গুচ্ছ কবিতা
সারাজাত সৌম
ইশারা
তোমাকে খু্ঁজতে খুঁজতে—
মরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।
যেন আল্লাহর অঙ্গুলিতে—
ফুটে উঠা পাথর!
ভাবছি, ছুঁয়ে দেখি—
ওইসব পাথরের শরীর।
কী আছে তার ভেতর!
সে এক মিহি কণ্ঠনালী
তুমি বললে, না—
আমাকে বাঁশি বানাও—
আর সবকটা দরজা।
যেখানে তুমি প্রবেশ করবে—
একান্তে বাজাবে সুর সারগাম।
মানুষে মানুষ মিললে—
বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে!
পাখি তার গান গায়—
গুপ্ত এক লাল ফুলে।
গাঢ় গভীর আমার চোখ—
পৃথিবী, পৃথিবী থেকে দূরে!
কাকে যে আব্বা ডাকি—
কাকে যে বলি আম্মা—
আমার কেন ঘোর লাগে।
কেন এমন লাগে আমার।
মরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে—
মনে হয় তুমি টান দিলেই—
ফেটে যাবে সমস্ত গুপ্ত ভাষার দানা।
খাবার হয়ে ছড়িয়ে পড়বে চারদিক—
এখানে ওখানে নানান ফুলের বাহানা।
সোনালি ঘুমের কাছে—
তুমি ছাড়া এমন ঘুম আমার
কে আর ঘুম পাড়াবে, বলো?
ও মুখে সোনা রঙ।
ও মুখে পাখি ডাকে।
আমি তার নাম লিখি—
ঠোঁটের উপর ঠোঁট ঘষে।
কালো মসৃণ পাথরে—
তোমাকে খুঁজতে এসে
মরার সমানে দাঁড়িয়েছি।
যেন আল্লাহর অঙ্গুলিতে
মায়াবী এক ইশারা—
প্রেমের উপর পাগল হয়ে নাচছে।
বাতাস
এটা বিশ্রী বাতাস, তোমার সাথে—
যখন অন্য কেউ থাকে
কিন্তু এমন না যে,
আমি জানি না—
কিভাবে এমন হয় প্রতিদিন
আমার ভাঙা গোল মুখ—
এখানে-ওখানে ছড়ানো
দৃশ্যগুলো অবাক!
কেউ তা দেখছেই না—
না, এটা ঠিক নয়—
দেখতে পাচ্ছি সব
ফুলে ভীষণ পোকা—
ডানার নিচে ছুরি—
আর কাঁচ
ওটা কেন তোমাকে কাটবে?
রক্তক্ষরণের কি মানে?
আমাকে উত্তর দাও—
সবাই মিলে বলো—
ওটা একটা ঘুর্ণি—
চাঁদের
বাতাস যখন জুয়া খেলে—
তখন আমি থাকবো না
কোথাও না—
অথচ সে নিজের সাথে হাঁটছে!
চারদিকটাই এমন!
যেন ছায়া—
দূর থেকে ডাক পাঠালো—
এদিকেই…
বাতাসের দোদুল্যমান চিঠিগুলো—
ভাসছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে!
ফুলের মতো ভারি—
তোমার বাড়ি—
সেও কি হাওয়ায় দুলে?
জানতে চাই না—
কিছু বলতেও চাই না আর—
পাখি কতোটা গভীরে ছুঁ মারে
তারপর কতোটা সে হয় লাল!
গাছ, আমি তার পাতায় মুড়ানো শীত—
কি আশ্চর্য—
কেউ আমাকে চিনছেই না!
ছিদ্র অনুভূতি!
আলোকে পিছনে ফেলে—
দ্রুত তুমি ঠিক হয়ে বসো
তুমি অসুস্থ খুব—
এটা চাইনা—
শুয়ে পরো
যেভাবে ইচ্ছা তোমার—
কিন্তু ব্যাথা—কিছুতেই সাড়ছে না!
সে নিজের মতোই অবাধ্য—
কিছু হয়তো ফেলে গেছো কোথাও
পুরনো জামাগুলো এখনও কি মলিন!
জন্ম থেকেই—
এরা আমাকে মেরে ফেলেছে
যদি জানতাম—
আমি গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরে দিতাম।
আসলে কোথাও কিছুই সমান হয় না—
চোখ, শুধু যাদুর মতো—
ব্যবহার করেছি
এতোকাল—
যখন আর কিছুই পারিনি
তোমাকে পাঠিয়েছি—
দূরে!
এমন না যে—
আলাদা করেছি কখনো
এটা হয় না—
হতে পারে,
ঋতুর ঝোপ থেকে কেউ
তার বাহাদুরি দেখাচ্ছে!
এটা আপরাধ—
একা—
আমার কিছুই হয় না
এটা শাস্তি এবং শান্তির জন্য—
কিছু ঋণ তোমার কাছে—
আমার গোপন গোয়ার্তুমি
যেন হঠাৎ—
ষাঁড়ের রেগে যাওয়ার মত
দেয়ালের ছবি থেকে—
নেমে আসার প্রস্তুতি
ভয় পেওনা—
স্বভাব ছেড়ে কেউ কখনো দূরে যায় না!
আমি মরে গেলেও ঠিকঠাক—
এবং ঠক ঠক করবো—
তোমার দরজায়…
ফুলের শব্দ
তুমি এক ঋতু—
বাগান সে কথাই বলছে
ফুলের শব্দের ভেতর
নিবিড়, একেকটি মথ
কোত্থেকে উড়ে এসে—
আবার হারিয়ে যাচ্ছে সেখানে…
ভাবছি—
সেইসব কথার মাথামুণ্ডু কী
কোথায় যাচ্ছে তারা
কোন গৃহে—
কোন দরজায়—
কোন হৃদয়ের ফাঁকে উড়ছে
এমন হাওয়ার ইশারা
এ কী মাথার কাজ—
এ কী সর্বস্ব ব্যথা—
এ কী ছোট্ট জামা—
লুকানো দেহের আবির
সেখানে তোমার হাত—
যদিও আমার কপাল
শিশুর মতো
তুমি যেমন ইচ্ছে—
এখন তাকে নিয়ে খেলতে পারো
দূরে, বীজ ফেটে যাওয়া শব্দ
তীব্র রোদের ফুল—
তুমি চিৎকার করো না
ভাবো, এটা তুমি এবং তুমিই
পৃথিবীর সমগ্র খেলনা—
আর দোহাই
কে বানিয়েছে তাকে?
তার রূপ—এমন রূপক
আমাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে
যেন তুমিই আমি—
আর আমিই তুমি
একটি প্রশ্নের মতো
আকাশের দিকে তাকিয়ে—
হঠাৎ নিশ্চুপ বেঁকে যাচ্ছি আমি
আমাকে বুকে নাও—
ওখানে এক বাগান
দ্যাখো, ফুলের শব্দে ভেতর
একটি মথ—
কেমন দিশেহারা হয়ে
ঘুরে ঘুরে নাচছে…