছু লক্ষ্য করার আগে কিন্তু এই চশমাটি তাঁর চাই। এটাই তাঁর দূরবীক্ষণ এবং অণুবীক্ষণ যন্ত্র! আবার এটাই রাতের ঘোর অন্ধকারে সুন্দর কাজ করে! পরীক্ষায় নকল ধরতেও বেগ পেতে হয় না; যদি চশমাটা তাঁর চোখে সাঁটানো থাকে।

কিন্তু ইদানীং নীলু মাস্টার নকল ধরেন না! শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেন। আবার কখনও সহ্য করতে না পেরে, নিঃশব্দে পরীক্ষার হল ছেড়ে বেরিয়ে যান!

চিনচিনে একটা ব্যথা ওঠে মাঝে মাঝে। কখনও বুকে। আবার কখনও পিঠে। শ্বাস নিতেও বেশ কষ্ট হয়। চোখে চশমাটা সেঁটে নিজের চেহারা দেখেন, চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। নাহ্! কোন পরিবর্তনই চোখে পড়ে না তাঁর। অথচ আশে পাশে অকালে কী সব সাংঘাতিক পরিবর্তিত দৃশ্য চোখে পড়ে! অশিক্ষার, কুশিক্ষার নৈরাজ্য! সমাজটার দেহের সর্বত্রই মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের তুমুল ছড়াছড়ি! রাহাজানি, লুট, ধর্ষণ ইত্যাদি ব্যাপক অরাজকতা গোটা সভ্যতাকেই উল্টে দিচ্ছে যেন! নীতি-নৈতিকতা দ্রুত উজার হয়ে যাচ্ছে! শিক্ষার নামে কুশিক্ষা, নগ্নতা, বিচারের নামে অবিচারের, ব্যভিচারের বীভৎস চিত্র নীলু মাষ্টারের চশমার কাঁচে ধরা পড়ে!

নেই! অথচ কেউ নেই! এমন কেউ নেই, যে এসব যৌবনের শতদলকে প্রস্ফুটিত হওয়ার ডাক দেবে! কেউ নেই, যে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নামধারী যুবক-যুবতীদের একই পতাকা তলে জড়ো ক’রে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করবে।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নীলু মাষ্টারের পদধূলি এখন পড়ে না। হাঁপানি রোগের প্রকোপটাও তাঁর বেঁড়ে যায়। হাত-পা অস্বাবিকভাবে ফুলতে থাকে!

ইতোমধ্যে সবদিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল, বুড়ো নীলু মাস্টার অবসর নিয়েছেন। এবং অতি শীঘ্রই একজন যুবক, তাঁর খালি জায়গায় ‘মাস্টার’ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের স্যামনে এসে দাঁড়াচ্ছে!

এদিকে পাঁচ সন্তানের টানাটানির সংসারে রুগ্না স্ত্রীকে নিয়ে নীলু মাস্টার নিয়তির কক্ষপথে প্রবল ঘুরপাক খাচ্ছেন অবিরাম গতিতে।

অতি কষ্টে তিনি শেলফ থেকে রবীন্দ্রনাথ, বার্ট্রান্ড রাসেল, শেকসপিয়ার টেনে নেন বুকের উপর। এলোমেলো পৃষ্ঠা উল্টান দ্রুত। ডান হাতের জীর্ণ ক্লিষ্ট আঙুল নাড়াচাড়া করেন। তবে ব্ল্যাক বোর্ডে নয়! নিজেরই শুকনো বুকে কিংবা উত্তপ্ত চওড়া কপালের উপর।

বই-পাগল হিসেবে খ্যাত নীলু মাস্টারের লাইব্রেরিতে অতি যত্নে সাজান ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লেখক-কবিদের অনেক দুস্প্রাপ্য সংগ্রহ। দান্তে, টলস্টয়, এলিয়ট, ডিকেন্স, গোর্কি, হুইটম্যান, কাফকা, শেখ সাদী, কারেনিনা, মার্কেস, দস্তেয়ভস্কি, বিদ্যাসাগর, প্যারীচাঁদ, মাইকেল, বঙ্কিম, গিরীশচন্দ্র, মীর মোশাররফ, নবীনচন্দ্র, হাছন রাজা, লালন ফকীর, বিভূতি, মানিক, তারাশঙ্কর, নজরুল ও বলাইচাঁদ সহ আরও অনেক লেখক-কবিদের যতসব দুষ্প্রাপ্য অমিয়-সৃষ্টি! জীবনের অর্জন এবং সম্পদ বলতে, নীলু মাস্টার তাঁর সংগ্রহের এই বইগুলোকে অতি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন।

পুরো চারটি বুকশেলফ কয়েক দিনের মধ্যেই খালি হয়ে গেছে! স্ত্রীর ও নিজের ঔষুধ-পথ্য, পরিবারের সাতটি মুখের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো ক’রে কিছু দানা যোগাড় করার অন্য কোন উপায় না দেখে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় বড় ছেলেকে দিয়ে হাটে পাঠিয়ে দিয়েছেন এক কালে অস্বচ্ছলতার সাথে সংগ্রাম ক’রে ক’রে উপার্জিত সম্পদ মূল্যবান বইগুলো, সের দরে বিক্রি করার জন্য! কত টাকাই বা মিলবে! নীলু মাষ্টারের বড্ড দুঃখ, কেহই বুঝল না, এগুলো আসলে কী! ইচ্ছা ছিল তাঁর, বইগুলো এক সময় স্কুলের লাইব্রেরির জন্য সম্প্রদান ক’রে যাবেন তিনি। কিন্তু তা আর হল না! নিজের সদিচ্ছাকে দু’হাতে ঠেলে দিলেন তিনি, একান্ত পরিবারের কথা ভেবেই!

তিনি এক সময় স্কুল-কমিটির কাছে প্রস্তাব করেছিলেন, বইগুলো নাম মাত্র মূল্যে কিনে স্কুল-লাইব্রেরিতে উঠিয়ে আনার জন্য। কিন্তু তাতেও সাড়া মিলেনি! অবশেষে স্ত্রীর ও বড় ছেলের টানা পিড়াপিড়ি, সর্বোপরি পরিবারের কথা চিন্তা ক’রে, নিজের কাছে নিজেই চরম পরাজয় বরণ করেন ইদানীং কালের নীলু মাস্টার। হাটে বই নেয়ার দৃশ্যটি চশমা-সাঁটা চোখে দেখতে চাননি তিনি কিছুতেই! বড্ড দুঃখবোধের ভারে জর্জরিত দরিদ্রতার যূপকাষ্ঠে; নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রাণান্তিক সংগ্রামে লিপ্ত নীলু মাস্টার নামক অসহায় মানুষটার রোমাঞ্চকর পরিণতির শেষ দৃশ্যটা দেখে যাওয়ার বড্ড সাধ জাগে তাঁর মনে। তাই আশে পাশে হাতড়িয়ে চশমাটা চোখের সামনে তুলে দেখেন, সে এক অনির্বচনীয় মর্মান্তিক দৃশ্য! কী এক নির্মম অকথ্য ভঙ্গিতে, তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় বইগুলো বস্তায় ভরা হয়েছে! যেন কত যুগের স্তূপীকৃত ময়লা-আবর্জনা! দু’চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসা অশ্রুর ধারা চশমার কাচ ঝাপসা ক’রে দেয়! অথচ কত ত্যাগের বিনিময়ে তিলে তিলে তিনি তাঁর অতি প্রিয় এই বইগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। গড়ে তুলেছিলেন তাঁর এই ব্যক্তিগত লাইব্রেরি।

এতদিন তিনি বুকে আঁকড়ে ধ’রে রেখেছিলেন তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় বইগুলোকে! আদর ক’রে হাতে নিয়ে মলাটে চোখ বুলাতেন। জ’মে থাকা ধূলি সযত্নে মুছে দিতেন। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একনিষ্ঠ মগ্নতায় বইয়ের ভাষা আত্মস্থ করতেন। আহা! বই তাঁর কত আপন! নিজের লাইব্রেরির সবগুলো বই কতবার পড়া হয়েছে তাঁর, তা তিনি বলতে পারেন না। এই বই তাঁর সাথে কথা বলে! নীরবে, একান্ত নিভৃতে বইয়ের সান্নিধ্যে মগ্ন হয়েই এ যাবত নীলু মাস্টার তাঁর জীবন অতিবাহিত ক’রে এসেছেন! আর এখন? এখন তাঁর জীবনের বাকি দিনগুলো কীভাবে তিনি পার করবেন? নাহ্! বুঝল না! কেউ বুঝল না, তাঁর হৃদয়ে রক্তপাতের কী যন্ত্রণার কথা!

নীলু মাস্টার ও তাঁর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য স্কুল-কমিটির পক্ষ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করার জল্পনা চলতে লাগলো। এলাকায় বিভিন্ন গ্রামবাসীদের কাছে প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকেও সাহায্য চাওয়া হল। স্কুলের ছেলে-মেয়েরাও স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে এগিয়ে আসছে।

তো সময়ের পেন্ডুলামে নেই কোন স্থিরতা। ঢেউ ওঠে। ঢেউ ভাঙ্গে জীবন সৈকতে, প্রগাঢ়গতিতে। গভীররাতে পাশাপাশি দু’টো ঘরে, অদ্ভুত অপার্থিব নিস্তব্ধতা নেমে আসে নিপুণভঙ্গিতে! নীলু মাস্টার-মেরী দম্পতির পাঁচটি অপুষ্ট সন্তান, বিক্ষিপ্ত অবস্থায় গভীর ঘুমে অচেতন। নিজের বাড়ির সাবেক লাইব্রেরির সঙ্কীর্ণ পরিসরে নীলু মাস্টারের চশমা-সাঁটা চোখ এবং তারই পাশের ঘরে পাঁচটি সন্তানের জননী নীলু মাস্টারের সহধর্মিণী মেরীর যন্ত্রণাকাতর ক্লান্ত-চোখের চাহনি নিথর হয়ে আছে!

নীলু মাস্টার, তিনি নিজের সাথে কোনদিন আপোষ করতে পারেননি। দুঃখ-কষ্ট একান্তই আপনার। কারও প্রতি কোন অভিযোগ তাঁর ছিল কিনা বলতে পারি না। তবে এ সমাজটাকে তিনি মানুষ মারার একটা অত্যাধুনিক যন্ত্র হিসেবে নিশ্চয় জেনেছেন। যে সমাজ কেবলমাত্র নমস্কার আর সালামের বিনিময়ে নীলু মাস্টারদের যাবতীয় সখ ও সুখের পথ রুদ্ধ ক’রে রাখল, তাদের কাছে তিনি কী চেয়েছেন? আর কী’বা পেয়েছেন? তাঁর জীবনখাতায় দেনা-পাওনার হিসেব মিলাতে গিয়ে কি তিনি, নিজের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন? তাঁর নিজের সেই একটি পুরনো চশমা কী বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাঁকে দিল? নিশ্চয় তিনি অনেক বেশি দেখেছেন। অনেক বেশি জেনেছেন আর অনেক অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন। পরিশেষে তিনি নিজের প্রতি সমাজের দেয়া সম্মান এবং ভালোবাসার ঋণ, কড়ায় গণ্ডায় পরিশোধ ক’রে গেছেন!

হয়তো তাই একবার তাঁর স্ত্রী মেরীকে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাকে একদিন এমন কিছু জিনিস দেখাবো আমি, যা দেখে তুমি শুধু আশ্চর্য ও অভিভূতই হবে না, একদম অন্যরকম মানুষ হয়ে যাবে! শুধু সময় আসতে দাও। তুমি আর আমি এক চশমায় আমাদের দু’জোড়া চোখ রেখে সেদিন বলে যাবো,

এমনি ক’রেই জীবনের; বহু বছরকে পিছে ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার; পৌঁছে দিয়েছে মেলে।
ক্লান্ত শ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ; মাটি ভিজে গেছে ঘামে,
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা; কিনেছে অল্প দামে …।’

***********************