গুচ্ছ কবিতা / শামশেত তাবরেজী

গুচ্ছ কবিতা

শামশেত তাবরেজী

 

তনুস্মৃতি 

নিজে নিজে ঝরে গেলে আমার কি করা?

আর যদি রুলিটা পড়েই থাকে কানাচে

তারপরও কথা হচ্ছে

ছায়া সরে গেছে ব্যারাকের দিকে।

 

আমি তনুর কথাই বলছি,

ও তো নিজে নিজে ধুলায় লুটায় নাই,

পত্রিকা, টিভি-টহলবাহিনী যা খুশি লেখে,

যা কিছু দেখায় শুধু তনুকে ছাড়া

আবার এও তো কানে আসে

আসলে তো রেপড সাধের পৃথিবী, আমাদের এই পুরো পাড়া!

 

তাহলে যা সত্য জানি তাও কি কোনো মিথ্যার প্রকার!

ক্রস রেফারেন্সের নতুন জ্ঞানবিদ্যাপ্রকাশ!

ফিরি লঞ্চঘাটে, দেখি, খালাসীর ঘামের গন্ধ হিসাব করছে শ্রমিকদের নেতা–

কবন্ধ ভবনে গিয়ে রিপোর্ট করলে জানা যায় কৌতুকিনীর কাছে,

ফুলের বৃন্তচ্যূতি বিশেষ ঘটনা নয়,

এ হতে পারে যখন তুমি মেঘ দেখছ স্বর্গীয় ব্রিজের উপর থেকে

ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে।

 

যাও পীয়ো, হাত ভিজিয়ে নাও টাটকা রক্তে,

এ কি! তোমরা বুঝতে পারছ না কি বলছি আমি?

 

এটাও জানো না ঈশ্বর নিজেই পাগল, আমি তার ‘আমি’?

 

আর যদি বলো তনু ঝরে পড়ে আছে পাতাবাহার মহলে,

বোলো, এসেছিল ও-ই  নিজে মালা দিতে কাছিমের গলে!

 

চাঁদ 

 

অন্ধকার- শব্দ নাই, জুলুমবাজ- দুই হাতে

দুই বীজের ত্বক ছিলে বার করে ভিতর-শাঁস

পিঙ্গলায় গিঁট লাগায়– আমূল নেয় শয্যাতে,

চাঁদ নামে গাদ গড়ায়– উজ্জ্বলায় ফসফরাস–

 

ঝলসে যায়, ঝলসে যায় একচুলায় দুইজনে,

কে যে কার ঢুকবে আজ থলথলে গর্ভতে।

কি বেরোয় দেখবি কি আগোপন ক্রন্দনে,

উগড়ে দে সব চিনি তিনকালের শরবতে!

 

অন্ধকার- বন্ধ-দ্বার, সরিসৃপ রয় ঢুকে,

কার্বনের ব্যাকুল শ্রোত আশিশ্ন মগজ-তক্,

কর্তা কে? কর্ম কার? ধর্ম গায় চোঙ ফুঁকে:

পশ্চিমের হিব্রুঘোর আন্ধারেই মূল সড়ক!

 

তক্ষকের ডাক আসে, রে গরীব লাগছে ভয়?

জবান নাই- জিবকাটা- পূর্বাপর অবক্ষয়!

 

শিমুলতলা 

 

এই যে ঘৃণার দিকে

পথ গিয়েছে বেঁকে

সেথায় আদৌ শিমুলতলা নাই

আছে আকাশ ফিকে

আর কজনা পুলিশ থেকে থেকে

ঢেঁকুর তুলছে, পেরোচ্ছে আত্রাই

শেষ চিঠিটি বৌয়ের কাছে লিখে

কবর খুঁড়ে শুতে গেল

বাইরে পথটি রেখে

 

শিমুলতলায় শিমুলতলা নাই

যেমন বাংলাদেশ অন্য কোথাও

নিয়েছে আজ ঠাঁই