You are currently viewing চার্লস সিমিক: তোমার প্রয়াণে আমরা নতশির কবি

চার্লস সিমিক: তোমার প্রয়াণে আমরা নতশির কবি

তোমার প্রয়াণে আমরা নতশির কবি

৫টি কবিতা

চার্লস সিমিক

বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

চার্লস সিমিক ১৯৩৮ সনে মে মাসের ৯তারিখে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেইডে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভাঙাগড়া, জীবন করের ভিতর সিমিকের শৈশব কাটে। ইউরোপ ঘুরে অতঃপর  তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসে বাবার সঙ্গে মিলিত হয়ে এখানেই থিতু হন। সিমিক নিজের জবানিতেই বলেন, ১৫বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ভালোভাবে ইংরেজিও বলতে পারতেন না। স্থিতি ও পলায়নপরতা, স্বপ্ন ও আশাভঙ্গের দ্বৈরথ তাঁর কবিতার সামগ্রিক মানসে অভিব্যক্ত হয়ে ওঠে। সিমিকের প্রারম্ভ জীবনের রূঢ়তা, আক্ষেপ আর শৈশবহীন শিশুকালের মানসিক পীড়ন প্রথাগত কবিতার ছন্দে, কমনীয়তায় ঠিক ধরা যাচ্ছিলো না বোধ করি; ফলে জীবনের রক্তচক্ষু তিনি কবিতার গদ্যে বয়ান করেন। অ্যামেরিকান কবিতায় সিমিকের গদ্যের চাল  ইতিহাস তৈরি করে: কবিতায় এক অপ্রচল ধরন ও চাক্ষুষ তদন্তধর্মিতা তাঁকে পুলিটজার পুরস্কার এনে দেয়; তা ছিল চার্লস সিমিকের জন্য, তারো চেয়ে বেশি গোটা সাহিত্যে কবিতা মাধ্যমের জন্য এক অসামান্য ঘটনা।

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত চার্লস সিমিক মৃত্যুবরণ করেছেন কাল ৯জানুয়ারি, ২০২৩; কিন্তু আমাদের স্থির বিশ্বাস- কালের স্মৃতি লোপ পাবে না; সময় কবি চার্লস সিমিককে পরম মর্যাদায় তুলে রাখবে কবিতার গন্ধ, বোধ ও বিভায়।

 

প্রবীণ লোকটি আমাকে বললো

এখানে একসময় একটি সিনেমা হল ছিল-  নির্বাক ছায়াছবি দেখানো হতো। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- এক বৃষ্টিনিষ্ঠ সন্ধ্যায় কালো চশমা চোখে তুমি নিখিল দুনিয়া পরখ করছো।

একরাতে হলো কী- রহস্যজনকভাবে পিয়ানোবাদক লোকটা নাই হয়ে যায়। ঝড়সংকুল সমুদ্রের সাথে তখনও আমরা রয়ে গ্যাছি- তুফান আছে, কিন্তু সবকিছু নিঃশব্দ সুনসান। তারমধ্যে দীঘল, খাখা সাগরের তীরে বসে থাকে এক সুন্দরী নারী- আকুল তাকিয়ে দ্যাখে- আমি আমার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়ছি; আর তখনই মহিলার দু’চোখ বেয়ে নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে!

English Version: The Old Man Told me.

 

কসাইখানা

মাঝমাঝে আমি বেশ রাত করে হাঁটি

একটা বন্ধ কসাইখানার সামনে এসে দাঁড়াই।

দোকানের ভেতর একটা বাতি জ্বলে

মনে হয়, একজন সাজা পাওয়া আসামী

পালিয়ে যাবার জন্য সুড়ঙ্গ খনন করে।

আঙটায় ঝোলানো অ্যাপ্রন

কালশিটে হয়ে আছে রক্তের দাগ

কেমন একটা মানচিত্রের অসীম হয়ে আছে

শোণিতের কষে জমাট দেশ, মহাদেশ,

লৌরঙা নদী, বলকানো অলক্ত রুধির ঢেউ।

দেখি অনেকগুলো ছোরা

হিসহিস করে ঝলকায়, বুঝি গির্জার অন্তরে

জাগ্রত সম্ভ্রম- বেদী।

আর আছে একটি শক্ত কাঠের মোথা

যার উপর কচকচ করে হাড্ডি কাটা হয়,

সেখানে ছিটেফোঁটা রক্তের দাগও ছেঁচে তোলা

এই খাবার জায়গায় গভীর রাত্রির জরায়ু ছিঁড়ে

কে ডাকে- ভেউ, ভেউ!

Poem : Butcher Shop.

 

বসন্ত

পুরনো বরফের চাঁই সাঁটানো মাটির সমানে

কালো পাখি তিনজনা পালক খোঁটে যতনে,

যামিনী বসনে দোর খোলে আমার প্রতিবেশীনি

নাড়তে দেবে বরের জামা ওলো প্রাণ সজনী।

ভোরের বাতাস চমকে ওঠে মনখেলানির হাওয়া

আচমকা তার ম্যাক্সি ওড়ে ভুল করে দেয় ধাওয়া,

পারে না, পারে না পড়শীনি- পারে না জামা টাঙাতে

বন্ধুর ঘ্রাণে লজ্জা পেয়ে ভোরখানি সে রাঙাতে।

Poem : Spring.

 

রাতে পুরনো পোস্টকার্ড

আমি দমদেয়া এক দাবারুকে খোঁজ করছি, তার মাথায় থাকবে লাল পাগড়ি। আমি শুনি ওখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পিথাগোরাস, এবং সুশোভন ভারী এক বুজুর্গ- যিনি ঈশ্বরের কর্ণকুহরে নীরবতার রেওয়াজ শুনতে পান।

অসীমতা আর সময়ই দুই দরকারী  চাবি- প্রত্যেকেই তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশভাগ, কিন্তু এক ঝলক দেখামাত্র বোঝা যায়, ওই সমগ্রের যৌগ আসলে কিছু নয়।

ভাসমান, উজাগর মানুষের রাত, ঘড়ির চাবিআঁটা আত্মায় নিশিঘোর রজনী তাদের- সকলই হাজির যামিনী কারখানায়- আয়নামহল যার।

এখানে পিতলের গিনি সোনায় অলংকৃত একটি  হাত উত্থিত – হাতের পাঁচ আঙুল অঙ্গুলি নয়- বুঝি লকলকে কুকুরের পঞ্চমুখ- সবার আগে বিস্ফারিত ভয়াকুল দু’টি চোখ!

English Version: Old Postcard Of 42nd Street At Night.

 

শিরোনামহীন

আমাকে জিপসি যাযাবরেরা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল।আমার মা-বাবা সেখান থেকে তার ঠিক পরপরই পাল্টা চুরি করে ফেরত নিয়ে আসে। যাযাবরেরা আমাকে ফের চুরি করে ফেলে। চুরি,আবার ফেরতা চুরি- এভাবে বেশ কয়েকবার ঘটনাটি ঘটে। পথিমধ্যে, যে-ক্যারাভানে আমাকে নেয়া হচ্ছিল সেখানে সাকল্যে আমি মিনিটখানিক কালো স্তনের বোঁটা চুষে দুধ খেয়েছিলাম- ওটা ছিল আমার রাস্তার নতুন মা; পরে এসে পৌঁছি একটা ঢাউস খাবার ঘরে এক লম্বা টেবিলের কাছে- ওখানে আমি একটি চামচ দিয়ে নাস্তা সারি।

সেটি ছিল বসন্তস্য প্রথম দিবস। শুনতে পাই- আমার একজন বাবা বাথটবে গোসল করে, আর গান গায়; আমার আরেকটা বাবা জানালায় বসা একটি চড়ুইয়ের ছবি আঁকে যার শরীরে গরমাঞ্চলিক রঙের ছোপ আছে।

English version: A poem without a caption in the Prose Poetry Anthology- No Boundaries.

*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*

বদরুজ্জামান আলমগীর

নাট্যকার, কবি ও অনুবাদক

===================