You are currently viewing গুচ্ছ কবিতা / রণজিৎ মল্লিক 

গুচ্ছ কবিতা / রণজিৎ মল্লিক 

গুচ্ছ কবিতা

রণজিৎ মল্লিক 

 

১. এমনি করেই 

 

এমনি করেই

বুনো শুয়োরের সঙ্গে সন্ধি করে করে

মানুষ শূন্য হয়ে যায় তার

বহুদিনের সঞ্চয়ের ভান্ডারে, ধীরে।

 

এ এক অদ্ভূত অবিমৃষ্যকারীতা

আত্মবিনাশের এই বিরামহীন প্রবণতা

নিদারুণ লোভ আর লালসার আহবানে

মানুষের এমন প্রবৃত্তি

তার সমূহ বুদ্ধি-বিবেচনা, শ্রেয়ের দাবি

সব মাটি করে দেয়, ম্লান হয়ে যায়

অপরাপর অনেক প্রাণের গোত্রীয় স্বভাবে।

 

যে বিপন্নতা ভর করে আছে চারিদিকে

নগ্ন হিংসার রক্তিম চাহনি, ক্রোধের বিন্যাস

কামাতুর জন্তুর মতো অন্ধ উন্মত্ততা-

এসবের পানে চোখ রেখে ঢেকে যায় মুখ

নিরুপায় চেতনায় বয়ে যায়

হিমশীতল অনুভব

হতস্তব্ধ হয়ে ওঠে আচানক বোধ

এমন বুনো শুয়োরের ছায়া দেখে

মানুষের ছায়ার ভেতর।

 

মানুষ এসেছে সরে বহু দূর

সভ্যতার সানুদেশ থেকে

অনেক বিচ্যুত সে আজ

তার উচ্চারিত প্রতিজ্ঞার প্রগারতা থেকে।

 

২. যারা ঝরে গেছে 

যারা ঝরে গেছে একদিন পোড়ো দিনে

শুধু ঝরতে হবে বলে

মানুষের উত্তর দিনের উজ্জ্বল আকাঙ্খায়

যখন নির্মলতর হবে সময়ের গতি

যখন মানুষ মাটির গন্ধ আর

ফুলের সৌরভ নিতে নিতে

ভুলে যাবে তার গাঢ় বেদনার কথা।

 

তারা মরে গেছে মনে হয় অনর্থক আজ

সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণ সঁপে দিয়ে

কেননা সেইসব ত্যাগের গল্প

অল্প-স্বল্প রয়েছে যা যাপনের প্রয়োজনে

ছিন্নমূল মানুষের উদ্বৃত্ত জীবনের মতো

সেইসব গল্পের তরে আমাদের শ্রুতি

নির্বাপিত হয়ে গেছে ঢের।

 

একদিন মানুষ তার স্বপ্নের সাগর কিনারে

অবোধ শিশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে চলে গেছে

তুলে সে দিয়েছে জীবনের সকল সঞ্চয়

নির্ভয়ে হয়েছে বিক্ষত, নিহত নিশ্চয়।

 

আমাদের মনোচেতনায় তবু জন্ম লয়

বিপুল অস্মার, যুগান্তের ঘুম জরো হয়

মৃত সেই মানুষের মুখ, স্মৃতির জঞ্জাল যেন সব !

করোটি -কঙ্কালের সাথে তারা মিশে থাকে

কবরের অন্ধকারে, শাপগ্রস্ত কালের ধূলায়।

 

৩.চারিদিকে

চারিদিকে মোষের ভঙ্গিতে বইছে বাতাস

তার বাঁকানো শিং-এ খেলা করছে

ক্ষমাহীন হিংস্রতা

সেঁধিয়ে দেবার প্রবৃত্তিতে উদ্গ্রীব তার মস্তক,গ্রীবা।

 

এ কোন আদিম অরণ্যে চলে এলাম !

এ কোন মানবেতর প্রান্তরে গড়াল সময় !

ইতিহাসের সেইসব শতজলঝর্নার জলধার

মনে হয় মৃত সব আজ।

 

এখন গজরায় বাজ চারিদিকে –

মুহুর্মূহু তান্ডবে এই বুঝি মত্ত হয় তুমুল বাতাস

উন্মূলিত ধূলির উল্লাসধবনি ভেসে আসে কানে

লোলজিহবা নেকড়ের দল-

সফল শিকারের আনন্দে হেটে যায় ওইদিকে

ঘাই হরিণীর মৃতদেহ ফেলে রেখে পথে

আরেক শিকারের লোভে।

 

আর চাহনির চাবুক মেলে তাকিয়ে রয় চিতা

তার শরীরের সুদীর্ঘ ছায়ায় ঢেকে যায়

সন্মুখের পথ।

 

মোষের ভঙ্গিতে এখন বইছে সময়

চারিদিকে দুর্দান্ত বাতাসে ভাসে বৈনাশিকতার গন্ধ

মনে হয় মোষগুলি এখনি দুমদাম করে

নেমে পড়বে আকাশ থেকে

তান্ডবের দুন্দুভি বাজাতে বাজাতে !

 

সবুজ প্রান্তর কাপছে থরো থরো

স্থানু হয়ে রয়েছে সুন্দর, ভীত প্রকম্পিত

তার অন্তিম প্রার্থনায় !