You are currently viewing চোখের নিচে হাতের তালুর দূরত্ব> ৫টি কবিতা : কো উন >ভাষান্তর> বদরুজ্জামান আলমগীর

চোখের নিচে হাতের তালুর দূরত্ব> ৫টি কবিতা : কো উন >ভাষান্তর> বদরুজ্জামান আলমগীর

চোখের নিচে হাতের তালুর দূরত্ব

৫টি কবিতা : কো উন
বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

 

বুড়ো চা ইল-মেন 

দক্ষিণ দিক থেকে সৈন্যরা ষণ্ডা পায়ে হান্টন নদীর
পাড় ঘেঁষা উত্তরের গ্রাম সুরিটজেতে হামলে পড়ে
ওরা মুহ্যমান একহাজার খড়ের ঘর পুড়িয়ে ফেলে।

সবাই মারা পড়ে, বেঁচে থাকে একজন- চা ইল-মেন
লোকটা বুড়ো আর থুত্থুরে ভাঙা শরীর।

সে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তার শ্মশান গ্রামটি দেখে।

হামাগুড়ি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে
একদম একা বুড়ো
কাঠের সিঁড়ির গোড়ায় বসে গলায় ঢালে একগ্লাস লাই।
তার পা দুখানি স্থবির- কোনভাবেই সরে না।

চারপাশে কিছু নাই, কেহ নাই
বুড়ো নিজে কেবল একটি কথার ধ্বনি- যা একটি
নিরর্থ আওয়াজ বৈ আর কিছু নয়।

Ko un : Old cha Il-man.

 

মাঙ্গুরি গোরস্থান 

যুদ্ধ পাবলিক গোরস্থানকেও ছেড়ে দেয়নি

মাঙ্গুরির বড় কবরখানা
সিউলের নাটবল্টু, সবকিছুর নারদ।
কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে
১৯৫০-এর সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ
এই মৃতদের পুরীও যুদ্ধের ময়দান হয়ে ওঠে।

ওই গোরস্থানে ছয় হাজার কবর
তারউপরই জাতিসংঘের সৈন্য বনাম কমিউনিস্ট
সেনার মধ্যে তুমুল যুদ্ধ বাঁধে
মৃতদের উপর গুলির বৃষ্টি নামে
মুখোমুখি সৈন্যরা একে অপরকে বেয়নেটে
ঝাঁজরা করে।

নিষ্প্রাণ সৈনিক, তাদের ছেঁড়াখোড়া শরীরের অংশ
কবরের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে,
তাদের অনেকেই সাদা, কালো কেউ কেউ
তারা মৃত- সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সৈনিক,
তারা মৃত- কমিউনিস্ট পক্ষের সৈনিক,
এখন কেবল ছিন্নভিন্ন টুকরা- কবরের ঘাসের উপর
পড়ে আছে।

পঁচাত্তর মিনিটের নলেনলে লড়াই
দুই পক্ষেরই তিয়াত্তরটি মৃতদেহ- মড়া
এই তো, জমা-খরচ-ইজা এটুকুই।

মাঙ্গুরি গোরস্থান আবার যেই কী সেই-
আগের কবরখানা।

Ko un : Manguri Cemetery.

 

ওকচেওন স্টেশনে ঝাড়ুদার 

বুসানমুখী লোকাল ট্রেনে বসার সিটগুলো শক্ত শক্ত
ওকচেয়নে ট্রেন দাঁড়ানো মাত্রই আমরা দেখি
কুঁজো লোকটি স্টেশন ঝাড়ু দিচ্ছে।

স্টেশন ঝকঝকে পরিস্কার
আঙিনায় থরেবিথরে গাঁদাফুল ফুটে আছে
সবই পরিচ্ছন্ন বিলকুল আশপাশ।

ট্রেন যতো যেভাবেই যাক
ঝাড়ুদার কোনদিকে চায় না, একদিশে
একশিশে স্টেশনের ময়লা সাফ করে যায়।

তার বাড়ি বলতে যে সামান্য ঢ্যাঁড়া
ওখানে তার মৃত স্ত্রীর একটি ছবিও নেই
স্টেশনের ভিতরটাই তার বাড়ির অধিক বাড়ি।

স্যামাউল এক্সপ্রেস ট্রেনটি যখন শাঁই করে চলে যায়
তার গতির তোড়ে বাতাসের ধাক্কায় একনিমেষের জন্য
চোখ তুলে সে তাকায়।

Ko un : The cleaner at Okcheon Station.

 

ফুল 

প্রাগৈতিহাসিক কালে, চল্লিশ হাজার বছর আগে
মানুষরা যখন গুহা থেকে বেরিয়ে ছোটখাটো
গাঁওগেরাম গড়ে তুলছিল
শিকারে গিয়ে ঘরের কর্তাব্যক্তিটি মারা পড়ছিল
জন্তুজানোর হাতে
ছেলে তার বাবার মৃতদেহ পিঠে বয়ে আনতো বাড়ি,
শোয়াতো একটি গাছের উপরে, খোড়লে
ফুল বিছিয়ে দেয়া হতো গাছের নিচে।

আজ চল্লিশ হাজার বছর পরে
উত্তর জেওল্লা ইউনিয়নের জিনানে একটি পরিবার বাড়ির চৌহদ্দিতে কবর খোঁড়ে
বাড়ির মানুষটিকে শোয়ানো হবে গোরে
যে মারা পড়েছে যুদ্ধে
চার বছরের একটি শিশু কবরে ফুল বিছায়।
মা-টি কাঁদে।

পাশে ফুল ক্রিসেন্থিমাম দোলে।

Ko un : Flowers.

 

ভালোবাসা 

আমি এক ধরনের ভালোবাসা দেখেছি
যা মা-বাবার ভালোবাসার চেয়ে বড়
বাবার ভালোবাসা তার সমান হতে পারে না
সন্তানের ভালোবাসাও তাকে পারে না ছুঁতে।

১৯৩০এ এই পদটি লিখেছিল এক চারণ কবি
যে উত্তর মাঞ্চুরিয়ায় হেমন্তের চিত্রপট
দাপিয়ে পরাধীন জন্মভূমির মুক্তির দিশায় আগুন বুনছিল চারদিকে।

নাম তার য়ি ইক-জে,
বয়স ২৭
এমন একটি কবিতা লিখে তার মায়া ডিঙিয়ে
অনর্গল এগিয়ে যাবার জন্য তখনও
ছোট মানুষটি সে।

সেই ছেলেটি যখন শত্রুর গুলিতে লুটিয়ে পড়ে
তার সতীর্থ দক্ষিণের মুক্তিসেনারা তাকে
পাহাড়ের পায়ের নিচে দাফন করে,
কবরের ফলকে কবিতার ছত্রগুলো এঁকে দেয় তারা।

আবার মা-বাবার চেনা ভালোবাসায় দিন গড়ায়
স্ত্রীর লেনদেনে বাচ্চাদের আদরে আহলাদের আবর্তনে
দুনিয়া ফের প্রথাগত ভালোবাসার ছকে ফিরে আসে।

একটি বাড়ির দেয়াল পাশের বাড়ির দেয়াল ছাড়িয়ে
উপরের দিকে উঠতে থাকে।

Ko un : Love.

|| এমন কবি হাল জমানায় আর কেউ আছেন বলে আমার জানা নাই। নিভৃত ভিক্ষু থেকে রোদ মাথায় অদম্য মিছিলকারী, ক্ষমতা রাজনীতির চোখে নৃশংস দাগী আসামী, সামরিক সরকার উচ্ছেদে মরণপণ লড়াইকারী, জেলে অন্তরীণ- সেইসাথে টইটম্বুর কবি এক কো উন। ইচ্ছুক গৃহী, একইসাথে দিগন্তছাড়ানো আন্তর্জাতিক কবি আর কোথায় পাবো আমরা? এমন নাছোড়, এতোটা উন্নাসিক কবি কো উন- তাকে পড়ে, আত্মস্থ করে আমাদের প্রাণ বল্গাহীন নেচে ওঠে, আবার তাঁরই নৃতাত্ত্বিক খনন পদ্ধতি আমাদের নির্বাণের তন্তুবায় তর্কাতীত স্থিতধী করে রাখে। অতি সাধারণ ও ঘরোয়া কিন্তু দুর্ধর্ষ- এমন কবি কে আছেন আমাদের কালে, আমি তার নাম বলি- কো উন; যিনি জন্মেছিলেন সাউথ কোরিয়ার গুনসানে উত্তর জেওল্লা অঞ্চলে ১৯৩৩ সনে- আজও তিনি কবিতার মুহুর্মুহু বিচ্ছুরণ ||