You are currently viewing গুচ্ছকবিতা/ কাজী দীন মুহম্মদ

গুচ্ছকবিতা/ কাজী দীন মুহম্মদ

গুচ্ছকবিতা

কাজী দীন মুহম্মদ

আমি

আমার নিজের বলতে আসলে এই আমি

দুটো হাত দুটো পা

আজন্ম খরগোশের মত দুটো কান

এই আঙ্গুল, আঙ্গুলের নখ

আমার নিজের বলতে আনমনে তুলে আনা এক আঁজলা জল

জলে ভেসে উঠা শৈশবের স্মৃতি

 

আমার নিজের বলতে অকপট মৃত্তিকা, স্থির নীলিমা

মাঝরাতে একঘেয়ে বৃষ্টি, কুয়াশাভেজা জ্যোৎস্না

আমার নিজের বলতে দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির

করুণ দ্যোতনা

 

আমার নিজের বলতে

বোকাবোকা লিখে ফেলা কিছু কবিতা, একটা অপাংক্তেয় হৃদয়

আমার নিজের বলতে তুমি, তেষ্টায় কাতর আবাল্য মরুভূমি

আমার নিজের বলতে

 

ভুরুর মধ্যে একাকী বেড়ে উঠা একটা বিষণ্ণ লম্বা চুল

 

যোগফুল

যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ

আপাতত এই পর্যন্ত থাক। শোচনীয় তোমার অঙ্ক জ্ঞান

যদিও তোমাতেই শিখি ধারাপাত, করি পাললিক ধ্যান

কৃষ্ণপক্ষ রাতে ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখে পঞ্চমীর চাঁদ

বিভাজনের ঢঙে তুমি কর গুনিতক; সমুদয় প্রপাত

তোমার মুক্তবর্ণ স্তনে উঠে কবিতার ঝড়, অঙ্কে নয়

কলায় তুমি নিলাজ স্বয়ম্বর

 

তোমার চোখের মদে মাতাল হলে ভোর

পুরো কমলালেবু ভিজে উঠে, স্নাত হয় নিদান দুপুর

 

বিয়োগ গুণ ভাগ, আপাতত থাক

এসো ফোটাই যোগফুল, প্রেম আমাদের অবিভাজ্য হোক

 

 দুটি কবিতা

১।

কাল রাতে তোমাকে ছোঁয়ার পরে

চাঁদ উঠেছিল মাঝরাতে, বেচারা চাঁদ

নো ম্যানস ল্যান্ডএ থাকার কারণে

কেউই তাকে ছুঁতে পারে না

ছুঁয়ে দেয়ার পরই কেবল তুমি সত্য

২।

নত হই, চল নামি অতলে

তোমার ওষ্ঠাধরে দাউ দাউ আগুন

চল পুড়ি, পুড়ে ভস্ম হই

চল কবিতা লিখি আর জাহান্নামে নেই পৃথিবীকে

ভস্মস্তূপে যদি দেখা পেয়ে যাই পবিত্র ঈশ্বর!!

 

অন্ধকার যদি অনঙ্গ হবে

অন্ধকার যদি অনঙ্গ হবে তবে কে আমাকে জড়িয়ে ধরে সকাল দুপুর

মধ্যরাতে

একবার নিজের থেকে কিছু নীল ভাগ দেবো বলে ফ্যাকাশে হওয়া

বিকেলে আকাশের দিকে যাচ্ছিলাম জগন্নাথপুরের খাল পেরিয়ে। আকাশ

এমন নির্বোধ মাঝপথে আমাকে আটকে দিলো ঘন অন্ধকার হয়ে

 

অতঃপর যা হবার তাই। নীলেরা অন্ধকারের বুক চেপে বসে থাকলো।

 

সেই থেকে অন্ধকারের সঙ্গে নটঘট। অন্ধকারের সঙ্গে প্রেম প্রণয়

অন্ধকারের সঙ্গে বাক বিতন্ডা, অন্ধকারের সঙ্গে বৈরিতা। আমি

উদোম আলোয় অন্ধকারের শান্ত হাত ধরে বসে থাকি

অন্ধকার যদি অনঙ্গ হবে

কে তবে বুকে চেপে থাকে এই আলোর প্লাবনে

 

বাঁশি বাজে

 

অহিদ কাক্কুর বাঁশি এখনো বাজে

কত কিছু ভুইলা যাই, অহিদ কাক্কুরে মনে করতেও কষ্ট হয়

তবু তাঁর বাঁশি এখনো বাজে, শুনতে পাই। ইন্দিরার উপরে

আবছায়া অহিদ কাক্কু, তাঁর হাটুর সাথে ভাঁজ হয়ে থাকে

জীবনের বিস্বাদ, আর বাঁশি বাজে

 

আমরা যারা পড়ার টেবিলে; পড়তে ভুলে যেতাম

আমাদের বাবা চাচা মামা বিষণ্ণ কিংবা বিরক্ত হয়ে

আলিঙ্গন আলগা হয়ে গেলে আমাদের চাচী আম্মা

ঘুম ভেঙ্গে একগ্লাস পানি খান, তিরতির কাঁপে দরজার খিল

 

যে জীবন ছেড়ে আসি, তার পরতে পরতে সুর

যে জীবন পরে থাকি, হাত উঁচালেই

তার বগলের দিকটায় ছেঁড়া। অনাগত অর্কেস্ট্রার জন্য

সমবেত হতে হতে, সিদ্ধেশ্বরীর গলি ঘুপচিতেও

শুনতে পাই অহিদ কাক্কুর বাঁশি, এখনো বাজে